লক্ষ্মীপুর জেলার ৫টি উপজেলায় বন্যায় ক্ষতির শিকার হয়েছে প্রায় সাড়ে ৫ লাখের বেশি পরিবারের ১০ লাখের বেশি মানুষ। এখন পর্যন্ত ১৮ হাজার কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। মানবেতর জীবনযাপন করছেন এসব ঘরের বাসিন্দারা। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্তের শিকার সদর উপজেলার পূর্বাঞ্চলের ১২টি ইউনিয়ন ও লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ১৫টি ওয়ার্ডের ৪ লাখের বেশি মানুষ। সেখানে উল্লেখযোগ্য তেমন উন্নতি হয়নি। বন্যার উন্নতি হয়েছে রামগতি, কমলনগর, রায়পুর ও রামগঞ্জ উপজেলায়।
ক্ষতিগ্রস্তরা জানায়, দীর্ঘদিন ধরে পানিবন্দি থাকতে হচ্ছে। ফলে ঘরের আসবাবপত্র নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি কাঁচা ঘরবাড়ি ভেঙে পড়ে। সামনের দিনগুলোতে ঘরবাড়ি তৈরি করে কীভাবে ঘুরে দাঁড়াবে, সেই চিন্তায় দিন কাটছে তাদের। অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা বলেন, দোকানপাট থেকে কিছুটা পানি নামছে। এখন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ চলছে। তবে কবে নাগাদ ব্যবসা চালু হবে, সেটা এখনো নিশ্চিত নয়। এবারের মতো এত দুর্ভোগের মধ্যে পড়েনি বলে জানান তারা।
বাঞ্চানগর এলাকার বাসিন্দা জহির উদ্দিন বলেন, ‘গত ১৫ দিন ধরে ঘরে বসে আছি। কাজকর্ম নাই। ঘরের টিন ও ভিটার মাটি ধসে পড়ায় বসবাস করা যাচ্ছে না। স্ত্রী ও ৫ ছেলেমেয়েকে নিয়ে খেয়ে, না খেয়ে কষ্টে দিন কাটছে। এখন পর্যন্ত কোনো সহায়তা পাইনি।’ একই অভিযোগ পাশের বাড়ির বাসিন্দা সিরাজ উল্যাহসহ কয়েকজনের।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. ইউনুছ মিয়া বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ১৮ হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। ক্ষতির শিকার হয়েছে প্রায় সাড়ে ৫ লাখের বেশি মানুষ। বন্যার কিছুটা উন্নতি হওয়ায় আশ্রয়কেন্দ্র থেকে লোকজন বাড়িতে ফিরছেন। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। এবারের বন্যায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বানভাসি মানুষের এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে অনেক সময় লাগবে। এ ব্যাপারে কাজ করে যাচ্ছি।’
লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নাহিদ-উজ-জামান বলেন, গত চার দিনে রামগতি ও কমলনগর উপজেলায় পানি কমেছে আড়াই ফুট। এ ছাড়া সদর ও লক্ষ্মীপুর পৌরসভায় কমেছে এক ফুট। রামগঞ্জ ও রায়পুরেও পানি নেমেছে ধীর গতিতে। আশা করি, অল্প সময়ের মধ্যে বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।’
এদিকে লক্ষ্মীপুরের হাটবাজার, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও ঘরবাড়ি থেকে পানি নামায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। দীর্ঘদিন বাড়িঘরে পানি থাকায় নষ্ট হচ্ছে আসবাবপত্রসহ কাঁচা ঘরবাড়ি। গত সোমবার রাতে বৃষ্টি হওয়ার কারণে পানি তেমন কমেনি। গত চার দিনে দুই থেকে আড়াই ফুট পানি কমেছে। ফলে ধীরে ধীরে বন্যার উন্নতি হচ্ছে। পানি কমায় ১৯৮টি আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বানভাসি মানুষ বাড়ির দিকে ফিরতে শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে দুদিনে প্রায় ১৮ হাজার মানুষ বাড়িতে ফিরে গেছেন। তবে এখনো প্রায় ৩২ হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন।’