ঢাকা ২৫ কার্তিক ১৪৩১, রোববার, ১০ নভেম্বর ২০২৪

উদ্বোধনের আগেই বেহাল সড়ক

প্রকাশ: ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৩৮ এএম
আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ১০:০২ এএম
উদ্বোধনের আগেই বেহাল সড়ক
চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় খাগরিয়া ইউনিয়নের ভোর বাজারের বেহাল সড়ক। খবরের কাগজ

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় খাগরিয়া ইউনিয়নের ভোর বাজার সড়কটি উদ্বোধনের আগেই বেহাল হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন জায়গার কার্পেটিং উঠে ৩ কিলোমিটার সড়কজুড়ে তৈরি হয়েছে প্রায় শতাধিক ছোট-বড় গর্ত। এতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা প্রকাশ করছেন স্থানীয়রা। তাদের অভিযোগ, বিটুমিনের পরিমাণ কম ও নিম্নমানের পাথর ব্যবহার করায় অল্প সময়ের মধ্যেই সড়কের এমন অবস্থা হয়েছে। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বলছে ভিন্ন কথা। তাদের দাবি, বৃষ্টির কারণে সড়কের কিছু জায়গায় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার আগে আবার সেগুলো সংস্কার করে দেওয়া হবে।

এলজিইডি সূত্রে জানা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সড়কটির ৩ কিলোমিটার কার্পেটিংয়ের দরপত্র আহ্বান করা হয়। ওই সময় ২ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ব্যয়ে কাজটি পান চট্টগ্রামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স তাওয়াককুল এন্টারপ্রাইজ। ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি কার্পেটিংয়ের কাজ শুরু করে। ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে কাজটি শেষ করে বুঝিয়ে দেওয়ার কথা থাকলেও পরে আবার ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়।

সরেজমিনে দেখা যায়, চিবাতল এলাকার করাতকল থেকে ভোর বাজার পর্যন্ত সড়কের পিচ উঠে প্রায় শতাধিক ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সামান্য বৃষ্টিতে সেখানে পানি জমে আছে। এসব গর্তে জমা বৃষ্টির পানি এড়িয়ে যানবাহন চলাচল করছে। আবার কয়েকটি জায়গায় একসঙ্গে অনেক গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। গর্তগুলোর ওপর দিয়েই গাড়ি চলাচল করতে দেখা যায়। এ ছাড়া দেখা যায়, কিছু কিছু জায়গায় বৃষ্টির পানি জমে কার্পেটিং উঠে যেতে শুরু করেছে। এতে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা।

স্থানীয় বাসিন্দা আইয়ুব আলী অভিযোগ করে বলেন, ‘এখনো পর্যন্ত সড়কটি উদ্বোধন করা হয়নি। উদ্বোধনের আগেই সড়কের বিভিন্ন জায়গায় পিচ উঠে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এ থেকেই বোঝা যাচ্ছে সড়কের কাজে নয়ছয় হয়েছে। এলজিইডি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগসাজশে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজে অনিয়ম করেছে।

গর্তগুলো মেরামত করা হলেও সড়কটি বেশি দিন চলাচলের উপযোগী থাকবে বলে মনে হয় না। তারপরও দ্রুত সড়কটি মেরামতের পাশাপাশি ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’

ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাচালক আলী আজগর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সড়কে কার্পেটিং করেছে এখনো ৩ মাস পূর্ণ হয়নি। তার আগেই সড়কের বেশির ভাগ অংশজুড়ে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে ভালোভাবে গাড়ি চালানো যাচ্ছে না। প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা।’

স্থানীয় মোহাম্মদ ইউনুচ বলেন, ‘ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বৃষ্টির মধ্যে সড়কে কার্পেটিং কাজ করেছে। তাই দুই-তিন মাস না যেতেই পিচ উঠে গর্ত তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া বিটুমিনের পরিমাণ কম ব্যবহার করায় পিচ উঠে যাচ্ছে। সড়ক দিয়ে নির্বিঘ্নে চলাচল করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি ছিল বলে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে ধারণা করছি।’ 

