সবকিছু পরিপাটি, সাজানো-গোছানো। চোখ জুড়ানো দেয়াল অঙ্কন। সেখানে কার্টুন চরিত্র মীনা-রাজুর হাস্যোজ্জ্বল ছবি। আছে জাতীয় মাছ, পশু, ফল, পতাকা। পাশাপাশি দৃষ্টিনন্দন বাহারি ছবি। শিক্ষার্থীদের নিয়ে আঁকা রয়েছে অন্যরকম চিত্রকর্ম।
বিভিন্ন রঙে লেখা রয়েছে অ, আ, ক, খ, এ, বি, সি, ডি। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা চোখে পড়ার মতো। এ দৃশ্য পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার সলিমপুর ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রাম ভাড়ইমারী মাথালপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের।
অজপাড়াগাঁয়ের এই বিদ্যালয়ের চারপাশ ঘিরে রয়েছে ফসল উৎপাদনের জন্য দিগন্তজুড়ে মাঠ। বেশ কিছু বাড়িঘর নিয়ে রয়েছে ছোট্ট একটি গ্রাম। সেই গ্রামেই বসবাসকারী পরিবারের ছেলেমেয়েরা এই স্কুলে লেখাপড়া করে। শিশু থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত বিদ্যালয়টিতে রয়েছে ৭৫ জন শিশুশিক্ষার্থী। এর মধ্যে ছেলে ৩২ ও মেয়ের সংখ্যা ৪৩। ৬ জনের জায়গায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকসহ শিক্ষক রয়েছেন চারজন।
তবে এ বিদ্যালয় নিয়ে রয়েছে নানা অভিযোগ, আছে সমস্যাও। স্কুলটিতে নেই অফিস সহকারী। রয়েছে পানির সমস্যা। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ থেকে একটি আধুনিক টয়লেট নির্মাণ করা হলেও বিদ্যালয়ের কাছে সেটি বুঝিয়ে দেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। জায়গাটি রয়েছে তাই তালাবদ্ধ অবস্থায়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষা শেষ পর্যায়ে। কিছু শিক্ষার্থী এসেছে চারুকলা বিষয়ে পরীক্ষা দিতে। এ সময় বিদ্যালয়ের মাঠে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র নাবিদ হাসান নেহালের সঙ্গে কথা হয়। জানতে চাইলে সে জানায়, নিয়মিত ক্লাস হয়। ক্লাসে স্যার ভালোভাবে পড়ান, সবকিছু বুঝিয়ে দেন।
একই শ্রেণির ছাত্রী রোজা খাতুনও জানায়, স্যাররা ঠিকমতো লেখাপড়া বুঝিয়ে দেন। তবে এলাকাবাসী মিজান মালিথা বিদ্যালয়টি সম্পর্কে যা বলেন, তা ওই দুই শিক্ষার্থীর কথার সঙ্গে মিল পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, ‘ভাড়ইমারী মাথালপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের লেখাপড়ার মান ভালো না। তিন-চারজন শিক্ষক যারা আছেন, তারা ক্লাসে তেমন গঠনমূলক পাঠদান করান না। সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কারণে ছাত্রছাত্রীদের পড়ানোর ব্যাপারে তারা খুব গুরুত্ব দেন না। মাস গেলেই তাদের বেতন আসে সরকারের কোষাগার থেকে।’ তিনি মনে করেন, বিদ্যালয়টিতে নিয়মিত পর্যবেক্ষক থাকা দরকার।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৭০ সালে ৪৯ শতাংশ জায়গার ওপর ভাড়ইমারী মাথালপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ইমরান হোসেন জানান, ১৯৯৬ সালে শিক্ষা অধিদপ্তরের অর্থায়নে টিনের ছাউনি থেকে পাকা ভবনে পরিণত হয়েছে বিদ্যালয়টি। এখন বিদ্যালয়ের পরিবেশ অনেক ভালো। তবে ছয়জনের জায়গায় শিক্ষক রয়েছে চারজন। এর মধ্যে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রয়েছেন একজন। তিনি ১৫ বছর ধরে এ দায়িত্ব পালন করছেন।
কোনো অফিস সহকারী নেই। তিনি জানান, বিদ্যালয়ের পাশ দিয়ে একটি কাঁচা রাস্তা রয়েছে। এ রাস্তাটি পাশের গ্রামের সঙ্গে সংযোগস্থল। কিন্তু রাস্তাটি চলাচলের অনুপযোগী হওয়ায় ওই গ্রামের কোনো ছেলেমেয়ে এখানে পড়তে আসে না। রাস্তাটি ভালো হলে এখানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা আরও বাড়ত। এ ছাড়া পানির জন্য একটি টিউবওয়েল রয়েছে। কিন্তু সেটি সেপটিক ট্যাংকের পাশে হওয়ায় অনেকে পানি পান করতে অনীহা দেখায়। আধুনিক মানের একটি টয়লেটের নির্মাণকাজ শেষ হলেও স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে সেটি ব্যবহারের জন্য বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি।
প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) আব্দুল হান্নান বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার ফল সন্তোষজনক। শিক্ষা অফিস থেকে নিয়মিত পরিদর্শনে আসেন কর্মকর্তারা। চেষ্টা করে থাকি, শিক্ষার্থীদের উপযুক্ত পাঠদানের।’
উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আসলাম হোসেন পদাধিকারবলে ভাড়ইমারী মাথালপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এডহক কমিটির সভাপতি। বিদ্যালয়ের পাঠদানের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিদ্যালয়টিতে শিক্ষকসংকট রয়েছে। সরকার পরিবর্তনের পর আগের পরিচালনা কমিটি নেই। এ কারণে কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে।
সব বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে মানসম্মত পাঠদান অবশ্যই হওয়া দরকার। বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি। নতুন টয়লেট বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে কথা বলব।’