ঢাকা ২৪ আশ্বিন ১৪৩১, বুধবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৪

নোয়াখালীতে পানি বাড়ছে

প্রকাশ: ২৯ আগস্ট ২০২৪, ১০:৫৫ এএম
নোয়াখালীতে পানি বাড়ছে
দেশের চলমান বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে হলেও বৃষ্টিতে নোয়াখালীর বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১ জনে। ছবি: খবরের কাগজ

বৃষ্টিতে নোয়াখালীর বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে ত্রাণ সহায়তা খুব একটা পৌঁছায়নি বলে দাবি বন্যার্তদের। এদিকে লক্ষ্মীপুরে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। একটু ত্রাণের আশায় দুর্গতরা ছুটছেন মহাসড়কের দিকে। অন্যদিকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশের চলমান বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে। মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১ জনে। নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর: 

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী রেজা জানিয়েছেন, দেশের চলমান বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে। ইতোমধ্যে দেশের সব নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। বুধবার (২৮ আগস্ট) দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

চলমান বন্যায় ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, দেশের পূর্বাঞ্চল এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে বন্যায় এখন পর্যন্ত ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে কুমিল্লায় ১২ জন, ফেনীতে ২, চট্টগ্রামে ৫, খাগড়াছড়ি ১, নোয়াখালীতে ৬, ব্রাহ্মণবাড়ীয়ায় ১, লক্ষ্মীপুরে ১ ও কক্সবাজারে ৩ জন মারা গেছেন। মৌলভীবাজারে ২ জন নিখোঁজ রয়েছেন।

তিনি জানান, ১১ জেলায় মোট ১২ লাখ ২৭ হাজার ৫৫৪টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ৫৮ লাখ ২২ হাজার ৭৩৪ জন। ক্ষতিগ্রস্তদের মোট ৬১৯টি মেডিকেল টিম সেবা দিয়ে যাচ্ছে।

অতিরিক্ত সচিব বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য নগদ বরাদ্দ ১ কোটি বাড়িয়ে ৪ কোটি ৫২ লাখ টাকা করা হয়েছে। 

নোয়াখালীতে পানি বেড়েছে
এ জেলায় গত মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত দেড় ফুটের মতো পানি বেড়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। সবচেয়ে বেশি পানি বেড়েছে নোয়াখালী সদর উপজেলার কিছু এলাকা, বেগমগঞ্জ, চাটখিল ও সেনবাগ উপজেলায়। 

নোয়াখালীর ৮টি উপজেলার ৮৭টি ইউনিয়নের প্রায় সাড়ে ২১ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছেন। ১ হাজার ১৬৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে আছেন প্রায় সোয়া দুই লাখ মানুষ। বিভিন্ন জায়গায় সড়কের আশপাশের আশ্রয়কেন্দ্রের মানুষ সহযোগিতা পেলেও প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছায়নি বলে জানিয়েছেন বন্যার্তরা। 

জেলা শহরের হাউজিং স্টেট এলাকার মোজাম্মেল হোসেন নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে টানা বৃষ্টি হয়েছে। এতে বন্যার পানি আরও বেড়ে গেছে।’

সুবর্ণচরের চরজুবলী গ্রামের সিরাজ মিয়া বলেন, ‘রাস্তা ও বাড়ি তলিয়ে আছে। এখনো মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছেন।’

নোয়াখালী সদর উপজেলার নোয়ান্নই ইউনিয়নের আকবর হোসেন বলেন, ‘আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে খাবারসংকট রয়েছে। বিশেষ করে প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকায় বেশি পানি থাকায় নৌকা ছাড়া যাওয়া যাচ্ছে না। সেখানে সহায়তা পৌঁছাচ্ছে না। ওই সব এলাকায় মানুষ না খেয়েও আছেন।’

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজনের) জেলা সাধারণ সম্পাদক আবু নাছের বলেন, সমন্বয়হীনতার কারণে দুর্গম অঞ্চলে ত্রাণ পৌঁছাচ্ছে না।

নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন, নোয়াখালীতে স্মরণকালের বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসন কাজ করছে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে দুর্গম এলাকাগুলোতে শুকনা খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন জেলা থেকে সহায়তা আসছে। তারা বন্যার্তদের সহায়তা পৌঁছে দিচ্ছেন।

৮৪৮ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি
বন্যায় এখন পর্যন্ত জেলাজুড়ে কৃষি খাতে ৮৪৮ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। তলিয়ে গেছে ৬৩ হাজার ৭৯৪ হেক্টর জমির ফসল, যা অতীতের যেকোনো ক্ষতিকে ছাড়িয়ে গেছে। গতকাল দুপুরে কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কার্যালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

