
চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি (টপসয়েল) কেটে ইটভাটায় বিক্রি করছেন। সন্ধ্যা হলেই শুরু হয় এক্সকাভেটরের গর্জন। সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে কৃষিজমির মাটি কাটার কর্মযজ্ঞ।
টপসয়েল কেটে নেওয়ায় প্রতিবছর আবাদি জমির পরিমাণ কমছে। এ ছাড়া ডাম্প ট্রাকে করে মাটি পরিবহন করায় সড়কে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এতে স্থানীয় বাসিন্দাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছেন, কৃষিজমির টপসয়েল কাটা বন্ধে দিনে ও রাতে সমানতালে অভিযান চালানো হচ্ছে। সম্প্রতি বিভিন্ন এলাকায় মাটি কাটার সময় অভিযান চালিয়ে বেশ কিছু ডাম্পট্রাক ও এক্সকাভেটর জব্দ করা হয়। অন্যদিকে, উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে টপসয়েল কাটার বিরুদ্ধে অভিযান ও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা জোরদার করার দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, উপজেলার এওচিয়া ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মোহাম্মদ হারুন, দেলোয়ার, কলিমুল্লাহ ও মোহাম্মদ সাদেক টপসয়েল কাটার কাজে জড়িত। তবে স্থানীয়ভাবে তারা প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে চান না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কৃষকরা উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার কৃষিজমিগুলোতে বিভিন্ন ধরনের ফসলের আবাদ করেন। এসব ফসল স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে চট্টগ্রাম শহর, কক্সবাজার ও কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়। এখানকার উৎপাদিত ফসলের মধ্যে ধান, আলু, শিম, বেগুন, করলা, বরবটি ও টমেটো অন্যতম। তবে টপসয়েল কেটে নেওয়ায় প্রতিবছর আবাদি জমির পরিমাণ কমছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এতে কৃষকরা ক্ষতির সম্মুখীন হলেও মাটি ব্যবসায়ীরা ঠিকই লাভের মুখ দেখছেন।
সরেজমিনে উপজেলার কেঁওচিয়া, ধর্মপুর, পুরানগড়, এওচিয়া ও নলুয়া ইউনিয়নে গিয়ে দেখা গেছে, এক্সকাভেটর দিয়ে কৃষিজমির মাটি কেটে বিক্রি করায় কৃষি জমিতে ২ থেকে ৩ ফুট গর্ত তৈরি হয়েছে। তার আশপাশের জমিগুলোর ওপর দিয়ে মাটিবোঝাই ডাম্প ট্রাক চলাচল করায় জমিগুলো নিচু হয়ে গেছে। এ ছাড়াও গ্রামীণ সড়ক দিয়ে ডাম্পার ট্রাকে করে মাটি পরিবহন করায় সড়কে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এতে স্থানীয় বাসিন্দাদের চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, দিনের বেলায় নিষ্ক্রিয় হলেও রাতের বেলায় মাটি ব্যবসায়ীরা সক্রিয় হয়ে ওঠেন। দরিদ্র কৃষকদের অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে কৃষিজমির মাটি কিনে নিচ্ছেন তারা।
ধর্মপুর ইউনিয়নের কৃষক সোলতান আহমদ বলেন, ‘আমার জমি থেকে দুরবর্তী এক জমির মালিক মাটি বিক্রি করেছেন। কিন্তু রাতের আঁধারে মাটি ব্যবসায়ীরা আমার জমির ওপর দিয়ে ডাম্প ট্রাকে মাটি পরিবহন করায় জমিটি নিচু ও মাটি শক্ত হয়ে গেছে। এখন এ জমিতে চাষাবাদ করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।’
এওচিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা কামরুল হাসান বলেন, ‘টপসয়েল কাটার বিরুদ্ধে অভিযান আরও জোরদার করতে হবে। শুধু জরিমানাতেই সীমাবদ্ধ থাকলে মাটি কাটা বন্ধ করা সম্ভব না। জরিমানার পাশাপাশি টপসয়েল কাটার কাজে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। এরপরই মাটি কাটা সম্পূর্ণ বন্ধ হবে।’
সাতকানিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, টপসয়েল কেটে নেওয়ায় প্রতিবছর আবাদি জমির পরিমাণ কমছে। তা ছাড়া টপসয়েল ফসল উৎপাদনের জন্য খুবই উপযোগী। যে জমির টপসয়েল কেটে ফেলা হয়, সে জমিতে ভালো ফসল উৎপাদন করা সম্ভব না। তাই কৃষিজমির মাটি কাটা বন্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে।
সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিল্টন বিশ্বাস খবরের কাগজকে বলেন, ‘কৃষিজমির মাটি কাটা বন্ধে উপজেলা প্রশাসনের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। সম্প্রতি গভীর রাতে কেঁওচিয়া, কাঞ্চনা ও এওচিয়া ইউনিয়নে অভিযান চালিয়ে ৩টি এক্সকাভেটর জব্দ করা হয়েছে। এ ছাড়াও বেশ কিছু ডাম্প ট্রাকও জব্দ করা হয়েছে। আগামীতেও এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।