মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডুতে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে দেশটির সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির মধ্যে সংঘাত চলছে। গত শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) রাত থেকে রবিবার ভোর পর্যন্ত বাংলাদেশ সীমান্তের দিক থেকে এই গোলাগুলির বিকট শব্দ শোনা যাচ্ছিল। এতে নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের পাশাপাশি বাংলাদেশ সীমান্তের মানুষের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
সীমান্তে বসবাসকারীরা বলছেন, কক্সবাজারের টেকনাফ পৌরসভার জালিয়াপাড়া থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এবং সাবরাং-এর পূর্বে নাফ নদীর ওপারে মংডু শহরের অবস্থান। ওই সীমান্ত এলাকায় প্রচণ্ড বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে। দীর্ঘ চলমান যুদ্ধে মায়ানমারের জান্তাবাহিনী বিদ্রোহী আরাকান আর্মির অধিকাংশ এলাকা তাদের দখলে নিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এসব জায়গা পুরোপুরি উদ্ধারের জন্য কয়েকদিন ধরে ব্যাপক হামলা চালায় দেশটির জান্তা সরকার। ফলে সেদেশের গোলার শব্দে এপারের সীমান্ত কেঁপে উঠছে।
টেকনাফ সীমান্তের বাসিন্দা ওমর ফারুক বলেন, ‘মায়ানমারের গোলার শব্দে নির্ঘুম রাত কেটেছে। সকাল পর্যন্ত বড় ধরনের গোলার বিকট শব্দ শোনা গেছে। আমরা রাত জেগে বসে ছিলাম। বিশেষ করে নারী ও শিশুরা ভয়ে ছিল।’
সীমান্তের স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলেছেন, মায়ানমারে এখনো কয়েক লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছে। বর্তমানে মংডুতে হামলা হচ্ছে, সেখানে অধিকাংশ রোহিঙ্গা নাগরিকের বসবাস। এভাবে যুদ্ধ চলমান থাকলে ফের নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটতে পারে।’
তবে সীমান্তে অনুপ্রবেশ রোধে বিজিবি কঠোর অবস্থানে রয়েছে বলে জানিয়েছেন টেকনাফ-২ ব্যাটালিয়নের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেজর ইশতিয়াক মুরর্শেদ।
এদিকে খারাংখালী, টেকনাফ, পৌরসভা, হ্নীলা, জাদিমুড়া, দমদমিয়া, নাইট্যংপাড়া, পৌরসভার জালিয়াপাড়া, নাজিরপাড়া, সাবরাং, শাহপরীর দ্বীপ, নাফ নদীর মোহনা থেকে শোনা যাচ্ছে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ। মর্টারশেলের বিস্ফোরণে কেঁপে উঠছে টেকনাফ সীমান্ত।
ক্যাম্পে বসবাস করা একজন রোহিঙ্গা নেতা বলেন, ‘রাখাইনে কয়েকদিন ধরে যুদ্ধের তীব্রতা বেড়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে পালিয়ে আসার জন্য। কিন্তু তাদের এদেশে না আসতে নিরুৎসাহিত করছি। তবু মানুষ প্রাণের ভয়ে পালিয়ে আসার চেষ্টা চালাচ্ছে।’
এদিকে, মায়ানমারের মংডু শহরে মায়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আরাকান আর্মির সঙ্গে দেশটির সেনাবাহিনীর তুমুল সংঘর্ষ চলছে। টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং থেকে শাহপরীর দ্বীপ পর্যন্ত ৫৪ কিলোমিটার নাফ নদী ও সীমান্তে বিজিবি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের সদস্যরা দিনরাত টহল দিচ্ছেন। পরিস্থিতি মোকাবিলায় তারা প্রস্তুত।
এ বিষয়ে টেকনাফের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, ‘আমিও গোলার বিকট শব্দ শুনেছি। মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাতের কারণে এ ধরনের বিকট শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। আমরা সীমান্তে বসবাসকারী মানুষের খোঁজ খবর রাখছি। পাশাপাশি সীমান্তে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে আমাদের বিজিবি ও কোস্টগার্ড সদস্যরা সর্তক অবস্থানে রয়েছে।’
মাহফুজ/এমএ/