লক্ষ্মীপুরে ত্রাণবাহী গাড়ি দেখলেই ঘিরে ধরছেন বন্যার্তরা 
লক্ষ্মীপুরে এখনো পানিবন্দি আছেন জেলার ৯০ শতাংশ মানুষ। ৩০ হাজার পরিবার আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছে। হাজার হাজার পরিবার নিজ বাড়িতে পানিবন্দি হয়ে আছে। আবার কেউ কেউ চাঁদপুর-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কে ও বিভিন্ন বেড়িবাঁধের পাশে প্লাস্টিক ও কাপড় টাঙিয়ে অস্থায়ী ঘরে দিন কাটাচ্ছেন। অনেকেই ঘরের মালামাল খোয়া বা চুরি যাওয়ার ভয়ে কোথাও যাননি।

লক্ষ্মীপুর পুলিশ লাইনসের সামনের সড়কে অস্থায়ী দুটি ঘরে বসবাসকারী আবুল কালাম ও আবুল কাশেম খবরের কাগজকে বলেন, তাদের বসতভিটায় কোমরপানি। পানি বেড়ে যাওয়ায় আর টিকতে পারেননি। কোথাও আশ্রয় না পেয়ে তারা প্লাস্টিক ও কাপড় দিয়ে অস্থায়ী ঘর তৈরি করেছেন। সেখানে গরু-ছাগল নিয়ে বসবাস করছেন।

রাস্তার পাশে বসবাস করা আবুল কালাম বলেন, ‘আমরা প্রায় ২০টি পরিবার ঘরবাড়ি ছেড়ে এ রাস্তার পাশে থাকছি। দুই সপ্তাহ ধরে আমাদের ঘরে পানি। বাচ্চাদের নিয়ে ঘরে থাকতে পারছি না। এদিকে ঘরের মালামাল চুরির ভয় রয়েছে। তাই দূরে কোথাও না গিয়ে বাড়ির পাশের সড়কে থাকতে বাধ্য হচ্ছি।’ 

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. ইউনুস মিয়া বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ৪১৯ টন জিআর চাল ও ১০ লাখ নগদ টাকা (জিআর ক্যাশ) বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। জেলায় বর্তমানে প্রায় ১০ লাখ পানিবন্দি এবং আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ৩০ হাজার মানুষ অবস্থান করছেন। এ সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এদিকে খাদ্যসংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। প্রত্যন্ত এলাকার নারী-পুরুষ ও শিশুরা একটু ত্রাণের আশায় মহাসড়কে এসে দলবদ্ধ হয়ে অবস্থান নিচ্ছেন। ত্রাণবাহী গাড়ি দেখলেই তারা আটকানোর চেষ্টা করছেন। জেলার চন্দ্রগঞ্জ বাজার থেকে লক্ষ্মীপুর শহর পর্যন্ত ঘুরে এই চিত্র দেখা গেছে। 

সদর উপজেলার চরচামিতা এলাকায় আব্দুল মতিন নামের এক বৃদ্ধ বলেন, ঘরে হাঁটুপানিতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। দুই দিন ঘরে কোনো খাবার নেই। এক প্যাকেট ত্রাণের আশায় দুই কিলোমিটার পানি মাড়িয়ে তিনি মহাসড়কে এসেছেন। ২ ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করেও একটু খাবার জোটাতে পারেননি। 

কুমিল্লায় বন্যার উন্নতি নেই
কুমিল্লায় গোমতী নদীর পানি কমলেও বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি নেই। বাঁধের ভেঙে যাওয়া অংশ দিয়ে এখনো লোকালয়ে ঢুকছে পানি। ফলে বন্যাকবলিত মানুষের দুর্ভোগ কমছে না। এ ছাড়া বন্যাকবলিত প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে এখনো ত্রাণের জন্য হাহাকার চলছে। 

সরকারি হিসাব অনুযায়ী, এ জেলার ১৪ উপজেলার ১০ লাখ ৬১ হাজার মানুষ এখনো পানিবন্দি। কুমিল্লার ১৭ উপজেলার মধ্যে চান্দিনা, মেঘনা ও হোমনা উপজেলা ছাড়া অন্য ১৪টি উপজেলা বন্যাকবলিত। এর মধ্যে ভয়াবহ অবস্থা দেখা গেছে অন্তত ৭টি উপজেলায়। সেগুলো হলো বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া, চৌদ্দগ্রাম, নাঙ্গলকোট, লাকসাম, মনোহরগঞ্জ ও বরুড়া। এসব উপজেলার প্রত্যন্ত কিছু এলাকায় ত্রাণসহায়তা একেবারে অপ্রতুল। অতি দুর্ভোগে দিন কাটছে বানভাসিদের।

লাকসাম উপজেলার উত্তর দা ইউনিয়নের দিকধাইর গ্রামের বাসিন্দা নুরুন্নবী বলেন, ‘আমাদের এলাকাটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে হওয়ায় এখানে ত্রাণসামগ্রী তেমন আসছেই না। বন্যায় বাড়িঘর প্লাবিত হওয়ার প্রথম এক সপ্তাহে এই এলাকায় কোনো ত্রাণ আসেনি। গত সোমবার নেত্রকোনা থেকে একটি স্বেচ্ছাসেবী দল প্রথমবারের মতো আমাদের গ্রামে ত্রাণ নিয়ে আসে।’ 

