ঢাকা ৩১ ভাদ্র ১৪৩১, রোববার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ইউনিফর্মেও কমিশন খান যশোর পিটিআইয়ের আতিয়ার

প্রকাশ: ১৪ আগস্ট ২০২৪, ০৯:২৮ এএম
আপডেট: ১৪ আগস্ট ২০২৪, ০২:০৫ পিএম
ইউনিফর্মেও কমিশন খান যশোর পিটিআইয়ের আতিয়ার
যশোর প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের সুপারিনটেনডেন্ট আতিয়ার রহমানকে অপসারণের দাবিতে প্রশিক্ষণার্থীদের মানববন্ধন (বাঁয়ে)। বিক্ষোভ বাড়তে থাকায় ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলছেন আন্দোলনকারীরা (ডানে)। ইনসেটে সুপারিনটেনডেন্ট আতিয়ার রহমান।

যশোর পিটিআইর চলমান ব্যাচের ১৫০ প্রশিক্ষণার্থীর মাসিক ভাতা থেকে ২০০ টাকা করে কেটে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। খোদ সুপারিনটেনডেন্ট আতিয়ার রহমানের বিরুদ্ধে উঠেছে এ অভিযোগ। ‘এজি অফিস ম্যানেজ’ করার নামে এই টাকা কেটে নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে প্রশিক্ষার্থীদের প্রাতিষ্ঠানিক পোশাক (ইউনিফর্ম) নির্দিষ্ট দোকান থেকে কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে। ওই দোকান থেকে সুপারিনটেনডেন্ট বড় অঙ্কের কমিশন নিচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

এসব অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে আতিয়ার রহমানের অপসারণ দাবিতে গত সোমবার প্রশিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেন। পিটিআই ক্যাম্পাসে দুপুর ১২টার দিকে এ কর্মসূচি পালিত হয়। এর আগে রবিবার বেলা ১১টা থেকে প্রশিক্ষণার্থীরা অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস বর্জন শুরু করেন। তারা জানিয়েছেন, যতদিন এই দুর্নীতিবাজ সুপারিনটেনডেন্ট দায়িত্বপালন করবেন, ততদিন তারা আর ক্লাসে ফিরবেন না।

সোমবার যশোর প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (পিটিআই) ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা গেছে, প্রশিক্ষণার্থীরা ক্লাস বর্জন করে শ্রেণিকক্ষের বাইরে অবস্থান করছেন। ক্লাস বর্জনের খবর পেয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তাদের বক্তব্য শুনতে পিটিআই ক্যাম্পাসে যান। সেখান থেকে তিনি সবাইকে ক্লাসরুমে যেতে বলেন। আশ্বাস দেন, ‘বিষয়টি তিনি দেখবেন’। কিন্তু আন্দোলন শুরুর দ্বিতীয় দিনেও নিষ্ক্রিয় থাকায় তাকে প্রশিক্ষণার্থীদের তোপের মুখে পড়ে পিটিআই ক্যাম্পাস ছাড়তে হয়। একই সঙ্গে তিনি লিখিত অভিযোগ দেওয়ার জন্য সবাইকে বলে আসেন।

২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের প্রশিক্ষার্থী আবু জাফর গিফারি বলেন, ‘সুপারিনটেনডেন্ট আতিয়ার রহমান যতদিন দায়িত্ব পালন করবেন, ততদিন আমরা কিছু শিখতে চাই না। তিনি দুনীর্তিগ্রস্ত। আমরা তো মানুষ গড়ার কারিগর। আমরা শিক্ষকরা এখানে এসেছি প্রশিক্ষণ নিতে। সেই কারিগররা দুর্নীতিবাজদের কাছে এসে কী শিখব। তার কাছ থেকে দুর্নীতি ছাড়া অন্য কিছু শিখতে পারব না। তাই তার অপসারণ চাচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘ক্লাস বর্জনের খবরে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এসেছিলেন। তিনি আমাদের আশ্বস্ত করেছিলেন সোমবার সুপারিনটেনডেন্টের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন। তিনি আজও (সোমবার) এসে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানাননি। ফলে আমাদের কর্মসূচি চলবে।’ 