সড়কের কাজে নিয়োজিত মেসার্স তাওয়াককুল এন্টারপ্রাইজের ঠিকাদার মো. হাসান বলেন, ‘অতি বৃষ্টির কারণে সড়কের বিভিন্ন জায়গায় পিচ উঠে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এখনো মাঝেমধ্যে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় আপাতত কাজ বন্ধ রেখেছি। এলজিইডি কর্তৃপক্ষকে কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার আগেই ক্ষতিগ্রস্ত অংশগুলো মেরামত করে দেওয়া হবে।’

এলজিইডির সার্ভেয়ার আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেশিনের মাধ্যমে উপকরণ সংমিশ্রণ করে সড়কে কার্পেটিং করেছে। মেশিনে অতিরিক্ত তাপ দেওয়ায় সড়ক সংস্কারে ব্যবহৃত উপকরণের গুণগত মান নষ্ট হয়েছে। তাই বৃষ্টিপাতের সঙ্গে সঙ্গে সড়কের পিচ উঠে যাচ্ছে। পরে সেটি বুঝতে পেরে আমরা সাতকানিয়া উপজেলায় চলমান প্রতিটি সড়ক কার্পেটিং কাজে উপকরণ সংমিশ্রণ মেশিন ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছি।’

এলজিইডির কর্মকর্তা সবুজ কুমার দে খবরের কাগজকে বলেন, ‘বৃষ্টির পানি জমে সড়কের কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেগুলো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেরামত করে দেবে। ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৭৩ লাখ টাকা বিল এলজিইডি কর্তৃপক্ষের কাছে রয়েছে। তারা ঠিকঠাক মতো কাজ বুঝিয়ে দিতে না পারলে আর বিল পাবে না। এ ছাড়া কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার পর আগামী ১ বছর পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সড়কটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকবে।’

ছাত্রলীগ পুনর্বাসনে ছাত্রদল নেতাদের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

প্রকাশ: ১০ নভেম্বর ২০২৪, ১২:১৭ পিএম
ছাত্রলীগ পুনর্বাসনে ছাত্রদল নেতাদের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ
ছাত্রলীগ ও ছাত্রদল

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) ছাত্রদল নেতাদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় সহসাধারণ সম্পাদক জান্নাতুল নওরীন ঊর্মির সংবাদ সম্মেলনের পর পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেছেন ববির ছাত্রদলের নেতারা।

শনিবার (৯ নভেম্বর) দুপুরে বরিশাল প্রেসক্লাবে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

এর আগে গত ৭ নভেম্বর দুপুরে বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটে ববির বহিষ্কৃত ছাত্রদল নেতা মো. মিনহাজুল ইসলামসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেন জান্নাতুল নওরীন ঊর্মি। এতে উভয় পক্ষই ছাত্রলীগকে পুনর্বাসনের অভিযোগ তোলেন।

লিখিত বক্তব্যে ছাত্রদল নেতা মিনহাজুল ইসলাম দাবি করেন, ‘ড্রপআউট শিক্ষার্থী ও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহসাধারণ সম্পাদক জান্নাতুল নওরীন ঊর্মি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে ছাত্রলীগের চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বৈঠক করছেন। তাদের পুনর্বাসন চেষ্টা করছেন। ৫ আগস্টের পর থেকে তিনি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাপক হারে বিতর্কিত কর্মকাণ্ড শুরু করেছেন। বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিতর্কিত হয়ে উঠেছেন। তার বিরুদ্ধে উপাচার্য বরাবর অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।’ 

