
মাদারীপুরে কামাল মাতুব্বর (৫৫) নামে এক মানবপাচারকারী মাফিয়াকে গণপিটুনি দেওয়ার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে।
বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) দুপুরে আদালতে হাজিরা শেষে আসার সময় বেশকিছু লোক কামালকে মারধর করে পুলিশে দেয়। এরপর রাতে ভিড়িওটি ছড়িয়ে পড়ে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মাদারীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহ আল মামুন।
জানা গেছে, কামাল মাতুব্বরের বিরুদ্ধে মানবপাচার ও প্রতিরোধ দমন আইনে একাধিক মামলায় রয়েছে।
মানবপাচারের খপ্পরে পড়া কয়েকজন যুবক হলেন- রাজীব মাতুব্বর, নিজাম, তাইফুল, তাহের, মুজাম হাওলাদর, শাহাবুদ্দিন, তারেক মাতুব্বর। তাদের ছাড়াও এলাকার শতাধিক যুবককে ইতালি নেওয়ার কথা বলে পরিবারের কাছ থেকে প্রথমে ১৩-১৪ লাখ টাকা নেয় কামাল। এর পরে ভুক্তভোগীদের লিবিয়া নিয়ে মাফিয়াদের কাছে বিক্রি করে মানবপাচারকারী কামাল মাতুব্বর।
এর পর লিবিয়ার মাফিয়ারা বন্দিশালায় যুবকদের আটকে রেখে তাদের ওপর চালায় অমানুষিক নির্যাতন। মুক্তিপণের টাকা আদায় করতে পরিবারকে নির্যাতনের ভিডিও দেখিয়ে ২০-৪০ লাখ হাতিয়ে নেয় মাফিয়া ও মানবপাচার চক্র।
প্রতিটি পরিবার ভিটেমাটি বিক্রি করে দালালের হাতে টাকা তুলে দিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন। টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পর লিবিয়ার বন্দিশালা থেকে কেউ কেউ ফিরে আসতে পারলেও অনেকে এখনো নিখোঁজ। নিখোঁজ ও বন্দিদের ফিরে পেতে মানবপাচাকারী কামাল মাতুব্বরের বাড়িতে ভিড় করেন ভুক্তভোগী পারিবার ও স্বজনরা। কিন্তু টাকা হাতিয়ে নিয়ে গাঁ ঢাকা দেন কামাল মাতুব্বর।
এর পর ভুক্তভোগীরা খোজ খবর নিয়ে জানতে পারে বৃহস্পতিবার কামাল আদালতে হাজিরা দিতে আসবে। কামাল হাজিরা দিতে গেলে ভুক্তভোগীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাকে ঘিরে ধরে। একপর্যায়ে গণপিটুনি দিয়ে আটক করে মাদারীপুর সদর থানায় সোপর্দ করে।
ভুক্তভোগী রাজিব মাতুব্বর বলেন, ‘কামাল মাতুব্বর আমাকে লিবিয়া পাঠিয়ে একটা অন্ধকার ঘরে এক মাস আটকে রেখে নির্যাতন করে। আমার পরিবার থেকে ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। মুক্তিপণের টাকা দিয়ে কোনোমতে বেঁচে ফিরে এসেছি। আমি মানবপাচারকারী দালাল কামাল মাতুব্বরের শাস্তি চাই।’
মাদারীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘আসামি কামাল মাতুব্বরের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। মামলায় হাজিরা দিতে আদালতে এসেছিল। পরে লোকজন তাকে ধরে এনে পুলিশে দিয়েছে। তার বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও সব মামলায় জামিনে রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ জন্যে আদালতের রি-কল দেখে তাকে বৃহস্পতিবার রাতেই পরিবারের জিম্মায় হস্তান্তর করা হয়েছে । তাৎক্ষণিক পরিস্থিতির কারণে আমাদের জিম্মায় ছিল।’
রফিকুল ইসলাম/সুমন/