প্রশিক্ষণার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পেশাগত মানোন্নয়নের জন্য ১০ মাসের প্রশিক্ষণ কোর্স চলমান রয়েছে। এই কোর্সের জন্য ছয় মাস আবাসিক ও চার মাস অনাবাসিক প্রশিক্ষণ গ্রহণের নিয়ম রয়েছে। প্রতি ব্যাচে ১৫০ জন করে প্রশিক্ষণ নেন। শুরুতে প্রাতিষ্ঠানিক পোশাকের মধ্যে নারীদের শাড়ি ও পুরুষদের শার্ট-প্যান্ট এবং সকালে প্যারেডের জন্য নারী-পুরুষ উভয়কেই জুতা, টি-শার্ট, ট্রাউজার কিনতে হয়।
 এসব পোশাক কেনার জন্য সরকার জনপ্রতি দুই হাজার টাকা দিলেও তাদের পাঁচ হাজারের বেশি টাকা খরচ করতে হয়।

প্রশিক্ষণার্থীদের অভিযোগ, ওই পোশাকের দাম যাচাই করে নিজেদের ইচ্ছে মতো দোকান থেকে কেনার সুযোগ নেই। পিটিআই সুপারিনটেনডেন্ট আতিয়ার নিজের পছন্দের ব্যক্তি ও দোকান থেকে এসব পোশাক কিনতে বাধ্য করেন। এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান থেকে পিটিআই সুপার কমিশন নেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, যশোর কালেক্টরেট মার্কেটের বলাকা টেইলার্স থেকে পুরুষদের শার্ট-প্যান্ট ও নারীদের শাড়ি নিতে বাধ্য করা হয়। এই প্রতিষ্ঠান থেকে পুরুষদের শার্ট ও প্যান্টপ্রতি ১০০ টাকা করে কমিশন নেন অতিয়ার। এ ছাড়া নারী ও পুরুষদের অন্য পোশাকের ক্ষেত্রে ৩০০ টাকা করে কমিশন তোলেন তিনি।

কমিশনের টাকা দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বলাকা টেইলার্সের স্বত্বাধিকারী এনামুল কবির খবরের কাগজকে বলেন, ‘মিষ্টি খাওয়ার জন্য পুরুষদের শার্ট-প্যান্টপ্রতি পিটিআই সুপারিনটেনডেন্ট আতিয়ার রহমানকে ১০০ টাকা করে দিতে হয়।’ পাঁচ বছর ধরে তিনি পিটিআই প্রশিক্ষার্থীদের পোশাক তৈরি করে দিচ্ছেন বলে জানান।
 
সুপারিনটেনডেন্ট আতিয়ার রহমান যশোর পিটিআইতে চার বছর ধরে দায়িত্ব পালন করছেন। এই ইস্যুতে জানতে চাইলে সুপার আতিয়ার বলেন, ‘কাপড়ের রঙের ভিন্নতা এড়াতে একটি দোকান থেকে সবাইকে কিনতে বলা হয়েছে। কমিশনের অভিযোগ সত্য নয়।’ 

‘এজি অফিস ম্যানেজ’-এর নামে ২০০ টাকা কর্তন
প্রশিক্ষার্থীরা মাসিক তিন হাজার টাকা করে সরকারি ভাতা পান। চলতি মাসের টাকা পরের মাসে দেওয়া হয়। কিন্তু জেলা অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড ফাইন্যান্স অফিস (এজি অফিস) ম্যানেজ করার কথা বলে প্রত্যেক প্রশিক্ষাণার্থীর কাছ থেকে ২০০ টাকা করে কেটে নেওয়ার অভিযোগ তোলা হয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সুপারিনটেনডেন্ট আতিয়ার সাংবাদিকদের বলেন, ‘ঘুষের টাকা না দিলে এজি অফিস কোনো বিল পাস করে না। ২০০ টাকা করে প্রশিক্ষণার্থীদের কাছ থেকে নিয়ে এজি অফিসে ঘুষ দিতে হয়।’ অভিযোগের বিষয়ে জেলা অ্যাকাউন্স অ্যান্ড ফাইন্যান্স কর্মকর্তা মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ ঠিক না। বিল আনলে পাস করে দিই।’