একই চিত্র মনোহরগঞ্জ ও নাঙ্গলকোট উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকাগুলোর। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় এবং প্রত্যন্ত এলাকার তথ্য না থাকায় এসব অঞ্চলে ত্রাণসামগ্রী তেমন আসছে না।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আবেদ আলী বলেন, ১২৫টি ইউনিয়নের ১০ লাখ ৬১ হাজার মানুষ বন্যাকবলিত। মোট ৭২৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।

এদিকে গোমতী নদীর ভাঙনের ফলে বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায়ও বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না। গোমতী নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে প্রবাহিত হলেও বাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে পানি ঢুকছে লোকালয়ে। এ ছাড়া গোমতী ও ঘুংঘুর নদীর ভাঙা বাঁধ দিয়েও সদর উপজেলাসহ বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া প্লাবিত হচ্ছে। সদর উপজেলার দুটি ইউনিয়ন, বুড়িচং উপজেলার পাঁচ ইউনিয়ন এবং ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার আট ইউনিয়নের মানুষ পানিবন্দি। 

ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) স ম আজহার ইসলাম বলেন, ‘এখনো নতুন নতুন উপজেলা প্লাবিত হচ্ছে। আমরা বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ ও খাদ্য সহায়তা অব্যাহত রেখেছি।’

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কুমিল্লার প্রধান প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান বলেন, গতকাল দুপুর পর্যন্ত গোমতীর পানি কোনো অংশে বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার এবং কোনো অংশে ১২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে দেখা গেছে।

এদিকে গোমতী নদীর বাঁধের ভাঙা অংশ মেরামতের দাবি উঠেছে। এরই মধ্যে বাঁধের ভাঙা অংশের দৈর্ঘ্য ৫০০ ফুট ছাড়িয়েছে। এই দুই উপজেলার চারপাশেই উঁচু উঁচু সড়ক থাকায় এবং পার্শ্ববর্তী সালদা ও ঘুংঘুর নদীর বাঁধ ভেঙে এ অঞ্চলের দিকেই ঢুকছে পানি। এ পানি সরে যাওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই গোমতীর বাঁধের ভাঙা অংশ শিগগিরই মেরামতের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

এ বিষয়ে সম্প্রতি প্রশ্ন করা হলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গোমতীর প্রতিরক্ষা বাঁধ মেরামতের বিষয়টি নিয়ে সেনাবাহিনীর সঙ্গে আলোচনা করা হবে।

ফেনীতে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি
ফেনীর বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। নিচু অঞ্চল ছাড়া সব কটি এলাকা থেকে বন্যার পানি নেমে গেছে। তবে অনেক এলাকায় খাদ্য ও নিরাপদ পানির সংকট রয়েছে। এ ছাড়া বিদ্যুৎ আসেনি। পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া উপজেলার কোথাও কোথাও এখনো পানি রয়েছে।

সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক না হওয়ায় ট্রলি ও ট্রাকে করে নানা গন্তব্যে যাচ্ছেন মানুষ। দাগনভূঞা ও সোনাগাজী উপজেলার বেশির ভাগ এলাকার পানি কমেছে। তবে কিছু স্থানে মানুষজন এখনো পানিবন্দি। এ ছাড়া সোনাগাজী ও ফেনী সদর উপজেলার কিছু এলাকায় কোথাও হাঁটুপানি, কোথাও কোমরপানি রয়েছে। 

এ জেলায় বন্যায় অন্তত সাড়ে ১০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এর মধ্যে দেড় লাখ মানুষকে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে। দুর্গম এলাকায় হেলিকপ্টারে করে খাবার পাঠানো হচ্ছে। জেলায় একটি এবং ছয় উপজেলায় ছয়টি মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে।

দেশীয় প্রযুক্তিতে হেলিকপ্টার কলেজ ছাত্রের

প্রকাশ: ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৫৬ এএম
আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ১০:০১ এএম
দেশীয় প্রযুক্তিতে হেলিকপ্টার কলেজ ছাত্রের
দেশীয় প্রযুক্তিতে হেলিকপ্টার বানিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন খুলনার ফুলতলা উপজেলার কলেজছাত্র নাজমুল খান। খবরের কাগজ

হেলিকপ্টার তৈরি করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন নাজমুল খান নামে খুলনার এক কলেজছাত্র। দেশীয় প্রযুক্তি আর চায়না ইঞ্জিনে তৈরি এই হেলিকপ্টার তৈরিতে কোটি টাকা নয়, বরং খরচ হয়েছে মাত্র ২ লাখ টাকা।

