
হঠাৎ করেই খুলনা বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের কার্যক্রম ঝিমিয়ে গেছে। গত দুই মাস আগেও যেখানে পাসপোর্টের জন্য প্রতিদিন গড়ে ৭০০-৯০০টি আবেদন জমা পড়ত সেখানে এখন দিনে একটি-দুটি আবেদন জমা পড়ছে। কোনো কোনো দিন আবার একটিও আবেদন জমা পড়ছে না।
কর্মকর্তারা বলছেন, খুলনা, সাতক্ষীরা ও যশোরের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মানুষ মূলত ভারতে যাওয়ার জন্য পাসপোর্ট তৈরি করেন। কিন্তু বর্তমানে ভারতীয় ভিসা বন্ধ থাকায় পাসপোর্ট তৈরির আবেদনেও ভাটা পড়েছে। অন্যদিকে প্রায় চার হাজারের বেশি পাসপোর্ট তৈরির পরও তা নিতে আসেনি আবেদনকারীরা। মাঝেমধ্যে ফোন ও লিখিত চিঠি পাঠানো হলেও জবাব মিলছে না।
খুলনা বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত প্রতিদিন গড়ে ৭০০-৯০০ নারী-পুরুষ পাসপোর্ট তৈরির আবেদন জমা দিয়েছেন। ওই সময় ফজরের নামাজের পর থেকে অফিসের সামনে আগ্রহী মানুষের দীর্ঘ লাইন থাকত। আবেদন জমা নেওয়ার পর যাচাই শেষে নির্দিষ্ট দিনে ছবি তোলা, পাসপোর্ট তৈরি ও সরবরাহে ব্যস্ত সময় পার করেছেন কর্মকর্তারা। দুপুরের দিকে অফিসের গেটে, ভেতরের আঙিনা, অফিসের নিচতলা-দোতলাসহ সর্বত্র মানুষে ঠাসা থাকত। তবে নভেম্বর থেকে পাসপোর্ট তৈরির আবেদন কমতে থাকে, যা বর্তমানে প্রায় তলানিতে পৌঁছেছে।
সরেজমিনে খুলনা বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসে গিয়ে দেখা যায়, পাসপোর্ট আবেদন কমে যাওয়ায় অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অলস সময় পার করছেন। প্রতিদিন হাতেগোনা কয়েকটি মাত্র পাসপোর্ট তৈরির আবেদন জমা পড়ছে। কর্মকর্তারা জানান, মূলত ভারতীয় টুরিস্ট ভিসা বন্ধ থাকায় পাসপোর্ট আবেদন উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে কমেছে।
অফিসের নিচতলায় গিয়ে দেখা যায়, প্রায় জনশূন্য অফিসে দুজন ব্যক্তি পাসপোর্ট তৈরির আবেদন জমা দিতে এসেছেন। এর মধ্যে স্কুলশিক্ষক মোতাহার হোসেন জানান, পাসপোর্ট অফিস এমন নীরব, আগে কখনো দেখিনি। এর আগে পরিবারের সদস্যদের পাসপোর্ট করার সময় ফজরের পরে লাইনে দাঁড়াতে হয়েছে, আবেদন জমা দিয়ে বাড়ি ফিরেছি দুপুরে। আমি এখন নিজের পাসপোর্ট আবেদন করতে এসেছি। প্রয়োজনীয় কাগজসহ পাসপোর্ট আবেদন জমা, ছবি তোলা ও স্লিপ সংগ্রহে ১৫-২০ মিনিট সময় লেগেছে।
জানা যায়, জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সরকার পতনের পর ৭ আগষ্ট থেকে স্মরণকালের বেশী পাসপোর্টের আবেদন জমা পড়ে খুলনা পাসপোর্ট অফিসে যা ছিল অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে সর্বোচ্চ। ৭ আগস্ট ভারতীয় ভিসা সেন্টারের ওয়েবসাইটে দেওয়া এক বার্তায় জানানো হয়, অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত সব ভারতীয় ভিসা সেন্টার (আইভিএসি) বন্ধ থাকবে। এরপর ডিসেম্বর মাস থেকে ভারতীয় ভিসা সেন্টারে সীমিত আকারে জরুরি মেডিকেল ভিসার কার্যক্রম শুরু হলেও পাসপোর্ট তৈরির ব্যস্ততা কমেছে।
পাসপোর্ট নিতে আসা গৃহবধূ সেতারা বেগম জানান, পাসপোর্ট ডেলিভারি নেওয়ার জন্য একটা পূর্ণাঙ্গ দিন হাতে নিয়ে আসতে হতো। কিন্তু গত ডিসেম্বরে আবেদন করেছিলাম এখন ২০ দিনেই পাসপোর্ট হাতে পেলাম।
খুলনা বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের পরিচালক মো. আবু সাইদ বলেন, খুলনায় স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন ৩০০-৩৫০টি আবেদন জমা পড়ত। তবে আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে অস্বাভাবিক হারে পাসপোর্ট আবেদন বাড়তে থাকে। প্রতিদিন প্রায় ৭০০-৯০০টি পাসপোর্টের আবেদন জমা পড়েছে তখন। ওই সময় দুই মাসে ৪৫ হাজারের মতো পাসপোর্ট তৈরির আবেদন জমা পড়ে। এরপর নভেম্বরের মাঝ থেকে আবেদন কমতে শুরু করে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের এদিকের মানুষ বেশির ভাগ ভ্রমণ ও চিকিৎসার জন্য ভারতে যান। কিন্তু ভারতে ভিসা বন্ধ থাকায় পাসপোর্ট আবেদন কমতে পারে।’
অন্যদিকে চার হাজারের বেশি পাসপোর্ট হস্তান্তর না হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এসব পাসপোর্টের বেশির ভাগই আগস্টের মাঝামাঝি থেকে অক্টোবরের মধ্যে আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু এখন তাদের অনেকেই পাসপোর্ট নিতে আসছেন না। ফোন বা নির্দিষ্ট ঠিকানায় চিঠি দিলে দুয়েকজন এসে পাসপোর্ট সংগ্রহ করছেন।