সংস্থাপন চার্জ নিয়ে আপত্তি
আবাসিক হলে থাকার জন্য প্রত্যেক প্রশিক্ষণার্থীর কাছ থেকে মাসে ৫০০ টাকা করে সংস্থাপন চার্জ নেওয়া হয়। আবাসিক হলে না থাকলেও এই চার্জ দিতে হয়। ব্যাচপ্রতি মাসে ৭৫ হাজার টাকা করে ওঠে। দুটি আবাসিক হলের আয়ার বেতন ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য এই টাকা তোলা হয়। অথচ এই টাকা গ্রহণের কোনো রশিদ দেওয়া হয় না। প্রশিক্ষার্থীরা বলেন, সংস্থাপন চার্জ নেওয়ার বিষয়ে কোনো প্রজ্ঞাপন আছে কি না তা আমাদের জানা নেই। রশিদ ছাড়াই প্রতি মাসে ৫০০ টাকা করে এই চার্জ নেওয়া হয়। প্রতি মাসে ৭৫ হাজার টাকা ওঠে। যা খরচ হওয়ার কথা না। আবাসিক হলের স্থায়ী অবকাঠামো উন্নয়নেও এই টাকা খরচ করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে সুপারিনটেনডেন্ট আতিয়ার রহমান বলেন, ‘সংস্থাপন চার্জের টাকা প্রশিক্ষণার্থীরা তোলেন। আবার তাদের মাধ্যমেই খরচ হয়। হোস্টেল সুপাররা বিষয়টি দেখেন। এখানে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।’

জেলা প্রশাসক আবরাউল হাছান মজুমদার বলেন, ‘বিষয়টি শুনে আমি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে সেখানে পাঠিয়েছিলাম। তিনি বিষয়টা দেখছেন।’ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আশরাফুল আলম বলেন, ‘আমি পিটিআই ক্যাম্পাসে গিয়ে প্রশিক্ষণার্থীদের অভিযোগগুলো শুনেছি। তাদের লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছি। লিখিত অভিযোগ পেলে শিক্ষা সচিব ও অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে পাঠিয়ে দিব।’

কক্সবাজার উপকূলে ভেসে এলো আরও ১ মরদেহ

প্রকাশ: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:১২ এএম
কক্সবাজার উপকূলে ভেসে এলো আরও ১ মরদেহ
সমুদ্রে ভেসে এলো আরও এক মরদেহ। ছবি: সংগৃহীত

কক্সবাজার সমুদ্রপাড়ে ভেসে এসেছে আরও একটি মরদেহ। ধারণা করা হচ্ছে বঙ্গোপসাগরে ডুবে যাওয়া মাছ ধরার ট্রলার নিখোঁজের ঘটনায় তার মরদেহ ভেসে এসেছে। 

রবিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) ভোরে কক্সবাজার শহরের সমিতিপাড়া ১ নং ওয়ার্ডের পশ্চিম কুতুবদিয়ায় মরদেহটি দেখা যায়।

বিষয়টি খবরের কাগজকে নিশ্চিত করেছেন সি সেইফ লাইফগার্ডের সিনিয়র লাইফগার্ড মোহাম্মদ ওসমান। 
তিনি বলেন, ভোরে আমাদের লাইফগার্ড রশিদ আহমদ জানিয়েছেন সমিতিপাড়ায় মরদেহ ভেসে এসেছে। এখনো সমুদ্রপাড়ে পড়ে আছে। আমি নিজেও গিয়ে নিশ্চিত হয়েছি।

লাইফগার্ড রশিদ আহমদ বিষয়টি নিশ্চিত করে খবরের কাগজকে বলেন, ‘একটি মরদেহ ভেসে আসার খবর পেয়ে আমি সমিতিপাড়ার পশ্চিম কুতুবদিয়া পাড়ার ওখানে গিয়েছিলাম। এগুলো সাগরে ট্রলার ডুবির ঘটনার মরদেহ হবে।’ 

