রংপুর বিভাগের নীলফামারী জেলার বাণিজ্যিক শহর সৈয়দপুর। বিভাগের একমাত্র বিমানবন্দরটি এখানে অবস্থিত হওয়ায় এটি উত্তরাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ যোগযোগকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। তবে গত কয়েক দিন ঘন কুয়াশায় বিমানবন্দরটিতে সকাল ও রাতে শিডিউল মেনে ফ্লাইট চলানো সম্ভব হচ্ছে না। প্রায় প্রতিদিনই ফ্লাইটের শিডিউল বিপর্যয়ে যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়ছেন।
ইসলাম মোটরস ও ইসলাম সেমি অটোরাইস মিলের স্বত্বাধিকারী মাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘ঘন কুয়াশায় বিমান চলাচল বন্ধ থাকায় সময়মতো ঢাকায় যেতে পারছি না। ঢাকায় ব্যবসায়িক কাজ ছিল। কিন্তু শিডিউল ঠিক না থাকায় ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।’
আরেক ব্যবসায়ী রবিউল আউয়াল রবি বলেন, ‘ঘন কুয়াশায় দুর্ঘটনা এড়াতে ঠিক সময়ে বিমান ছাড়ছে না। ব্যবসায়িকসহ গুরুত্বপূর্ণ কাজ ব্যাহত হচ্ছে।’ পাখি ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলের স্বত্বাধিকারী আলমগীর হোসেন বলেন, ‘বিমানের শিডিউল ঠিক না থাকায় আমাদের প্রতিনিয়ত টিকিট বাতিল করতে হচ্ছে। শুধু এখন নয়, প্রতিবছরই এ সময় ব্যবসা মন্দা থাকে। এতে ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।’
সৈয়দপুর বিমানবন্দর আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লোকমান হাকিম জানান, গত কয়েক দিন ঘন কুয়াশায় বিমানবন্দরটিতে সকাল ও রাতে শিডিউল মেনে ফ্লাইট চলাচল করা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ বিমান চলাচলের জন্য ২ হাজার মিটার দৃষ্টিসীমা (ভিজিবিলিটি) থাকার কথা থাকলেও তা থাকছে মাত্র ১০০ থেকে ১৫০ মিটার।ৱ
বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক এ কে এম বাহাউদ্দিন জাকারিয়া বলেন, ‘বিমান চলাচল স্বাভাবিক আছে। চলতি মৌসুমে ঘন কুয়াশায় সকালের ফ্লাইট এক ঘণ্টা বিলম্ব হচ্ছে। আগামী ১৬ ডিসেম্বর থেকে ফ্লাইটের শিডিউল পরিবর্তন করে নতুন শিডিউল করা হচ্ছে। এতে বিমান চলাচল স্বাভাবিক হতে পারে।’
ভৌগোলিক গুরুত্ব অনুধাবন করে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী সৈয়দপুর সেনানিবাসের পশ্চিম পাশ ঘেঁষে বিমানবন্দরটি নির্মাণ করে। বিমানবন্দরের নির্মাণে বাংলাদেশিদের স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করতে বাধ্য করা হয়। পরবর্তী সময়ে দেশ স্বাধীনের পরে ১৯৭৭ সালে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে বাণিজ্যিক ফ্লাইট ওঠানামা শুরু হয়। কালের পরিক্রমায় বিমানবন্দরটি এখন গুরুত্বপূর্ণ অভ্যন্তরীণ রুটে পরিণত হয়েছে।
বর্তমানে সৈয়দপুর বিমানবন্দরের আয়তন ১৩৬ দশমিক ৫৯ একর। তবে সম্প্রতি সরকার এটিকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীতকরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সে জন্য ৯১২ একর জমি অধিগ্রহণের কাজ চলমান রয়েছে। বর্তমানে বিমানবন্দরটির রানওয়ের দৈর্ঘ্য ছয় হাজার ফুট ও প্রস্থ ৩০০ ফুট।
সৈয়দপুর বিমানবন্দর থেকে প্রতিদিন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস, ইউএস বাংলা এয়ারলাইনস, নভোএয়ার ও এয়ার অ্যাস্ট্রারের গড়ে ১৫ থেকে ১৬টি ফ্লাইট পরিচালিত হয়। এর মধ্যে বেলা ১২টার আগে তিনটি ফ্লাইট চলাচল করে।
ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে রংপুর বিভাগের আটটি জেলার মানুষ এই বিমানবন্দরের সেবা পেয়ে আসছে। বর্তমানে ঢাকা-সৈয়দপুর রুটে প্রতিদিন ফ্লাইট চালু থাকায় এই বিমানবন্দরে বিদেশি অতিথি, পর্যটক ও ভিআইপিদেরও আনাগোনা বেড়েছে।