
শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া থানার চরমোহন এলাকার রতন ব্যাপারীর ছেলে আরিফ ব্যাপারী (২০)। পেশায় ফটোকপি দোকানের কর্মচারী আরিফ দীর্ঘদিন ধরে নিজের আয়ের টাকায় জাল টাকা তৈরির বিভিন্ন মেশিনারি কিনেন। এরপর রাজমিস্ত্রী অনিক ও জেলে জাহিদকে নিয়ে শুরু করেন জাল টাকা তৈরি। দীর্ঘদিনের চেষ্টায় জাল টাকা তৈরি করতে সক্ষমও হন তারা। এরপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপে কম দামে জাল টাকা বিক্রির পোস্ট দিয়ে সংগ্রহ করতেন ক্রেতা। এভাবে গত এক বছর ধরে অনলাইনে জাল টাকা বিক্রির অভিযোগে চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
র্যাব বলছে, আসন্ন পবিত্র রমজান ও ঈদ-উল ফিতরকে টার্গেট করে বিপুল পরিমাণ জাল টাকা বাজারে ছাড়ার পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছিলো চক্রটি। সম্প্রতি প্রায় ১৩ লাখ জাল টাকার অর্ডার সরবরাহের সূত্র ধরে এই চক্রটিকে গ্রেপ্তার করা হয়।
শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া থানার দূর্গম চরমোহনসহ আশেপাশের এলাকায় অভিযান চালিয়ে ২০ লাখ টাকার সমপরিমাণ জাল নোট ও জাল টাকা তৈরিতে ব্যবহৃত ল্যাপটপ,প্রিন্টারসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি উদ্ধার করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্ণেল আরিফ মহিউদ্দন আহমেদ।
তিনি বলেন, নড়িয়া থানার ঘড়িষাড় ইউনিয়নের বাংলা বাজারে একটি কম্পিউটার দোকানে কাজ করতো আরিফ। সে ইউটিউব থেকে জালটাকা বানানোর প্রক্রিয়া দেখে এবং নিজের কম্পিউটার দক্ষতা কাজে লাগিয়ে জাল নোট তৈরি শুরু করে। আরিফ জাল টাকা ছড়িয়ে দিতে জাহিদ ও অনিককে সহযোগী হিসেবে নেয়। এরপর তারা মিলে জালটাকা ছাপানোর কাজ শুরু করে।
তাদের তৈরি করা টাকা অনলাইনের বিভিন্ন গ্রুপ ও পেইজে বিক্রির পোস্ট দিতো। তাদেরে এই পোস্ট বুস্টিংয়ের মাধ্যমে পাইকারি ও খুচরা ক্রেতা সংগ্রহ করত। ঈদুল ফিতরকে টার্গেট করে বিপুল পরিমাণ জাল নোট বাজারে সরবরাহের করার প্রস্তুতি নিয়েছিল। তারা প্রতি ১ লক্ষ টাকা মূল্যমানের জাল নোট ১০ থেকে ১২ হাজার টাকায় বিক্রি করত। ঈদ উপলক্ষে জাল নোটের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বর্তমানে তারা প্রতি ১ লাখ টাকার জাল নোট ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি শুরু করে।
আরিফ মহিউদ্দিন আরও বলেন, রাজধানীর বাংলা বাজারের বিভিন্ন প্রিন্টিং প্রেসে কাজ করা বেশিরভাগ লোক শরীয়তপুর জেলার। ফলে আরিফের পরিচিতদের সূত্র ধরে সে বিভিন্ন সময় রাজধানীর বাংলা বাজারে এসে অবস্থান করে প্রিন্টিং সম্পর্কে সম্যক ধারণা নেয়। সে ধারণা থেকেই জাল টাকা তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল যেমন রং, কালি ও কাগজ কিনে।
এসব তৈরিকৃত জালনোট গুলো বিক্রয়ের জন্য আরিফ, জাহিদ এবং অনিক মিলে ফেসবুকে জালটাকা বিক্রয়ের বিভিন্ন পেজ ও গ্রুপের (যেমন; এ গ্রেড জালনোট, টাকা চাই,জালনোট, জালটাকা বিক্রি করি,জাল টাকার ডিলার,জাল টাকা বিক্রয় কেন্দ্র,রিয়েল সেলস্, টাকা বিজনেস ইত্যাদি) পোস্টে জালটাকা ক্রয়ে আগ্রহী কমেন্টকারীদের সাথে ভুয়া আইডি খুলে ইনবক্সে যোগাযোগ করে। পরে তারা হোয়াটসঅ্যাপ,ম্যাসেঞ্জার, ইমো প্রভৃতি অনলাইন যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে সরাসরি সাক্ষাতের মাধ্যমে জালটাকা ডেলিভারির কাজ করে থাকে।
এ চক্রটি বিগত সময়ে জালটাকার বড় ধরনের একাধিক চালান ডেলিভারি দিয়েছে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, চক্রটি ৫ লাখ টাকার জালনোট ডেলিভারির জন্য প্রস্তুতিকালীন টাকা, মেশিন ও বিভিন্ন সরঞ্জামাদিসহ র্যাবের কাছে হাতেনাতে ধরা পরে। তারা রাজধানী ঢাকা,চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, শরীয়তপুর ও ফরিদপুর এলাকায় জালনোট সরবরাহ করত বলে স্বীকার করে।
গ্রেপ্তারকৃতদের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, আরিফ এইচএসসি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে। সে পড়ালেখা বাদ দিয়ে শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার বাংলাবাজারে একটি কম্পিউটারের দোকানে কাজ করতো। দোকানের কাজ করে যে অর্থ উপার্জন করতো সে টাকা জমিয়ে জালনোট ছাপানোর জন্য ল্যাপটপ, প্রিন্টার এবং প্রয়োজনীয় জিনিস ক্রয় করে। পরবর্তীতে সে তার নিজ ঘরে কম্পিউটারের দোকানের কাজের আড়ালে জাল নোট ছাপানোর কাজ শুরু করে।
তার জালনোট ছাপানোর কাজে অন্যতম সহযোগী হিসেবে জাহিদ এবং অনিক সহযোগিতা করতো। তারা জালনোট বিক্রি করে যে টাকা পেতো তার অর্ধেক আরিফ নিতো এবং বাকী অর্ধেক জাহিদ ও অনিক ভাগ করে নিতো বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করে।
খাজা/এমএ/