কক্সবাজার সদর হাসপাতালে এক রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে চিকিৎসক ও ওয়ার্ডকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনায় বন্ধ রয়েছে চিকিৎসাসেবা। জরুরি সেবা চালু থাকলেও তা সীমিত। সেবা বন্ধ করে দেওয়ায় বিপাকে পড়েছেন হাসপাতালটির বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি আট শতাধিক রোগী।
বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে হাসপাতালটিতে চিকিৎসাসেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারী ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করা না হলে কাজে ফিরবেন না বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীরা।
হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, গতকাল মঙ্গলবার গভীর রাতে রোগীর মৃত্যুর পর স্বজনরা সিসিইউতে প্রবেশ করে প্রথমে চিকিৎসকের কক্ষে ভাঙচুর চালান। পরে চিকিৎসক সজীবকে মারধর করতে থাকেন। একপর্যায়ে তাকে টেনহিঁচড়ে মারতে মারতে চারতলা থেকে নিচে নামিয়েও মারধর করতে থাকেন। এ সময় হাসপাতালে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে অন্য চিকিৎসকরা এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করেন। এরপরই অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের দাবিতে জরুরি বিভাগসহ কমপ্লিট শাটডাউন ঘোষণা করে চিকিৎসকরা।
বুধবার বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কর্মবিরতি পালন করায় বিপাকে পড়েছেন রোগীরা। ২৫০ শয্যার এ হাসপাতালে ডেঙ্গুসহ নানা রোগের প্রায় আট শতাধিক রোগী ভর্তি রয়েছেন।
ডেঙ্গু পজিটিভ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর স্বজন খালেদ হোসেন আবরার জানান, চিকিৎসা বন্ধ থাকায় তারা চরম আতঙ্কিত সময় পার করছেন। নার্সরা কিছুটা সেবা দিলেও চিকিৎসক না আসায় তারা চিন্তিত।
আন্দোলনরত চিকিৎসকরা জানান, হাসপাতালে তাদের কোনো নিরাপত্তা নেই। যেভাবে তাদের সহকর্মীর ওপর হামলা হয়েছে, তাতে তার মৃত্যু হতে পারত। তাই যতক্ষণ তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা না হবে ততক্ষণ তারা কর্মবিরতি চালিয়ে যাবেন।
এদিকে দুপুর ১২টা থেকে হাসপাতালে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়। হামলার বিষয়ে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মং টিং ঞো সাংবাদিকদের বলেন, ‘যে রোগী মারা গেছেন তার অবস্থা ক্রিটিক্যাল ছিল। তাকে কার্যকর সেবা দেওয়ার জন্য স্বজনদের দরকার হয়। কিন্তু ওই সময় স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন না। কিন্তু আমাদের চিকিৎসক সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন, যার কোনো ঘাটতি ছিল না। এরপরও চিকিৎসকের ওপর হামলা করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘হামলাকারীরা গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চলমান রাখার ঘোষণা দিয়েছেন চিকিৎসকরা। আমরা চেষ্টা করছি বিষয়টি সমাধানের। প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে একটি বৈঠক হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে জরুরি সেবা তারা শুরু করেছেন।’
এদিকে চিকিৎসাসেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চিকিৎসাধীন প্রায় ৮০০ রোগী বিপাকে পড়েছেন। অনেকে পার্শ্ববর্তী বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যাচ্ছেন। তবে সদর হাসপাতালে চিকিৎসা বন্ধ থাকলেও সেবা চালু আছে বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে।
সিভিল সার্জন ডা. আসিফ আহমেদ হাওলাদারের কাছে জানতে চাওয়া হয় চিকিৎসাসেবা বন্ধ নিয়ে। তিনি জানান, ইতোমধ্যে দুজন অপরাধীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জরুরি সেবা চালু করা হয়েছে। দ্রুতই সমস্যার সমাধান হবে।
জরুরি সেবা চালুর কথা বলা হলেও চেম্বারগুলোতে চিকিৎসকদের অবস্থান নেই, এমন বিষয়টি তার নজরে আনা হলে তিনি বলেন, সেবা শুরু হয়েছে, হয়তো চেয়ারে দেখা যাচ্ছে না। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা বন্ধ হলেও চিকিৎসকরা বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দিচ্ছেন কেন, এমন প্রশ্নে সিভিল সার্জন বলেন, এই বিষয়টি তার জানা নেই।