
গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গীর তুরাগ তীরে রবিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে ৫৮তম বিশ্ব ইজতেমা। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে শুরু হওয়া এ পর্বে অংশ নিয়েছেন দিল্লির মাওলানা সাদ আহমদ কান্ধলভীর অনুসারীরা। রবিবার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে ২০২৫ সালের বিশ্ব ইজতেমা। ইবাদত বন্দেগি ও বয়ান শুনে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় দিন অতিবাহিত করেছেন মুসল্লিরা। মোনাজাতে অংশগ্রহণকারী ও ইজতেমা শেষে বাড়ি ফেরা মুসল্লিদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য ৮টি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করেছে রেলওয়ে বিভাগ। আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে নিরাপত্তা নজরদারি বাড়িয়েছে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ।
রবিার সকাল ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে আখেরি মোনাজাত। এই পর্বের আখেরি মোনাজাত উর্দুতে পরিচালনা করবেন মাওলানা সা’দ কান্ধালভীর ছেলে মাওলানা ইউসুফ বিন সা’দ। তার দোয়া বাংলায় তরজমা করবেন বাংলাদেশের মাওলানা মুবিন বিন ইউসুফ। এর আগে ফজরের নামাজের পর বয়ান করেন ভারতের মাওলানা মোরসালিন, তার বয়ান বাংলায় তরজমা করেন মাওলানা ওসামা ইসলাম।
শনিবার ফজরের নামাজের পর বয়ান করেন দিল্লির মাওলানা ইলিয়াস বিন সাদ। বাংলায় তরজমা করেন মাওলানা ওসামা ইসলাম। সকাল সাড়ে ৯টায় তালিম অনুষ্ঠিত হয়। এর পরপরই তালিমের মওজু (ফজিলত ও আদব) পরিচালনা করেন মুফতি ইয়াকুব। সকাল ১০টা থেকে শুরু হয় খিত্তায় খিত্তায় তালিম। জোহরের নামাজের পরে বয়ান করেন আরব দেশের প্রখ্যাত আলেমরা। তাদের বয়ান বাংলায় তরজমা করেন মাওলানা মোস্তফা খলিল। আসরের পরে বয়ান করেন হাফেজ মঞ্জুর সাহেব। তার বয়ান বাংলায় তরজমা করেন মাওলানা রুহুল আমিন। বাদ মাগরিব বয়ান করেন মাওলানা ইউসুফ বিন সাদ, তার বয়ান বাংলায় তরজমা করেন মাওলানা মুনির বিন ইউসুফ।
বিশেষ ট্রেন: আজ আখেরি মোনাজাতে মুসল্লিদের যাতায়াতের সুবিধায় ৮টি বিশেষ ট্রেন ও বাড়তি বাসের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বনলতা, কক্সবাজার এক্সপ্রেস, সুবর্ণলতা, পর্যটক এক্সপ্রেস ও সোনার বাংলা এই পাঁচটি বিশেষ ট্রেন ব্যতীত টঙ্গী স্টেশনে সকল ট্রেনের যাত্রাবিরতি রাখা হয়েছে।
তিন মুসল্লির মৃত্যু: টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমার গত ২ দিনে তিন মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। মৃত মুসল্লিরা হলেন- শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার মৃত মোহাম্মদ এলেম শেখের ছেলে মোহাম্মদ আব্দুল আজিজ শেখ (৬০), বগুড়ার চকপাতালিয়া গ্রামের মজিবর ছেলে নাজমুল হোসেন (৭৫), খুলনা জেলার লবনচরা থানার বাঙ্গালগলি গ্রামের মৃত তৈয়ব আলী তালুকদারের ছেলে দিদার তালুকদার (৫৫)।
যৌতুকবিহীন বিয়ে: প্রতিবছরের মতো এবারও বিশ্ব ইজতেমার ময়দানে ৯ যুগলের যৌতুকবিহীন বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। শনিবার বাদ আসর বিশ্ব ইজতেমার মূল বয়ান মঞ্চে এই বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করান মাওলানা সা’দ কান্ধালভীর ছেলে মাওলানা ইউসুফ বিন সাদ।
বৃহত্তম জুমা: নিজামুদ্দিন মারকাজের ইজতেমায় শুক্রবার বেলা দেড়টায় মাঠে অনুষ্ঠিত হয়েছে বৃহত্তম জুমার জামাত। জুমার নামাজে ইমামতি করেন ইউসুফ বিন সা’দ। এর আগে, ফজরের নামাজের পর বয়ান করেন মাওলানা আব্দুস সাত্তার।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা: বিশ্ব ইজতেমার শেষ পর্বে হামলা হতে পারে এমন একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সেই গুজব প্রচারের অভিযোগে এক ব্যক্তিকে আটক করার কথা জানিয়েছে পুলিশ। তবে তার নাম-পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।
