ঢাকা ২৪ আশ্বিন ১৪৩১, বুধবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৪

লক্ষ্মীপুরে বাড়ছে ডায়রিয়ার প্রকোপ, ওষুধের সংকট

প্রকাশ: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৪ পিএম
লক্ষ্মীপুরে বাড়ছে ডায়রিয়ার প্রকোপ, ওষুধের সংকট
ছবি: খবরের কাগজ

বন্যার পানি কমতে শুরু করায় লক্ষ্মীপুরে ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) দুপুর পর্যন্ত জেলার পাঁচটি উপজেলায় শিশুসহ দুই হাজারের বেশি মানুষ ডায়রিয়া, জ্বর ও চর্মরোগে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

জেলা সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, বেশির ভাগ রোগীই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। এর পরের অবস্থানে রয়েছে সর্দি জ্বরে আক্রান্ত রোগী। দুই দিন ধরে স্বাস্থ্য উপকেন্দ্রসহ সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে বেড়েছে রোগীর চাপ। শয্যাসংকটের কারণে অনেক রোগীর ঠাঁই হয়েছে মেঝেতে। চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সসহ সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতাল এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে স্যালাইনসহ ডায়রিয়ার জরুরি ওষুধের সংকট দেখা দিয়েছে। বাধ্য হয়ে বাইরে থেকে ওষুধ কিনে আনছেন রোগীর স্বজনরা। 

বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, ডায়রিয়া ওয়ার্ডের প্রতিটি বেডে একাধিক রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া হাসপাতালের মেঝেতে বিছানা পেতে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে অনেককে। নার্সসংকটে রোগী ও তাদের স্বজনদের ভিড় ঠেলে চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা। একই চিত্র দেখা গেছে, জেলার রায়পুর, রামগঞ্জ, কমলনগর ও রামগতি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালেও।

লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের নার্স নোমান হোসেন বলেন, ‘১০ বেডের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে বর্তমানে ভর্তিই আছেন ১২৫ জন রোগী। দু-একজন নার্স দিয়ে এত রোগীর চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা খুবই কষ্টকর। একজনের স্যালাইন লাগাতে গেলে ১০ জন ডাকেন ওষুধ দিতে। তার ওপর স্যালাইনসহ ডায়রিয়ার ওষুধসংকট। রোগীর স্বজনরা বাইরে থেকে ওষুধ কিনে এনে দিচ্ছেন।’ 

সাত মাসের শিশু মিরাজ দুই দিন ধরে জ্বর ও ডায়রিয়ায় ভুগছে। তার মা তাসলিমা আক্তার বলেন, ‘১০ দিন ধরে আমাদের বাড়িতে কোমরসমান পানিতে আমরা বন্দি আছি। টয়লেট ও ডোবার নোংরা বন্যার পানিতে মিশে গেছে। এখন আমার সাত মাসের ছেলের জ্বর আর ডায়রিয়া। খুব খারাপ অবস্থা। সরকারি হাসপাতালে এসে অস্বস্তিতে পড়েছি। গুদাম ঘরের মতো পরিস্থিতি। আরও দুজন রোগীর সঙ্গে একই শয্যায় আমার ছেলের চিকিৎসা চলছে।’ 

শহরের মুক্তিগঞ্জ থেকে শিশুকন্যা তাসুকে নিয়ে ভর্তি দিনমজুর খোকন বলেন, ‘বন্যার পানি পচে চারদিকে ডায়রিয়াসহ নানা রোগবালাই দেখা দিয়েছে। আমার ১০ বছরের মেয়ে ডায়রিয়ায় ভুগছে। একেবারে কাহিল হয়ে পড়েছে সে। কিছু বললে নার্সরা বলেন ওষুধ নাই। স্যালাইনসহ সব ওষুধই বাইরের ফার্মেসি থেকে কিনে আনতে হচ্ছে।’

চর লরেন্স থেকে আসা সামছুন নাহার, সদরের চৌধুরী বাজার এলাকা থেকে আসা ইমনসহ কয়েকজন রোগীর স্বজন বলেন, ‘শয্যা পাননি। তাই মেঝেতে বিছানা পেতে আছেন। ময়লা, দুর্গন্ধ আর রোগীর ভিড়ে টিকে থাকাই দায় হয়ে পড়েছে। এখানে চিকিৎসা করাতে এসে রোগীর পাশাপাশি আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ছি।’

