পাঁচ জেলায় গত রবি ও সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) পাঁচজন খুন হয়েছেন। এর মধ্যে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলায় আওয়ামী লীগের এক নেতাকে বাড়িতে ঢুকে পিটিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। এ ছাড়া পাবনা ও কিশোরগঞ্জে দুজনকে পিটিয়ে এবং ফরিদপুর ও মানিকগঞ্জে দুজনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো বিস্তারিত খবর:
লক্ষ্মীপুরে আওয়ামী লীগ নেতাকে পিটিয়ে হত্যা
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা চন্দ্রগঞ্জে মোহাম্মদ নূর আলম প্রকাশ নুরু নামের স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।
গত রবিবার (২২ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ৮টার দিকে সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ থানার পাঁচপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নুরু চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন বলে জানা গেছে।
নুরুর স্ত্রী পুষ্প বেগম ও ছেলে আরিফ জানান, রাত সাড়ে ৮টার দিকে নিজ ঘরে অবস্থান করছিলেন নুরু। এ সময় খোকন ও নিকুর নামে দুই ব্যক্তির নেতৃত্বে একদল দুর্বৃত্ত বাড়িতে ঢুকে অতর্কিতে হামলা করে। তিনি বাড়ির পেছন দিক দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় দুর্বৃত্তরা তাকে ধরে বেধড়ক পিটিয়ে হত্যা করে।
নুরুকে বাঁচানোর জন্য তার স্ত্রী ও ছেলে এগিয়ে গেলে দুর্বৃত্তরা তাদেরও মারধর করে।
নুরুর ছেলে আরিফ বলেন, ‘আমার বাবাকে আওয়ামী লীগ করার অপরাধে বিএনপির সন্ত্রাসীরা নির্মমভাবে হত্যা করেছে। আমি এর বিচার চাই।’
চন্দ্রগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মফিজুর রহমান জানান, নুরু আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি পেশায় দর্জি ছিলেন। হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
পাবনায় হাতুড়িপেটায় নিহত ১
পাবনা সদর উপজেলায় হাতুড়িপেটায় সাইদুল ইসলাম (৫০) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। গত রবিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে সদর উপজেলার ভাড়ার ইউনিয়নের চিথুলিয়া ব্রিজের ওপর এ ঘটনা ঘটে।
সাইদুল সদর উপজেলার চর বলরামপুর গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। তিনি কুলির কাজ করতেন।
নিহত সাইদুল ইসলামের বড় ভাই মোহাম্মদ আলী পেশায় কৃষক। অভিযোগ উঠেছে, পূর্ববিরোধের জেরে তার দুই ভাতিজা সাইদুলকে হত্যা করেন। তারা হলেন একই গ্রামের তালহা ও তামিম।
ভাড়ারা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদ খান জানান, পূর্ববিরোধের জেরে কিছুদিন আগে সাইদুল তার বড় ভাই মোহাম্মদ আলীকে মারধর করেছিলেন। সেই ঘটনায় থানায় মামলাও হয়েছে। সাইদুল গত রবিবার সন্ধ্যায় কাজ থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। চিথুলিয়া ব্রিজের ওপর পৌঁছামাত্র মোহাম্মদ আলীর দুই ছেলে তালহা ও তামিম হাতুড়ি দিয়ে তাকে বেধড়ক পেটান। পরে এলাকাবাসী ও স্বজনরা গুরুতর অবস্থায় সাইদুলকে উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। কিন্তু হাসপাতালে যাওয়ার পথে মারা যান সাইদুল।
পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রওশন আলী বলেন, এ ঘটনায় মামলার প্রক্রিয়া চলছে।
কিশোরগঞ্জে একজনকে পিটিয়ে হত্যা
কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলায় মসজিদের তবারক বিতরণকে কেন্দ্র করে তর্কাতর্কির জেরে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। নিহত ওই ব্যক্তির নাম ওয়াহাব ভূঁইয়া (৪৫)। তিনি ইটনা সদর উপজেলার উদিয়ারপাড় গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার সকালে রাস্তায় ওয়াহাব ভূঁইয়াকে একা পেয়ে বেধড়ক পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। এর দুই সপ্তাহ আগে ওই তর্কাতর্কির ঘটনা ঘটেছিল। পরদিন রবিবার ভোরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।
ইটনা থানার ওসি জাকির রাব্বানী বলেন, এ ঘটনায় উদিয়ারপাড় গ্রামের আবদুল খালেক ও হাবু মিয়া নামের দুই ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। মামলা প্রক্রিয়াধীন।
