ঢাকা ১২ মাঘ ১৪৩১, রোববার, ২৬ জানুয়ারি ২০২৫
English
রোববার, ২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১২ মাঘ ১৪৩১

শীতের রাতে ঘুমন্ত মানুষের নিরাপত্তায় প্রহরীরা

প্রকাশ: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৪ এএম
আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৪ এএম
শীতের রাতে ঘুমন্ত মানুষের নিরাপত্তায় প্রহরীরা
কুড়িগ্রাম

রাত একটা বেজে পাঁচ মিনিট। রাতের আঁধার আরও গুমোট করেছে কুয়াশার জাল। সামনে কয়েক গজ দেখা গেলেও দৃষ্টিসীমা আটকে দিয়েছে তীব্র কুয়াশা। কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী শহরের বাসস্ট্যান্ড থেকে বাজার রোডে কাজী মার্কেটে গেলে কানে আসে মুহুর্মুহু বাঁশির শব্দ।

সড়কে দাঁড়াতেই এগিয়ে আসেন একজন নিরাপত্তাকর্মী। মোটা কাপড়ে পুরো শরীর এমনভাবে ঢাকা যে চেনার উপায়ই নেই। তার নাম আবদুল মালেক। তিনি বণিক সমিতির নিয়োগপ্রাপ্ত নৈশপ্রহরী।

কথা হয় তার সঙ্গে। কথার ফাঁকে হাতের টর্চলাইট জ্বালিয়ে আশপাশ থেকে কাগজ কুড়াচ্ছেন। কাগজ দিয়ে কী করবেন প্রশ্নের উত্তরে, ‘আগুন জ্বালামো। ঘুরতে ঘুরতে শরীর ঠাণ্ডা হয়া যায়। রাত ৩টার পর আগুন জ্বালায়া গাও সেকিয়্যা (শরীর গরম করে) ফির (আবারও) ঘোরা শুরু করি।’ শীতের রাতে কাজ করতে কষ্ট হয় কি না জানতে চাইলে বলেন, ‘মাঝে মাঝে শরীর অবশ হয়্যা যায়। কষ্টের শ্যাষ নাই। ভয় বেশি লাগে। সারা রাত বাঁশি বাজাই, বাঁশিটা শক্তি দেয়।’

শীতের তীব্রতা বাড়লে এই শহরে মানুষের আনাগোনা কমে যায়। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর। শহরের পাশাপাশি গ্রামেও একই চিত্র দেখা যায়। কিন্তু কিছু মানুষ আছে শীতের মধ্যেও রাতভর দায়িত্ব পালন করেন। তাদেরই একজন আবদুল মালেক। বেতন পান সাত হাজার টাকা। পাশাপাশি অঙ্গীভূত আনসারও তিনি। ভোট, পূজাসহ সরকারি ডিউটি পালন করেন।

এই শীতে কিছু মানুষ তার দায়িত্ব পালনে নিবেদিতপ্রাণ। মানুষের শান্তির জন্য নিজের সুখ বিসর্জন দিয়ে শীতের রাতে সড়কে সড়কে ঘুরে বেড়ান। পাহারা দেন। এ কাজ থেকে পাওয়া অর্থ দিয়েই চলে তার সংসার। রাত ১১টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন তারা। যত কষ্টই হোক না কেন তাদের রাত জাগতেই হয়।

নাগেশ্বরী শহরের কলেজ মোড়ে দেখা মেলে নুর হোসেনের। তিনি বলেন, ‘অসুস্থ হওয়ায় গত এক মাস আসিনি। রাতে কষ্টের শেষ নেই। শীতের সময় দেরিতে বাড়ি যেতে হয়। কুয়াশায় কিছু দেখা যায় না। চুরি হলে তো জরিমানা আমাকেই দিতে হবে। শীতের কাপড়চোপড় না থাকলে অবস্থা খারাপ হয়। খুব কষ্ট হয়।’

সিনেমা হল এলাকায় প্রায় ১০ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করছেন আফসার আলী। তিনি বলেন, ‘শতি (শীত) হোক, ঝড় হোক। আমার থাকা লাগে। রাতে সাইকেল নিয়ে ঘুরি। হাত-পা ঠাণ্ডায় জমি যায়। খুব কষ্ট হয়।’