ডায়রিয়া বিভাগের ইনচার্জ লিলু রানী দাস বলেন, গত তিন দিনে ডায়রিয়া ও জ্বর নিয়ে তিন শতাধিক রোগী ভর্তি হয়েছেন।

ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ৩২ জন গত শুক্রবার ভর্তি হলেও গত চার দিনে ডায়রিয়া ও জ্বর নিয়ে গণহারে রোগী ভর্তি হচ্ছেন। ১০ জনের বেড তো খালি নেই। মেঝেতেও হাঁটার জায়গা নেই। চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। 

এদিকে জেলার পাঁচটি উপজেলার ৪০০টি আশ্রয়ণকেন্দ্রে বাড়ছে ডায়রিয়া ও জ্বরে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা। মেডিকেল টিমের কর্মীরা চিকিৎসাসেবা দিলেও তা অপর্যাপ্ত। মাবেতর জীবনযাপন করছেন আশ্রয়ণকেন্দ্রের বাসিন্দা ও বন্যার্ত স্থানীয় বাসিন্দারা।

লক্ষ্মীপুরের সিভিল সার্জন ডা. আহমদ কবির জানান, বন্যার কারণে ডায়রিয়াসহ চারদিকে পানিবাহিত রোগের প্রকোপ দেখা দিচ্ছে। স্বাস্থ্য বিভাগের উদ্যোগে শুরু থেকে আশ্রয়কেন্দ্রসহ বিভিন্ন এলাকায় ৬৪টি মেডিকেল টিমের সদস্যরা চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন। তবে হাসপাতালগুলোতে রোগী বাড়ায় কলেরার স্যালাইনসহ ওষুধের সংকট দেখা দিয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। শিগগির স্যালাইনসহ ওষুধ সরবরাহ করা হলে সংকট নিরসন করা হবে বলে জানান তিনি।

মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম/এমএ/

বাঁধ ভেঙে প্লাবিত অর্ধশত গ্রামের মানুষ দিশেহারা

প্রকাশ: ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:২৪ এএম
অর্ধশত গ্রামের মানুষ দিশেহারা
নিজ বসতবাড়ির ধ্বংসস্তূপের ওপরে দাঁড়িয়ে প্রতিবন্ধী হাফিজুল-শেফালী দম্পতির একমাত্র সন্তান সাব্বির সরদার। সাব্বির নিজেও একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী। সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটার নগরঘাটা থেকে তোলা। খবরের কাগজ

হাফিজুল হোসেন ও শেফালী খাতুন দম্পতি সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা থানা এলাকার নগরঘাটায় বসবাস করেন। দুই শতক জমির ওপর নির্মিত মাটির একটি ঘরই ছিল তাদের শেষ সম্বল। সম্প্রতি টানা বৃষ্টিপাত ও বেতনা নদীর বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় তাদের এলাকা প্লাবিত হয়। এতে গত ২৬ সেপ্টেম্বর এই দম্পতিকে আশ্রয়স্থল হারাতে হয়।

স্বামী-সন্তান প্রতিবন্ধী হওয়ায় ভাতার টাকায় কোনো রকমে সংসার চলত শেফালীর। একই সঙ্গে ইট ভাটায় কাজ করে শ্রমে-ঘামে মাটির ঘরে তৈরি করেন প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র। তবে এর কোনটাই রক্ষা করতে পারেননি শেফালী। এক কাপড়ে স্বামী, সন্তান নিয়ে তাকে ঘর থেকে বেড়িয়ে আসতে হয়।

সরেজমিনে হাফিজুল-শেফালীদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তাদের ঘর ভেঙে মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে ধ্বংসস্তূপের ক্ষত। মাথা গোঁজার ঠাঁই না থাকায় পানি নেমে গেলেও এখনো প্রতিবেশীর বাড়িতে আশ্রিত অবস্থায় দিন পার করছেন তারা। সরকারি কিংবা বেসরকারিভাবে মেলেনি কোনো সহায়তা। টাকা না থাকায় নতুন করে ঘর বানাতে পারছেন না। এতে ঘরবাড়ি হারিয়ে এই দম্পতি দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

