‘ওরে আমার বাজান, তুই আমারে ছাইরা কই গেলি। কত্তদিন তোরে আমি দেহি না। আমি তোর দুঃখিনী মা। তুই ফিইরা আয় বাজান। আমি তোরে নিজ আতে ভাত মাখায়া খাওয়ামু। ওরা কয় তোরে নাকি কারা মাইরা হালাইছে। তুই নাই, এইডা মিত্যা কতা।’
কোট সংস্কার আন্দোলনে নিহত মো. দেলোয়ার হোসেনের (৩৫) কবর ছুঁয়ে এমন বিলাপ করেন মা জিন্নাতুন নেছা (৬৯)। দেলোয়ারের মৃত্যুর প্রায় সাড়ে চার মাস পেরিয়ে গেলেও মায়ের বিলাপ থামেনি। প্রতিদিনই ছেলের কবরের পাশে বসে এমন বিলাপ করে আঁচল ভেজান জিন্নাতুন নেছা।
দেলোয়ার ভোলা সদর উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নের কাচিয়া গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। জিন্নাতুন নেছার পাঁচ ছেলের মধ্যে দেলোয়ার আর্থিকভাবে সচ্ছল ছিলেন। তাই স্বামীহারা জিন্নাতুন নেছা ঢাকায় দেলোয়ারের কাছে থাকতেন। খাওয়া-দাওয়া ও চিকিৎসা থেকে শুরু করে মায়ের পুরো খরচ চালাতেন দেলোয়ার। কিন্তু দেলোয়ার নিহত হওয়ায় এখন তিনি ভোলায় অপর ছেলে দিনমজুর আনোয়ারের কাছে থাকেন। সেখানে কোনোমতে তিনবেলা ভাত খেতে পারলেও টাকার অভাবে নিয়মিত তার ওষুধ জোটে না।
দেলোয়ারের স্ত্রী লিজা বলেন, ‘আমার স্বামী গত ১৯ জুলাই বিকেল ৪টার দিকে একটি কাজে ঢাকার মিরপুর-১০ নম্বরে যান। এ সময় গোলচত্বর এলাকায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাধে। এ অবস্থায় দেলোয়ারের তলপেটে তিনটি গুলি লাগে। একপর্যায়ে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পথচারীরা তাকে উদ্ধার করে একে একে তিনটি হাসপাতালে নিলেও কেউ তাকে চিকিৎসা দিতে রাজি হননি। এতে তার প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। পরে তাকে শ্যামলী সিটি কেয়ার জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করানো হয়। ওই দিন রাতেই অস্ত্রোপচার করা হয়। কিন্তু ২১ জুলাই সকাল সাড়ে ৭টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। ওই দিন সন্ধ্যার দিকে গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়। দেলোয়ার নেই। কিন্তু তার চিকিৎসায় ব্যয় করা প্রায় চার লাখ টাকার ঋণ রয়ে গেছে। এই ঋণ কীভাবে পরিশোধ করব, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।’
লিজা আরও বলেন, ‘ইতোমধ্যে দেলোয়ারের ঢাকার ফার্নিচারের দোকানটি ছেড়ে দিয়েছি। এখন আমার ছেলে রাব্বি হাসান (১৩), মেয়ে হাসনুর (৬) ও ছেলে হোসাইনকে (১৮ মাস) নিয়ে আর্থিক সংকটে আছি।’
তিনি জানান, জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে এক লাখ টাকা অনুদান পেয়েছেন। এ ছাড়া তিনি আর কোনো অনুদান পাননি।
লিজার দাবি, সরকার যেন আমাদের ঋণ পরিশোধ ও সংসার চালানোর মতো ব্যবস্থা দেয়।
সূত্র: বাসস