
খেয়াঘাটের ইজারা নিয়ে দ্বন্দ্বের কারণে নিখোঁজ মাহবুবকে হত্যা করে পাথর বেঁধে মরদেহ নদীতে ডুবিয়ে দেওয়ার কথা স্বীকার করেছে আপন ভাইয়ের ছেলে সুজন হাওলাদার। জিজ্ঞাসাবাদে এ কথা স্বীকারের কথা জানিয়েছে বরিশাল পুলিশ সুপার মো. শরিফ উদ্দিন।
বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে পুলিশ সুপার তার নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।
নিহত মাহবুব হাওলাদার উজিরপুর উপজেলার শিকারপুর ইউনিয়নের পশ্চিম মুন্ডপাশা গ্রামের সেকান্দার হাওলাদারের ছেলে। গত ৩১ জানুয়ারি রাত থেকে নিখোঁজ ছিলেন তিনি। নিখোঁজ হওয়ার পরের দিন তার বড় ভাই জামাল হাওলাদার হত্যা করে গুমের অভিযোগ এনে অজ্ঞাতনামা সাত-আটজনকে আসামি করে পার্শ্ববর্তী বাবুগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করে।
ওই মামলা তদন্ত করতে গিয়ে প্রথমে মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) নিহতের ভাই শহিদুল হাওলাদার ও তার ছেলে সুজনকে আটক করে পুলিশ। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সুজনের মামাতো ভাই রিয়াদ হোসেনসহ চারজনকে আটক করে পুলিশ। আটকদের দেওয়া তথ্য মতে সন্ধ্যা নদীর মোল্লার হাট পয়েন্টে মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বাবুগঞ্জ থানা পুলিশ ডুবুরি দল সঙ্গে নিয়ে অভিযান পরিচালনা করে। সন্ধ্যায় ওই পয়েন্ট থেকে মাহাবুবের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তারদের স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে পুলিশ সুপার জানান, বছর তিন আগে উজিরপুর উপজেলার রাহুতকাঠি খেয়াঘাট ইজারা নিয়ে মাহাবুবের সঙ্গে সুজন হাওলাদারের দ্বন্দ্ব হয়। ওই সময়ে সুজনকে মারধর করে মাহবুব। পরবর্তী সময়ে স্থানীয়রা ওই ঘটনার মীমাংসা করে দেয়। কিন্তু সুজন তার মনে ক্ষোভ পোষে রাখে। ৫ আগস্ট দেশের প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের পরে মাহবুবকে খেয়াঘাট থেকে সরানোর পরিকল্প করেন।
পরিকল্পনা অনুযায়ী ৩১ জানুয়ারি রাতে নদী পারাপারের কথা বলে সুজন তার মামাতো ভাই রিয়াদসহ ৭/৮ জন সঙ্গে নিয়ে মাহাবুবের ট্রলারে উঠে। ট্রলারটি নদীর মাঝে গেলে সুজন অন্যদের নিয়ে মাহবুবকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরে বাবুগঞ্জের মোল্লার হাট এলাকায় তিন নদীর মোহনায় শরীরে পাথর বেঁধে ডুবিয়ে দেওয়া হয়। মাহবুবের ওই ট্রলারটি তারা বিক্রি করে দেয়।
তিনি আরও বলেন, নিজেদের সন্দেহের তালিকার বাইরে রাখতে ও পুলিশের দৃষ্টি অন্যদিকে সরাতেই ট্রলার চালক মাহাবুবকে অপহরণের পর উদ্ধার ও বিচারের দাবিতে এলাকাবাসীর মানববন্ধন এবং সড়ক অবরোধেও গ্রেপ্তার আসামিরা অংশগ্রহণ করেছিলেন।
বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) জামাল হাওলাদেরের দায়ের করা মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানো হয়েছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তাদের জবানবন্দি গ্রহণ চলছিল বলে জানান বাবুগঞ্জ থানার ওসি মো. আমিনুল ইসলাম।
মঈনুল ইসলাম সবুজ/মাহফুজ