কখনো এক বস্তা, কখনো আধা বস্তা করে আদালতের নথি সরিয়েছেন চা-বিক্রেতা রাসেল। সেসব নথি পরে ১৮ টাকা কেজি দরে ভাঙারির দোকানে বিক্রি করেন তিনি। আদালতের বারান্দা থেকে গায়েব হওয়া সেসব নথি ভাঙারির দোকান থেকে উদ্ধার করেছে কোতোয়ালি থানা পুলিশ।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল করিম।
খবরের কাগজকে তিনি বলেন, ‘মহানগর পিপি অফিসের বারান্দা থেকে হারিয়ে যাওয়া ৯ বস্তা অর্থাৎ ১ হাজার ৯১১টি কেস ডকেট (সিডি) উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত এক চা-বিক্রেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’ তিনি জানান, মামলার ডকেটগুলো হারিয়ে যাওয়ার বিষয়ে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি পিপি মো. মফিজুল হক ভূঁইয়া থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। গত ৫ জানুয়ারি দায়ের করা সাধারণ ডায়েরিতে তিনি উল্লেখ করেন, মহানগর পিপি অফিসে প্রায় ২৮ থেকে ৩০টি আদালতের কেস ডকেট রক্ষিত ছিল। পিপি অফিসে জায়গার স্বল্পতার কারণে গত ২০২৩ সালের ২৪ এপ্রিল অফিসের সামনের বারান্দায় প্লাস্টিকের বস্তায় সর্বমোট ১ হাজার ৯১১টি কেস ডকেট স্তূপ আকারে ৯টি বস্তায় রক্ষিত ছিল। গত বছরের ১২ ডিসেম্বর মহানগর কোর্টের সর্বশেষ ভ্যাকেশন কোর্ট ছিল। এরপর থেকে মহানগর আদালত ও পিপি অফিস বন্ধ ছিল। বন্ধ থাকা অবস্থায় গত ১৩ থেকে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে কেস ডকেটগুলো হারিয়ে যায়।
জানা যায়, দায়ের করা জিডির সূত্র ধরে কোতোয়ালি থানা পুলিশ তদন্তে নামে। ওসি বলেন, ‘ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজ দেখে ৯ জানুয়ারি সিএমপির বাকলিয়া থানাধীন বউবাজার এলাকা হতে রাসেল নামে এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে ওই নথিগুলো চুরি করার কথা স্বীকার করেন তিনি। চুরির পরে ভাঙারির দোকানে ১৮ টাকা কেজিতে নথিগুলো বিক্রি করে দেন রাসেল। তার দেওয়া তথ্যমতে, কোতোয়ালি থানাধীন সতীশ বাবু লেনের সোবহান সওদাগর মসজিদ আকবর কলোনির ৭ নম্বর রুম থেকে ৯টি প্লাস্টিকের বস্তাভর্তি কেস ডকেটগুলো উদ্ধার করা হয়।
তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মো. কামরুজ্জামান খবরের কাগজকে বলেন, ‘রাসেল ফাইলগুলো একদিনে চুরি করেননি। কখনো এক বস্তা নিয়ে বিক্রি করেছেন। কখনো আধা বস্তা নিয়েছেন। এভাবেই তিনি নথিগুলো সরিয়েছেন। তার ধারণা ছিল বস্তাগুলো যেহেতু দীর্ঘদিন বারান্দায় পড়ে ছিল, তাই নিয়ে গেলেও সমস্যা হবে না। ধৃত রাসেল আদালত পাড়ায় একটি চা-দোকানে কাজ করেন। সেই সুবাধে বিভিন্ন আদালত এবং আইনজীবীদের রুমে তার যাতায়াত ছিল।’ হারিয়ে যাওয়া সব নথি উদ্ধার হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ বস্তাগুলো খুলে গণনা করা হয়নি। তবে তার ধারণা সব নথি উদ্ধার হয়েছে।’
তিনি জানান, সাধারণ ডায়েরি এখন মামলায় পরিণত হবে। রাসেল এই মামলার আসামি। তদন্তে আর কারও নাম এলে তাকে আসামি করা হবে।