তবে তাৎক্ষণিক তার পরিচয় পাওয়া যায়নি। 

এদিকে গতকাল ইনানী সৈকতে ডুবে যাওয়া একটি মাছ ধরার ট্রলার নিখোঁজের ঘটনায় এক জেলেসহ দুইজনের মরদেহ ভেসে এসেছে। শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুপুর ২টার দিকে ইনানী মোহাম্মদ শফির বিল সৈকত এলাকায় মরদেহ দুটি পাওয়া যায়।

মুহিববুল্লাহ মুহিব/ইসরাত চৈতী/

চুনারুঘাটে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ছাত্রদল নেতাসহ নিহত ২

প্রকাশ: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:২৯ এএম
চুনারুঘাটে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ছাত্রদল নেতাসহ নিহত ২
নিহত হাফিজ সরকার ও মোস্তাফিজুর রহমান

হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ছাত্রদল নেতাসহ দুইজন নিহত হয়েছেন।

শনিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাত ১০টার দিকে উপজেলার ঢাকা-সিলেট পুরাতন মহাসড়কের রামগঙ্গা ব্রিজ এলাকায় এ দূর্ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন, শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার সুদিয়াখলা গ্রামের মৌলদ মিয়ার ছেলে ও শায়েস্তাগঞ্জ পৌর ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক হাফিজ সরকার (২৭) এবং একই উপজেলার তালুগড়াই গ্রামের হাজী কিম্মত আলীর ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান (২৬)।

পুলিশ জানায়, হাফিজ ও মোস্তাফিজুর মোটরসাইকেলে ওই এলাকায় ঘুরতে যান। রাত ১০টার দিকে তারা চুনারুঘাটের দিকে ফিরছিলেন। রামগঙ্গা ব্রিজ এলাকায় পৌঁছলে তাদের মোটরসাইকেলটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায়। এ সময় পেছন থেকে আসা একটি  ট্রাক তাদেরকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই তাদের মৃত্যু হয়।

চুনারুঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিল্লোল রায় খবরের কাগজকে জানান, খবর পেয়ে নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।

কাজল সরকার/অমিয়/

লিংক রোড়ে পাহাড় কেটে রেস্তোরাঁ, গুড়িয়ে দিল প্রশাসন

প্রকাশ: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:১৯ এএম
আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৫৪ এএম
লিংক রোড়ে পাহাড় কেটে রেস্তোরাঁ, গুড়িয়ে দিল প্রশাসন
অভিযান পরিচালনা করে রেস্তোরাঁটি গুড়িয়ে দেওয়া হয়। ছবি: খবরের কাগজ

চট্টগ্রাম মহানগরের বায়েজিদ-ফৌজদারহাট লিংক রোডে পাহাড় কেটে নির্মাণ করা কাঁচালংকা রেস্তোরাঁসহ কয়েকটি স্থাপনা গুঁড়িয়ে দিয়েছে প্রশাসন। একই সঙ্গে অভিযুক্ত মো. আকতার হোসেনকে আটক করা হয়েছে। জব্দ করা হয়েছে পাহাড় কাটার সরঞ্জাম। 

শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে অভিযান পরিচালনা করে রেস্তোরাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। 

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের যৌথ অভিযানে নেতৃত্ব দেন কাট্টলী সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরাফাত সিদ্দিকী। অভিযানে আরও উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলার রিসার্চ অফিসার মো. আশরাফ উদ্দিন। 

সহকারী কমিশনার আরাফাত সিদ্দিকী বলেন, বায়েজিদ লিংক রোডে পাহাড় কেটে ও দখল করে গড়ে তোলা একটি রেস্তোরাঁ পরিবেশ অধিদপ্তরের মাধ্যমে অভিযান চালিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া পাহাড় কেটে রেস্টুরেন্ট নির্মাণে জড়িত মো. আকতার নামে একজনকে হাতেনাতে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি দোষ স্বীকার করেননি। এ জন্য নিয়মিত মামলা দায়েরের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ‘যে পাহাড়ে রেস্তোরাঁ করা হয়েছিল সেটির ওপরে আরও তিনটি টিনের ঘর তৈরি করা হয়। সেগুলোও ভেঙে দেওয়া হয়েছে। ওই ঘরগুলো মনির নামের এক ব্যক্তি নির্মাণ করে ভাড়া দিচ্ছিল। তবে আমরা সেখানে অভিযুক্ত মনিরকে পাইনি।’ 

পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলার রিসার্চ অফিসার মো. আশরাফ উদ্দিন খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমরা অভিযুক্ত আকতার হোসেন ও মনির হোসেনের বিরুদ্ধে আকবরশাহ থানায় পরিবেশ আইনে মামলা করেছি। এ ছাড়াও এই পাহাড়ের বিভিন্ন অংশে নির্মিত বৌদ্ধমন্দির ও অন্যান্য স্থাপনার মালিকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ঘটনাস্থল থেকে পাহাড় কাটার বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দ করা হয়েছে।’ 

এর আগে শনিবার ভোরে ও শুক্রবার রাতে টানা বৃষ্টির কারণে বায়েজিদ লিংক রোডে পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটে। এ সময় লিংক রোডের এক অংশে যানবাহন চলাচল বন্ধ করা হয়। পরে সড়কের ক্ষতিগ্রস্ত অংশ থেকে মাটি সরিয়ে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক করা হয়। 

ইফতেখারুল/ইসরাত চৈতী/অমিয়/

হবিগঞ্জের বানিয়াচং খোয়াইর ভাঙনে বিলীন হচ্ছে গ্রাম

প্রকাশ: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:০৬ এএম
খোয়াইর ভাঙনে বিলীন হচ্ছে গ্রাম
খোয়াই নদীর ভাঙনের কারণে মানুষের চলার পথ ছোট হয়ে গেছে। হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার রাধানগর গ্রাম থেকে তোলা। খবরের কাগজ

হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার রাধানগর গ্রামের দরিদ্র কৃষক ছুয়েব আলী। খোয়াই নদীর ভাঙনে বিলীন হয়েছে তার একমাত্র বসতভিটা। মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে পরিবার নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন অন্যের বাড়িতে। ছুয়েব আলী বলেন, ‘এক মাস আগে খোয়াই নদীতে গোলা (জোয়ার) আসে। পানি নেমে যাওয়ার পর নদীতে ভাঙন দেখা দেয়। এ সময় আমার ঘরবাড়ি সব ভেঙে পড়ে। এখন আমি বউ-বাচ্চা নিয়ে গ্রামের আরেকজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘অন্যের বাড়িতে কতদিন থাকা যায়? এখন কী করব, কোথায় যাব, কিছুই মাথায় ধরছে না। নতুন করে আরেকটা বাড়ি বান্ধার (বানানোর) তৌফিক (ক্ষমতা) আমার নাই।’

ছুয়েব আলীর মতো এই গ্রামের অনেক ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়েছে। আগ্রাসী খোয়াই কেড়ে নিয়েছে অনেকের মাথা গোঁজার ঠাঁই। সহায় সম্বল হারিয়ে এসব পরিবার এখন দিশাহারা। মূলত কয়েক বছর ধরেই বর্ষা মৌসুমে রাধানগর গ্রামে খোয়াই নদীতে ভাঙন দেখা দেয়। তবে সময় যত যাচ্ছে ভাঙনের তীব্রতা যেন আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ভারতের আসাম রাজ্যের আঠারোমুড়া পাহাড় থেকে উৎপত্তি হয়ে খোয়াই নদী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার বাল্লা সীমান্ত দিয়ে। পরে জেলার পাঁচটি উপজেলার ওপর দিয়ে ১৬৬ কিলোমিটার প্রবাহিত হয়ে মেঘনায় গিয়ে পড়েছে।

প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে উজানের ঢল নেমে এলেই ভয়ংকর রূপ ধারণ করে খোয়াই। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় খোয়াই যেন আরও ভয়ংকর হয়ে উঠছে। সর্বশেষ গত আগস্টে উজানের ঢলে খোয়াই নদীর পানি বিপৎসীমার ২৭৭ সেন্টিমিটার ওপরে ওঠে যায়; যা কয়েক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। আর মাত্র আধা মিটার পানি বাড়লেই তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় ছিল হবিগঞ্জ শহর।

