সংস্কারের অভাবে তৈরি হওয়া বিশাল গর্ত ও পানি-কাদায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠা খুলনার সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডসংলগ্ন সড়ক দিয়ে শহরে প্রবেশের উপায় নেই। রূপসা শিপইয়ার্ড সড়কেও উন্নয়নকাজে ধীরগতিতে রয়েছে দীর্ঘ ভোগান্তি। ফলে শহরে প্রবেশের সব চাপ এখন গল্লামারী-জিরো পয়েন্ট প্রান্তে। তবে এখানেও গল্লামারী সেতুর নির্মাণকাজ চলমান থাকায় ভোগান্তির শেষ নেই। প্রতিদিন হাজার হাজার যানবাহন এই পথ দিয়ে শহরে প্রবেশ করে আবার বের হয়ে যায়। যানজট সামলাতে হিমশিম খেতে হয় ট্রাফিক পুলিশকে।
যানজটের কারণে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মজীবী মানুষ থেকে চিকিৎসার জন্য শহরে আসা রোগীরা সঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেন না। প্রতিনিয়ত যানজটের ভয়াবহতা এতটাই তীব্র হচ্ছে যে কয়েক মিনিটের রাস্তা অতিক্রম করতে সময় লাগছে ঘণ্টারও বেশি। এ অবস্থায় ট্রাফিক-ব্যবস্থা স্বাভাবিক করতে ইজিবাইক ও অবৈধ যানবাহন নিয়ন্ত্রণে গল্লামারী মোড়ে যৌথ সচেতনতামূলক কার্যক্রম শুরু করেছেন খুলনা জেলা ট্রাফিক কন্ট্রোল বিভাগ, নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তারা গল্লামারী মোড়ে ইজিবাইক ও অন্যান্য যানবাহনের লাইসেন্স চেক করা, অবৈধ ইজিবাইক, যানবাহন শহরে ঢুকতে না দেওয়াসহ চালকদের বিভিন্ন তথ্য দিয়ে সচেতন করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খুলনা নগরীর বিভিন্ন সড়কে ড্রেনেজ-ব্যবস্থার উন্নয়নকাজ চলমান থাকায় মূল সড়কগুলোতে যানবাহনের চাপ বেড়েছে। পাশাপাশি রয়েছে বেপরোয়া ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও মোটরচালিত রিকশার দৌরাত্ম্য। এতে ব্যাহত হচ্ছে নগরবাসীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা।
গল্লামারী এলাকার বাসিন্দা ইদ্রিস হাওলাদার জানান, অতিরিক্ত ইজিবাইকের কারণে খুলনায় যানজট বেশি হয়। নগরীতে গল্লামারী প্রবেশ পথে সবচেয়ে বেশি যানজট হয়। কেউই ট্রাফিক পুলিশের সিগন্যাল মানে না। ব্রিজের ওপর দিয়ে একই সঙ্গে পাশাপাশি একাধিক গাড়ি যেতে পারে না। ফলে দীর্ঘ সময় যানজটে আটকে থাকতে হয়।
জানা গেছে, খুলনা সিটি করপোরেশনের আওতায় নগরীতে ৮ হাজার ইজিবাইক ও ১৭ হাজার পায়েচালিত রিকশার লাইসেন্স রয়েছে। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, শহরের বাইরে থেকে এর দ্বিগুণ ইজিবাইক ঢুকে বিভিন্ন রুটে যাত্রী পরিবহন করে। ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে চলা অবৈধ ইজিবাইকের কারণেই মূলত যানজট বাড়ছে।
খুলনা জেলার প্রধান ট্রাফিক কন্ট্রোলিং সমন্বয়ক নাঈম মল্লিক বলেন, সড়কে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত অবৈধ ইজিবাইক। সম্প্রতি খুলনা সিটি করপোরেশন ইজিবাইকে বার কোডের আওতায় আনার জন্য একটি নতুন উদ্যোগ নিয়েছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা গেলে নগরীর অবৈধ ইজিবাইকের দৌরাত্ম্য অনেকটাই কমবে।
জানা গেছে, ২০১৩ সালে সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড থেকে ‘জয়বাংলা মোড়’ পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার সড়কটি নির্মাণ করে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ)। কিন্তু নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই সড়কে পিচ ও খোয়া উঠে বড় গর্ত তৈরি হয়। এ সময় কেডিএ সড়কটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ময়ূর ব্রিজ থেকে বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত এক কিলোমিটার মহানগর অংশ সিটি করপোরেশনকে ও ময়ূর ব্রিজ থেকে জয়বাংলা মোড় পর্যন্ত সড়কের বাকি অংশ এলজিইডিকে হস্তান্তর করে। কিন্তু নিম্নমানের কাজ হয়েছে দাবি করে রক্ষণাবেক্ষণে আপত্তি জানায় কেসিসি। সেই থেকে কেসিসি-কেডিএর সমন্বয়হীনতায় সড়কটি সংস্কারের অভাবে ওই অবস্থায় পড়ে আছে।
কেসিসির অংশের বিষয়ে সংস্থাটির প্রধান প্রকৌশলী মশিউজ্জামান খান বলেন, প্রকল্পের আওতায় সড়কটি সংস্কারে সময় লাগবে। এ কারণে ভোগান্তি কমাতে গর্তগুলোতে ইট দিয়ে (হেরিং বোন) চলাচলের উপযোগী করা হচ্ছে।
অন্যদিকে যানবাহনের চাপ বেড়ে যাওয়ায় গল্লামারী সেতু ভেঙে সেখানে রাজধানীর হাতিরঝিলের আদলে দৃষ্টিনন্দন ব্রিজ করা হচ্ছে। ব্রিজ নির্মিত হলে শহরে এই অংশে যানবাহন চলাচলে ভোগান্তি কমবে দাবি সড়ক বিভাগের।