শেফালী খাতুন জানান, একদিকে বৃষ্টি, অন্যদিকে বেতনার বাঁধ ভেঙে তাদের এলাকা প্লাবিত হয়। এতে প্রচণ্ড পানির তোড়ে ঘটনার দিন দুপুরে বসতবাড়ি ভেঙে যায়। সে দিন তারা ঘর থেকে যে কাপড় নিয়ে বের হয়েছিলেন, সেগুলোই এখন একমাত্র সম্বল। কোনো রকমে স্বামী-সন্তান নিয়ে প্রাণে বাঁচলেও রক্ষা করা সম্ভব হয়নি গৃহস্থালির আসবাবপত্র।

ক্ষোভ প্রকাশ করে শেফালী বলেন, এখন পর্যন্ত কেউ সহায়তার হাত বাড়ায়নি। বাঁচলাম কী মরলাম কেউ খোঁজ রাখেনি। গত কয়েক দিন ধরে মানুষের দেওয়া খাবার খেয়ে কোনোমতে বেঁচে আছি। স্বামী-সন্তানের প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা আর নিজের পরিশ্রমের অর্থ দিয়েও যেখানে পেটের খাবার জোগানো দায়, সেখানে সহায়তা ছাড়া নতুন করে ঘর বানানো আমার পক্ষে সম্ভব না।

শুধু হাফিজুল-শেফালি দম্পতির বসতবাড়ি নয়। একদিকে বৃষ্টি অপরদিকে বেতনার বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করার ফলে নগরঘাটা এলাকাসহ ৫০টি গ্রামের অধিকাংশ মাটির ঘরের একই দশা। বেতনা নদীর নিকটবর্তী হওয়ায় নগরঘাটা এলাকার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণটা বেশি। এখানকার মাটির ঘর বলতে শুধু ধ্বংসস্তূপের চিহ্ন। ঘরবাড়ি, গাছপালা, শৌচাগার, হাঁস-মুরগির খোয়াড় সব ভেঙে পড়ে আছে। ঘর ভেঙে মিশে গেছে মাটির সঙ্গে।

এমনই একজন নগরঘাটা এলাকার ভ্যানচালক আব্দুর রহমান। গত ২৭ সেপ্টেম্বর বসতবাড়ি হারানোর পর থেকে গোয়ালঘরে বসবাস করতে হচ্ছে তাকে। আব্দুর রহমান বলেন, ঘর বাড়ি ভেঙে যাওয়ার পর কিছুদিন অন্যের জমিতে থাকতে হয়েছে। পরে প্রতিবেশীদের নানান সমস্যা হওয়ায় সেখানে আর থাকা হয়নি। নতুন করে ঘর নির্মাণ কিংবা সংস্কার করার অর্থ আমার ছিল না। এ জন্য উপায়ন্তর না পেয়ে ভ্যানের ব্যাটারি বিক্রি করে গোয়ালঘরে থাকার পরিবেশ তৈরি করি। এখন স্ত্রীকে নিয়ে সেখানে থাকতে পারলেও অনাহারে দিন কাটছে। তার ওপর ভ্যানের ব্যাটারি বিক্রি করায় আয়ের উৎসও বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানান তিনি।

একই এলাকার নাসিরউদ্দিন বলেন, এলাকার সবার মতো তার মাটির ঘরটিও ভেঙে গেছে। বর্তমানে অন্যের আশ্রয়ে রয়েছেন। সরকারি কিংবা বেসরকারিভাবে কোনো সহায়তা না পাওয়াতে মানবিক বিপর্যয়ের শঙ্কা করছেন তিনি।

এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। তাই তার বক্তব্য জানা যায়নি।

গত ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে ভারী বর্ষণের কারণে ১৭ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বিনেরপোতা এলাকার বেতনা নদীর বাঁধ ভেঙে ৪০টি গ্রাম প্লাবিত হয়। চার দিন পর ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধটি স্থানীয়রা স্বেচ্ছাশ্রমে মেরামত করেন। তবে ২১ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় সংস্কার করা বাঁধ আবারও ভেঙে যায়। পরে ২৯ সেপ্টেম্বর বাঁধটি মেরামত করা সম্ভব হলেও ততক্ষণে বেতনার পানিতে প্লাবিত হয় কমপক্ষে ৫০টি গ্রাম। এ সময় পানির তোড়ে পড়ে অধিকাংশ মাটির ঘর ভেঙে মাটিতে মিশে যায়।