মিনহাজ বলেন, ‘ঊর্মি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হলেও বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে তিনি বিতর্কিত। তার অপকর্মের বিরোধিতা করায় ৮ নভেম্বর রাতে তার বোন জামাই ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের সহসাংগঠনিক সম্পাদক শামীম শেখকে দিয়ে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এ ঘটনায় তিনি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন এবং বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের বন্দর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন। 

এদিকে গত ৭ নভেম্বর দুপুরে বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটি (বিআরইউ) কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জান্নাতুল নওরীন ঊর্মি বলেছিলেন, ‘ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা ২০২০ সালের ১ মার্চ রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জের ধরে আমার ওপর হামলা করেছিল। তারা জ্যামিতি বক্সের কাটা কম্পাস দিয়ে আমার বুকে ও গলায়সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফুটো করে। যে চিহ্ন এখনো রয়েছে। আওয়ামী লীগের শাসনামলে বিচার চেয়ে পাইনি। এমনকি নিয়মিত পড়াশোনাসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, বিভাগ থেকে পরীক্ষা দেওয়া অনুমতি দেয়নি। তখন ববি ছাত্রদলকে আমার পক্ষে কোনো ভূমিকা নিতে দেখা যায়নি। বরং সংবাদ সম্মেলনকারীরা সন্ত্রাসী ছাত্রলীগের সঙ্গে আঁতাত করেছে।’

মিনহাজুল ইসলাম বলেন, ‘জান্নাতুল নওরীন ঊর্মিসহ ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় ওই দুই নেতা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সেক্টরে সুবিধা নেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করছে। তাদের বিভিন্ন অপকর্মের বিরোধিতা করায় কেন্দ্রীয় কমিটিকে ভুল বুঝিয়ে বহিষ্কার করানো হয়েছে।’ 

জান্নাতুল নওরীন ঊর্মি তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো অস্বীকার করে বলেন, ‘যারা সংবাদ সম্মেলন করেছেন তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠায় কেন্দ্রীয় সংসদ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এ ছাড়া তারাই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করছেন।’

তামাবিল স্থলবন্দরে ভারতীয় গাড়িতে আগুন, আতঙ্ক

প্রকাশ: ১০ নভেম্বর ২০২৪, ১২:১৩ পিএম
তামাবিল স্থলবন্দরে ভারতীয় গাড়িতে আগুন, আতঙ্ক
তামাবিল স্থলবন্দরে ভারতীয় গাড়িতে আগুন

সিলেটের তামাবিল স্থলবন্দরে মিথানল পরিবহনের ভারতীয় গাড়িতে (ট্যাংক-লরি) অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। তবে গাড়িতে মিথানল না থাকায় বড় রকমের অগ্নিদুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেয়েছে স্থলবন্দর। গাড়ির আগুন নিয়ন্ত্রণ করেছে ভারতীয় ফায়ার সার্ভিস। 

শনিবার (৯ নভেম্বর) বেলা পৌনে ২টার দিকে অগ্নিকাণ্ডের এ ঘটনা ঘটে। 

তামাবিল স্থলবন্দর সূত্র জানায়, ভারতীয় মিথানল পরিবহনের গাড়িটিতে হঠাৎ করে আগুন লাগে। এ সময় তামাবিল স্থলবন্দর থেকে জৈন্তাপুর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশনে খবর দেওয়া হয়। কিন্তু ১২ কিলোমিটার দূর থেকে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি আসতে বিলম্ব হতে পারে ভেবে তাৎক্ষণিকভাবে ভারতের ডাউকি স্থলবন্দর থেকে ফায়ার সার্ভিসের অগ্নিনির্বাপক গাড়ি বাংলাদেশের ভেতরে আনা হয়। এরপর মিনিট দশেক সময়ের মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

