বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গিয়ে গুলিবিদ্ধ নড়াইলের সিফায়েত চৌধুরী এখন ভালো নেই। ঠিকমত চিকিৎসা না পেয়ে ধীরে ধীরে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ছেন। তাকে উন্নত চিকিৎসার দাবি পরিবারসহ স্বজনদের।
জানা গেছে, নড়াইলের নড়াগাতি থানার চাপাইল গ্রামের আজাদ চৌধুরী ও মিনি বেগমের ছেলে সিফায়েত চৌধুরী গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু কলেজ থেকে চলতি বছর ডিগ্রি পাস করেছেন। দেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হলে গত ১৫ জুলাই ঢাকার সাভারের আশুলিয়া বোনের বাসায় যান। সেখান থেকে নিয়মিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিতেন।
গত ৫ আগস্ট প্রতিদিনের মতো আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। এ দিন পুলিশের গুলিতে গুলিবিদ্ধ হন সিফায়েত। রাতে ফেসবুকের ছবি দেখে পরিবারের লোকজন জানতে পারে সিফায়েত গুলিবিদ্ধ হয়ে ঢাকা মেডিকেলে আছেন। তিনি বাম কানসহ মাথায় ও কাঁধে গুলিবিদ্ধ হন। সেখানে অপারেশন করে গুলি বের করা হয়। পরে সিএমএইচএতে এক সপ্তাহ চিকিৎসা দেওয়া হয়। গত ৩০ আগস্ট বাড়িতে আসেন। তবে তিনি এখনো পুরোপুরি সুস্থ নন। আরও উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। অনেকটা মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছেন। তার গরিব বাবাসহ পরিবারের পক্ষে উন্নত চিকিৎসা করানো সম্ভব নয়।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সিফায়েত চৌধুরী বলেন, খুব বেশি কথা বলতে পারি না। তেমন কিছু মনেও নেই। তবে আন্দোলনে যাওয়ার কথা তার মনে আছে। সিফায়েত চৌধুরী আরও বলেন, গত ৫ আগস্ট নবীনগরে আন্দোলন গিয়েছিলাম, আরও অনেক লোক ছিল। আন্দোলনে পুলিশ ছররা গুলি করেছে। পরে আর কিছুই মনে নেই আমার।
সিফায়েতের মেজো ভাই সাফায়েত চৌধুরী বলেন, ‘আমার ছোট ভাই গুলিবিদ্ধ হয়ে চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে ফিরেছে। অর্থের অভাবে ওষুধ কেনাসহ উন্নত চিকিৎসা হচ্ছে না। তার তেমন কিছু মনে নেই। অনেকটা ভারসাম্যহীন। বেশি কথা বলতে পারে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘তিন মাস পরে চিকিৎসক যেতে বলেছেন। ছয় মাস পর আবারও অপারেশন করাতে হবে। আমরা তার উন্নত চিকিৎসা নিয়ে চিন্তায় আছি।’
বড় ভাই রুবেল চৌধুরী বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। অনেক কষ্টে আমাদের সংসার চলে। ইমামতি করে কোনোমতে সংসার চালাই। গত ৩০ আগস্ট সিএমএইচ থেকে ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি আসে। এরই মধ্যে সিফায়েতের ওষুধ শেষ হয়ে গেছে, আর্থিক সমস্যার কারণে ওষুধ কিনতে পারছি না।’ সরকারে সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।
চাচা ইউনুস চৌধুরী বলেন, দুই ভাই ইমামতি করে যে টাকা পায় সেই টাকা এবং নিজে টিউশনি করে শিফায়েত লেখাপড়া করেছে। পরিবারের আশা ছিল ভালো একটা চাকরি করে পরিবারের হাল ধরবে। কিন্তু বিধিবাম, গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গিয়ে গুলিতে গুরুতর আহত হয়। গুলির খবর পাওয়ার পর ঢাকা যাওয়ার জন্য আমরা সবাই মিলে টাকা তুলে অন্য ভাইদের ঢাকায় পাঠাই।’ তিনি আরও বলেন, এখন তার শারীরিক অবস্থা তেমন একটা ভালো না। জরুরিভিত্তিতে উন্নত চিকিৎসা করাতে পারলে হয়তো দ্রুত সুস্থ হয়ে যেত।
সিফায়েত চৌধুরীর বাবা আজাদ চৌধুরী ছেলের শারীরিক অবস্থা নিয়ে খুবই চিন্তিত। তিনি বলেন, আমরা গরিব মানুষ কোনোমতে সংসার চলে। ঢাকায় ছেলের অপারেশনের পর যে ওষুধ আনা হয়েছিল তা শেষ হয়ে গেছে। তার শারীরিক অবস্থা এখনো অনেক খারাপ। কিছুটা ভারসাম্যহীন। তার উন্নত চিকিৎসার দরকার।
নড়াইলের কালিয়া উপজেলার পহরডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মল্লিক মাহমুদুল ইসলাম বলেন, সিফায়েতের পারিবারিক আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভালো না। তার চিকিৎসায় বিত্তবানদের এগিয়ে আসা উচিত।