খুলনার ফুলতলার জামিরা ইউনিয়নের ছাতিয়ানি গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম খানের ছেলে নাজমুল। পড়াশোনা করছেন বিএল কলেজে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে। ছোটবেলা থেকেই ব্যতিক্রমী কিছু করার প্রচেষ্টা থেকে গত তিন বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করে তৈরি করেছেন এক আসনবিশিষ্ট হেলিকপ্টার। নিজের স্বপ্ন থেকে নাজমুল ইন্টারনেট ঘেঁটে জ্ঞান অর্জন করে দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি করেছেন হেলিকপ্টারটি। হেলিকপ্টারের ইঞ্জিন ব্যয়বহুল। তাই নিজস্ব মেধায় মোটরসাইকেলের ইঞ্জিন আধুনিকায়ন করে এটি তৈরি করেছেন তিনি। পরিবারের মা-বাবার কাছ থেকেই টাকা নিয়ে তিন বছরের চেষ্টায় সফল হয়েছেন নাজমুল।

সরেজমিন দেখা যায়, হেলিকপ্টারটির দৈর্ঘ্য সাড়ে ২২ ফুট। এর দুটি পাখা সাড়ে ৮ ফুট লম্বা এবং চওড়া ২১ মিটার। চায়না ইঞ্জিনের আরপিএম সাড়ে ৬ হাজার থেকে ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে ৯ হাজার আরপিএমে। এক লিটার অকটেনে এটি ১৮ থেকে ২০ মিনিট চলবে। প্রাথমিকভাবে ৪০ থেকে ৫০ ফুট উঁচুতে উড্ডয়নের পরিকল্পনা রয়েছে। ১ দশমিক ৩ ও ১ দশমিক ৫ মিলিমিটার এসএস পাইপ দিয়ে দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি হেলিকপ্টারটি এখন পরীক্ষামূলক উড্ডয়নের জন্য জেলা প্রশাসনের অনুমতি চাওয়া হয়েছে।

নাজমুল খান বলেন, ‘২০২১ সাল থেকে হেলিকপ্টার তৈরির কাজ শুরু করি। নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে ইন্টারনেটের মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন করি। এরপর দেশীয় প্রযুক্তিতে কিছুটা অগ্রসর হওয়ার পর চায়না থেকে সংগ্রহ করা একটি ইঞ্জিন মডিফাই করে সক্ষমতা বাড়ানো হয়। এখনই হেলিকপ্টারটি উড্ডয়নের জন্য প্রস্তুত। তবে দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমাতে আরেকটু পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রয়োজন। এখন অল্প কিছু দিনের মধ্যে খোলা জায়গায় এটি নিয়ে উড্ডয়নের ইচ্ছা রয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। কিছু দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম, নিরাপত্তাব্যবস্থা এবং বৃষ্টি কমলে হেলিকপ্টারটি ওড়ানো সম্ভব হবে।’ 

জানা যায়, নাজমুলের বাবা নজরুল ইসলাম খান পেশায় একজন কৃষক। একই সঙ্গে তার একটি ছোট মুদি দোকান রয়েছে। দরিদ্র্যের মাঝেও ছেলের উদ্ভাবনী ইচ্ছাকে উৎসাহ জুগিয়েছেন তিনি। বর্তমানে হেলিকপ্টারটি কাজ করায় গর্বিত নজরুল ইসলাম। 

নাজমুলের উদ্ভাবনীক্ষমতা যে অবস্থায় পৌঁছেছে, সেখানে তাকে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে অর্থনৈতিক ও কারিগরি সহায়তা করলে দেশেই কম খরচে হেলিকপ্টার তৈরি সম্ভব হবে বলে মনে করেন স্থানীয়রা। নাজমুলের হেলিকপ্টার বানানোর ঘটনায় গর্বিত তারা। প্রতিদিনই দূর-দূরান্ত থেকে উৎসুক জনতা ভিড় করছেন এই যন্ত্রটি দেখার জন্য। 

এ বিষয়ে উপজেলার জামিরা বাজার আসমোতিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ গাজী মারুফুল কবীর বলেন, ‘নাজমুল আমাদের কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছে। তিন বছর ধরে সে হেলিকপ্টার তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে। আশা করছি, অল্প সময়ের মধ্যে নাজমুল হেলিকপ্টারটি আকাশে ওড়াতে পারবে।’

ফুলতলা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা তাসনীম জাহান বলেন, ‘গ্রামীণ এই পরিবেশে হেলিকপ্টার তৈরি করা অনেক বড় একটা ব্যাপার। আমরা তার নিরাপত্তা ও ভালোভাবে যেন কাজটি শেষ করতে পারে, সেই বিষয়ে নজর রাখছি।’

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘হেলিকপ্টার প্রস্তুতকারক কলেজ শিক্ষার্থী নাজমুলকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে। হেলিকপ্টার ওড়ানোর সময় ফায়ার সার্ভিসসহ সব ধরনের নিরাপত্তাব্যবস্থাও নেওয়া হবে।’