তামাবিল স্থলবন্দরের সহকারী পরিচালক আমিনুল হক খবরের কাগজকে বলেন, গত ৫ নভেম্বর বাংলাদেশের মিথানল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান সামুদা স্প্রেক কেমিক্যাল লিমিটেডের নামে সাতটি গাড়ি ভারত থেকে বাংলাদেশের তামাবিল স্থলবন্দরে প্রবেশ করে। পরে ল্যাবরেটরি পরীক্ষা শেষে শনিবার (গতকাল) বাংলাদেশের গাড়িতে কেমিক্যালগুলো স্থানান্তর করা হয়। প্রতিটি গাড়িতে ২৮ থেকে ৩০ টন মিথানল থাকে। তিনি জানান, আগুন লাগা গাড়িটি ছিল ভারতীয় ৭টি ট্যাংক-লরির একটি। এটি ভারতে ফিরে যেতে অপেক্ষায় ছিল। 

অগ্নিকাণ্ডের কারণ সম্পর্কে গাড়িচালক সারভান জানান, গাড়ির ভেতরে ওয়্যারিং শটসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।। বিস্তারিত তদন্ত সাপেক্ষে বলা যাবে। তবে বাংলাদেশের গোয়েন্দা সূত্র বলেছে, ভারতীয় গাড়িটির কেবিনে রাখা চালকের রান্নার জন্য গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।

প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখের উপবাসের আরাধনা

প্রকাশ: ১০ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ পিএম
প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখের উপবাসের আরাধনা
মৌলভীবাজারে সনাতন ধর্মগুরু শ্রীশ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারীর হাজারও অনুসারী ও ভক্তরা প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখের উপবাস পালন করেন। ছবি: খবরের কাগজ

সূর্য যত পশ্চিমে হেলে যেতে থাকে, ততই বাড়তে থাকে পুণ্যার্থীদের ভিড়। প্রদীপ জ্বালিয়ে উন্মুক্ত ময়দানে সারিবদ্ধভাবে বসে যান সবাই। চলে মন্ত্রোচ্চারণ। তারপর সবার কল্যাণ কামনা করে প্রার্থনা করেন পুণ্যার্থীরা। এমন প্রদীপ প্রজ্বালনের মধ্য দিয়ে মৌলভীবাজারে রাখের উপবাস অনুষ্ঠিত হয়।

শনিবার (৯ নভেম্বর) রাতে জেলার সৈয়ারপুরে লোকনাথ সেবাশ্রমে সনাতন ধর্মগুরু শ্রীশ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারীর হাজারও অনুসারী ও ভক্তরা আরাধনায় নিমগ্ন থেকে এই রাখের উপবাস পালন করেন।

এ সময় মন্দিরের আঙিনায় প্রত্যেক ভক্তের বসার জন্য নির্দিষ্ট স্থান করে দেওয়া হয়, যাতে আগত পুণ্যার্থীরা শৃঙ্খলার সঙ্গে মাটির প্রদীপ, ঘি, ডাব, দুধ, ফুল, ধান-দূর্বা, ধূপদানি ও কলাগাছের খোল নিয়ে বসতে পারেন।

আয়োজকরা জানান, দুপুরের পর থেকে শুরু হয় প্রার্থনার প্রস্তুতি এবং পুণ্যার্থীদের আগমন। সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে মন্দিরের ঘণ্টা বেজে উঠলে উলুধ্বনির মধ্য দিয়ে সবাই প্রদীপ জ্বালাতে শুরু করেন।

এ সময় বাজনা, উলুধ্বনি, ধূপের ধোঁয়া সব মিলিয়ে আশ্রমে পৌরাণিক মহাজাগতিক অবস্থা বিরাজ করে। পরে ভক্তরা জ্বলন্ত প্রদীপ ও ধূপদানি মনু নদের জলে বিসর্জন করেন। প্রদীপ বিসর্জন শেষ হলে সারাদিনের উপবাস ভাঙার মধ্য দিয়ে শেষ হয় সব আনুষ্ঠানিকতা।