ময়মনসিংহ-নেত্রকোনায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

প্রকাশ: ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০১:৪৫ এএম
আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ১১:২৬ পিএম
ময়মনসিংহ-নেত্রকোনায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি
ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি। ছবি : খবরের কাগজ

ভারী বৃষ্টি না থাকা ও রোদ উঠায় শেরপুরে ধীরে ধীরে কমছে বন্যার পানি। উজান থেকে নামা এই পানির কারণে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। আর কিছু স্থানে পানি কমতে শুরু করায় ভেসে উঠছে ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন। দুর্গত এলাকায় দেখা দিয়েছে খাবার ও সুপেয় পানির সংকট। অনেক জায়গাতেই পৌঁছায়নি ত্রাণ সহায়তা। তবে জেলার বন্যার সার্বিক পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। বন্যায় এখন পর্যন্ত জেলায় ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে নেত্রকোনায় অতিবৃষ্টির কারণে আবার বাড়তে শুরু করেছে নদ-নদীর পানি। আর বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে ময়মনসিংহের বিভিন্ন ইউনিয়নে। শেরপুর, নেত্রকোনা ও ময়মনসিংহ প্রতিনিধির পাঠানো খবর। 

শেরপুরে বন্যায় নিহতরা হলেন নালিতাবাড়ীর খলিসাকুড়া এলাকার খলিলুর রহমান (৬৫), আন্ধারুপাড়া এলাকার ইদ্রিস আলী (৬৩), নিশ্চিন্তপুর কুতুবাকুড়া গ্রামের দুই ভাই আলম (১৭) ও হাতেম (৩০), বাঘবেড় বালুরচরের ওমেজা বেওয়া (৫৫), চিকনা এলাকার উজ্জ্বল (৫০), ঘোনাপাড়া এলাকার জিমি আক্তার (৮) ও নকলার গজারিয়া এলাকার আ. রাজ্জাক (৫০) ও টালকি ইউনিয়নের রাহিম (৫) পানিতে ডুবে মারা গেছেন। এ ছাড়া নিখোঁজ রয়েছেন এক নারী।

এদিকে শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলাতে পানি কমছে। কিন্তু এখনো ঘরে পানি রয়েছে শেরপুর সদরের গাজীরখামার, বাজিতখিলা ও ধলা ইউনিয়নে এবং নকলা উপজেলার নায়ারণখোলা, উরফা ইউনিয়নে। স্থানীয় প্রশাসন, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি সেনাবাহিনী, বিজিবি ও বিভিন্ন দপ্তর থেকে ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে দুর্গম এলাকায়। তবে সব জায়গায় নৌকা না থাকায়, ত্রাণ সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে।

শেরপুর জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ভারী বৃষ্টি না হলেও কোনো কোনো উপজেলায় হালকা বৃষ্টি হয়েছে সকালে। এতে কোনো প্রভাব পড়েনি নদীগুলোতে। সবগুলো নদীর পানি বিপৎসীমার অনেক নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। চলতি বন্যার কারণে জেলার ২৪২টি প্রাথমিক ও ৮৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি জেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে প্রশাসন। এসব প্রতিষ্ঠানে পানিবন্দিদের উদ্ধার করে রাখা হচ্ছে এবং তাদের মাঝে ত্রাণ ও রান্না করা খাবার দেওয়া হচ্ছে।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, জেলার ভোগাই নদীর পানি ১৬৯ সেন্টিমিটার, চেল্লাখালী নদীর ৮৭ সেন্টিমিটার ও পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপৎসীমার ৫২২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া অপর দুটি পাহাড়ি নদী মহারশি ও সোমেশ্বরীর পানি বিপৎসীমার নিচে রয়েছে।

জেলা কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক ড. সুকল্প দাস জানান, এবারের বন্যায় পৌনে দুই লাখ কৃষকের প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে, এতে ক্ষতির পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকা। ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকারি নানা প্রণোদনাসহ পরবর্তীতে সহযোগিতা করা হবে।

জেলা মৎস্য বিভাগে মৎস্য কর্মকর্তা প্রনব কুমার কর্মকার বলেন, ‘এবারের বন্যায় জেলার ৭ হাজার ৩০০ পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। এতে করে খামারিরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ৭০ কোটি টাকার ওপরে ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে যা যা করণীয় মৎস্য বিভাগ তা করবে।’

