উত্তরের জেলা গাইবান্ধায় গত এক সপ্তাহ ধরে বাড়ছে শীতের তীব্রতা। বিকেল থেকে পরের দিন সকাল ১০টা পর্যন্ত ঘন কুয়াশায় ঢাকা থাকে পুরো জেলা। শীতে জেলা শহর ও গ্রামাঞ্চলের ফুটপাত এবং রাস্তার মোড়ে মোড়ে বিক্রি হয় নানা ধরনের পিঠা।
রাস্তার পাশের জ্বলন্ত চুলায় শীতের পিঠার ধোঁয়া যে-কারও নজর কাড়বে। বিকেল থেকেই পিঠার দোকানগুলোতে সব বয়সের মানুষের আনাগোনা বাড়ে। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে দোকানে ভিড় আরও বেড়ে যায়।
শীতকে কেন্দ্র করে জেলা শহরে শতাধিক পিঠার দোকান গড়ে উঠেছে। অস্থায়ীভাবে গড়ে ওঠা এসব দোকান চলে প্রায় রাত ১০টা পর্যন্ত। চিতাই পিঠা, তেলভাজা পিঠা, ভাপা পিঠা, পুলি পিঠা, সবজি পিঠাসহ অন্তত ২০ ধরনের পিঠা তৈরি হয় সেখানে। এসব পিঠা পাঁচ থেকে ১৫ টাকায় বিক্রি করছেন তারা।
সরেজমিনে জেলা শহরের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, রাস্তার পাশে, মোড়ে ও অলিগলিতে পিঠার দোকান বসেছে। একটি দোকানে ছয় থেকে সাতটি চুলায় পিঠা তৈরি করা হচ্ছে। লোকজন চারপাশে ভিড় করছেন। ভাপা পিঠা তৈরির জন্য চুলা প্রস্তুত করছেন। হাঁড়িতে পানি দিয়ে চুলায় বসিয়ে তার ওপর ছিদ্রযুক্ত মাটির সানকি দিয়ে ঢেকে দেওয়া হচ্ছে। এতেই গরম ভাপে সেদ্ধ হচ্ছে পিঠা।
জ্বলন্ত চুলা থেকে পিঠা নামিয়ে দিতে ব্যস্ত দোকানদাররা। কেউ কেউ পিঠা অর্ডার দিয়ে অপেক্ষা করছেন। আবার কেউ কেউ পিঠা খাচ্ছেন। অনেকেই বাসায় নিয়ে যাচ্ছেন পিঠা। প্রতিটি দোকানে প্রায় একই চিত্র দেখা যায়।
জেলা শহরের জিয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘পিঠা তৈরি করতে অনেক উপকরণ লাগে। বাসাবাড়িতে এসব উপকরণ বানাতে অনেক খরচ হয়। কিন্তু এখানে খুব সহজেই হাতের কাছে অল্প টাকায় শীতের সব ধরনের পিঠা পাওয়া যায়। কষ্ট করে আর বাড়িতে বানাতে হয় না। সপ্তাহে দুই একবার পিঠার দোকানে এসে খেয়ে যাই।’
একই এলাকার জাহাঙ্গীর নামে এক শিক্ষক বলেন, ‘শীত এলেই এ মোড়ে এসে পিঠা নিজে খাই ও বাড়িতে পরিবারের জন্য নিয়ে যাই। প্রায় হাট-বাজার ও রাস্তার পাশে পিঠা পাওয়া যাচ্ছে।’ সদর উপজেলার মধ্যধানঘোড়া এলাকার মিশুক মিয়া বলেন, ‘আজ বাচ্চাকে সঙ্গে নিয়ে কেনাকেটা শেষে পিঠা খেতে এসেছি। শীতের মধ্যে গরম পিঠার মজাই আলাদা।’
সিদ্দিক আলম নামে আরেক ক্রেতা বলেন, ‘পিঠা খেতে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার রাস্তা হেঁটে এসেছি। সব এলাকায় পিঠা পাওয়া গেলেও এখানে পিঠার স্বাদ একটু বেশি।’
শহরের রেলগেটে পিঠা বিক্রি করেন মেহেদী হাসান। তিনি বলেন, ‘প্রায় ১৫ বছর ধরে এখানে ভাপা পিঠা ও চিতই পিঠা বিক্রি করছি। আমার পাশে আরও চারটি দোকান আছে। তারাও নানা ধরনের পিঠা তৈরি করে বিক্রি করছেন। প্রতিদিন ৩ হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকার পিঠা বিক্রি হয়। শীতের মাঝে চিতই পিঠার চাহিদা একটু বেশিই। এটি খেতে সরিষা বাটা, মরিচ বাটা, আলু ভর্তা এবং গুড় প্রয়োজন হয়। প্রতিটি পিঠা পাঁচ থেকে ১০ টাকায় বিক্রি করি।’