তবে পানি নেমে যাওয়ার পরপর নদীর বিভিন্ন অংশে ভাঙন দেখা দেয়। এখন পর্যন্ত নদীর অন্তত ৫০টির বেশি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে চুনারুঘাটের রাজার বাজার, শায়েস্তাগঞ্জের আলাপুর, সদর উপজেলার তেঘরিয়া এবং বানিয়াচং উপজেলার রাধানগরসহ ১০ থেকে ১২টি স্থানের ভাঙন খুবই তীব্র। এসব ভাঙনে বিলীন হয়েছে ঘরবাড়ি, ফসলি জমি ও রাস্তাঘাট। এমনকি কিছু কিছু অংশে খোয়াই নদীর বাঁধেও তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে।

রাধানগর গ্রামের আলেয়া বানু বলেন, ‘নদীভাঙনে আমার ঘরবাড়িসহ সবকিছু শেষ। এখন সামান্য একটু ভিটে আছে। এখানেই থাকছি। যে অবস্থা, এ বছরই এই জায়গাটাও ভেঙে পড়বে। তখন কই যামু, কি করমু সেটাই চিন্তা করি।’ তিনি বলেন, ‘নদীভাঙন ঠেকাতে সরকার যদি আমাদের এখানে কিছু কাজ করত, তাহলে আমরা অসহায় মানুষগুলো বাঁচতাম।’

তেঘরিয়া এলাকায় সুজন মিয়া বলেন, ‘প্রতি বছর আমাদের এলাকায় নদী ভাঙে। তবে এ বছর একটু বেশি ভাঙছে। কিছুদিন আগে যে গোলা আইছিল (এসেছিল), তখন আমরা সবাই খুব আতঙ্কে আছলাম (ছিলাম)। আমাদের এখানে যদি নদীর বাঁধ পুরোপুরি ভাঙে তাহলে পুরো গ্রাম পানিতে তলিয়ে যাবে। এ কারণে সবাই জিনিসপত্র নিয়ে বাঁধের ওপরে এসে রাত কাটিয়েছি।’

একই এলাকার আলতাফ হোসেন বলেন, ‘প্রতিনিয়ত নদী শুধু ভাঙছেই। এভাবে ভাঙতে থাকলে একসময় সবকিছু শেষ হয়ে যাবে। এখন ফসলি জমি ভাঙছে, রাস্তা ভাঙছে। কিছুদিন পর ঘরবাড়ি ভাঙবে। এখনই যদি সরকার ভাঙন ঠেকাতে কোনো কাজ না করে, তাহলে আমরা নদীপাড়ের মানুষ শেষ হয়ে যাব।’

এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম হাসনাইন মাহমুদ বলেন, ‘সবচেয়ে বেশি ভাঙন দেখা দিয়েছে রাধানগর গ্রামে। তবে এই গ্রামসহ যেসব স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে আমরা তার তালিকা তৈরি করছি। সাধারণত নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে আমরা বাজেট পাই। এ বছর বাজেট পেলে এসব এলাকায় কাজ করা সম্ভব হবে।’

সম্প্রতি খোয়াই নদী পরিদর্শনে আসেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ উপদেষ্টা ফারুক ই আজম। এ সময় ফারুক ই আজম বলেন, ‘আমি স্থানীয় প্রশাসনকে বলেছি, তারা যেন এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায় সেটা আমাদের জানায়। আমরা সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।’

কুমিল্লার ১১ থানায় নতুন ওসি, দুইজনকে পুলিশলাইন্সে সংযুক্ত

প্রকাশ: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৭ এএম
আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:৪১ এএম
কুমিল্লার ১১ থানায় নতুন ওসি, দুইজনকে পুলিশলাইন্সে সংযুক্ত
কুমিল্লার ১১ থানায় নতুন ওসি

কুমিল্লার নতুন পুলিশ সুপার দায়িত্ব নেওয়ার পর জেলা পুলিশে ব্যাপক রদবদল হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় জেলার ১১টি থানায় নতুন ওসি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আর দুই ওসিকে পুলিশলাইন্সে সংযুক্ত করা হয়েছে। 

