
‘শীতে অবস্থা কাহিল। সারা দিন তেমন সূর্যের মুখ দেখাই যাচ্ছে না। কিন্তু পেট তো বাঁচাতে হবে! তাই ভোরে দোকান খুলেছি। তবে ঠাণ্ডার কারণে কাস্টমার আসছে না। সে জন্য বেচাকেনা কম।’
খুলনার রেলস্টেশন এলাকার চা-বিক্রেতা মোসলেম উদ্দীনের কথায় জেলার নিম্নবিত্ত মানুষের বর্তমান চিত্রই ফুটে উঠেছে।
খুলনায় গত দুই দিন সূর্যের দেখা মেলেনি।
শনিবার (৪ জানুয়ারি) জেলার তাপমাত্রা ছিল ১২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলিসিয়াস। ফলে জেলায় কনকনে শীত অনুভূত হচ্ছে। চার পাশ ঢেকে যায় ঘন কুয়াশায়। প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে কেউ বের হচ্ছেন না। তবে হাড়কাঁপানো শীতেও নিম্নআয়ের মানুষের ঘরে বসে থাকার সুযোগ নেই। জীবিকার তাগিদে তীব্র শীতেও কাজের সন্ধানে বের হচ্ছেন শ্রমজীবীরা। মঙ্গলবার সকালে নগরীর ময়লাপোতা, গল্লামারী ও শিববাড়ী মোড়ে ঝুড়ি, কোদাল হাতে কাজের অপেক্ষায় দিনমজুর-শ্রমিকদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। তাদের অনেকের পর্যাপ্ত গরম কাপড় নেই। শীত থেকে বাঁচতে অনেকে পুরোনো সোয়েটার, চাদর, মাথায় টুপি-মাফলার, পায়ে মোজা পরেছেন।
জেলার উপকূলীয় এলাকাগুলোতে ঘন কুয়াশার সঙ্গে বইছে ঠাণ্ডা বাতাস। তাপমাত্রা কমার চেয়েও হিমেল বাতাসের কারণে খেটে খাওয়া লোকদের বেশি অসুবিধা হচ্ছে।
রূপসা খেয়াঘাটের মাঝি সালাম মিয়া বলেন, ‘খুব কম লোক সকাল থেকে খেয়া পারাপার করেছেন। সকাল থেকেই ঘন কুয়াশা পড়ছে। রোদ্র বের হয়নি। এখানে প্রচণ্ড শীত পড়েছে। তবে এই শীতেও আমার বাসায় বসে থাকার সুযোগ নেই। কাজ না করলে খাওয়াবে কে?’
উপকূলীয় কয়রার মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা ইদ্রিস সানা বলেন, ‘নদী তীরবর্তী গ্রামে বাতাস এত বেশি, কনকনে ঠাণ্ডায় ঘরের বাইরে কোথাও থাকা যাচ্ছে না। গবাদিপশু নিয়ে মাঠেও যেতে পারছি না। খুব ভোরে কুয়াশা এত বেশি থাকে যে পথ চলতেই ভয় লাগে।’
তীব্র শীতে রেলস্টেশন ও ফুটপথগুলোতে ছিন্নমূল মানুষের কম্বল মুড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। কেউ কেউ চটের বস্তা গায়ে জড়িয়েছেন। ঠাণ্ডা থেকে বাঁচতে কাগজ, পলিথিন ও ছেঁড়া কাপড় জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। শীতের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গরম কাপড়, হাত-পায়ের মোজা, টুপি, মাফলার, জ্যাকেটের চাহিদা বেড়েছে।
এদিকে শীতের তীব্রতার কারণে ঠাণ্ডাজনিত নানা রোগের প্রকোপ বেড়েছে। হাসপাতাল-ক্লিনিক, ডাক্তারদের চেম্বারে রোগীদের ভিড় বাড়ছে। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা ঠাণ্ডা-কাশিতে আক্রান্ত হচ্ছেন।
নগরীর ন্যাশনাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা কামরুন্নাহার শিরিন বলেন, ‘শীতে শিশুরা জ্বর, সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হচ্ছে। অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের বাইরে বের হতে দিচ্ছেন না। ফলে স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে গেছে।’
খুলনা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘খুলনা বিভাগের মধ্যে যশোর, চুয়াডাঙ্গা, খুলনা, বাগেরহাটের তাপমাত্রা ১১ থেকে ১৩ ডিগ্রির মধ্যে ওঠানামা করছে। আকাশ মেঘলা থাকায় তাপমাত্রা একটু বাড়লেও বেশি শীত অনুভূত হচ্ছে। আরও ২-৩ দিন ঘন কুয়াশা পড়বে। সেই সঙ্গে শীতের প্রকোপ বাড়বে।’