রাজশাহীতে ছাত্র আন্দোলন দমনে দুই হাতে দুই পিস্তল দিয়ে ছাত্র-জনতার ওপর গুলিবর্ষণকারী জহিরুল ইসলাম রুবেলকে (৪১) গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটলিয়ন (র্যাব)।
শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাতে কুমিল্লার দাউদকান্দি এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
রুবেল নগরীর চণ্ডিপুর এলাকার আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে। তিনি যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এবং সাবেক সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামানের লিটনের ডান হাত হিসেবে পরিচিত।
গত ৫ আগস্ট রাজশাহী নগরীতে ছাত্র আন্দোলন দমনে রুবেলের নেত্বত্বে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের অন্তত এক ডজন নেতাকর্মী আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি ছোঁড়ে। এ ঘটনায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হয়। এই দুই শিক্ষার্থী হত্যা মামলার অন্যতম আসামি রুবেল। এ ছাড়াও আরও একটি হত্যা মামলার আসামি ছিলেন তিনি। তার বিরুদ্ধে মাদক আইনে মামলা রয়েছে।
র্যাব-৫ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল ফিরোজ কবির জানান, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব জানতে পারে রুবেল কক্সবাজার থেকে কুমিল্লা হয়ে ঢাকার দিকে আসছে। পরে র্যাব-১০ ও র্যাব-৫ যৌথ অভিযান চালিয়ে কুমিল্লার দাউদকান্দি ব্রিজের ওপর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রুবেল শিক্ষার্থী আলী রায়হান ও সাকিব আনজুম হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।
আরএমপির বোয়ালিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম মাসুদ পারভেজ বলেন, যেখানে গ্রেপ্তার হয়েছে সেখানে কোনো মামলা থাকলে আদালতের মাধ্যমে রুবেলকে রাজশাহীতে আনা হবে। আর ওখানে কোনো মামলা না থাকলে সরাসরি রাজশাহীতে আনা হবে। কারণ রাজশাহীতে ছাত্র আন্দোলনে নিহত আলী রায়হান ও সাকিব আনজুম হত্যা মামলার আসামি রুবেল। এখানে এনে আদালতের মাধ্যমে তাকে রিমান্ডের আবেদন জানানো হবে।
অভিযোগে আছে, জমি দখল, মাদক, জুয়া, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কয়েকটি মামলার আসামি রুবেল। ২০২৩ সালে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে হলফনামায় তথ্য গোপন করে কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছিলেন তিনি। সর্বশেষ গত ৫ আগস্ট রাজশাহী মহানগরীর বোয়ালিয়া এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ চলাকালীন ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও গুলিবর্ষণ করেন রুবেল নামে এ সন্ত্রাসী।
ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, রুবেল মাথায় হেলমেট পরে দুইটি পিস্তুল দুই হাতে নিয়ে সমান তালে শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে গুলি করছেন। এ সময় শুটার দলে আরও ছিলেন রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের সহসভাপতি বোরহান উদ্দিন পাভেল, মহানগরীর ২৩নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রনি, মহানগর যুবলীগের সাবেক অর্থ সম্পাদক রাজিব মতিন ও মহানগর ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম রোজেলসহ অনেকেই। ওই সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাকিব আনজুম ও রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থী আলী রায়হান নিহত হন। গুলিবিদ্ধ হয় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী। এই দুই শিক্ষার্থী হত্যা মামলারও আসামি রুবেল। তবে পট পরিবর্তনের পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সঙ্গে রুবেলও গা ঢাকা দিয়েছিলেন।
এনায়েত করিম/জোবাইদা/অমিয়/