চট্টগ্রামে পুরোদমে শুরু হয়েছে পুলিশিং কার্যক্রম। থানাগুলোতে পুলিশদের বরণ করে নিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। অনেক জায়গায় চলেছে মিষ্টি বিতরণ। মহানগরের ১৬ থানায় সেবা নিতে আসছেন সাধারণ মানুষ। সড়কেও বেড়েছে ট্রাফিক পুলিশের উপস্থিতি। আশপাশের উপজেলায়ও দেখা গেছে একই চিত্র।
চট্টগ্রাম মহানগরের ১৬টি থানায় চলছে সাধারণ ডায়েরি, অভিযোগ গ্রহণসহ অন্যান্য সেবামূলক কার্যক্রম। ধকল কাটিয়ে উঠে আন্তরিকভাবে সেবা প্রদানের কথা জানিয়েছেন বিভিন্ন থানার পুলিশ সদস্যরা।
এদিকে নগরের আগ্রাবাদ, দেওয়ানহাট, টাইগারপাস, লালখানবাজার, ওয়াসা এলাকার মতো গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ট্রাফিক পুলিশকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। তাদের সঙ্গে আছে শিক্ষার্থীরাও।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম জানান, চট্টগ্রামে পুলিশ সদস্য, থানাগুলোতে হামলা হয়েছে। নিরাপত্তার ভয়ে তারা কর্মক্ষেত্র ছেড়ে গিয়েছিল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় আমাদের সকল সদস্যরা কাজে ফিরেছেন। ট্রাফিক পুলিশরাও তাদের দায়িত্ব পালন করছেন। আমাদের শিক্ষার্থীরাও সব ধরণের সহযোগিতা করছেন।
এদিকে পুলিশ সদস্যরা ফিরে আসায় চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলার থানা ও সড়কে ফিরেছে গতি। চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে দুই থানার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। মিরসরাই থানা ও জোরারগঞ্জ থানায় (১৩ আগস্ট) সকাল থেকে থানাগুলোতে পুলিশ সদস্যদের দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে।
চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (মিরসরাই সার্কেল) মনিরুল ইসলাম বলেন, গতকাল থেকেই থানায় সকল পুলিশ সদস্য যোগদান করে। আজ থেকে সকল কার্যক্রম পুরোদমে চালু হয়েছে।
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে পুলিশকে স্বাগত জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। মনোবল ভেঙে পড়া পুলিশ প্রশাসনকে চাঙ্গা করতে থানায় এসে সব ধরণের সহযোগিতার আশ্বাস দেন শিক্ষার্থীরা। ওসিকে বরণ করে নেন তারা। এসময় তারা থানা চত্বরসহ আশপাশের এলাকা ও উপজেলা পরিষদ এলাকা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করেন।
থানায় এসে ওসির পাশে দাঁড়িয়ে সমন্বয়কারীরা বলেন, পুলিশের ইউনিফর্ম পরা কিছু লোক হয়তো খারাপ ছিল, কিন্তু পুলিশ বিভাগ খারাপ ছিল না। তারা শুধুমাত্র কর্মচারী, শুধুমাত্র আদেশের দাস। তাই আমাদের এখন পুলিশের পাশে দাঁড়ানো উচিত! পুলিশকে সহযোগিতা করা উচিত।
এ সময় তারা আরও জানান, এ উপজেলাকে চাঁদাবাজ ও দুর্নীতি মুক্ত করব, থানায় যাতে সাধারণ মানুষ এসে সেবা পান সেটি নিশ্চিত করুন। কোন রাজনীতিক দলের প্রভাব যাতে থানা গ্রাস না হয় সেটিও বলেন তারা। পরিশেষে আমরা আপনাদের পাশে আছি, পুলিশ ও সাংবাদিকদের কাছে সহযোগিতা কামনা করেন তারা।
সীতাকুণ্ড মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল উদ্দিন বলেন, সম্প্রতি কোটাবিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে থানায় আক্রমণ করতে চেয়েছিল। কিন্তু শিক্ষার্থীরাসহ রাজনৈতিক ও সর্বস্তরের মানুষ রক্ষা করেছেন সেজন্য আমরা কৃতজ্ঞ। সেদিনের পর থেকে আমাদের অনেক পুলিশ সদস্য ভয়ে আত্নগোপন ও নিরাপদ আশ্রয়ে যায়। এ সুযোগে অনেক দৃষ্কৃতিকারী মানুষের ঘরে চুরি-ডাকাতি করছে। ভাঙচুর ও আগুন দিচ্ছে। সরকারি স্থাপনায় চুরি ও হামলা করছে। আমরা পুলিশ বাহিনী এখনো বেঁচে আছি। আমরা পুনরায় নতুন পুলিশ হিসেবে জনগণকে সেবায় নিয়োজিত হব।
অপরদিকে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার কেরানিহাট ট্রাফিক পুলিশ বক্সে কর্মরত পুলিশ সদস্যরা কর্মস্থলে যোগদান করেছেন। এ সময় তাদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেন বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সাতকানিয়া উপজেলার নেতারা।
কেরানিহাট ট্রাফিক পুলিশ বক্সের পরিদর্শক (ট্রাফিক) হাসানুজ্জামান বলেন, আমাদের অনুপস্থিতিতে শিক্ষার্থী ও শ্রমিক নেতৃবৃন্দরা কেরানিহাটের ট্রাফিক ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখায় তাদেরকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমাদের জনবল সংকটের ফলে কিছুটা বেগ পেতে হতো। তবে এখন আমাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীরা থাকায় ট্রাফিক শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছি।
পরে ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে উপস্থিত সবাইকে মিষ্টিমুখ করানো হয়। এরপর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে ট্রাফিক শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের কার্যক্রম শুরু করেন ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা।
তাছাড়া সাতকানিয়া থানার কার্যক্রম পুরোদমে শুরু হয়েছে। সেবাপ্রার্থীদের নিরবিচ্ছিন্নভাবে সেবা প্রদান করে যাচ্ছে পুলিশ সদস্যরা। অনেককে ডিউটি অফিসারের কক্ষে অভিযোগ পত্র নিয়ে আসতে দেখা গেছে। পুলিশি কার্যক্রম থানার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও কোনো পুলিশ সদস্যকে থানার বাইরে ডিউটি করতে দেখা যায়নি। সেনাবাহিনীর সদস্যরা থানার নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়োজিত রয়েছেন।
সাতকানিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী পুলিশ সদস্যরা কর্মস্থলে যোগদান করেছেন। বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে যারা থানায় আসছেন তাদেরকে সেবা প্রদান করা হচ্ছে।
এর আগে মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) থেকে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির ঘোষণা দেন পুলিশ সদস্যরা।
জানা যায়, ছাত্রদের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকে ঘিরে দেশে অরাজক পরিস্থিতির মধ্যে অনেক পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও আনসার সদস্য নিহত হন। আহত হন কয়েক হাজার সদস্য। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন থানায় হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে।
গত ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেন। এরপর ৬ আগস্ট থেকে কর্মবিরতির ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ পুলিশ অধস্তন কর্মচারী সংগঠন। এর পরিপ্রেক্ষিতে দেশের বেশির ভাগ থানার পুলিশসহ বিভিন্ন ইউনিটের সদস্যরা কর্মবিরতিতে চলে যান। এতে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়। ঘটে অগ্নিসংযোগ, ডাকাতি, লুটপাট ও ছিনতাইসহ নানা অপরাধ।