গতকাল শনিবার কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার মো. আসফিকুজ্জামান আক্তার স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে এ তথ্য জানা গেছে। 

রবিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেন কুমিল্লা জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার ডিআইও-১ সৈয়দ ফজলে রাব্বী।

জানা যায়, গত ২৯ আগস্ট কুমিল্লার পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব নেন মো. আসফিকুজ্জামান আক্তার। দায়িত্বগ্রহণের দুই সপ্তাহ পর জেলা পুলিশের বিভিন্ন দপ্তরে ব্যাপক রদবদল আনেন তিনি। এরই অংশ হিসেবে জেলার বিভিন্ন থানা ও গুরুত্বপূর্ণ পদে ১৫ জন কর্মকর্তাকে বদলি বা পদায়ন করেন। 

এর মধ্যে ১১ জন কর্মকর্তাকে ১১টি থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পদে, একজনকে জেলা গোয়েন্দা শাখার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পদে, একজনকে সদর কোর্টের পুলিশ পরিদর্শক ও দুইজনকে কুমিল্লা জেলা লাইনওআর-এ (পুলিশলাইন্স) সংযুক্ত করে অফিস আদেশ দেওয়া হয়। 

আদেশে বলা হয়, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কর্মকর্তারা বদলি করা স্থানে দায়িত্ব পালন করবেন এবং এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর করা হবে। 

জেলা পুলিশ সুপারের অফিস আদেশসূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লা সদর কোর্টের পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মো. মাহবুবুল হককে মুরাদনগর থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পদে বদলি করা হয়েছে। কুমিল্লার সদর দক্ষিণ মডেল থানার ওসি মুহাম্মদ আলমগীর ভূঞাকে লাইনওআর কুমিল্লায় সংযুক্ত করা হয়েছে। মুরাদনগর থানার ওসি প্রভাষচন্দ্র ধরকে সদর কোর্ট কুমিল্লায় পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) পদে বদলি করা হয়েছে। তিতাস থানার ওসি কাজী নাজমুল হককে বরুড়া থানায় ওসি পদে বদলি করা হয়েছে।

অন্যদিকে, কুমিল্লা লাইনওআর পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) সাজ্জাদ করিম খানকে জেলা গোয়েন্দা শাখার ওসি পদে বদলি করা হয়েছে। কুমিল্লা লাইনওআর থেকে পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মো. মহিনুল ইসলামকে কোতোয়ালি থানায় ওসি এবং চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি মো. নাজমুল হুদাকে চান্দিনা থানার ওসি পদে বদলি করা হয়েছে।

কুমিল্লা লাইনওআর থেকে পুলিশের পরিদর্শক (নিরস্ত্র) এ টি এম আক্তার উজ্জামানকে চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি পদে বদলি করা হয়েছে। কুমিল্লা লাইনওআর থেকে পুলিশের পরিদর্শক (নিরস্ত্র) জুনায়েত চৌধুরীকে দাউদকান্দি থানায় অফিসার ইনচার্জ পদে বদলি করা হয়েছে। কুমিল্লা লাইনওআর থেকে পুলিশের পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মোহাম্মদ আজিজুল হককে বুড়িচং থানায় ওসির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কুমিল্লা লাইনওআর থেকে পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মুহাম্মদ রফিকুল ইসলামকে সদর দক্ষিণ মডেল থানায় বদলি করা হয়েছে। মো. শাহ আলমকে কুমিল্লা লাইনওআর থেকে পুলিশ পরির্দশক (নিরস্ত্র) লালমাই থানায় ওসি পদে বদলি করা হয়েছে। বরুড়া থানার ওসি মো. রিয়াজ উদ্দীন চৌধুরীকে কুমিল্লা লাইনওআর-এ সংযুক্ত করা হয়েছে। হোমনা থানার ওসি জয়নাল আবেদীনকে মেঘনা থানায় বদলি করা হয়েছে। 

জেলা গোয়েন্দা শাখার পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মো. আজিজুল ইসলামকে তিতাস থানার ওসি পদে বদলি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও জেলা পুলিশ সুপার মো. আসফিকুজ্জামান আক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

জহির শান্ত/ইসরাত চৈতী/অমিয়/