ব্রত উদযাপনে আসা পুণ্যার্থী সুস্মিতা রায় বলেন, উপবাস থেকে ব্রত পালনের উদ্দেশ্যে সন্ধ্যার পূর্বেই ধূপ-প্রদীপ নিয়ে বসতে হয়। আরাধনায় বসে প্রদীপ জ্বালানোর পর কথা বলা বন্ধ করে দিয়ে সংযম, মনোব্রতের মাধ্যমে একাগ্রচিত্তে লোকনাথকে ডাকতে হয়। প্রদীপ জ্বলা শেষ হলে মন্দির থেকে প্রসাদ গ্রহণ করে পুণ্যার্থীরা উপবাস ভাঙেন।

আয়োজক সুব্রত সরকার রাজ বলেন, ২০০২ সাল থেকে মৌলভীবাজারের এই আশ্রমে শুরু হয় রাখের উপবাস। বিপদ-আপদ, রোগবালাই থেকে মুক্তি পেতে সনাতন ধর্মগুরু শ্রীশ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারীর অনুসারী ও ভক্তরা এই ব্রত পালন করেন। ১৫ কার্তিকের পর বাকি সময় প্রতি শনি ও মঙ্গলবার এ ব্রত পালন করা হয়।
 
লোকনাথ সেবাশ্রমের পুরোহিত রিংকু ভট্টাচার্য জানান, কোথাও কোথাও এ উৎসবের নাম রাখের উপবাস, কার্তিক ব্রত, গোসাইর উপবাস কিংবা ঘৃত প্রদীপ প্রজ্বালনের উৎসবও বলে।

লোকনাথ সেবাশ্রমের সাধারণ সম্পাদক চন্দন রায় বলেন, রাখের উপবাস উপলক্ষে হাজারো সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সমাগম হয়েছে লোকনাথ সেবাশ্রম প্রাঙ্গণে। এবার প্রায় দুই শ পুণ্যার্থী ব্রত পালন করেছেন। অনুষ্ঠান সুন্দর ও শান্তিপূর্ণভাবে পালন করা হয়েছে।


পুলক পুরকায়স্থ/মেহেদী/অমিয়/

পুরো গ্রামের জনসংখ্যা মাত্র ৪ জন!

প্রকাশ: ১০ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ পিএম
আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০১ পিএম
পুরো গ্রামের জনসংখ্যা মাত্র ৪ জন!
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার রাজীবপুর ইউনিয়নের উমানাথপুর গ্রাম। এই গ্রামে মাত্র চারজন মানুষ বসবাস করেন। ছবি: খবরের কাগজ

যে দেশে প্রতি বর্গকিলোমিটারে জনসংখ্যার ঘনত্ব ১ হাজার ১৭১ জন। সেখানে একটি গ্রামে মাত্র চারজন মানুষ থাকার ঘটনা অবিশ্বাস্য মনে হলেও সত্য। গ্রামটির নাম উমানাথপুর। ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার রাজীবপুর ইউনিয়নে এ গ্রামটির অবস্থান। ব্যতিক্রমী এ গ্রামের একমাত্র বাড়িটি ২৫ শতক জমির ওপর। রয়েছে দুটি বসতঘর, একটি গোয়ালঘর, পুকুর ও একটি টয়লেট ছাড়াও কিছু গাছগাছালি। গ্রামটির অস্তিত্ব সম্পর্কে স্থানীয় আশপাশের গুটিকয়েক মানুষ ছাড়া জানেন না বেশির ভাগ এলাকার মানুষ। বিচিত্র এ গ্রামের অস্তিত্ব রয়েছে ভূমি মানচিত্রে। উমানাথপুর নামে রয়েছে আলাদা মৌজাও। এই গ্রামের জেএল নম্বর ১১৬।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত উমানাথপুর গ্রাম। দলিল লেখক সিরাজুল সরকার (৭০) এই গ্রামের বাড়িটির একমাত্র মালিক। অন্যের জমির আইল দিয়ে এ বাড়িতে প্রবেশ করতে হয়। আর এ বাড়ি ঘিরেই গঠিত হয়েছে ‘উমানাথপুর’ গ্রাম। এ গ্রামের পশ্চিমে ব্রহ্মপুত্র নদ। আশপাশের গ্রামের মধ্যে রয়েছে- উত্তরে রামগোবিন্দপুর, দক্ষিণে হরিপুর, পূর্বে উদয়রামপুর এবং পশ্চিমে রামগোবিন্দপুর ও হরিপুর গ্রাম।