ফরিদপুরে এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে হত্যা
ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলায় আকবর আলী (৪৮) নামে এক ব্যক্তি খুন হয়েছেন। অভিযোগ উঠেছে, আকবর আলীর স্ত্রী আসমা বেগমের সাবেক স্বামী রমজান মাতুব্বর তাকে কুপিয়ে হত্যা করেন। গত রবিবার সন্ধ্যায় ভাঙ্গা পৌরসভার খাড়াকান্দা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
আকবর আলী খয়রাতি পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ছিলেন। অভিযুক্ত রমজান মাতুব্বর ভাঙ্গা পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের খাড়াকান্দা গ্রামের বাসিন্দা।
স্থানীয়রা জানান, আসমা বেগমের সঙ্গে রমজানের প্রথমে বিয়ে হয়। কিন্তু বিয়ের ছয়-সাত বছর পর রমজান তার স্ত্রী আসমাকে বাবার বাড়ি রেখে পালিয়ে ঢাকা চলে যান। এর দুই বছর পর আসমা বেগম আকবর আলীকে বিয়ে করেন। কিছুদিন পর রমজান ফিরে এসে আসমাকে আবার বিয়ে করেন। এর কিছুদিন পর রমজান আবার চলে যান। তখন দ্বিতীয় স্বামী আকবরের সঙ্গে বসবাস করতে থাকেন আসমা। এ ঘটনা নিয়ে রমজানের সঙ্গে আকবরের শত্রুতা ছিল।
আকবর আলীর পুত্রবধূ মঞ্জিলা বেগম বলেন, গত রবিবার দুপুর ১টার দিকে তার শাশুড়ির প্রথম স্বামী রমজান মাতুব্বর একটি ধারালো অস্ত্র নিয়ে আকবর আলীকে কুপিয়ে পালিয়ে যান। পরে তাকে উদ্ধার করে ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে আকবর আলী মারা যান।
এ ব্যাপারে ভাঙ্গা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জয়ন্ত কুমার বলেন, এ ঘটনায় তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মানিকগঞ্জে যুবককে কুপিয়ে হত্যা
মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার পশ্চিম বান্দুটিয়া এলাকার আশরাফুল ইসলাম পলাশ নামের এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় দুজনকে আটক করেছে পুলিশ।
সোমবার দুপুরে অভিযুক্ত আমজাদ ও তার স্ত্রীকে পালানোর সময় আটক করে পুলিশে দেন এলাকাবাসী।
পলাশ ধামরাই উপজেলার কাউয়াখোলা গাংগুটিয়া গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। তিনি মানিকগঞ্জ শহরের বান্দুটিয়া এলাকার খবির উদ্দিনের মেয়ের স্বামী ছিলেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত শুক্রবার রাত ৮টার দিকে শহরের বেউথা এলাকায় পলাশকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয়। গতকাল ভোরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান পলাশ।
মানিকগঞ্জ সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) স্বপন কুমার জানান, এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
‘দুষ্কৃতকারীরা ক্রান্তিকালকে ব্যবহার করছে’
মানবাধিকারকর্মী এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের কার্যনির্বাহী সদস্য মো. নূর খান বলেছেন, ‘আমাদের মধ্যে একধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এখনো যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারছে না। এর পেছনে নানা দুর্বলতা রয়েছে। একটা স্বৈরশাসক আসলে দেশটার সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়েছে। এই রকম একটা সময়ে যারা দুর্বৃত্ত-দুষ্কৃতকারী, তারা সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছে। অন্তর্বর্তী সরকারের তরফ থেকে নানা বার্তা আসছে। সরকারের পক্ষ থেকে চেষ্টা করা হচ্ছে। এমন একটা ক্রান্তিকাল।
এই ক্রান্তিকালের কারণে অনেক ক্ষেত্রে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা নিতে বেগ পেতে হচ্ছে। মব জাস্টিস বা অন্য অপরাধগুলো সমাজে সব সময় ছিল। এই রকম একটা সময়ে আমি মনে করি, জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে। পাশাপাশি যাদের ওপর দায়িত্ব আছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদেরও বিষয়টা শক্ত হাতে দেখতে হবে। সরকারের সদিচ্ছার তো এখন অভাব নেই। কারণ সরকার তো নিশ্চয়ই চাইবে না এসব ঘটনার মাধ্যমে সরকারের দুর্বলতা প্রকাশ পাক। দুষ্কৃতকারীরা ক্রান্তিকালকে ব্যবহার করছে। শক্ত হাতে এদের দমন করতে হবে।’