উপজেলা শহর থেকে আশার মোড় এলাকা। মোড়েও ছোট একটি বাজার। সেখানে রাতে পাহারা দেন ৭৫ বছর বয়সী মকবুল হোসেন। আগে ভাঙারির ব্যবসা করতেন। দুই বছর ধরে এখানে ডিউটি করছেন। মকবুল হোসেন বলেন, ‘ঠাণ্ডায় পায়ে বাতের ব্যথা ভাসে। শীত পড়লে হাঁটতে কষ্ট হয়। উপায় নেই। খাওয়া তো লাগবে। কষ্ট করে ডিউটি করা লাগে। মাস শেষে চার-পাঁচ হাজার টাকা পাই। কোনোমতে চলি।’

তাদের মধ্যে রয়েছে গ্রামপুলিশ। ইউনিয়ন পরিষদ এলাকার শৃঙ্খলা রক্ষায় দিনরাত দায়িত্ব পালন করেন তারা। নাগেশ্বরীর বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের গ্রামপুলিশ সোলায়মান আলী বলেন, ‘আমাদের শীত-বর্ষা নেই। ডিউটি আছে।’ 
বামনডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান রনি বলেন, ‘জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য চৌকিদাররা জীবনবাজি রাখেন। শীতেও তারা থাকেন, বর্ষায়ও থাকেন। একই সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন থানা পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

নরসিংদীতে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বন্দুকযুদ্ধে নিহত ২, আহত ১০

প্রকাশ: ২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১১:৫০ এএম
নরসিংদীতে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বন্দুকযুদ্ধে নিহত ২, আহত ১০
ছবি: খবরের কাগজ

নরসিংদী রায়পুরা উপজেলার চরাঞ্চলের বাঁশগাড়ী ইউনিয়নে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধ হয়েছে। এতে দুজন নিহতসহ অন্তত ১০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। 

রবিবার (২৬ জানুয়ারি) সকাল সাতটা ৫০ মিনিটের দিকে এই সংঘর্ষ শুরু হয়।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা বলেন, ঘটনাস্থলে রায়পুরা থানার ওসিসহ পুলিশ সদস্যরা যাচ্ছেন। একজন নিহত হওয়ার খবর শুনেছি তবে প্রাথমিকভাবে নাম ঠিকানা নিশ্চিতভাবে বলতে পারছি না।

রায়পুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) আদিল মাহমুদ জানান, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই পক্ষ আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়ান। এ ঘটনায় কতজন আহত ও নিহত হয়েছে জানা যায়নি।  ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশসহ আমরা অবস্থান করছি।

এদিকে স্থানীয়দের কাছ থেকে প্রাথমিকভাবে জানা যায় নিহতের নাম রুবেল মিয়া (৩২) ও আরেকজন অজ্ঞাত।

বাঁশগাড়ি ইউপি জাকির হাসান রাতুল বলেন, সাবেক চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে আগের ঝামেলা নেই মিলে মিশে চলছি। শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) রাত থেকে বাশগাড়ী যুবদল নেতা ও আশরাফুল গ্রুপের সংঘর্ষ বাঁধে। আমি এতে সম্পৃক্ত নেই, এলাকার বাহিরে আছি।

শাহিন/মেহেদী/

শরীয়তপুরে ডিবি পরিচয়ে এক থাপ্পড়ে হত্যা

প্রকাশ: ২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১১:১৬ এএম
শরীয়তপুরে ডিবি পরিচয়ে এক থাপ্পড়ে হত্যা
ছবি : খবরের কাগজ

শরীয়তপুর জাজিরার ডিবি পরিচয়ে বাসায় ঢুকে এক থাপ্পড় দিলে মিলন বেপারি (৫৫) নামে এক ব্যক্তির ঘটনাস্থলে মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।

শনিবার (২৫ জানুয়ারি) রাত পৌনে ১০টার দিকে নাওডোবায় এলাকায় পদ্মা সেতুর দক্ষিণ থানার রেললাইনের পাশে এ ঘটনা ঘটে। 

পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা যায়, মিলন বেপারির বাড়িতে ডিবি পরিচয়ে কিছু লোক প্রবেশ করেন। তখন তাকে কিছু লোকের নাম জিজ্ঞেস করলে, তিনি তাদের চেনেন না বললে এক থাপ্পড় মারেন ডিবি। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান মিলন।

