ভয়াবহ সেশনজটের কবলে পড়ে ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনায় দ্রুত পরীক্ষা গ্রহণ ও ফলাফলের দাবিতে এবার সড়কে বসেই ‘প্রতীকী পরীক্ষা’ এবং ‘প্রতীকী বিষপান’ কর্মসূচি পালন করেছেন নার্সিং অনুষদের শিক্ষার্থীরা।
শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজশাহী নগরীর সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে তারা এ কর্মসূচি পালন করেন। এ সময় হিট স্ট্রোক করে অন্তত ১৫ জন শিক্ষার্থী রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
কর্মসূচিতে রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (রামেবি) অধিভুক্ত রাজশাহী, রংপুর, দিনাজপুর, লালমনিরহাট সরকারি নার্সিং কলেজ এবং বগুড়া, সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্ন বেসরকারি নার্সিং কলেজের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।
শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘শনিবার ২০১৯-২০ সেশনের বিএসসি-ইন-নার্সিং কোর্সের চূড়ান্ত পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আমরা এরই মধ্যে ৯ মাস পিছিয়ে গেছি। কবে আমাদের পরীক্ষা হওয়ার কোনো নিশ্চয়তা পাচ্ছি না। সংশ্লিষ্টদের গাফিলতির কারণে ২৩টি কলেজের প্রায় ৩ হাজার নার্সিং শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ চরম অনিশ্চয়তায় মধ্যে পড়েছে। ফলে অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনায় দ্রুত পরীক্ষা গ্রহণ ও ফলাফলের দাবিতে রাস্তায় বসে বিএসসি চতুর্থ বর্ষের রিসার্চ-ইন-নার্সিংয়ের প্রতীকী পরীক্ষা দেন শিক্ষার্থীরা। কর্মসূচি পালনকালে শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকেই চারজনকে উপাচার্য, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও পরীক্ষা কক্ষ পরিদর্শক (এক্সটারনাল ও ইন্টারনাল) করা হয়। এ সময় হঠাৎ পরীক্ষা বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপর আন্দোলনকারী বেশির ভাগ পরীক্ষার্থীকে অকৃতকার্য দেখিয়ে ফলাফল প্রকাশ করা হয়। হতাশ হয়ে প্রতীকী বিষপান করেন শিক্ষার্থীরা।’
এদিকে এসব কর্মসূচি পালনকালে প্রচণ্ড রোদ ও গরমে হিট স্ট্রোক করে অন্তত ১৫ শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের রামেক হাসপাতালে নেওয়া হয়। তাদের মধ্যে চারজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বাসায় পাঠানো হয়। বাকি ১১ জন শিক্ষার্থীকে মেডিকেলে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ২ জন রাজশাহী নার্সিং কলেজের, একজন উদয়ন নার্সিং কলেজের ও বাকিরা রংপুর এবং লালমনিরহাট নার্সিং কলেজের শিক্ষার্থী।
প্রতীকী পরীক্ষা দেওয়া শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, আন্দোলনে দাবি আদায় হলেও ফলাফলে প্রভাব বিস্তারের শঙ্কায় তারা আতঙ্কিত। কেননা, প্রতীকীভাবে দেখানো হলেও ঠিক এভাবেই ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের ফেল করানো হয়।
তারা আরও বলেন, অসুস্থ হওয়ায় অনেককে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ায় আলটিমেটাম দিয়ে কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে। তবে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন নার্সিং শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক রায়হান আলী বলেন, ‘যে সময় পড়ার টেবিলে বই-খাতা নিয়ে থাকতাম, হাসপাতালে ইন্টার্নশিপে গিয়ে রোগীদের সেবা করতাম, সেই সময় রোদ-বৃষ্টি ও অসংখ্য বাধা মোকাবিলা করে আন্দোলন করতে হচ্ছে আমাদের। দেয়ালে আমাদের পিঠ ঠেকে যাওয়ায় রাজশাহী, রংপুর, দিনাজপুর, লালমনিরহাট, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ থেকে এসে দিনের পর দিন রাস্তায় পড়ে আছি। বেশ কয়েকজন অসুস্থ। দাবি না মানলে মৃত্যু ছাড়া কোনো পথ নেই।’
রামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ইনচার্জ ডা. শংকর কে বিশ্বাস বলেন, যৌক্তিক দাবি আদায়ে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছেন। তবে কর্মসূচি পালনকালে অসুস্থ হওয়ায় ১১ জনকে রামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের চিকিৎসা চলছে। বাকি চারজন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরেছেন। আশা করছি, বাকিরাও দ্রুত সুস্থ হবেন।’
উল্লেখ্য, গত বুধবার থেকে রাজশাহী নগরীতে আন্দোলন করছেন নার্সিং শিক্ষার্থীরা। গত বৃহস্পতিবার গলায় রশি ঝুলিয়ে প্রতীকী ফাঁস দিয়ে বিভাগীয় কমিশনারের কাছে স্মারকলিপি দেন তারা। প্রথমে পরীক্ষা গ্রহণে এক দফা দাবি থাকলেও বর্তমানে ৭ দাবিতে চলছে তাদের এ আন্দোলন।
দাবিগুলো হলো স্থগিত হওয়া ২০১৯-২০ সেশনের বিএসসি-ইন-নার্সিং কোর্সের পরীক্ষা সম্পন্ন করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপে যেকোনো কর্মকর্তাকে পরীক্ষা পরিচালনার জন্য নির্বাহী দায়িত্ব প্রদান, পরীক্ষা কমিটির সঙ্গে সমন্বয় করে অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থায় পরীক্ষা গ্রহণ ও ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যেই ফল প্রকাশ, আগামী ১ অক্টোবর থেকে শিক্ষার্থীদের হাসপাতালে ইন্টার্নশিপ শুরু নিশ্চিত করা, বেসরকারি কলেজগুলোতে পরীক্ষার ফরম পূরণের অতিরিক্ত টাকা গ্রহণ বন্ধ করা, রামেবিতে পরীক্ষার ফলাফল চ্যালেঞ্জের ফি প্রতি বিষয়ে ৫ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে ১ হাজার টাকা করা এবং রাজশাহী বেসরকারি নার্সিং কলেজের বিএসসি শিক্ষার্থীদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইন্টার্নশিপের ব্যবস্থা করা।