রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার ইসমাইল হোসেন নামে এক যুবককে গুম করার অভিযোগে র্যাবের ৭ সদস্যকে আসামি করে মামলা করেছেন তার স্ত্রী নাইস খাতুন (৩০)।
স্বামী নিখোঁজের ৮ বছর পর বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গোদাগাড়ী থানার আমলি আদালতে এই মামলা করেন তিনি।
নিখোঁজ ইসমাইল হোসেন গোদাগাড়ী পৌরসভার মহিষালবাড়ির আলীপুর মহল্লার ইসরাইল হোসেনের ছেলে। গোদাগাড়ী বাজারে তার স্বর্ণের দোকান রয়েছে। গুম হওয়ার সময় তার বয়স ছিল ৩০ বছর।
মামলার বাদী নাইস খাতুন জানান, ২০১৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর দোকানে যাওয়ার সময় তার স্বামীকে তুলে নিয়ে গুম করেছে র্যাব। তাই তিনি সেই সময়ে রেলওয়ে কলোনি ক্যাম্পে কর্মরত র্যাব সদস্যদের আসামি করেছেন।
এই মামলার আসামিরা হলেন, র্যাব-৫ এর তৎকালীন রেলওয়ে কলোনি ক্যাম্পের নায়েক সুবেদার শাহিনুর রহমান, উপপরিদর্শক (এসআই) দেবব্রত মজুমদার, দুলাল মিয়া, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) কামাল হোসেন, ল্যান্সনায়েক মাহিনুর খাতুন, সিপাহি কহিনূর বেগম ও কনস্টেবল মনিরুল ইসলাম।
নাইস খাতুন জানান, ২০১৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর তার স্বামী ইসমাইল হোসেন দোকানে যাওয়ার জন্য মোটরসাইকেল নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন। রাত ৯টার দিকে উপজেলা সদর ডাইংপাড়া মোড়ে পৌঁছালে র্যাবের সদস্যরা তাকে তুলে নিয়ে যান। তিন দিন পর ইসমাইল অন্য এক ব্যক্তির মুঠোফোন নম্বর থেকে কল করে পরিবারকে জানান, তিনি র্যাবের হেফাজতে আছেন।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার দিন রাজশাহী মহানগরীর রাজপাড়ার কাশিয়াডাঙ্গা মোড় মেসার্স আমিন ফিলিং স্টেশনের সামনে মতিহারের শ্যামপুর পশ্চিমপাড়ার মৃত দুলাল শেখের ছেলে আলাউদ্দিন ও বাগমারা উপজেলার ঠাকুরপাড়া মৃত আমেদ আলীর মেয়ে শিরিনাকে মাদকসহ গ্রেপ্তার করে (আলাউদ্দিন ও মোসা. শিরিনা ইসমাইলের স্ত্রী নাইস খাতুনের করা মামলার সাক্ষী)। তাদের (সাক্ষীদের) দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তার স্বামী ইসমাইল হোসেনকে সেদিন রাত সাড়ে ৯টার দিকে আসামিরা গোদাগাড়ী ডাইংপাড়া গোলচত্বর থেকে জোরপূর্বক র্যাবের পিকআপে তুলে নেয়। এ সময় ইসমাইল হোসেনের মোটরসাইকেল আসামিরা চেয়ে নেয়।
পরবর্তী সময়ে আসামিরা সিপিএসসি, রেলওয়ে কলোনি ক্যাম্প র্যাব-৫-এর অফিসে আলাউদ্দিন এবং শিরিনার সঙ্গে ইসমাইল হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। পরবর্তী সময়ে নায়েক সুবেদার শাহিনুর রহমান বাদী হয়ে আলাউদ্দিন ও মোসা. শিরিনার বিরুদ্ধে রাজপাড়া থানার মামলা দায়ের করেন। কিন্তু মো. ইসমাইলকে আদালতে সোপর্দ না করায় র্যাবের অফিসে বারবার যোগাযোগ করা হয়। তারা ইসমাইলকে আদালতেও সোপর্দ করে না, আবার আমাদের কাছে ফেরত দেয় না। আমরা র্যাব-৫-এর তৎকালীন অধিনায়কের সঙ্গে একাধিকবার দেখা করলেও তিনি কোনো সদুত্তর না দিয়ে সময় ক্ষেপণ করেন। ইসমাইলকে আজ পর্যন্ত ফেরত পাওয়া যায়নি।
মামলায় আরও দাবি করা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ইসমাইলকে হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ করেছে। এখন পর্যন্ত ইসমাইল হোসেন ফেরত না আসায় ধারণা করা হচ্ছে আসামিরা তাকে অপহরণ ও হত্যা করে লাশ গুম করেছে।
নাইস খাতুন জানান, র্যাব ক্যাম্পে থাকা যে দুই ব্যক্তি ইসমাইলকে দেখেন এবং যারা তাকে তুলে নিয়ে যেতে দেখেন তাদের সাক্ষী করা হচ্ছে। এতদিন র্যাবের ভয়ে তিনি মামলা করতে পারেননি। এখন পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে তিনি মামলা করার উদ্যোগ নিয়েছেন। থানায় গেলে পুলিশ আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেয়। তাই তিনি আদালতে মামলা করেছেন। তিনি ন্যায়বিচার পাবেন বলে আশা করছেন।
এ বিষয়ে নাইসের আইনজীবী মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘গত বুধবার ইসমাইলের স্ত্রী আদালতে মামলার আবেদন করেন, বৃহস্পতিবার মামলা হয়েছে। আদালতের বিচারক মো. লিটন হোসেন মামলাটি গ্রহণ করেছেন।’
আদালত সিআইডিকে আগামী ২৪ নভেম্বরের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলেছেন।