খুলনায় মহানবীকে (সা.) নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগে গণপিটুনির শিকার কলেজছাত্র উৎসব মণ্ডলের পরিবার আবারও আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। ঘটনার পর থেকে তাদের কোনো সন্ধান জানা যায়নি।
উৎসব মণ্ডলের বাবা দ্বীনবন্ধু মণ্ডল খুলনার একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করেন। ৪ সেপ্টেম্বর রাত থেকেই তার মোবাইল ফোন বন্ধ রয়েছে। ঘটনার পর থেকে তিনি কর্মস্থলে যাননি। উৎসব মণ্ডলের মায়ের মোবাইল ফোনও বন্ধ রয়েছে।
এদিকে উৎসব মণ্ডলের বিরুদ্ধে খুলনা সদর থানায় সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছেন নাসির হোসেন নামের এক ব্যক্তি। ৪ সেপ্টেম্বর রাতে সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকায় গণপিটুনিতে আহত উৎসব মণ্ডল বর্তমানে সেনাবাহিনীর হেফাজতে চিকিৎসাধীন।
আইএসপিআরের সহকারী পরিচালকের পক্ষে রাশেদুল আলম খান স্বাক্ষরিক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গণপিটুনিতে আহত উৎসব মণ্ডল সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন এবং তিনি আশঙ্কামুক্ত।
তবে আবারও আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে ঘরছাড়া তার পরিবার। গত ৫ সেপ্টেম্বর নগরীর সার্কিট হাউস ফায়ার ব্রিগেড রোড এলাকায় উৎসবের বাড়িতে গিয়ে তাদের ঘরটি তালাবদ্ধ দেখা যায়।
ওই বাড়ির অন্য বাসিন্দারা জানান, ঘটনার পর থেকে উৎসবের পরিবারের সদস্যদের কেউ দেখেনি। তার বাবা-মা ও অসুস্থ ছোট ভাই কোথায় আছেন তা কেউ জানে না। মোবাইল ফোনেও কারও সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি।
জানা যায়, মোবাইলে ফেসবুকে মহানবীকে (স.) নিয়ে কটূক্তির ঘটনায় ৪ সেপ্টেম্বর ৮-১০ জন যুবক উৎসব মণ্ডলকে ধরে সোনাডাঙ্গা আবাসিকে পুলিশের উপ-কমিশনারের (দক্ষিণ) কার্যালয়ে নিয়ে যান। খবর পেয়ে রাতে শত শত মানুষ ওই যুবককে তাদের হাতে ছেড়ে দিতে ভবনের চারপাশ ঘিরে বিক্ষোভ শুরু করেন।
এদিকে সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীর একাধিক টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করে ওই যুবককে রক্ষার চেষ্টা করে। কিন্তু রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিক্ষুব্ধ জনতা পুলিশ কার্যালয়ের ভেতর ঢুকে তাকে পিটুনি দেন। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ওই ভবন থেকে তাকে বের করে নিয়ে যান।
খুলনা সদর থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) নিমাই চন্দ্র কুণ্ডু জানান, গত ৫ সেপ্টেম্বর রাতে অভিযুক্ত কলেজছাত্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে। প্রাথমিক যাচাই-বাছাই করে অভিযোগটি সাইবার নিরাপত্তা আইনে নথিভুক্ত করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে তিনটি ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, উৎসব মণ্ডল ৩ সেপ্টেম্বর ফেসবুকে একটি পোস্টে ক্ষুব্ধ হয়ে মন্তব্য করেছিলেন। পরে ভুল বুঝতে পেরে সেটি মুছে দেন। কিন্তু কয়েকজন সেই মন্তব্যটির স্ক্রিনশট রেখে দেন এবং তা ছড়িয়ে দিয়ে তাকে বিপদে ফেলেন।