প্রতিবেশী হরিপুর গ্রামের বাসিন্দা নয়ন মিয়া বলেন, একটি বাড়ি নিয়ে একটি গ্রাম। এটি একটি আজব ঘটনা। প্রথমে এ খবর শুনে অনেকেই বিশ্বাসই করেন না। কিন্তু এটিই সত্য। উদয় রামপুর গ্রামের বাসিন্দা ইকবাল হোসেন বলেন, ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি এই গ্রামটি। প্রায় একই অবস্থা আমার নিজ গ্রাম উদয় রামপুরের। এখানেও চারটি পরিবারের বসবাস। এতে জনসংখ্যা প্রায় অর্ধশত।

রামগোবিন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা নুরুল হক পারভেজ বলেন, জমির কাগজপত্রে এই গ্রামের অস্তিত্ব রয়েছে। এই গ্রামের একমাত্র বাড়িটিতে যাতায়াতের রাস্তাটি প্রশস্ত করে দিলে বাড়ির লোকজনের চলাচলে সুবিধা হতো।

উমানাথপুর গ্রামের বাসিন্দা সিরাজুল সরকার বলেন, ‘আমার বাবা সাবেক ইউপি সদস্য রমজান আলী সরকার ও তার পূর্বপুরুষরা এই বাড়িটি ব্রিটিশ আমলে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই গ্রামের মোট জমির পরিমাণ প্রায় ৭ একর। বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে আমি পরিবার নিয়ে এই বাড়িতে বসবাস করছি। সম্প্রতি আমার ছেলে মারা যাওয়ার পর আমাদের পরিবারের মোট সদস্য বর্তমানে চারজন। এর মধ্যে নাতি ছাড়া আমি, আমার স্ত্রী ও এক পুত্রবধূ রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমার বোনেরা বাড়ির পেছনে অন্য গ্রামে বসবাস করেন। একটি মহল আমাকে এখান থেকে উচ্ছেদের পাঁয়তারা করছে। এ কারণে দেড় বছর আগে থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করা হয়েছে। এখনো হুমকি পাচ্ছি।’

রাজীবপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুল আলী ফকির বলেন, অনেক আগে থেকেই একটি বাড়ি নিয়ে এই গ্রাম। তবে কীভাবে এই গ্রামের সৃষ্টি হয়েছে, তা আমার জানা নেই।

এ বিষয়ে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সারমিনা সাত্তার বলেন, উমানাথপুর গ্রামটি পরিদর্শন করে সার্বিক বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গ্রামে ভালোভাবে যাতায়াত করার জন্য সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে রাস্তার উন্নয়নে কাজ করার ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হবে।

চিলমারী-রৌমারী রুট: নাব্যসংকটে ফেরি চলাচল বন্ধ

প্রকাশ: ১০ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৪৮ এএম
আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৪৯ এএম
চিলমারী-রৌমারী রুট: নাব্যসংকটে ফেরি চলাচল বন্ধ
ব্রহ্মপুত্র নদে নাব্যসংকটের কারণে কুড়িগ্রামের চিলমারী-রৌমারী ঘাটে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। ছবি: খবরের কাগজ

ব্রহ্মপুত্র নদে নাব্যসংকটের কারণে কুড়িগ্রামের চিলমারী-রৌমারী নৌপথের ফেরি চলাচল আবার বন্ধ হয়ে গেছে। 