নেত্রকোনায় থামেনি বৃষ্টি, আবারও বাড়ছে পানি 

নেত্রকোনায় দুই দিন বৃষ্টি কমার ফলে কমতে শুরু করেছিল নদ-নদীর পানি। সোমবার রাত থেকে আবারও শুরু হয়েছে বৃষ্টি। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে একটানা বৃষ্টিপাতের সঙ্গে কখনো হচ্ছে বজ্রপাত। একটানা বৃষ্টিতে বন্যা পরিস্থিতির ক্রমশ অবনতির দিকে এগোচ্ছে। অনেক স্থানে বাড়িতে পানি উঠায় চলাচল করতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বন্যার্তদের।

এ সময় সাধারণভাবে বৃষ্টি ও ঢলের পানিতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হলেও তা স্থায়ী হয় না। এবার ছয়টি উপজেলার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। জেলা কৃষি বিভাগের হিসাব অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অন্তত ২০ হাজার হেক্টর জমির ধান। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২০০-এর বেশি মৎস্য খামার ও পুকুরের মাছ। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ১৯১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

ময়মনসিংহে পানি বাড়ায় আতঙ্কিত মানুষ

গত কয়েক দিনের বৃষ্টি আর ভারতের পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলে ময়মনসিংহের ধোবাউড়া, হালুয়াঘাট উপজেলায় বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। বন্যা দেখা দিয়েছে পার্শ্ববর্তী উপজেলা ফুলপুরেও। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অসংখ্য মানুষ। তবে সোমবার কোথাও পানি কম ছিল আবার কোথাও স্থিতিশীল ছিল। কিন্তু গতকাল মঙ্গলবার বন্যা পরিস্থিতির আবার অবনতি হয়েছে। এদিন ভোর থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত টানা বৃষ্টি হওয়ায় এই তিন উপজেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বৃষ্টি বাড়লে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা রয়েছে।

ফুলপুরের ইউএনও এ বি এম আরিফুল ইসলাম জানান, নতুন করে ১৬টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। নতুন একটি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে, ত্রাণ ও উদ্ধার কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। 

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা ছানোয়ার হোসেন বলেন, ‘তিনটি উপজেলায় ৩৪ হাজার পরিবারের দেড় লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকায় ৬৩ মেট্রিক টন চাল, ৭ লাখ টাকা ও ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। বরাদ্দ সাপেক্ষে ত্রাণ কার্যক্রম চালানো হবে।’

চমেক হাসপাতালে সাবেক এমপি লতিফ

প্রকাশ: ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৪৭ পিএম
চমেক হাসপাতালে সাবেক এমপি লতিফ
ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম-১১ আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য এমপি লতিফকে (৫৬) চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। 

মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে তাকে কারারক্ষীরা হাসপাতালে নিয়ে আসেন। 

এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও পাওয়া গেছে। ভিডিওতে দেখা গেছে, কয়েকজন কারারক্ষী সন্ধ্যার দিকে সাবেক এমপি লতিফকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন। লতিফ হুইল চেয়ারে বসে ছিলেন। তার মুখে মাস্ক এবং ডান দিকের কপালে ব্যান্ডেজ দেখা যায়। 

চমেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক আলাউদ্দিন তালুকদার খবরের কাগজকে বলেন, কারারক্ষীদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি, বাথরুমে মাথাঘুরে পড়ে ডান পাশের কপালে আঘাত পান সাবেক এই সংসদ সদস্য। বর্তমানে তিনি হাসপাতালের ১৯নং ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আছেন। 

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ওজু করতে গিয়ে পা পিছলে বাথরুমে পড়ে আহত হয়েছেন তিনি। বয়স্ক মানুষ, উনার বাইপাস হয়েছে, তাই এমনটা হতে পারে। উনাকে চমেক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। 

তারেক মাহমুদ/এমএ/

বন্যায় আশ্রিত শিশুকে ধর্ষণচেষ্টা, বৃদ্ধ কারাগারে

প্রকাশ: ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৪১ পিএম
বন্যায় আশ্রিত শিশুকে ধর্ষণচেষ্টা, বৃদ্ধ কারাগারে
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে বন্যায় আশ্রয় নেওয়া পরিবারের দুই বছরের এক শিশুকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে মো. হারুন (৫৫) নামে এক বৃদ্ধকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) দুপুরে উপজেলার চাষিরহাট ইউনিয়ন থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

