যশোর সদর উপজেলায় এক রাতে পৃথক ঘটনায় প্রবাসীসহ দুজন খুন হয়েছেন। গত শুক্রবার রাতে সদরের চুড়ামনকাটি ও বাহাদুরপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার রাত ১১টার দিকে সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের বাদিয়াটোলা গ্রামের পশ্চিম পাড়ায় মাথায় গুলি করে মেহের আলী (৪৫) নামে এক প্রবাসীকে হত্যা করে দুষ্কৃতকারীরা। তিনি গত ২৬ জুলাই কুয়েত থেকে দেশে ফিরেছেন। সেখানে দেশটির হাদিয়া নামক স্থানে একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন। বিদেশ যাওয়ার আগে তিনি স্থানীয় ইউনিয়ন বিএনপির সক্রিয় কর্মী ছিলেন।
নিহতের স্বজনরা জানান, দুই দিন ধরে নিহত মেহের আলী যশোরের বাহাদুরপুর এলাকার আনোয়ার হোসেন নামে তার এক খালু শ্বশুরের বাড়িতে ছিলেন। ঘটনার দিন শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে মেহের তার বাড়িতে ফেরেন। এদিন বাড়িতে রাতে খাওয়া-দাওয়া শেষে বাড়ির কলাপসিবল গেটে তালা মারতে আসেন। এ সময় দুষ্কৃতকারীরা গেটের সামনে এসেই মাথায় গুলি করে পালিয়ে যায়। গুলির শব্দ শুনেই স্বজনরা দ্রুত উদ্ধার করে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে আনলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের ছোট ভাই আবু আব্দুল্লাহ বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে মেহের আলীসহ তিন ভাই বিদেশে থাকি। বিদেশ যাওয়ার আগে ভাই বিএনপির রাজনীতি করত। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা মিথ্যা মামলা দিয়ে বিভিন্ন সময়ে জেলও খাটিয়েছে। বিভিন্ন সময়ে ভাইয়ের কাছে নেতা-কর্মীরা চাঁদাও দাবি করত।’ তিনি আরও বলেন, ‘রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের জেরে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করছি। এই হত্যা পূর্বপরিকল্পিত। কেননা আমার ভাইয়ের বাড়ির চারপাশে সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে। তবে যারা মেরেছে, তারা আগে থেকে সিসিটিভি ক্যামেরা কেটে দিয়েছে।’
আহাজারি করতে করতে তিনি বলেন, ‘আমার ভাইয়ের পাঁচ বছর ও দেড় বছর বয়সী দুই শিশুসন্তান রয়েছে। তাদের কী হবে, তারা যে বাবা হারিয়েছে। তারা কারে বাবা বলে ডাকবে। আমার ভাই হত্যার বিচার চাই? আমার ভাইরে কেন মারল।’
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক খন্দকার রেজয়ান উদ দারাইম জানান, ‘গুলিবিদ্ধ মেহের আলীকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনেন স্বজনরা। তার মাথার পেছনে ডান পাশে গুলি লেগেছে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়েছে।’
এদিকে যশোর সদরের বাহাদুরপুরের আড়পাড়ায় জাহাঙ্গীর আলম মিঠু (৩২) নামে একজন খুন হন। তিনি টাইলস মিস্ত্রির কাজ করতেন। মিঠু ওই এলাকার মোদাচ্ছের আলীর ছেলে।
স্বজনরা জানান, শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে মিঠুকে তার বন্ধুরা চা খাওয়ার জন্য ডেকে নিয়ে যান। রাত ৮টার পর থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরে গতকাল রশনিবার সকাল ৬টার দিকে মাঠে কাজ করতে গিয়ে এলাকাবাসী তার লাশ দেখতে পান। তার গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা।
যশোর কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, হত্যার কারণ ও খুনিদের শনাক্ত করতে পুলিশ তদন্ত করছে। এ ঘটনায় এখনো কাউকে আটক করা যায়নি। অভিযান চলছে।