বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত হয়ে চোখের যন্ত্রণায় ভুগছিলেন চট্টগ্রামের অনেকে। অর্থাভাবে ভালো চিকিৎসাও মিলছিলো না তাদের। এতে সুস্থ হতেও লম্বা সময় লাগছিল। সম্প্রতি তাদের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেয় সরকারের স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম। তিনি আমেরিকা প্রবাসী বাংলাদেশি চিকিৎসক, আমেরিকার মিড মিসোরি আই সেন্টার, এলএলসির বোর্ড সার্টিফাইড অপথালমলজিস্ট এবং ক্যাটারেক্ট গ্লাকোমা সার্জন ডা. রাশেদ নিজাম, এমডি, এফসিপিএস, এফএএও।
শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) সকালে তিনি ফ্লাইট যোগে চট্টগ্রামে পৌঁছে প্রবর্তক মোড়ের শেভরণ হাসপাতালে আসেন। এরপর আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থীদের দেখেন। এ সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম। তিনি প্রত্যেকের শারীরিক খোঁজখবর নেন।
ডা. রাশেদ নিজামের চট্টগ্রাম আসা উপলক্ষ্যে আগের দিনই চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ফেসবুক পেইজে ঘোষণা দেন যে আন্দোলনে আহত হয়ে যারা চোখ নিয়ে নানা ধরনের যন্ত্রণায় আছেন তারা যেন শেভরণ হাসপাতালের চক্ষু ইউনিটে আসেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, শেভরণ হাসপাতালের ৭০৮নং কক্ষে সকাল ১০টা থেকে চিকিৎসা শুরু হয়। সেখানে উপস্থিত ডা. মোহাম্মদ ইরফান চৌধুরীর সহযোগিতায় এক এক করে রোগী মোট ৯ জন রোগী দেখেন এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেন ডা. রাশেদ নিজাম। এর মধ্যে আহত মারুফ ও শুভ হোসেনের অপারেশনের সিদ্ধান্ত হয়। আর পাঁচজনকে চশমা দেওয়ার পরাদর্শ দেওয়া হয়। তাদেরকে বিনামূল্যে চশমা ও ওষুধ দেন শেভরণ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
ডা. ইরফান চৌধুর বলেন, শুভ ও মারূফের চিকিৎসা আমরা ছয় মাস পর্যবেক্ষণে রাখব। এরপর তাদের অপারেশনের সিদ্ধান্ত হবে। বাকিদের রেগুলার কিছু চিকিৎসা চলবে।
আমেরিকা থেকে আসা ডা. রাশেদ নিজাম বলেন, ‘গত শনিবার আমি জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞানে আন্দোলনে আহত ৪০ জনের মতো রোগী দেখি। আজকে এখানেও ৮-৯ জনকে দেখি। এর মধ্যে আঘাতের কারণে একজনের চোখে ছানি পড়ে গেছে। সেটি দেশেই চিকিৎসা সম্ভব। আরেকজনের রেটিনা সার্জারি হয়েছে। তাকে ছয় মাস বা এক বছর অপেক্ষা করতে হবে। এর ওপর নির্ভর করবে পরবর্তী সময়ে কী করা যায়। বাকিদের অবস্থা মোটামুটি ভালো।’
তিনি আরও বলেন, তাদের এ ত্যাগের কোনো তুলনা হয়না। কারো একটি চোখ, কারো দুটি চোখই নষ্ট হয়ে গেছে। একজনের চোখে ৪০-৫০ টি বুলেটের দাগ দেখা গেছে। এগুলো পরিস্কার করা হচ্ছে। আমি জীবনে এমন আই ইনজুরি দেখিনি। দেশের জন্য এই ত্যাগে আল্লাহ বড় পুরস্কার দেবেন তাদের। আমরা সবাই তাদের এ ত্যাগ মনে রাখব চিরকাল। তাদের যদি বিদেশে নিতে হয় আমরা নিয়ে যাব।
মাহফুজ/মেহেদী/এমএ/