মো. হারুন চাষিরহাট ইউনিয়নের রথি গ্রামের মৃত ইমরাত উল্যাহ মুন্সির ছেলে। বিকেলে আদালতে পাঠালে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

সোনাইমুড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোরশেদ আলম খবরের কাগজকে বলেন, ভুক্তভোগীর অটোরিকশা চালক (৪১) বাবার দায়ের করা মামলায় আসামি মো. হারুনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, আসামি মো. হারুন বাদির প্রতিবেশি চাচা হয়। বন্যার কারণে বাড়িঘর ডুবে যাওয়ায় বাদি পরিবার নিয়ে আসামির বাড়িতে আশ্রয় নেন। গত শুক্রবার (৪ অক্টোবর) সকালে বাদির দুই বছরের কন্যাকে নির্জন কক্ষে নিয়ে আসামি হারুন ধর্ষণের চেষ্টা করেন। শিশুর চিৎকারে লোকজর জড়ো হলে আসামি পালিয়ে যায়।

আদালতের পরিদর্শক (কোর্ট ইন্সপেক্টর) মো. শাহ আলম খবরের কাগজকে বলেন, আসামি মো. হারুনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন বিচারক। তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

ইকবাল হোসেন মজনু/এমএ/

বিএসএফের গুলিতে নিহত বাংলাদেশির লাশ ২৬ ঘণ্টা পর ফেরত

প্রকাশ: ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ১০:১৩ পিএম
আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৩২ পিএম
বিএসএফের গুলিতে নিহত বাংলাদেশির লাশ ২৬ ঘণ্টা পর ফেরত
ছবি: সংগৃহীত

কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলা ভর্তি সীমান্তে বিএসএফ এর গুলিতে কামাল হোসেন নামে এক বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। পরে তার মরদেহ ভারতে নিয়ে যাওয়া হয়। সোমবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে উপজেলার গলিয়ারা উত্তর ইউনিয়নের পাহাড়পুর গ্রামের যশপুর বিওপির কাছে এ ঘটনা ঘটে। 

নিহত কামাল হোসেন সদর দক্ষিণ উপজেলার কুড়িয়াপাড়া গ্রামের ইদু মিয়ার ছেলে।

এ ঘটনার দীর্ঘ ২৬ ঘন্টা পর পতাকা বৈঠক শেষে মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৯টার দিকে তার মরদেহ ফেরত দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন ১০ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল ইফতেখার হোসেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সোমবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে পাহাড়পুর সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করেছিলেন কামাল হোসেনসহ ৩ জন। কাঁটাতারের বেড়া টপকানোর পর এ তিনজনকে বিএসএফের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়। এর কিছুক্ষণ পরই একটি গুলির শব্দ শুনতে পান স্থানীয়রা। এ সময় সেখান থেকে দুইজন দৌড়ে পালিয়ে গেলেও কামাল হোসেন গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পড়ে থাকেন। এরপর আরও একটি গুলির শব্দ শোনা যায়।  গুলিতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন কামাল। পরে বিএসএফ সদস্যরা একটি অ্যাম্বুলেন্সযোগে তার মরদেহ নিয়ে যায়।

নিহত কামালের মেয়ে কামরুন্নাহার জানায়, লাদেন কামাল ও শাহ আলম নামে দুই লোক ৭ তারিখ বিকালে আমার বাবাকে নিয়ে সীমান্তে যায়। এরপর আর উনি আসেনি। রাতে লোকজন খবর দেয় আমার বাবাকে বিএসএফ গুলি করে মেরে ভারতে নিয়ে গেছে। আমার বাবাকে কেন মারল তারা আমি জানি না। লাদেন কামাল আর শাহ আল পালিয়ে গেছে।

নিহত কামালের মা আনোয়ারা বেগম বলেন, আমার ছেলের বিরুদ্ধে কোন অপরাধের অভিযোগ থাকলে তারে জেলে দিয়ে বিচার করতেন। এভাবে মেরে ফেললেন কেন?

১০ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল ইফতেখার হোসেন জানান, কামাল হোসেন নামের ওই যুবক সোমবার সন্ধ্যায় ভারতের অভ্যন্তরে ঢুকে পরলে বিএসএফ সদস্যরা তাকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এতে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে তার মরদেহ হস্তান্তর করা হয়।

জহির শান্ত/এমএ/