নিহতের শালা নিলয় পারভেজ লিটন জানান, ডিবি পরিচয়ে এসে তার কাছ থেকে কিছু লোকের নাম জিজ্ঞেস করলে, সেই লোকগুলোকে না চিনতে পারায় তাকে হত্যা করে তারা চলে যায়। তারা ডিবি না, ডাকাত- সেটা চিনতে পারেনি। তারা তাকে মেরে অন্য বাসায় চলে যায়। তিনি এ ঘটনার তদন্তসাপেক্ষে বিচার দাবি করছেন।

জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তদন্ত আব্দুস সালাম জানান, মিলন শ্বাসকষ্টের রোগী ছিলেন। মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে। লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

রাজিব রাজন/জোবাইদা/

তিন সাঁওতাল হত্যা সাবেক এমপি কালামকে বিচার দাবি

প্রকাশ: ২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৪৮ এএম
সাবেক এমপি কালামকে বিচার দাবি
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে সাবেক এমপি কালামের বিচার দাবিতে প্রদিবাদ সমাবেশ করেন সাঁওতালরা। গাইবান্ধায় নাট্য ও সাংস্কৃতি সংস্থার (গানাসাস) সামনে থেকে তোলা। ছবি : খবরের কাগজ

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে তিন সাঁওতাল হত্যার বিচার গত দশ বছরেও হয়নি। বাস্তবায়িত হয়নি কোনো আশার বাণী। নির্যাতনের শিকার আদিবাসী সাঁওতালরা বর্তমানে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এ ছাড়া ভূমিদস্যুরা নতুন করে সাঁওতালদের বাড়িতে আক্রমণ করছে। 

শনিবার (২৫ জানুয়ারি) দুপুরে গাইবান্ধা নাট্য ও সাংস্কৃতিক সংস্থার (গানাসাস) সামনে অনুষ্ঠিত এ প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা এসব কথা জানান। এ ছাড়া সাঁওতাল পল্লিতে সশস্ত্র হামলা, নিপীড়ন, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও হত্যার দায়ে অভিযুক্ত সাবেক এমপি অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদকে গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়। আদিবাসী-বাঙালি সংহতি পরিষদ এই প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে।
 
বক্তারা আরও বলেন, শ্যামল, মঙ্গল ও রমেশ হত্যাকাণ্ড ঘটনার পর থমাস হেমব্রম বাদী হয়ে স্থানীয় তৎকালীন সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদসহ ৩৩ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। কিন্তু বিচার হওয়া তো দূরের কথা মামলার আসামি আওয়ামী লীগের দলীয় সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদ, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বুলবুল আকন্দসহ অন্য মূল আসামিদের কেউই গ্রেপ্তার হননি।

বক্তারা আরও বলেন, সম্প্রতি রাজাহার ইউনিয়নের রাজাবিরাট এলাকায় আদিবাসী সাঁওতাল পল্লির ব্রিটিশ সরেনের বাড়িতে ভূমিদস্যু রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে দুর্বৃত্তরা হামলা ও অগ্নিসংযোগ করে। তারা ব্রিটিশ সরেনের বৃদ্ধ মাকে মারপিট করে গুরুতর আহত করেন। কিন্তু ‘রফিকুল চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার হলেও অন্য দুর্বৃত্তরা এখনো গ্রেপ্তার হননি। অবিলম্বে দুর্বৃত্তদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি জানান বক্তারা।

আদিবাসী-বাঙালি সংহতি পরিষদের আহ্বায়ক আইনজীবী সিরাজুল ইসলাম বাবুর সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ফিলিমন বাস্কে, পরিবেশ আন্দোলনের নেতা ওয়াজিউর রহমান রাফেল, বিশিষ্ট আইনজীবী মোহাম্মদ আলী প্রামাণিক প্রমুখ। 

চট্টগ্রামে টপসয়েল কাটা থামছেই না, কমছে আবাদি জমি

প্রকাশ: ২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৪৩ এএম
আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৫৪ এএম
চট্টগ্রামে টপসয়েল কাটা থামছেই না, কমছে আবাদি জমি
চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার ধর্মপুরে এক্সকাভেটর দিয়ে কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি (টপসয়েল) কাটা হচ্ছে। ছবি: খবরের কাগজ

চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি (টপসয়েল) কেটে ইটভাটায় বিক্রি করছেন। সন্ধ্যা হলেই শুরু হয় এক্সকাভেটরের গর্জন। সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে কৃষিজমির মাটি কাটার কর্মযজ্ঞ।

টপসয়েল কেটে নেওয়ায় প্রতিবছর আবাদি জমির পরিমাণ কমছে। এ ছাড়া ডাম্প ট্রাকে করে মাটি পরিবহন করায় সড়কে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এতে স্থানীয় বাসিন্দাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছেন, কৃষিজমির টপসয়েল কাটা বন্ধে দিনে ও রাতে সমানতালে অভিযান চালানো হচ্ছে। সম্প্রতি বিভিন্ন এলাকায় মাটি কাটার সময় অভিযান চালিয়ে বেশ কিছু ডাম্পট্রাক ও এক্সকাভেটর জব্দ করা হয়। অন্যদিকে, উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে টপসয়েল কাটার বিরুদ্ধে অভিযান ও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা জোরদার করার দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, উপজেলার এওচিয়া ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মোহাম্মদ হারুন, দেলোয়ার, কলিমুল্লাহ ও মোহাম্মদ সাদেক টপসয়েল কাটার কাজে জড়িত। তবে স্থানীয়ভাবে তারা প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে চান না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কৃষকরা উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার কৃষিজমিগুলোতে বিভিন্ন ধরনের ফসলের আবাদ করেন। এসব ফসল স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে চট্টগ্রাম শহর, কক্সবাজার ও কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়। এখানকার উৎপাদিত ফসলের মধ্যে ধান, আলু, শিম, বেগুন, করলা, বরবটি ও টমেটো অন্যতম। তবে টপসয়েল কেটে নেওয়ায় প্রতিবছর আবাদি জমির পরিমাণ কমছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এতে কৃষকরা ক্ষতির সম্মুখীন হলেও মাটি ব্যবসায়ীরা ঠিকই লাভের মুখ দেখছেন।

সরেজমিনে উপজেলার কেঁওচিয়া, ধর্মপুর, পুরানগড়, এওচিয়া ও নলুয়া ইউনিয়নে গিয়ে দেখা গেছে, এক্সকাভেটর দিয়ে কৃষিজমির মাটি কেটে বিক্রি করায় কৃষি জমিতে ২ থেকে ৩ ফুট গর্ত তৈরি হয়েছে। তার আশপাশের জমিগুলোর ওপর দিয়ে মাটিবোঝাই ডাম্প ট্রাক চলাচল করায় জমিগুলো নিচু হয়ে গেছে। এ ছাড়াও গ্রামীণ সড়ক দিয়ে ডাম্পার ট্রাকে করে মাটি পরিবহন করায় সড়কে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এতে স্থানীয় বাসিন্দাদের চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। 

স্থানীয়দের অভিযোগ, দিনের বেলায় নিষ্ক্রিয় হলেও রাতের বেলায় মাটি ব্যবসায়ীরা সক্রিয় হয়ে ওঠেন। দরিদ্র কৃষকদের অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে কৃষিজমির মাটি কিনে নিচ্ছেন তারা। 

ধর্মপুর ইউনিয়নের কৃষক সোলতান আহমদ বলেন, ‘আমার জমি থেকে দুরবর্তী এক জমির মালিক মাটি বিক্রি করেছেন। কিন্তু রাতের আঁধারে মাটি ব্যবসায়ীরা আমার জমির ওপর দিয়ে ডাম্প ট্রাকে মাটি পরিবহন করায় জমিটি নিচু ও মাটি শক্ত হয়ে গেছে। এখন এ জমিতে চাষাবাদ করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।’

এওচিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা কামরুল হাসান বলেন, ‘টপসয়েল কাটার বিরুদ্ধে অভিযান আরও জোরদার করতে হবে। শুধু জরিমানাতেই সীমাবদ্ধ থাকলে মাটি কাটা বন্ধ করা সম্ভব না। জরিমানার পাশাপাশি টপসয়েল কাটার কাজে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। এরপরই মাটি কাটা সম্পূর্ণ বন্ধ হবে।’

সাতকানিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, টপসয়েল কেটে নেওয়ায় প্রতিবছর আবাদি জমির পরিমাণ কমছে। তা ছাড়া টপসয়েল ফসল উৎপাদনের জন্য খুবই উপযোগী। যে জমির টপসয়েল কেটে ফেলা হয়, সে জমিতে ভালো ফসল উৎপাদন করা সম্ভব না। তাই কৃষিজমির মাটি কাটা বন্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। 

সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিল্টন বিশ্বাস খবরের কাগজকে বলেন, ‘কৃষিজমির মাটি কাটা বন্ধে উপজেলা প্রশাসনের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। সম্প্রতি গভীর রাতে কেঁওচিয়া, কাঞ্চনা ও এওচিয়া ইউনিয়নে অভিযান চালিয়ে ৩টি এক্সকাভেটর জব্দ করা হয়েছে। এ ছাড়াও বেশ কিছু ডাম্প ট্রাকও জব্দ করা হয়েছে। আগামীতেও এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।

ফুলপুরে খড়িয়া নদীর জমি দখলের মহোৎসব

প্রকাশ: ২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৩৩ এএম
আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৩৫ এএম
ফুলপুরে খড়িয়া নদীর জমি দখলের মহোৎসব
ময়মনসিংহের ফুলপুর পৌর শহরের সেতুর খড়িয়া নদীর দুই পাশে নদী দখল করে দোকানপাট, ঘরবাড়িসহ বহুতল ভবন গড়ে তোলা হয়েছে। আশপাশের সব আবর্জনা অবাধে নদীতে ফেলা হচ্ছে। কচুরিপানায় ঢেকে গেছে নদীর পানি। ছবি : খবরের কাগজ

ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে খড়িয়া নদী। এক যুগ আগেও নদীটি ছিল খরস্রোতা। দখল-দূষণে নদীটি এখন মৃতপ্রায়। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় বেশ কয়েকজন বাসিন্দা নিজেদের নামে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে নদীর পাড় ও চর বিক্রি করছেন। এ যেন নদীর জমি দখলের মহোৎসব চলছে।

সম্প্রতি সরেজমিনে ফুলপুর পৌর শহরে গিয়ে দেখা গেছে, নদীর বিভিন্ন অংশ দখল হয়ে গেছে। পৌর শহরের সেতুর দুই পাশে নদী দখল করে দোকানপাট, ঘরবাড়িসহ বহুতল ভবন গড়ে তোলা হয়েছে। অনেক জায়গায় ফসলের আবাদ করা হয়েছে। আশপাশের সব আবর্জনা নদীতে ফেলা হচ্ছে। নদীর পানি কচুরিপানায় ঢেকে গেছে। পানি কুচকুচে কালো রং ধারণ করেছে। 

স্থানীয়রা জানান, সিএস রেকর্ডে নদীর জায়গা থাকলেও আরওআর এবং বিআরএস খতিয়ান রেকর্ডে দখল সূত্রে অনেকেই নিজেদের নামে দলিল করে নিয়েছেন। সেই জমি আবার অন্যের কাছে বিক্রিও করা হচ্ছে।

দুলাল নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘ব্যবসায়ী মোফাজ্জল হোসেন ফুলপুর সরকারি কলেজ রোডে খড়িয়া নদীর পাড়ে চারতলা বাড়ি নির্মাণ করেছেন। এ ছাড়া আবদুল খালেক নামের একজন নদীর পাড় ঘেঁষে বাড়ি নির্মাণ করেছেন। যে কেউ দেখলে বলবে সেটি নদীর মধ্যে পড়েছে। তাদের মতো আরও অনেকে নদীর জায়গা ভোগদখল সূত্রে কাগজপত্র করে বেচাকেনা করছেন। এ নিয়ে প্রশাসনকে বারবার জানালেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।’

নদীর জায়গায় বাড়ি নির্মাণ করছেন এই অভিযোগ অস্বীকার করে মোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘আমি আড়াই শতাংশ জমি কিনে বিল্ডিং নির্মাণ করছি।’ একই বক্তব্য নদীর পাড় ঘেঁষে বাসা নির্মাণ করা আবদুল খালেকের। তিনি বলেন, ‘সরকারি লোকজন এসে মাপঝোঁক করুক। আমি নদীর জায়গা দখল করিনি। আমার হাতে দলিলপত্র রয়েছে।’

