
কুমিল্লা ও ফেনীর বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় মাদকদ্রব্য দেশে প্রবেশ করে। এর পর বিভিন্ন চক্রের সদস্যদের মাধ্যমে এসব মাদক চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে ভারতীয় মদ, ইয়াবা, ফেনসিডিল ও গাঁজা। মাঝে মধ্যে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি), র্যাব ও পুলিশের অভিযানে কিছু মাদক ধরা পড়লেও এর বিশাল অংশ মাদকসেবীদের হাতে পৌঁছে যায়।
চট্টগ্রাম মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর জানায়, ভারতীয় ফেনসিডিল, হলুদ ইয়াবা, গাঁজা, ট্যাপেন্ডাটল ট্যাবলেট সীমান্ত পার হয়ে দেশে প্রবেশ করছে। বিভিন্ন সিন্ডিকেট এসব মাদকদ্রব্য চট্টগ্রামে পাচার করছে। ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও ঢাকার দুই শতাধিক কারবারি এ পাচারের সঙ্গে জড়িত। তারা সব সময় থাকে ধরাছোঁয়ার বাইরে। মাঝে মধ্যে পরিবহনকারীরা ধরা পড়ে। পাচারকারীরা ফেনসিডিলের ক্ষেত্রে পিকআপ, মাইক্রোবাস ব্যবহার করলেও ইয়াবার ক্ষেত্রে ব্যবহার করে মোটরসাইকেল।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম নগরীর সিআরবির বয়লার বস্তি ও ফলমন্ডি কলোনি এলাকায় গেল বছরের ২০ নভেম্বর অভিযান চালিয়ে পাঁচজনকে আটক করে যৌথ বাহিনী। এ অভিযান চালায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড। তাদের কাছ থেকে অবৈধ ধারালো অস্ত্র, মাদকদ্রব্য, মোবাইল ফোন এবং নগদ ১৫ লাখ টাকা জব্দ করা হয়। সে সময় উদ্ধার করা মাদকগুলো ফেনী সীমান্ত হয়ে চট্টগ্রাম নগরে নিয়ে আসা হয়েছে বলে জানতে পারে যৌথ বাহিনী। গত ৪ ডিসেম্বর র্যাবের পৃথক দুটি অভিযানে ৫৮ কেজি গাঁজা উদ্ধারসহ তিন মাদক কারবারি গ্রেপ্তার ও মাদক পরিবহনে ব্যবহৃত পিকআপ এবং একটি মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়।
গত ৩ জানুয়ারি মধ্যরাতে চট্টগ্রামের জুবিলী রোডের রূপালী ব্যাংকের পেছনে অভিযান চালিয়ে ইয়াবা, গাঁজা ও ফেনসিডিলসহ প্রায় পাঁচ লাখ টাকার মাদকদ্রব্য জব্দ করে র্যাব-৭। এ সময় চার মাদক ব্যবসায়ীকেও আটক করা হয়। একই দিন ফেনী মডেল থানার ফতেহপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অস্থায়ী চেকপোস্ট বসিয়ে ৪৮ কেজি গাঁজা জব্দ করা হয়। পরদিন কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রামে মাদক আনার খবর পেয়ে বায়জিদ বোস্তামি লিংক রোড এলাকায় অভিযান চালায় র্যাব। এ সময় ১০ কেজি গাঁজাসহ মোটরসাইকেল আরোহীকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর র্যাব জানতে পারে, কুমিল্লার বিভিন্ন সীমান্ত থেকে কম দামে গাঁজা কিনে এনে একটি চক্র চট্টগ্রাম নগরের মাদকসেবীদের কাছে বেশি দামে বিক্রি করছে।
৯ জানুয়ারি ৩০ বোতল বিদেশি মদসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাদের দেওয়া তথ্যে একটি মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়। ওই মোটরসাইকেল দিয়ে মাদক পরিবহন করা হতো বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা হচ্ছে। গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে কুমিল্লা থেকে মাদক এনে চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ফেনী মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত এক বছরে ফেনী জেলায় ৫৭ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। গাঁজা উদ্ধার করা হয়েছে ৫৪ কেজি, ট্যাপেন্ডাটল ট্যাবলেট দুই হাজার ১৭০ পিস, বিদেশি মদ ৩০৪ বোতল বা ৬৭৫ মিলিলিটার, ফেনসিডিল ১৩৬ বোতল এবং জব্দ করা বিয়ার ক্যানের পরিমাণ ২২টি। এক বছরে জেলায় দুই হাজার ৬৮২টি অভিযান চালানো হয়েছে। মামলা হয়েছে ২৩৬টি। মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকায় জেলা থেকে ২৩৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
কুমিল্লা জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এক বছরে ৫৮ হাজার পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়েছে, গাঁজা ৫৮৪ কেজি, ফেনসিডিল ২৯৩ বোতল, বিদেশি মদ ৩৪ বোতল, ট্যাপেন্ডাটল ট্যাবলেট ১৬ পিস, চোলাই মদ ২৫ লিটার জব্দ করা হয়। কুমিল্লায় মোট মামলা হয় ৩৭০টি, মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয় ২৫৫টি। অভিযান চলে ১ হাজার ৭৫০টি।
চট্টগ্রাম মেট্রো এলাকায় মাদ্রকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর গত এক বছরে ১ হাজার ৯৪৫টি অভিযান পরিচালনা করে। এতে ৩৭২টি মামলা করা হয়। এ ছাড়া ইয়াবা উদ্ধার করা ১ লাখ ২২ হাজার ৬৬৭ পিস, গাঁজা ৬৫ কেজি, বিলাতি মদ ৭২ বোতল, বিয়ার ২০ ক্যান, চোলাই মদ প্রায় ১ হাজার লিটার।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম জেলা এলাকায় ১ হাজার ৮৮৮টি অভিযানে ২৮২টি মামলায় ৩০৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অভিযানে ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে প্রায় ৯০ হাজার পিস, গাঁজা ৬৮ কেজি, চোলাই মদ ১ হাজার ৬৫ লিটার জব্দ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড ৪৩ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ ইমাম হোসেন বলেন, ‘আমরা সীমান্তে সব সময় সতর্ক অবস্থানে থাকি। মাদকদ্রব্য যখন সীমান্ত অতিক্রম করে পাচারকারীরা নিয়ে আসেন তখন আমরা ধরি। যেকোনো চোরাচালান বন্ধে বর্ডার গার্ড সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।’
চট্টগ্রাম বিভাগীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক জাহিদ হোসেন মোল্লা বলেন, ‘ভারতীয় সীমান্ত দিয়ে মাদক দেশে প্রবেশ করে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ছে। বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি), র্যাব ও পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে মাদকদ্রব্য ঢাকা ও চট্টগ্রামে শহরে ছড়িয়ে পড়ছে।’
র্যাব-৭-এর ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক (মিডিয়া) মেজর সাদমান সাকিব জানান, ভারতীয় মাদক চট্টগ্রামের বিভিন্ন অঞ্চলে ধরা পড়ছে। সম্প্রতি র্যাবের অভিযানে বিপুল পরিমাণ ফেনসিডিল ও গাঁজা ধরা পড়েছে। এ ছাড়া বিদেশি মদও রয়েছে। এগুলো কারবারিরা কুমিল্লা ও ফেনী সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে আনছে। আমরা সব সময় তৎপর রয়েছি। বিভিন্ন মাদকের আস্তানায় অভিযান অব্যাহত রয়েছে।