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) গত শুক্রবার থেকে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেয়। এতে চিলমারী-রৌমারী ফেরিঘাটে পারাপারের অপেক্ষায় থাকা পণ্যবাহী গাড়ির চালক ও ব্যবসায়ীরা ভোগান্তিতে পড়েন। এর আগেও একাধিকবার নাব্যসংকটের কারণে এ রুটে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।  

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর চিলমারী-রৌমারী রুটে ফেরি সার্ভিস উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনের পর থেকে ওই রুটে কুঞ্জলতা নামে একটি ফেরির যাতায়াত শুরু করে। সপ্তাহখানেক পর বেগম সুফিয়া কামাল নামে আরও একটি ফেরি এই রুটে যোগ হয়। দুটি ফেরি দিয়ে পণ্যবাহী ট্রাকসহ নিয়মিত যাত্রী পারাপার করা হয়। ওই রুটে নিয়মিত ফেরি চালু রাখতে নদী খননের জন্য একটি স্ট্যান্ডিং টিম থাকার কথা। ঘাটে ড্রেজিং জাহাজ দেখা গেলেও খননকাজ করতে দেখা যায় না। ফলে প্রায়ই শুষ্ক মৌসুমে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়। 

বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ জানায়, গত প্রায় ১০ দিন ধরে ফেরিগুলো চলাচলের সময় নাব্যসংকটে সমস্যায় পড়ে। তবে দুই ঘাটের পণ্যবাহী অসংখ্য ট্রাকের কথা বিবেচনা করে ফেরির মাস্টাররা কমসংখ্যক পণ্যবাহী ট্রাক নিয়ে পারাপার করছিলেন। কিন্তু গত শুক্রবার রৌমারী ঘাট এলাকায় একটি ফেরির নিচের অংশ নাব্যসংকটের কারণে আটকে যায়। এতে কর্তৃপক্ষ ফেরি চলাচল বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়।

চিলমারী নদীবন্দর এলাকায় দেখা গেছে, চিলমারী বন্দর ঘাটে পারাপারের অপেক্ষায় অর্ধশতাধিক পণ্যবাহী গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। ঘাট থেকে শুরু করে চিলমারীর মাটি কাটা মোড় পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকায় গাড়ির সারি। পার হতে না পেরে ভোগান্তিতে পড়েছেন পরিবহন সংশ্লিষ্ট শ্রমিক-চালকসহ অন্যরা।

এসব গাড়ির চালক ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনেকে দুই দিন আবার কেউ কেউ তিন-চার দিন ধরে নদী পার হওয়ার অপেক্ষায় আছেন। ভুরুঙ্গামারীর সোনাহাট স্থলবন্দর থেকে পাথর নিয়ে আসা ট্রাকচালক শাহাবুল ইসলাম বলেন, ‘মঙ্গলবার থেকে অপেক্ষায় থেকেও সিরিয়াল মেলেনি। আমাদের আগে অনেক গাড়ি দাঁড়ানো ছিল। এর মাঝে হঠাৎ করে ফেরি চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। লোড গাড়ি নিয়ে রাস্তার ওপর থাকতে হবে। খরচ হবে অনেক। কবে ফেরি চালু হবে তাও নিশ্চিত না। খুব বিপদে পড়ে গেলাম।’

বিআইডব্লিউটিএ’র উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান জানান, ব্রহ্মপুত্রের ঘাটে পানি কমে যাওয়ায় নাব্যসংকট দেখা দিয়েছে। ফেরি চলাচলের রুটে প্রায় দুই হাজার ফিট এলাকা ড্রেজিং শুরু করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৮০০ ফিট খনন করা গেছে। বাকি অংশ ড্রেজিং হলে ওই চ্যানেল দিয়ে সহজে ফেরি চলাচল করতে পারবে।

এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে দ্রুত গভীরতা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি। ফেরি চলাচল স্বাভাবিক করার চেষ্টাও করা হচ্ছে। আশা করছি ঠিক হয়ে যাবে।’