শনিবার দুপুরে ইজতেমা ময়দানে বিদেশি খিত্তার পাশে অস্থায়ী সমন্বয় কেন্দ্রে এক সংবাদ সম্মেলনে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ড. নাজমুল করিম খান ওই ব্যক্তিকে আটক করার কথা জানান।
তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইজতেমায় হামলার গুজব ছড়ানো হয়েছে। আমরা সেই ব্যক্তিকে শনাক্ত করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এনেছি। তাকে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। আমরা দেখতে চাই, তিনি আদৌ এসব ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত কি না। গুজব ছড়ানোর অভিযোগে আটক ব্যক্তির পরিচয় প্রকাশ করা হবে কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে জিএমপি কমিশনার বলেন, এখনই পরিচয় প্রকাশ করা হচ্ছে না। তাকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। যদি তার বিরুদ্ধে যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়, তখন আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং তার পরিচয় প্রকাশ করা হবে। ওই ব্যক্তির সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রোফাইলে এলটি দলের একটি সংগঠনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তবে তাকে সরাসরি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়নি এবং তিনি কোনো বড় সংগঠনের প্রভাবশালী সদস্য নন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
নিরাপত্তার বিষয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আরও বলেন, ময়দানে যারা মুরুব্বি আছেন, তারাও তাদের স্বেচ্ছাসেবী সার্ভিসের মাধ্যমে নিরাপত্তা দিচ্ছেন। আশা করি, নিরাপত্তার কোনো ঘাটতি হবে না। আমরা চারদিকে প্রহরা রেখেছি, চেকপোস্ট স্থাপন করেছি, সিসিটিভি ক্যামেরা ও ড্রোনের মাধ্যমে নজরদারি করছি। সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টার মধ্যে আখেরি মোনাজাত হবে। গত দুই ধাপের চেয়ে এবারের ট্রাফিক ব্যবস্থাকে আরও ঢেলে সাজানো হয়েছে।
১৪০০ বিদেশি মুসল্লীর অংশগ্রহণ
৫৮তম বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের দ্বিতীয় দিনে দেশের ৬৪জেলার ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের পাশাপাশি অংশ নিয়েছেন বিশ্বে বিদেশি মুসল্লীরা। শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) রাত পর্যন্ত বিশ্বের ৪৯ দেশের ১ হাজার ৪৪৯ জন বিদেশি মুসল্লী ইজতেমা ময়দানে অংশগ্রহণ করেছেন।
বিশ্ব ইজতেমার আয়োজক নিজামুদ্দিন অনুসারী তাবলীগ জামাত বাংলাদেশের মিডিয়া সমন্বয়ক মোহাম্মদ সায়েমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আরব থেকে ৮৯ জন, পশ্চিমবঙ্গ থেকে ২৬৪ জন, পাকিস্তান থেকে ৪২৬ জন ইজতেমায় অংশ নিয়েছেন। এছাড়া ৫১৭ জন ইংলিশ ভাষাভাষী এবং ছাত্র ও প্রবাসীসহ মোট ১ হাজার ৪৪৯ জন বিদেশি মেহমান ইজতেমায় অংশ নিয়েছেন।
আগত বিদেশিদের সবচেয়ে বেশি রয়েছে ভারতের ৬৫৮। এরপর ইন্দোনেশিয়ার ২৬৭ জন। এছাড়া অস্ট্রেলিয়া, আলজেরিয়া, বাহরাইন, ব্রুনাই, কম্বোডিয়া, কানাডা, চায়না, ফিজি, ফ্রান্স, জার্মানি, গ্রিস, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইতালি, মালয়েশিয়া, মরক্কো, মায়ানমার, নাইজেরিয়া, ওমান, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, শ্রীলংকা, সুদান, থাইল্যান্ড, তিউনেশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, উজবেকিস্তান, ইয়েমেন অন্যতম।
এদিকে বিদেশি মেহমানদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে ইজতেমা প্রশাসন। তাদের খিত্তাকে ঘিরে বিশেষ নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। খিত্তার পাশে পুলিশ-র্যাবসহ সমস্ত বাহিনীর উপ-নিয়ন্ত্রণ কক্ষ স্থাপন করা হয়েছে। তাদের থাকা, খাওয়া, যাওয়াত ও ভ্রমনের ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটনের পুলিশ কমিশনার ড. নাজমুল করিম খান জানান, বিদেশি মেহমানদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পুরো ইজতেমার ময়দানে বিশেষ নজরে রাখা হয়েছে।
পলাশ প্রধান/মাহফুজ