ছেলের অপেক্ষায় বসে আছেন আসমানী খাতুন। কখন ফিরে আসবে তার আদরের ছেলে আসিফ হোসেন (১৮)? অপেক্ষার প্রহর গুনছেন তিনি। গত ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে মিছিলে যায় কলেজ ছাত্র আসিফ। এরপর থেকে আসিফের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। এক মাস হয়ে গেলেও সে বেঁচে আছে, না মারা গেছে সেটাও জানে না তার পরিবার।
আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী সব জায়গায় খোঁজ নিয়েও কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। নিখোঁজের ঘটনায় সিরাজগঞ্জ সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে।
আসিফ সিরাজগঞ্জ পৌর এলাকার একডালা পুনর্বাসন এলাকার নজরুল ইসলামের ছেলে। সে সিরাজগঞ্জ সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী। আসিফ এবার এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। সে তিনটি পরীক্ষায় অংশও নিয়েছিল।
তার মামা শাহীন শেখ বলেন, ‘৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় অন্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মিছিলে যায় আসিফ।
যাওয়ার সময় সে তার মাকে বলে যায়, ‘মা আমি মিছিলে যাচ্ছি।’ ওই দিন সকালে শহরের মুজিব সড়কের চৌরাস্তা মোড় এলাকায় মিছিলে আসিফকে শেষ বারের মতো দেখতে পায় ওর বন্ধুরা। দুপুরের পর ওর ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। বিকেল গড়িয়ে রাত হলেও আসিফের কোনো খবর নেই। পরে স্থানীয়দের মাধ্যমে জানতে পারি, জেলার সদর আসনের সংসদ সদস্য জান্নাত আরা হেনরীর বাড়িতে হামলা হয়। ওই বাড়িতে আগুনও দেওয়া হয়। ওইখানে আটকা পড়ে থাকতে পারে আসিফ। পরের দিন সকালে আমরা জান্নাত আরা হেনরীর বাসার বিভিন্ন কক্ষে আসিফকে খুঁজতে থাকি। একটি কক্ষে মানুষের শরীরের হাড় দেখতে পাই। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা সেগুলো নাকি তুলে নিয়ে যায়। পরে হাড়গুলো হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয় পরীক্ষা করার জন্য। আমরা মর্গেও গিয়েছিলাম। মর্গে আগুনে পোড়া দুটি লাশ পাওয়া যায়। কিন্তু চেনার কোনো উপায় ছিল না। এ ছাড়া বিভিন্ন জায়গায় আসিফকে অনেক খোঁজাখুঁজি করেছি। কিন্তু কোনো হদিস পাইনি। ঘটনাটি আমরা পুলিশকে জানিয়েছি।’
এ বিষয়ে শহরের ২নং পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক মুস্তাকিম বলেন, ‘আসিফের নিখোঁজের বিষয়টি আমাদের অবগত করা হয়েছে। আমাদের তদন্ত চলছে।’