বিল্লাল হোসেন নামের অপর একজন বলেন, ‘সেতুর নিচে খড়িয়া নদীর অংশটুকু মেন্দুমিয়ার চর নামে পরিচিত। স্থানীয় চৌকিদার কুদ্দুস সরকারের কাছ থেকে ১০০ বছরের জন্য এ অংশ লিজ নিয়েছেন। পরে তিনি বিআরএস খতিয়ানে নিজের নামে লিখে নেন। এখন প্লট করে বিক্রি করছেন।’ বক্তব্য জানতে চৌকিদার কুদ্দুসের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। 

সেতুর পাশে নদীর ওপর কাঠ দিয়ে ঘর বানিয়ে দোকান দিয়েছেন রাজু মিয়া। তিনি বলেন, ‘পড়াশোনা করিনি। কোনো কাজ পাইনি। তাই নদীর ওপর দোকান দিয়ে ব্যবসা করছি। দোকান সরিয়ে দিলে বেকার হয়ে পড়ব।’

পৌর এলাকার বাসিন্দা আবদুল হাই জানান, ১৫ বছর আগেও নদীতে স্রোত ছিল। জেলেরা সারা বছর মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন। কিন্তু বর্তমানে বর্ষাকাল ছাড়া তেমন পানিপ্রবাহ থাকে না। যে যেভাবে পারছেন দখল করে নিচ্ছেন। পাশাপাশি ময়লা-আবর্জনা ফেলে নদীর পানিকে দূষিত করা হয়েছে। ধীরে ধীরে দখলের কারণে নদীটি এখন সংকীর্ণ হয়েছে।

মাইদুল ইসলাম নামের আরেকজন বলেন, মানুষ আগে এই পানিতে নিয়মিত গোসল করত। পানিতে জাল ফেললে ছোট-বড় প্রচুর মাছ ধরা পড়ত। এখন আর সেই দৃশ্য দেখা যায় না। নদীর দূষিত পানিতে এখন আর কেউ গোসল করে না। জেলেরা কোনো দিন মাছ ধরতে জাল ফেললে সারা দিনের চেষ্টায় যৎসামান্য ছোট মাছ ধরা পড়ে। প্রত্যেকে তার বাড়ির সামনের নদীর অংশ দখল করে আবাদ করছেন। পাশাপাশি জমি অনেকে বিক্রিও করছেন। 

স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, জেলায় ৫৯টি নদ-নদী রয়েছে। এর মধ্যে অনেকটির খননকাজ শেষ হয়েছে। কিছু নদীর খননকাজ অব্যাহত রয়েছে। ৩৭ কিলোমিটার খড়িয়া নদী ময়মনসিংহ সদর উপজেলার রাংসা থেকে ফুলপুর উপজেলা অতিক্রম করে হালুয়াঘাটের ভোগাই কংস নদে গিয়ে মিশেছে। নদীটির বেশির ভাগ অংশ ফুলপুরে হওয়ায় এটি ফুলপুর খড়িয়া নদী হিসেবে পরিচিত।

ফুলপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাদিয়া ইসলাম সীমা বলেন, ‘কাউকে নদী দখল করতে দেওয়া হবে না। নদী সুরক্ষায় আইন রয়েছে। আইন না মেনে কেউ দখল-দূষণে জড়িত থাকলে আইনিব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ বিষয়ে ময়মনসিংহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আখলাক উল জামিল বলেন, ‘গত ৫ বছরে বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় জেলায় ছোট-বড় ২১টি নদী ও খাল খনন করা হয়েছে। বর্তমানে মুক্তাগাছার আয়মন নদীর খননকাজ অব্যাহত রয়েছে। নান্দাইলের কাঁচামাটিয়া নদীর খননকাজ শিগগিরই শুরু হবে। সবার দাবি বিবেচনা করে ফুলপুরের খড়িয়া নদী দখলমুক্ত করে খননের উদ্যোগ নেওয়া হবে। নদী খননের সময় সিএস রেকর্ড অনুযায়ী খনন করা হবে। সেখানে করও জায়গা-জমি থাকলেও আমাদের কিছু করার নেই।’