
এক বছরের মধ্যে তিনটি কমিটি গঠন করা এবং একে অপরের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে বিষোদ্গার করায় বরিশাল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শতবর্ষপূর্তি উদযাপন নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে গত মঙ্গলবার ও বৃহস্পতিবার বরিশাল প্রেসক্লাবে উভয়পক্ষ পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করেছে। উদযাপন পরিষদের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির কারণে ঐতিহ্যবাহী বিদ্যালয়টির সাবেক শিক্ষার্থীরা নিবন্ধন ফি ফেরত চেয়েছেন।
মঙ্গলবারের সংবাদ সম্মেলনে উদযাপন পরিষদের সাবেক আহ্বায়ক অধ্যাপক শাহ সাজেদা দাবি করেছেন, ‘বিএনপির এক শীর্ষনেত্রীর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ইন্ধনে ৫ ডিসেম্বর ইসলামিয়া কলেজের সাবেক অধ্যাপক ফয়জুন নাহার শেলীকে আহ্বায়ক করে শতবর্ষপূর্তি উদযাপনের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়। এতে সাতজন যুগ্ম সচিব, দুজন সদস্যসচিব, দশজন নির্বাহী সদস্য এবং উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হয়। পরে ওই কমিটি আমার বাসায় গিয়ে ১২ দফা অঙ্গীকারযুক্ত ৩০০ টাকার একটি স্ট্যাম্পে চুক্তি করিয়ে আনেন। তারা বরিশাল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে থাকা অর্ধকোটির ওপরে টাকা অন্য অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফারের জন্য চাপ দিতে থাকেন।’
তিনি বলেন, ‘যেহেতু আমরা শতবর্ষ উদযাপন করতে পারছি না, এ কথা শুনে নিবন্ধনকারীরা তাদের টাকা ফেরত চেয়েছেন। আমরা হিসাব করে তাদের টাকা ফেরত দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছি।’
অন্যদিকে শাহ সাজেদাকে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যা দিয়ে সদ্য গঠিত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ফয়জুন নাহার শেলী বলেন, ‘প্রফেসর শাহ সাজেদা কোন মতাদর্শের তা কারও অজানা নয়। বিগত জাতীয় নির্বাচনে তার ভূমিকা বা গণ-অভ্যুত্থানের সময় ফেসবুক পোস্টে তার প্রমাণ রয়েছে। তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে একচেটিয়া সুবিধা ভোগ করেছেন।’
ফয়জুন নাহার বলেন, ডিসেম্বর মাসের শেষদিকে ১২টি শর্তসংবলিত ৩০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প পেপারের মাধ্যমে শাহ সাজেদা নতুন কমিটির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। এর মধ্যে একটি শর্ত হলো, ব্যাংক হিসাব পরিচালনার ক্ষমতা। কিন্তু তাদের ষড়যন্ত্রের কারণে নতুন কমিটি ব্যাংক হিসাব পরিচালনা করতে পারছে না। সমস্যা সমাধানের জন্য ব্যাংক কর্তৃপক্ষ উভয়পক্ষকে আমন্ত্রণ জানালেও শাহ সাজেদা সেখানে উপস্থিত না হয়ে চুক্তি ভঙ্গ করেছেন। এ ছাড়া তিনি (শাহ সাজেদা) ভাউচার ছাড়া ৩ লাখ ৪২ হাজার ৯৬০ টাকা ব্যয় করেছেন, যার কোনো সঠিক হিসাব পাওয়া যায়নি।’
বিদ্যালয়ের অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন সূত্র জানায়, ২০২৩ সালে বিদ্যালয়টির শতবর্ষ পূর্ণ হয়। শতবর্ষপূর্তি উপলক্ষে ওই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে বরিশাল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন গঠন করা হয়। ৫০ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির আহ্বায়ক করা হয় প্রফেসর শাহ সাজেদাকে। তারা শতবর্ষ পালনের জন্য সাবেক শিক্ষার্থীদের নিবন্ধনের আহ্বান জানান। সেই অনুযায়ী দুই হাজারের বেশি সাবেক শিক্ষার্থীরা নিবন্ধন করেন।
কিন্তু গত বছরের ২৫ জানুয়ারি বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও বরগুনা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সুলতানা নাদিরা নিজেকে আহ্বায়ক ঘোষণা দিয়ে আরেকটি কমিটি গঠন করেন। তারা শতবর্ষ উদযাপনের কার্যক্রম শুরু করেন। কিন্তু ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সুলতানা নাদিরা আত্মগোপনে চলে যান।
পরে শাহ সাজেদাকে পুনরায় আহ্বায়ক করে নতুন কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি তাদের কার্যক্রম শুরু করলে সুলতানা নাদিরার অনুসারীরা বাধা দেয়। পরে জেলা প্রশাসকের পরামর্শে উদ্ভূত পরিস্থিতি এবং গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান জানিয়ে ২০২৪ সালে কোনো অনুষ্ঠান না করার সিদ্ধান্ত হয়। সেই অনুযায়ী নিবন্ধনকৃত সাবেক শিক্ষার্থীদের টাকা ফেরত দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়।
কিন্তু গত ৫ ডিসেম্বর বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (বর্তমানে পদত্যাগকৃত) বিলকিস জাহান শিরিন তার লোকজন দিয়ে শতবর্ষপূর্তি উদযাপন নামে আরও একটি কমিটি গঠন করেন। ওই কমিটিতে অধ্যাপক ফয়জুন নাহার শেলীকে আহ্বায়ক করা হয়। এ ছাড়া সাতজন যুগ্ম সচিব, দুজন সদস্যসচিব, দশজন নির্বাহী সদস্য এবং এটি উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হয়।