ঘড়ির কাঁটা রাত ১২টা। রাজধানীর শাহবাগ থানায় এসে পুলিশের কাছে আকুতি-মিনতি করছেন এক নারী তার স্বামীকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে থেকে তার স্বামী ডাব ব্যবসায়ী মো. তাওহীদ আহাদকে গ্রেপ্তার করে শাহবাগ থানা-পুলিশ। তাকে সন্ধ্যার পর গ্রেপ্তার করা হয়।
রাত ১২টার দিকে তাওহীদের স্ত্রী বন্যা আক্তার এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমরা খুব গরিব মানুষ ভাই। কোনো প্রকার ঝামেলায় পড়তে চাই না। দিন আনি দিন খাই। দুই হাজার টাকার জন্য স্বামীকে ছাড়িয়ে নিতে পারছি না। মামলার হাত থেকে বাঁচাতে পারছি না। এটা ভয়ে কাউকে বলতেও পারছি না।’
তিনি জানান, ঢাকা মেডিকেলের সামনে ডাব বিক্রি করতেন তাওহীদ। সেখান থেকেই তাকে আটক করা হয়। তাকে ধরার পর রাতে এসআই মো. খালেক বাসায় চলে যান। বন্যাকে বলে যান থানার এক পুলিশের কাছ দুই হাজার টাকা দিলে তাওহীদকে ছেড়ে দেবেন। তবে বন্যা রাত ১২টা পর্যন্ত টাকার ব্যবস্থা করতে পারেননি। মনঃক্ষুণ্ন অবস্থায় তিনি যখন থানার সামনে পায়চারি করছেন তখন এক অপরিচিত লোক সদয় হয়ে তাকে এক হাজার টাকা দেন।
সকালে বন্যার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বন্যা ওই টাকা খালেকের দেখানো পুলিশকে দেন এবং বাকি এক হাজার টাকা সকালে ব্যবস্থা করে দেবেন বলে জানান। কিন্তু সেই পুলিশ সদস্য এক হাজার টাকা বাকি থাকায় ছাড়তে রাজি হননি। পরে বন্যা সকালে তার মায়ের কাছে গিয়ে এক হাজার টাকা নিয়ে থানায় আসেন। কিন্তু এর মধ্যে তার স্বামীকে পুলিশ আদালতে নিয়ে যায়। পুলিশ তাদের জানায়, যেহেতু আপনারা গরিব মানুষ, এ জন্য দুই হাজার টাকা দিলে ছোট মামলা দিয়েই তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে। আদালতে উকিল ধরলেই তিনি ছাড়া পাবেন বলে আশ্বস্ত করেন।
এসব বিষয়ে জানতে গতকাল দুপুরে বন্যার মোবাইলে কল দিলে তার মা শিল্পী বেগম ধরেন। তিনি জানান, দুই হাজার টাকা পুলিশকে দেওয়ার পরও তার মেয়ের জামাই তাওহীদকে পুলিশ আদালতে পাঠিয়েছে। বন্যা আদালতে আছে। মোবাইল রেখে গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এসআই মো. খালেক খবরের কাগজকে বলেন, ‘তাওহীদ নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ঠিকই- তবে তার স্ত্রী বন্যার কাছে আমি কোনো টাকা চাইনি। ঢাকা মেডিকেলের সামনে থেকে ফাঁড়ির ইনচার্জ বাচ্চু মিয়া তাকে গ্রেপ্তার করে আমার কাছে ফরোয়ার্ড করেন।’
তার স্ত্রী বন্যার কাছে আপনি দুই হাজার টাকা চেয়েছিলেন এবং দুই হাজার টাকার বিনিময়ে তাকে ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন এমন প্রশ্নের জবাবে এসআই খালেক বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না, তার স্ত্রী রাতে যখন আমাকে কল করেছিলেন তখন আমি বলেছিলাম, এত রাতে কেন ফোন দিয়েছেন। এটা বলেই আমি ফোনটি কেটে দিয়েছি। টাকা-পয়সার কথা হয়নি। তবে তাকে সন্দেহজনকভাবে আটক করা হয়েছে বলে ঢামেক ফাঁড়ির ইনচার্জ বাচ্চু মিয়া জানিয়েছেন।’
রাত ১২টার পর তাওহীদের স্ত্রী বন্যা আক্তার এক হাজার টাকা দেবেন বলে আপনাকে কল করেছিলেন কিন্তু আপনি তার কাছে দুই হাজার টাকা চেয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি তাকে বলেছিলাম এত রাতে কেন কল করেছেন, এটাই সত্যি। এটা বলেই ফোন কেটে দিয়েছিলাম আর কোনো কথা হয়নি। আর টাকার কথাটা মিথ্যা বলছেন তিনি।'
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শাহবাগ থাকার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাজির রহমান খবরের কাগজকে বলেন, ‘এমন কোনো ঘটনা আমার জানা নাই। আর এসআই খালেক যদি টাকা নেন বা কাউকে প্রস্তাব দেন তাহলে খালেককে আমি ধরব। তার কাছে জানতে চাইব কেন তিনি টাকা চাইলেন।’ তিনি বলেন, পুলিশ টাকা নিয়ে আসামি ছেড়ে দেবে- এটা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। যদি ঘটনা সত্য হয় অথবা প্রমাণিত হয় তাহলে খালেকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।