চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় খাগরিয়া ইউনিয়নের ভোর বাজার সড়কটি উদ্বোধনের আগেই বেহাল হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন জায়গার কার্পেটিং উঠে ৩ কিলোমিটার সড়কজুড়ে তৈরি হয়েছে প্রায় শতাধিক ছোট-বড় গর্ত। এতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা প্রকাশ করছেন স্থানীয়রা। তাদের অভিযোগ, বিটুমিনের পরিমাণ কম ও নিম্নমানের পাথর ব্যবহার করায় অল্প সময়ের মধ্যেই সড়কের এমন অবস্থা হয়েছে। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বলছে ভিন্ন কথা। তাদের দাবি, বৃষ্টির কারণে সড়কের কিছু জায়গায় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার আগে আবার সেগুলো সংস্কার করে দেওয়া হবে।
এলজিইডি সূত্রে জানা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সড়কটির ৩ কিলোমিটার কার্পেটিংয়ের দরপত্র আহ্বান করা হয়। ওই সময় ২ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ব্যয়ে কাজটি পান চট্টগ্রামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স তাওয়াককুল এন্টারপ্রাইজ। ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি কার্পেটিংয়ের কাজ শুরু করে। ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে কাজটি শেষ করে বুঝিয়ে দেওয়ার কথা থাকলেও পরে আবার ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, চিবাতল এলাকার করাতকল থেকে ভোর বাজার পর্যন্ত সড়কের পিচ উঠে প্রায় শতাধিক ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সামান্য বৃষ্টিতে সেখানে পানি জমে আছে। এসব গর্তে জমা বৃষ্টির পানি এড়িয়ে যানবাহন চলাচল করছে। আবার কয়েকটি জায়গায় একসঙ্গে অনেক গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। গর্তগুলোর ওপর দিয়েই গাড়ি চলাচল করতে দেখা যায়। এ ছাড়া দেখা যায়, কিছু কিছু জায়গায় বৃষ্টির পানি জমে কার্পেটিং উঠে যেতে শুরু করেছে। এতে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা।
স্থানীয় বাসিন্দা আইয়ুব আলী অভিযোগ করে বলেন, ‘এখনো পর্যন্ত সড়কটি উদ্বোধন করা হয়নি। উদ্বোধনের আগেই সড়কের বিভিন্ন জায়গায় পিচ উঠে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এ থেকেই বোঝা যাচ্ছে সড়কের কাজে নয়ছয় হয়েছে। এলজিইডি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগসাজশে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজে অনিয়ম করেছে।
গর্তগুলো মেরামত করা হলেও সড়কটি বেশি দিন চলাচলের উপযোগী থাকবে বলে মনে হয় না। তারপরও দ্রুত সড়কটি মেরামতের পাশাপাশি ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’
ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাচালক আলী আজগর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সড়কে কার্পেটিং করেছে এখনো ৩ মাস পূর্ণ হয়নি। তার আগেই সড়কের বেশির ভাগ অংশজুড়ে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে ভালোভাবে গাড়ি চালানো যাচ্ছে না। প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা।’
স্থানীয় মোহাম্মদ ইউনুচ বলেন, ‘ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বৃষ্টির মধ্যে সড়কে কার্পেটিং কাজ করেছে। তাই দুই-তিন মাস না যেতেই পিচ উঠে গর্ত তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া বিটুমিনের পরিমাণ কম ব্যবহার করায় পিচ উঠে যাচ্ছে। সড়ক দিয়ে নির্বিঘ্নে চলাচল করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি ছিল বলে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে ধারণা করছি।’
সড়কের কাজে নিয়োজিত মেসার্স তাওয়াককুল এন্টারপ্রাইজের ঠিকাদার মো. হাসান বলেন, ‘অতি বৃষ্টির কারণে সড়কের বিভিন্ন জায়গায় পিচ উঠে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এখনো মাঝেমধ্যে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় আপাতত কাজ বন্ধ রেখেছি। এলজিইডি কর্তৃপক্ষকে কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার আগেই ক্ষতিগ্রস্ত অংশগুলো মেরামত করে দেওয়া হবে।’
এলজিইডির সার্ভেয়ার আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেশিনের মাধ্যমে উপকরণ সংমিশ্রণ করে সড়কে কার্পেটিং করেছে। মেশিনে অতিরিক্ত তাপ দেওয়ায় সড়ক সংস্কারে ব্যবহৃত উপকরণের গুণগত মান নষ্ট হয়েছে। তাই বৃষ্টিপাতের সঙ্গে সঙ্গে সড়কের পিচ উঠে যাচ্ছে। পরে সেটি বুঝতে পেরে আমরা সাতকানিয়া উপজেলায় চলমান প্রতিটি সড়ক কার্পেটিং কাজে উপকরণ সংমিশ্রণ মেশিন ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছি।’
এলজিইডির কর্মকর্তা সবুজ কুমার দে খবরের কাগজকে বলেন, ‘বৃষ্টির পানি জমে সড়কের কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেগুলো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেরামত করে দেবে। ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৭৩ লাখ টাকা বিল এলজিইডি কর্তৃপক্ষের কাছে রয়েছে। তারা ঠিকঠাক মতো কাজ বুঝিয়ে দিতে না পারলে আর বিল পাবে না। এ ছাড়া কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার পর আগামী ১ বছর পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সড়কটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকবে।’