যশোরের তিন মহাসড়ক বেহাল

প্রকাশ: ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৫১ এএম
যশোরের তিন মহাসড়ক বেহাল
যশোর-ঝিনাইদহ মহাসড়কের চুড়ামনকাঠি এলাকা যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। খবরের কাগজ

যশোরের তিনটি মহাসড়ক চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। মহাসড়কগুলোর প্রায় ৫০ কিলোমিটার অংশে ছোট-বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। প্রায়ই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। বিশেষ করে মোটরসাইকেল ও ছোট যানবাহনগুলো দুর্ঘটনার সম্মুখীন বেশি হচ্ছে। এমনকি ঘটছে প্রাণহানিরও ঘটনা। আর বড় যানবাহনের মালিকরা ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন। অনেক বাস ও ট্রাক সড়কের গর্তের কারণে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে খাদে পড়ে যাচ্ছে। এতে মৃত্যুসহ অনেকে পঙ্গু হচ্ছেন। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর সংস্কারের উদ্যোগ নিলেও তা কাজে আসছে না। কাজের মান খারাপ ও অতিবৃষ্টিতে সড়কগুলো আবারও আগের অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে। 

স্থানীয়রা জানান, ভাঙাচোরা সড়কে জোড়াতালি দিয়ে কাজ করা হচ্ছে। কোনো কোনো স্থানে পুরো পিচই (বিটুমিন) উঠে গেছে। ফলে বিটুমিন দিয়ে সংস্কার করা সম্ভব হচ্ছে না। বিশেষ করে যশোর থেকে উত্তরবঙ্গের সড়কপথে যাতায়াতের একমাত্র পথ যশোর-ঝিনাইদহ মহাসড়কের চুড়ামনকাঠি বাজার অংশে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

যশোরের সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, যশোর-খুলনা মহাসড়কে ১০ কিলোমিটার, যশোর-সাতক্ষীরা মহাসড়কের নাভারণ থেকে বগআঁচড়া পর্যন্ত সাত কিলোমিটার, যশোর-ঝিনাইদহ মহাসড়কের কালীগঞ্জ পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার সড়কে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া যশোর-ঢাকা মহাসড়কের মনিহার অংশে এক কিলোমিটার সড়ক বেহাল রূপ নিয়েছে। তবে ভাঙাচোরা সড়কের বিস্তার আরও বেশি। এসব সড়কের মধ্যে যশোর-ঝিনাইদহ মহাসড়ক বিশেষ প্রকল্পের আওতায় ছয় লেনে উন্নীতকরণের কাজ চলমান রয়েছে। 

যশোর সওজ দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, যশোর-ঝিনাইদহ, যশোর-খুলনা ও যশোর-সাতক্ষীরা মহাসড়কে সৃষ্ট গর্তগুলো ইট দিয়ে বন্ধ করা হয়েছে। যা বৃষ্টি হলেই বড় গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে ইটের আদলা ও খোয়া ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে গোটা সড়কে। খানাখন্দ ও ইটের আদলা, খোয়াভর্তি এসব সড়কে চলাচল করতে গিয়ে যাত্রীরা প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। এ ছাড়া সড়কগুলো চলাচলকারী বিভিন্ন যানবাহনেরও যন্ত্রাংশের ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। 

যশোর সদরের চুড়ামনকাঠি বাজারের মুদি দোকানি শাহাবুদ্দিন আহমেদ শিহাব বলেন, ‘গত তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে আমাদের চুড়ামনকাঠি বাজার অংশের মহাসড়কের বেহাল দশা। এখানে বড় বড় খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছিল। বিভিন্ন সময় খোয়া দিয়ে মেরামত করে গেলেও তা টেকসই হয়নি। সর্বশেষ কিছুদিন আগে পুরো বাজার অংশের সড়কটিতে ইটের সলিং করে রেখে চলে গেছে। এখন প্রতিনিয়ত এখানে ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে।’

এ সড়কে নিয়মিত থ্রি-হুইলার চালান মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, ‘মহাসড়কে খানাখন্দ আর ভাঙা ইটের টুকরোর কারণে দুর্ভোগ বেড়েছে। এতে গাড়ির ক্ষতির পাশাপাশি যাত্রীদেরও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। সড়কে ভাঙা ইটের অংশ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকায় মোটরসাইকেল ও তিন চাকার যানবাহনগুলো বেশি দুর্ঘটনার শিকার হয়।’

বেসরকারি চাকরিজীবী দেবাশীষ বসু রানা বলেন, ‘যশোর-খুলনা মহাসড়ক দিয়ে নিয়মিত অফিস করতে হয়। প্রাইভেট কার ও মোটরসাইকেল চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বিগত দিনে সড়ক সংস্কারের নামে টেন্ডারবাজি এবং দুর্নীতি করা হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, শুধু এ সড়ক নয়, আমাকে যশোর-সাতক্ষীরা, যশোর-নড়াইল-ঢাকা সড়কসহ জেলার বিভিন্ন মহাসড়ক দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। এগুলো চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়লেও তা মেরামত ও স্থায়ী সংস্কার করতে সড়ক বিভাগ বারবার ব্যর্থ হয়েছে।’

