ছবি : খবরের কাগজ
রুমি খাতুনের কোলজুড়ে এসেছে ফুটফুটে কন্যা সন্তান। শীতের রাতে কুয়াশাচ্ছন্ন পরিবেশের মাঝেই সন্তানের মুখ দেখে আনন্দে অশ্রুবরণ করল মা। কিন্তু সেই আনন্দে যেন বেদনারও সংমিশ্রণ। বিষণ্নতার সঙ্গে অশ্রুসিক্ত গোটা পরিবার। গতকাল বুধবার (১১ ডিসেম্বর) সারা দিন এমন পরিবেশ তৈরি হয় মাগুরা জেলা শহরের ল্যাব সিটি মেডিকেল সার্ভিসেস ক্লিনিকে। কন্যা সন্তানটির বাবা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত ছাত্রদল নেতা মেহেদী হাসান রাব্বি।
নিহত রাব্বির স্বজন শফিকুল ইসলাম জানান, মা ও মেয়ে দুজনই ভালো আছে। শারীরিক কোনো জটিলতা নেই বলে তারা চিকিৎসক থেকে জানতে পেরেছেন। রাব্বীর মৃত্যুর সময় তার স্ত্রী রুমি খাতুন ৬ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। স্বামী হারানোয় তিনি বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। সেই শোক নিয়ে দীর্ঘ চার মাস পর কন্যা সন্তানের মুখ দেখে মায়ের মুখে আনন্দের পাশাপাশি ছিল তীব্র বেদনার রেশ।
মেহেদী হাসান রাব্বি মাগুরা পারনান্দুয়ালী সংলগ্ন বরুনাতৈল এলাকার মৃত মইন উদ্দিনের ছেলে। মাগুরা জেলা ছাত্রদলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে ছিলেন তিনি। গত ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে তিনি মাগুরা পারনান্দুয়ালী উপশহরের ব্রিজ এলাকায় সংঘর্ষ চলাকালে গুলিতে নিহত হন।
নিহত রাব্বির স্ত্রী কানিফ ফাতেমা রুমি বলেন, ‘আমি দেশবাসীর কাছে আমার স্বামীর জন্য দোয়া চাই। আল্লাহ যেন তাকে জান্নাতবাসী করে। সবাই আমার বাচ্চার জন্য দোয়া করবেন। আমি যেন আমার স্বামীর আদর্শে আমার সন্তানকে মানুষ করতে পারি।’
স্বামী হত্যার বিচার না পাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কার কাছে বিচার চাইব, যেখানে পুলিশ প্রটেকশনে আওয়ামী লীগ দিয়ে আমার স্বামীকে হত্যা করিয়েছে। অথচ এখন পর্যন্ত পুলিশ একজন খুনিকেও গ্রেপ্তার করতে পারল না। এর কি আর বিচার হবে? হলে চার মাসে বিচার হতো। সরকার যদি এর বিচার না করতে পারে, তাহলে আমার কাছে তারা স্বীকার করুক যে তারা ব্যর্থ। তারপর আমি আল্লাহ পাকের কাছে ছেড়ে দেব, তিনি যেন এর বিচার করেন।’
নিহত রাব্বির মা সালেহা বেগম বলেন, ‘বাচ্চা গর্ভে আসার পর আমার ছেলের খুব শখ ছিল তার সন্তানকে নিয়ে ঘুরে বেড়াবে, বিভিন্ন কিছু কিনে দেবে। আজ সন্তান দুনিয়াতে এসেছে কিন্তু আমার ছেলে এ দুনিয়া থেকে চলে গেল।’
রাব্বীর মৃত্যুর ঘটনায় গত ১৩ আগস্ট মাগুরা সদর থানায় হত্যা মামলা করেন নিহতের ভাই ইউনিস আলী। ওই মামলায় মাগুরার আওয়ামী লীগের দুই সাবেক সংসদ সদস্যসহ যুবলীগ, ছাত্রলীগ নেতাদের আসামি করা হয়। অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে প্রায় ১৫০ জনকে। তবে চার মাসেও কোনো আসামি গ্রেপ্তার দেখাতে পারেনি পুলিশ।
এদিকে সন্তান জন্মদানের খবর শুনে বুধবার দুপুরে ক্লিনিকটিতে শিশুটিকে দেখতে ছুটে যান সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাত জাহান।