বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে পুলিশ। এ দৃশ্য দেখার পর আমরা আর নিজেদের ধরে রাখতে পারিনি। ওই সময় আমরা (প্রবাসী বাংলাদেশিরা) আলোচনা করি, কী করা যায়। পরে সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিই প্রতিবাদ করব। সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই) আংশিক সাংবিধানিক রাজতন্ত্র প্রচলিত। এ কারণে এখানে সভা-সমাবেশও নিষিদ্ধ।
ধরা পড়লে শাস্তি নিশ্চিত জেনেও আমরা প্রতিবাদ করতে রাস্তায় নেমে পড়ি। কথাগুলো বলছিলেন, ইউএইর রাজধানী আবুধাবিতে আন্দোলনের দায়ে দশ বছর কারাদণ্ড পাওয়া রাকিবুল হাসান বাবু। তার বাড়ি চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নের দক্ষিণ মাহমুদাবাদ এলাকার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের হাশেম নগর গ্রামে। বাবু ওই এলাকার মৃত রোস্তম আলীর ছেলে। তার এক ছেলে এক মেয়ে রয়েছে।
গত শনিবার রাত সাড়ে ৮টার ফ্লাইটে আবুধাবি থেকে বাংলাদেশে ফেরত আসেন বাবুসহ ২৩ জন প্রবাসী বাংলাদেশি। জেলে থাকার সময় যোগাযোগ করতে না পেরে দুশ্চিন্তায় ছিল তার পরিবার। শনিবার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেমে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন বাবু। বাড়িতে পৌঁছে মা, স্ত্রী ও দুই শিশুকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। এই অশ্রু আনন্দের, এই অশ্রু দুই শিশু, বৃদ্ধ মাসহ পরিবারকে ফিরে পাওয়ার।
খবরের কাগজের সঙ্গে আলাপকালে বাবু জানান, আবুধাবিতে চাকরির পাশাপাশি ছোট ব্যবসা করতেন তিনি। নিজের একটি গাড়ি ছিল। সেই গাড়ি করে ইলেকট্রনিক পণ্য বিক্রি করতেন। এখন দেশে কিছুই আনতে পারেননি। কীভাবে পরিবার চালাবেন চিন্তায় আছেন তিনি। প্রবাসের চাকরি, ব্যবসা সব হারিয়ে এখন নিঃস্ব তিনি। ২০১০ সালের ১২ জানুয়ারি আবুধাবিতে ই-ভিসায় যান। শুরু থেকেই তিনি আবুধাবির আল আইন সানাইয়্যা নামে জায়গায় আরদুল আমেল জেনারেল কনস্ট্রাকশন কোম্পানিতে কর্মরত ছিলেন। ওই সময় ৩ হাজার দিরহাম তার বেতন ছিল। যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় পঁচানব্বই হাজার টাকা।
তিনি আরও জানান, গত ১৯ জুলাই সন্ধ্যায় আবুধাবির আল আইন সানাইয়্যা নামক জায়গায় শতাধিক প্রবাসী শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করেন। এরপর গত ২২ জুলাই সেখানকার পুলিশ তাকে ফোন করে থানায় ডেকে নিয়ে আটক করে। এর দশ দিন পর আবুধাবির আদালত তাকে আইন অমান্য করার দায়ে দশ বছরের কারাদণ্ড দেন। ওই সময় তিনি ভাবছিলেন, জীবন তো জেলেই শেষ হয়ে যাবে। তার পরিবার কীভাবে চলবে! তিনি জেলে, সেটি তার পরিবারের কেউই জানত না।
বাবু বলেন, ‘আবুধাবিতে বসে বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের ওপর অমানবিক নির্যাতন সহ্য করতে পারিনি। এ কারণে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে আন্দোলন করেছি। দেশে অশান্তি হলে আমরা (প্রবাসীরা) দুশ্চিন্তায় থাকি। দেশটা সবার। আমরা ৪৫ দিন জেলে ছিলাম। এরপর অন্তর্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের অনুরোধে আমাদের সাজা মওকুফ করে ইউএই সরকার। এরপর দেশে ফেরত পাঠায় আমাদের।
বাবুর মা সামছুন নাহার বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার ছেলে যে জেলে সেটা শুনিনি। সবাই নিখোঁজ মনে করেছিলাম। তার বাচ্চাদের নিয়ে কান্নাকাটি করেছি আর আল্লাহর কাছে দোয়া করেছি। ড. ইউনূসকে মহান আল্লাহ অনেক দিন বাঁচিয়ে রাখুন।