যশোরের শার্শা উপজেলার সাইদুজ্জামান জনি নামে এক মোটরসাইকেল আরোহী বলেন, ‘যশোর-সাতক্ষীরা মহাসড়কের অবস্থা বেহাল। চলাচল করা দায় হয়ে পড়েছে। তার পরও ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। একবার মোটরসাইকেল পিছলে পড়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছি। দুর্ঘটনা অহরহ ঘটছে।’

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া বলেন, চলতি বছর অতিবৃষ্টিতে যশোরের বিভিন্ন মহাসড়কে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে যশোর-খুলনা, যশোর-ঝিনাইদহ, যশোর-সাতক্ষীরা মহাসড়কের বেশকিছু অংশে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এগুলো আমরা জরুরি সংস্কারের উদ্যোগ নিয়ে থাকি। 

এ বছর যশোর-খুলনা মহাসড়কে আড়াই কিলোমিটার রাস্তার ঢালাই কাজের দরপত্র প্রক্রিয়াধীন আছে। এ ছাড়া বিভিন্ন মহাসড়ক জরুরি সংস্কারের জন্য গত সেপ্টেম্বর মাসে সাত কোটি টাকার চাহিদা পাঠানো হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জরুরি সংস্কারের ক্ষেত্রে মহাসড়কগুলোতে ইটের কাজ করা হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বর্ষা মৌসুমে বিটুমেনের কাজ করা যায় না। জনগণের দুর্ভোগ কমাতে আমরা সড়কগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে ইট দিয়ে প্রাথমিক সংস্কারকাজ করে থাকি।’ 

কটিয়াদীতে ৫০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী ঢাকের হাট

প্রকাশ: ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৪৩ এএম
আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৫০ এএম
কটিয়াদীতে ৫০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী ঢাকের হাট
কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার পৌর সদরে পুরোনো বাজারে বসছে ঐতিহাসিক ঢাকের হাট। ছবি : খবরের কাগজ

প্রতিবছরের মতো এবারও দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে বসছে ৫০০ বছরের পুরোনো ঐতিহাসিক ঢাকের হাট। দিনভর এই হাটে ঢাকিরা বাদ্যযন্ত্র বাজান। বিভিন্ন জেলা থেকে পূজারিরা ছুটে আসেন এখান থেকে ঢাকিদের বায়না করতে।

সরেজমিনে দেখা যায়, প্রায় ৩০০ ঢাকি হাটে এসেছেন। তাদের থাকার জন্য বাজারে একটি বিশ্রামাগার তৈরি করা হয়েছে। তবে শৌচাগারের কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। বাজার শুরুর পর থেকে নিরাপত্তার স্বার্থে টহল দিচ্ছে সেনা ও পুলিশ সদস্যরা। 

জনশ্রুতি রয়েছে, ষোড়শ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে স্থানীয় রাজা নবরঙ্গ রায় তার প্রসাদে সবচেয়ে বড় দুর্গাপূজার আয়োজন করতেন। কটিয়াদী উপজেলার চারিপাড়া গ্রামে ছিল তার অট্টলিকা। 

প্রাসাদে আয়োজিত দুর্গাপূজার জন্য দেশসেরা ঢাকিদের সন্ধান করতে বিভিন্ন জায়গায় তিনি ডাকযোগে চিঠিপত্র পাঠিয়ে আমন্ত্রণ জানাতেন। রাজার আমন্ত্রণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ঢাকিরা জড়ো হতেন পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে। রাজা সশরীরে দাঁড়িয়ে থেকে তাদের থেকে বাছাই করে ঢাকিদের নিয়ে যেতেন প্রাসাদে এবং উপযুক্ত সম্মানী দিতেন।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হাটটি স্থানান্তরিত হয়ে বর্তমানে সেটি কটিয়াদী পৌর সদরের পুরাতন বাজারে বসছে। হিন্দু ধর্মাবলম্বী ছাড়াও অন্য ধর্মের মানুষের কাছেও এই হাটটি ঐতিহ্যের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। দূর-দূরান্ত থেকে বাদকদের বাজনা শুনতে উন্মুখ হয়ে থাকেন স্থানীয়রা।

হাটে আসা ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার চুড়াইন গ্রামের বাসিন্দা শ্যামল মনি দাস বলেন, ‘ঠাকুরদা গোরা চাঁদমনি দাসের আমল থেকে ঢাকঢোল বাজিয়ে আসছি। সঙ্গে আমার ছেলেরাও হাটে এসেছে। ভালো বায়না পেলে কারো বাড়িতে যাব।’

মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজং উপজেলার বলমন্তচরের বাসিন্দা সুশীল মনি দাস বলেন, ‘আমি টানা ১২ বছর ধরে এই হাটে ঢাকঢোল নিয়ে আসি। ৬০ বছর বয়স হয়েছে, তবুও ঢাক না বাজালে ভালো লাগে না।’ 

