চট্টগ্রামের বড় ভোগ্যপণ্যের বাজার খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়ায় কমতে শুরু করেছে দাম। চার দিনের ব্যবধানে দেশি, ভারতীয় ও পাকিস্তানি পেঁয়াজের কেজিতে কমেছে ১০ টাকা। অন্যদিকে চীন ও মিসর থেকে আমদানি করা পেঁয়াজও বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকার ভেতরে।
বন্যা পরিস্থিতির কারণে সরবরাহ সংকটের অজুহাতে চার দিন আগে খাতুনগঞ্জে বেসামাল হয়ে পড়ে পেঁয়াজের বাজার। প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ঠেকে শত টাকার ওপরে। বর্তমানে পাইকারি এই বাজারে দেশি ও ভারতীয় পেঁয়াজের সরবরাহ কমেছে। তবে চীন, মিসর ও পাকিস্তান থেকে আমদানি বাড়ায় ও বেচাবিক্রি কম থাকায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটির দামও নিম্নমুখী।
চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্র থেকে জানা গেছে, চীন, মিসর ও পাকিস্তান থেকে জুলাই থেকে আগস্ট পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দরে নেমেছে ৪ হাজার ৭০০ টন পেঁয়াজ।
চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপপরিচালক ড. মোহাম্মদ শাহ আলম খবরের কাগজকে বলেন, ২০২৩ সালে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে এসব দেশ থেকে ৩ হাজার ২০০ টন পেঁয়াজ এসেছিল। আর চলতি বছরের জুলাই-আগস্ট মাসে এসেছে ৪ হাজার ৭০০ টন। গত ২৯ আগস্ট চট্টগ্রাম বন্দর থেকে খালাস হয়েছে সাড়ে ৩০০ টন। আমদানির পাইপলাইনে আরও পেঁয়াজ রয়েছে।
এদিকে ১০ দিন ধরে সীমান্ত দিয়ে আমদানি বন্ধ হওয়ায় খাতুনগঞ্জে ভারতীয় পেঁয়াজের সরবরাহ কমেছে। মৌসুম শেষ হওয়ায় দেশি পেঁয়াজেও রয়েছে সংকট। কিন্তু বিদেশি পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়ায় সব ধরনের পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে। চার দিন আগে ভারতীয় ও দেশি পেঁয়াজ ১১০ থেকে ১১৫ টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে এসব পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০৪ থেকে ১০৫ টাকা।
অন্যদিকে পাকিস্তানি পেঁয়াজের কেজিতে ১০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৮৫ টাকায়। তা ছাড়া প্রতি কেজি চায়না পেঁয়াজ ৭০ থেকে ৭৫ টাকা ও মিসর থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিয়া মার্কেট ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিস খবরের কাগজকে বলেন, বর্তমানে ভারতীয় ও দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ কম।
তবে মিসর, চায়না, পাকিস্তান থেকে পেঁয়াজ আসছে। বর্তমানে পণ্যটির সরবরাহ বেড়েছে। কিন্তু সেভাবে বেচাবিক্রি নেই। তাই দামও কমতির দিকে রয়েছে। পাশাপাশি আগামী সপ্তাহ থেকে ভারতীয় পেঁয়াজ আসতে পারে। তখন দাম আরও কমে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
এদিকে সীমান্তের ব্যবসায়ীরা জানান, বন্যার কারণে ভারতে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন কৃষকরা। গত ১৮ আগস্ট থেকে ২৮ আগস্ট পর্যন্ত ভারতে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৪৫ রুপিতে। এসব পেঁয়াজ আনতে গেলেই আমদানিকারকের কেজিপ্রতি খরচ পড়বে শত টাকার ওপরে। তাই ১০ দিন ধরে ভারত থেকে কোনো পেঁয়াজ আনেননি তারা। তবে প্রতিবেশী দেশটিতে গত ২৯ আগস্ট থেকে দাম কমতে শুরু করে। বিক্রি হয় ৩৫ রুপিতে। তাই আমদানিকারকরা এসব পেঁয়াজ আনতে এলসি খুলেছেন। আগামী সপ্তাহে এসব পেঁয়াজ বেচাকেনা শুরু হবে বলে জানান তারা।
সম্প্রতি দেশে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনী অংশে ব্যাপক ক্ষতি হয়। বন্যার পানি সরে গেলেও ভোগ্যপণ্যবাহী গাড়ি আসতে পারছিল না। এতে পুরো খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজসহ বিভিন্ন ভোগ্যপণ্যের সংকট দেখা দেয়। আর এ অজুহাতে চার দিন আগেও পাইকারি এই বাজারে আগের কেনা দেশি ও ভারতীয় পেঁয়াজ প্রতি কেজি ১১০ থেকে ১১৫ টাকায় বিক্রি হয়।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন খবরের কাগজকে বলেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সব সময় নানা অজুহাতে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ানোর চেষ্টা করে। সম্প্রতি হাজার টাকায় কাঁচা মরিচ বেচাবিক্রি হয়েছে। এটা খুব দুঃখজনক। বর্তমানে শুধু পেঁয়াজ নয়, সব ধরনের ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ বাড়তে শুরু করেছে। কারণ পণ্য নিয়ে গাড়ি আসতে পারছে। এখন প্রশাসন, ভোক্তা অধিকারের উচিত হবে বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. ফয়েজ উল্যাহ খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমরা প্রতিনিয়িত বিভিন্ন বাজারে যাচ্ছি। এমনকি শুক্রবারেও অভিযান অব্যাহত রেখেছি। আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তবুও কোনো ভোক্তা যদি বাড়তি দাম, প্রতারণা বা হয়রানির শিকার হন, আমাদের কাছে জানানোর ব্যবস্থা রয়েছে। আমরা অবশ্যই বিধিমোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’