তিনটি ছবি যুক্ত করে কন্যাসন্তানের জন্মের সুসংবাদ নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আব্দুল্লাহ আল মাসুদ। ক্যাপশনে লেখেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ। সকল প্রশংসা মহান আল্লাহ তাআলার। গত ৩/৯/২০২৪ তারিখে কন্যাসন্তানের পিতা হয়েছি। মহান আল্লাহ তাআলার কাছে নেক হায়াত ও সুস্থতা কামনা করি। সকল আত্মীয়স্বজন, শুভাকাঙ্ক্ষী ও বন্ধু-বান্ধবের কাছে আমার ও আমার মেয়ের জন্য দোয়া প্রার্থনা করছি।’
জানা যায়, গত ৩ সেপ্টেম্বর আব্দুল্লাহ আল মাসুদ ও বিউটি খাতুনের ঘর আলো করে জন্ম নেয় কন্যাসন্তানটি। ১৫ দিন বয়সে আকিকা করে তার নাম ‘মাসুমা আখতার’ রাখতে চেয়েছিলেন মাসুদ। কিন্তু গত শনিবার মেয়ের জন্য দুধ ও স্ত্রীর জন্য ওষুধ কিনতে ফার্মেসিতে গিয়ে হামলার শিকার হন তিনি। এক দশক আগে হামলায় পা হারিয়ে প্রতিবন্ধকতার জীবন কাটানো মাসুদ এবার প্রাণটাও হারালেন। হামলাকারীরা তার বিরুদ্ধে গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগ এনে গণপিটুনি দেয়। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে মতিহার ও পরে বোয়ালিয়া থানায় নেওয়া হয়। সেখান থেকে রাত সাড়ে ১২টার দিকে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১টার দিকে তার মৃত্যু হয়। পরে রবিবার ময়নাতদন্ত শেষে বিকেলে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়। লাশ নিতে মা বিউটি খাতুনের কোলে চড়ে হাসপাতাল মর্গে আসে মাসুদের পাঁচ দিনের শিশুকন্যা মাসুমাও। লাশ কাটাঘরের সামনে ছোট এই শিশুকে দেখে উপস্থিত কেউই যেন চোখের পানি ধরে রাখতে পারছিলেন না। ফলে স্বজনসহ উপস্থিত সবার আহাজারিতে হাসপাতালের মর্গ এলাকার বাতাস যেন ভারী হয়ে ওঠে।
রবিবার বিকেল ৫টায় নিথর মাসুদকে বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সটি রাজশাহী থেকে তার গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার বিনোদপুরের পথে রওয়ানা দেয়। সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স গ্রামের বাড়িতে পৌঁছায়।
নিহত আব্দুল্লাহ আল মাসুদের বড় ভাই রাবি শাখা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আয়াতুল্লাহ বেহেস্তি বলেন, রবিবার সন্ধ্যায় বিনোদপুরের পারিবারিক কবরস্থানে আব্দুল্লাহ আল মাসুদকে দাফন করা হয়েছে।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফ এম শামীম আহাম্মদ জানান, আইনি প্রক্রিয়া শেষে নিহত মাসুদের লাশ বিকেলে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর পরিবার লাশ নিয়ে তার গ্রামের বাড়িতে চলে যায়।
ওসি মাসুদ পারভেজ বলেন, আব্দুল্লাহ আল মাসুদকে বিনোদপুরে মারধর করা হয়েছিল। এরপর একদল শিক্ষার্থী তাকে প্রথমে মতিহার, পরে বোয়ালিয়া থানায় নিয়ে যান। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে তার মৃত্যু হয়।
২০২১ সালের ৫ মে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য প্রফেসর এম আব্দুস সোবহান ১৩৮ জনকে এডহকে নিয়োগ দিয়েছিলেন। ওই সময় মাসুদ নিয়োগপ্রাপ্ত হন। কিন্তু এ তালিকার কেউ শেষ পর্যন্ত যোগদান করতে না পারায় মাসুদ নিজের দুর্দশার কথা জানিয়ে একটি চাকরি চেয়ে ২০২২ সালের শেষের দিকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিঠি লেখেন। এরপর ওই বছরের ৬ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক-৭ মীর তাফেয়া সিদ্দিকা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে পাঠানো চিঠিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সেকশন অফিসার পদে আব্দুল্লাহ আল মাসুদকে নিয়োগ দিতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করেন। সেই অনুযায়ী মাসুদকে ওই পদে এডহকভিত্তিকে চাকরি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। চাকরি করার সুবাদে তিনি পরিবার নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী বুধপাড়া এলাকায় থাকতেন।