পৌর পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জনি কুমার সাহা বলেন, ‘কটিয়াদীতে প্রতিবছর পূজার তিন দিন আগে এখানে ঢাকঢোলের হাট বসে। হাটটি ইতিহাসের দিক থেকে অনেক পুরোনো। আমরা প্রশাসন ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় ঢাকিদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিই।’ কটিয়াদী পৌর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাবুজিৎ সাহা বলেন, ‘এটি একটি ঐতিহ্যবাহী ঢাকের হাট। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পূজারিরা এসে ঢাকিদের বায়না করে নিয়ে যান।’

উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ধ্রুবরঞ্জন দাস খবরের কাগজকে বলেন, ‘হাটটিতে বিশুদ্ধ খাবার পানি ও শৌচাগারের প্রয়োজন। একটি বিশ্রামাগার তাদের জন্য তৈরি করা হলেও সেটির কাজ অসমাপ্ত থেকে গেছে। আমরা এলাকাবাসী হিসেবে চাই, এখানে আগত ঢাকিদের জন্য প্রশাসন থেকে সার্বিক সুবিধা দেওয়া হোক।’ 

উপজেলা নির্বাহী অফিসার ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ‘হাটে যেন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিঘ্ন সৃষ্টি না হয় সেজন্য ঢাক বাজার কমিটি ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক খেয়াল রাখা হচ্ছে। আশা করছি, প্রতিবারের মতো এবারও সুশৃঙ্খলভাবে হাটের সব কার্যক্রম শেষ হবে।’

ঢাক বাজার সমিতির সভাপতি শীতল সাহা খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমরা এখানে পূজারিদের ঠিকানা ও ঢাকিদের ঠিকানা লিখে রাখি। কোনো পক্ষের সঙ্গে কোনো সমস্যা বা ঝামেলার সৃষ্টি হলে সেই বিষয়গুলো আমরা দেখি। মূলত একেকটি দল ৫০ হাজার থেকে শুরু করে দেড় লাখ টাকায় বায়না হয়। প্রতিটি দলে ১০ থেকে ১২ জন অথবা ১৫ জন থাকে।’

সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দুর্নীতি অপরাধীদের শাস্তির দাবিতে গাইবান্ধায় বিক্ষোভ ও সমাবেশ

প্রকাশ: ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৩৭ এএম
অপরাধীদের শাস্তির দাবিতে গাইবান্ধায় বিক্ষোভ ও সমাবেশ
ছবি : খবরের কাগজ

গাইবান্ধা সদর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের অনিয়ম-দুর্নীতির বিচার বিভাগীয় তদন্তসহ অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে জেলার বাম প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলগুলো এই বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলের আয়োজন করে। তারা শহরের ডিবি রোড গানাসাস মার্কেটের সামনে সমাবেশ শেষে একটি মিছিল বের করে। মিছিলটি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।

ওয়ার্কার্স পার্টির পলিট ব্যুরোর সদস্য আমিনুল ইসলাম গোলাপের সভাপতিত্বে বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য দেন বাংলাদেশের সাম্যবাদী আন্দোলনের নেতা মনজুর আলম মিঠু, ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা সভাপতি প্রণব চৌধুরী খোকন, বাসদ জেলা আহ্বায়ক গোলাম রাব্বানী, সিপিবির জেলা সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মুকুল, কৃষক শ্রমিক জনতালীগের জেলা সভাপতি মোস্তফা মনিরুজ্জামান, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের জেলা সম্পাদক রেবতী বর্মণ, সাম্যবাদী আন্দোলনের জেলা আহ্বায়ক নওশাদুজ্জামান নওশাদ, জাতীয় কৃষক সমিতির জেলা সভাপতি আশরাফ আলী, বাসদ জেলা সদস্যসচিব সুকুমার মোদক, সিপিবির জেলা সদস্য এমদাদুল হক মিলন, বাসদ মার্কসবাদীর জেলা সদস্য রাহেলা সিদ্দিকা, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন জেলা সংগঠক কনক রায়, কৃষক শ্রমিক জনতালীগের জেলা সদস্য জুয়েল মিয়া, সাম্যবাদী আন্দোলন জেলা সদস্য সবুজ মিয়া, তাপস রায় প্রমুখ।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, ভূমি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দলিল সম্পাদনে অতিরিক্ত টাকা আদায়, জাল দলিল, টাকার বিনিময়ে ভলিয়ম ও বালাম বই ছিঁড়ে ফেলা, একই পে-অর্ডার দাখিল করে একাধিক দলিল সম্পূর্ণ করার মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। অবিলম্বে অনিয়ম-দুর্নীতি বিচার বিভাগীয় তদন্তসহ অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন। 

তারা ক্ষতিগ্রস্ত ক্রেতাদের ক্ষতিপূরণ এবং জাল দলিল হওয়া জমির আসল দলিল ক্রেতাকে বুঝিয়ে দিতে কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান। সমিতির নামে অতীতে উত্তোলন করা সব টাকা ফিরিয়ে দেওয়াসহ অবৈধভাবে টাকা আদায়কারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন। এ সময় রেজিস্ট্রেশন বাবদ সরকার নির্ধারিত ফি অতিরিক্ত টাকা আদায় বন্ধ করাসহ অতিরিক্ত টাকা আদায়কারীদের শাস্তির দাবি করা হয়।

ময়মনসিংহে চিরকুট আতঙ্ক!

প্রকাশ: ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৩১ এএম
আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৩৩ এএম
ময়মনসিংহে চিরকুট আতঙ্ক!
বাড়ির গেটে ঝুলিয়ে রাখা একটি চিরকুট। ছবি : খবরের কাগজ

বাড়ির গেটে ঝুলিয়ে রাখা একটি চিরকুটে লেখা ছিল ৫০ হাজার টাকা দিতে হবে। এই টাকা না দেওয়ায় এক দিন পর আরেকটি চিরকুট দিয়ে এক লাখ টাকা দাবি করা হয়। এতেও কাজ না হলে আবারও চিরকুটের মাধ্যমে হত্যার হুমকিসহ স্ত্রী-সন্তানদের ক্ষতি করার কথা বলা হয়। ময়মনসিংহের নান্দাইল পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের নাথপাড়া মহল্লায় ঘটেছে এমন ঘটনা। একের পর এক হুমকির চিরকুট পেয়ে মহল্লার বাসিন্দারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। অনেকে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। যদিও পুলিশ বলছে, অপরাধীদের দ্রুত শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।

স্থানীয়রা জানান, নরসুন্দা নদীর কারণে উপজেলার অন্য এলাকা থেকে এই জায়গাটি প্রায় বিচ্ছিন্ন। গত ১ অক্টোবর একই মহল্লার সুনীল চন্দ্র বর্মণের বাসার ফটকে ৫০ হাজার টাকা চেয়ে কে বা কারা চিরকুট ফেলে রেখে যায়। টাকা না দেওয়ায় এক দিন পর এক লাখ টাকা দাবি করে আরেকটি চিরকুট রেখে যায়। এতেও কোনো সাড়া না পেয়ে তৃতীয় চিরকুটে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়।

গত রবিবার একই মহল্লায় বসবাস করা বন কর্মকর্তা মো. আল-আমিনের বাসায় ৫০ হাজার টাকা দাবি করে চিরকুট ফেলে রেখে যায় দুর্বৃত্তরা। চিরকুটে দুই দিনের মধ্যে টাকা না দিলে শিক্ষিকা স্ত্রী ও একমাত্র সন্তানের ক্ষতি করার হুমকি দেওয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে ওই দিন রাতে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। 

চিরকুট পাওয়ার বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে ভয়ে অনেকেই কথা বলতে রাজি হননি। তবে ওই মহল্লার আচারগাঁও উত্তরপাড়ার মোজ্জাম্মেল হক জানান, তার ভগ্নিপতি বন কর্মকর্তা মো. আল-আমিন কর্মস্থল ঢাকায় থাকেন। নান্দাইলের ওই মহল্লার বাড়িতে মোজ্জাম্মেল হকের বোন সালমা বেগম, আড়াই বছরের এক ভাগ্নে ও বোনের শাশুড়ি বসবাস করেন। বোন কাছাকাছি একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন।

নৌকা ব্যবহার করে সালমা বেগম প্রতিদিন নদী পার হয়ে মাদ্রাসায় যান। গত রবিবার সন্ধ্যার দিকে বাড়ির ফটক লাগানোর সময় সেখানে পলিথিন মোড়ানো একটি কাগজ ঝুলতে দেখতে পান। কৌতূহলবশত পলিথিন খুলে ভেতরের হুমকির চিরকুট পাওয়া যায়। কাগজটিতে লেখা ছিল, ‘চাহিদামতো টাকা না পেলে বাড়িতে আগুন জ্বলবে এবং স্ত্রী-সন্তানের ক্ষতি হবে।’ টাকাগুলো বাড়ির কাছে বাঁধা নৌকায় রেখে দিতে বলা হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘চিরকুট দিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করায় এলাকাবাসীর মধ্যে ভীতি তৈরি হয়েছে। অনেকে ভয়ে রাতে ঘর থেকে বের হচ্ছেন না।’ আসাদ মিয়া নামে আরেকজন বলেন, ‘কয়েক দিনের মধ্যেই একাধিক চিঠি পেয়েছি। এটি নিঃসন্দেহে আতঙ্কের। ঘটনার রহস্য উদঘাটনসহ এই কাজটি যারা করছে, দ্রুত তাদের আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন।’

এ বিষয়ে নান্দাইল মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরিদ আহমেদ খবরের কাগজকে বলেন, যারা চিরকুট দিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে, তাদের দ্রুত সময়ের মধ্যে শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার কাজ চলছে।