দ্বিতীয় দফায় মেয়াদ বৃদ্ধির পর ২০২৪ সালের ৩০ জুনের মধ্যে খুলনার ভৈরব ব্রিজের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এ পর্যন্ত নির্মাণকাজের অগ্রগতি মাত্র সাড়ে ১৪ শতাংশ! জমি অধিগ্রহণের জটিলতায় আটকে গেছে ৬১৭ কোটি টাকার এ প্রকল্প। ফলে তৃতীয় দফায় ২০২৬ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। তবে ওই সময়ের মধ্যেও ব্রিজের নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দাবি, সময়মতো জমি না পাওয়ায় প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু করতেই দেরি হয়েছে। নির্মাণকাজ শুরুর প্রায় চার বছর পরও ব্রিজের শহরাংশে রেলওয়ের জমি অধিগ্রহণ করা যায়নি।
আর সড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, যতটুকু জমি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটিকে দেওয়া হয়েছে সেখানেও তারা কাজ করছে না। সর্বশেষ গত ৪ সেপ্টেম্বর সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে ব্রিজের নির্মাণকাজের ধীরগতি নিয়ে ঠিকাদারকে চূড়ান্ত নোটিশ ও প্রয়োজনে চুক্তি বাতিল করে নতুন ঠিকাদার নিয়োগের বিষয়ে আলোচনা হয়।
অন্যদিকে নির্মাণকাজ শুরুর তিন বছর পর ব্রিজের নকশায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। ব্রিজের ওপর ধীরগতির যানবাহনের চলাচলে সুবিধায় ব্রিজের প্রশস্ততা ২৪ ফুট থেকে ৩৪ ফুট করার প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। এতে আরও বাড়তি ১০০ কোটি টাকার প্রয়োজন হবে। তবে চলমান পরিস্থিতিতে সেই টাকা অনুমোদন না হওয়ার সম্ভাবনার কথা বলছেন সড়ক বিভাগেরই কর্মকর্তারা। ফলে নকশায় পরিবর্তন নিয়েও জটিলতা রয়েছে।
জানা গেছে, খুলনা শহরের সঙ্গে দিঘলিয়া উপজেলার সড়কপথে সংযোগ তৈরি করতে ২০১৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর ভৈরব ব্রিজের প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন হয়। ২০২০ সালের ১২ নভেম্বর ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশন লিমিটেড ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নির্মাণকাজ দেওয়ার অনুমোদন হয়। ২০২০ সালের ২৬ নভেম্বর জমি অধিগ্রহণ ছাড়াই ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়।
ঠিকাদারি কাজের প্রজেক্ট ম্যানেজার প্রকৌশলী এস এম নাজমুল বলেন, সময়মতো সড়ক বিভাগ জায়গা বুঝিয়ে না দেওয়ায় ব্রিজের নির্মাণকাজে ধীরগতি দেখা দেয়। সরেজমিন দেখা যায়, ব্রিজের শহরাংশে রেলিগেট সংলগ্ন এলাকায় ধীরগতিতে পিলারের পাইলিং ও ক্যাপ ঢালাই কাজ চলছে। এই অংশে রেলের জায়গার অধিগ্রহণের এখনো কোনো সুরাহা হয়নি। কবে নাগাদ জমি পাওয়া যাবে জানেন না কর্মকর্তারাও। ব্রিজের ৫৮টি পিলার কলামের মধ্যে ২০-২২টির মতো কাজ শেষ হয়েছে। ২৮টি পিয়ার ক্যাপের মধ্যে কাজ শেষ হয়েছে ৮-১০টির। তবে দিঘলিয়া প্রান্তে জমি অধিগ্রহণ নিয়ে সমস্যা না থাকলেও সেখানে ব্রিজের অ্যাপ্রোচ রোড, সার্ভিস রোড, আরসিসি বক্স কালভার্ট, ড্রেন, কংক্রিটের ঢাল নির্মাণের কাজ শুরুই হয়নি।
সড়ক বিভাগ খুলনা অঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ আসলাম আলী বলেন, এই মুহূর্তে প্রধান জটিলতা-ঠিকাদারের কাজের ধীরগতি ও নতুন করে নকশা প্রণয়ন। ঠিকাদারকে যেটুকু জায়গা দেওয়া হয়েছে সেখানেও তারা ঠিকমতো কাজ করছে না। নদীর মধ্যে অনেক ফাউন্ডেশনের কাজ আছে, তার কিছু শুরুই করেনি। তারা রেলের জায়গা পাওয়া যায়নি বলে অজুহাত দিচ্ছে। কিন্তু রেলে সঙ্গে জায়গা অধিগ্রহণের বিষয়ে কথা হয়েছে। তাদের ৮ কোটি ৭৮ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। আন্ত মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। কিন্তু আমাদের কাছে মনে হয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে এই কাজ শেষ করার মতো সক্ষমতা নেই। ফলে গত ৪ সেপ্টেম্বর মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে তাদের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
তিনি বলেন, নকশা অনুমোদন হলে ব্রিজটির প্রশস্ততা ২৪ ফিট থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৩৪ ফিট হবে। এর জন্য বাড়তি ১০০ কোটি টাকা লাগবে। কিন্তু বর্তমান সরকারের ব্যয় সংকোচন নীতিমালায় সেটি হয়তো সম্ভব হবে না।
জানা গেছে, ব্রিজের নির্মাণকাজ শুরুর প্রায় তিন বছর পর নকশায় এই পরিবর্তন আনা হয়। নতুন নকশায় মূল সেতু কংক্রিটের পরিবর্তে আর্চ স্টিলের কথা বলা হয়। সংশোধিত নকশা চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য প্রস্তাবনা তৈরি করা হচ্ছে। ব্রিজের প্রশস্ততা বাড়ায় ১৭, ১৮ ও ১৯ নং পিলারের নকশায়ও সংশোধন আনা হচ্ছে। বর্তমানে প্রকল্প ব্যয় ৬১৭ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে সেতু নির্মাণের ব্যয় ৩০২ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।
নাগরিক সংগঠন খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব বাবুল হাওলাদার বলেন, জমি অধিগ্রহণের আগেই ব্রিজের কাজটি শুরু হয়। এখন ধীরগতির কাজ নিয়ে সড়ক বিভাগ ও ঠিকাদার পরস্পরের দিকে অভিযোগ তুলছে। ব্রিজটি সময়মতো নির্মাণ না হওয়ায় হতাশা রয়েছে এ অঞ্চলের মানুষের।