শেরপুরে কমতে শুরু করেছে নদ-নদীর পানি। এতে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে দুর্ভোগ কমেনি। এখনো পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে হাজার হাজার পরিবার। ত্রাণ কার্যক্রম চললেও অনেক জায়গায় তা পৌঁছায়নি। বন্যায় এখন পর্যন্ত এ জেলায় ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদিকে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট, ফুলপুর ও ধোবাউড়া উপজেলায় প্রায় অর্ধলাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। খাবার-সুপেয় পানির সংকট দেখা দিয়েছে। যারা গবাদিপশু পালন করেন, তারা সীমাহীন ভোগান্তি পোহাচ্ছেন।
শেরপুরে বন্যাদুর্গত এলাকায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে ত্রাণ বিতরণ করা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকেও ত্রাণ বিতরণ করা হয়। ঢাকাস্থ শেরপুর জেলা সমিতির উদ্যোগে শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার কলসপার ইউনিয়ন, সূর্যনগর, কাশেমপুর বাজারসহ বেশ কিছু দুর্গত অঞ্চলে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।
জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় কোনো বৃষ্টিপাত হয়নি। তবে ব্রহ্মপুত্র, দশানি ও মৃগী নদীর পানি সামান্য বেড়েছে। এসব নদীর পানি বাড়লেও তা বিপৎসীমার অনেক নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, জেলায় ৪৭ হাজার হেক্টর আবাদি জমির আমন ধান ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া ১ হাজার হেক্টর জমির সবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মৎস্য বিভাগের তথ্যমতে, জেলায় মাছের ঘের তলিয়ে গেছে ৬ হাজারেরও বেশি। এতে প্রায় ৩০ কোটি টাকা ক্ষতির আশঙ্কা করছেন ভুক্তভোগীরা। তবে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রণোদনা ও সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন।
ময়মনসিংহে গতকাল সোমবার সরেজমিন দেখা যায়, ধোবাউড়ায় গত কয়েক দিন একটানা পানি বাড়লেও বৃষ্টি না থাকায় বর্তমানে কিছু এলাকায় পানি স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। কোথাও সামান্য কমেছে। একই অবস্থা হালুয়াঘাট ও ফুলপুর উপজেলায়। পানিতে বহু মানুষ ঘরবন্দি থাকায় ব্যাপক কষ্টে দিনযাপন করছেন। এ ছাড়া তারাকান্দা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে।
তিন উপজেলার স্থানীয়রা জানান, টানা বর্ষণে ধোবাউড়া উপজেলার দক্ষিণ মাইজপাড়া, গামারীতলা, ঘোষগাঁও ইউনিয়নের বিভিন্ন পয়েন্টে নেতাই নদের বাঁধ ভেঙে ও পাহাড়ি ঢলে গ্রাম প্লাবিত হয়। গতকাল সকাল থেকে পানি স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে।
হালুয়াঘাট সাখুয়াই ইউনিয়নের সাখুয়াই গ্রামের আজিজুল রহমান বলেন, ‘গত কয়েক দিন এই ইউনিয়নে পানি কম থাকলেও নিচু এলাকা হওয়ায় এখন বাড়ছে। ইতোমধ্যে ঘরের ভেতরে পানি ঢুকে পড়েছে। সাপ-বিচ্ছুর ভয়ে রাতে ঘুমাতে পারছি না। রান্না করে খাবার খাওয়ার মতোও অবস্থা নেই। খুব কষ্টে আছি।’
ধোবাউড়া সদর ইউনিয়নের গুজিয়ারকান্দা গ্রামের হালিমা খাতুন বলেন, ‘অল্প সময়ের মধ্যেই পানি গড়িয়ে পুরো গ্রাম প্লাবিত হয়ে যায়। গতকাল সকাল থেকে পানি স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। বাইরে বের হওয়ার মতো অবস্থা নেই। আমি এখনো ত্রাণসামগ্রী পাইনি। আমার দুটি গরু সাঁতরিয়ে একটু উঁচু স্থানে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। তবে এগুলোকেও খাবার দিতে পারছি না।’