ঝালকাঠি সদর উপজেলার বাউকাঠি বাজারের ব্যবসায়ী সুদেব হালদার হত্যার দুই মাস পার হলেও এ মামলার তদন্তের তেমন অগ্রগতি নেই। পাশাপাশি সন্দেহভাজন রাব্বি তালুকদারকে আটকের কোনো উদ্যোগও নেই ঝালকাঠি থানার পুলিশের। পুলিশের দৃষ্টিতে ‘ক্লুলেস হত্যাকাণ্ড’ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) বা অন্য গোয়েন্দা সংস্থাকে দিয়ে তদন্ত করাতে বাদীকে পরামর্শ দিয়েছেন ঝালকাঠী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মেহেদি হাসান।
এ নিয়ে অনেকটা হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নিহতের পরিবারের সদস্য, স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা। হত্যাকাণ্ডে জড়িত হিসেবে প্রধান সন্দেহভাজন রাব্বি তালুকদার পার্শ্ববর্তী বানারীপাড়া থানার পুলিশ কনস্টেবল বিল্পব তালুকদারের ছোট ভাই।
ঝালকাঠি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান জানান, হত্যায় জড়িতদের আইনের আওতায় নিতে পুলিশ ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু করেছে। দৃশ্যমান কোনো সাক্ষী না থাকায় তেমন কোনো ক্লু উদ্ঘাটন করার সম্ভব হয়নি। পুরো বিষয়টি উন্মোচন করতে কিছু সময় লাগবে।
চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি রাত সাড়ে ১০টার পরে যেকোনো সময়ে রামপুর নামক স্থানে দুর্বৃত্তরা ব্যবসায়ী সুদেব হালদারকে কুপিয়ে ও গলাকেটে খুন করে। পরদিন সকালে বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার দূরের একটি ফসলি জমি থেকে সুদেবের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি বাউকাঠি বাজারের মোবাইল ফোন, সার্ভিসিং ও যন্ত্রাংশ বিক্রির প্রতিষ্ঠান অর্নব মোবাইল গ্যালারির স্বত্বাধিকারী ছিলেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও ঝালকাঠি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মেহেদি হাসান খবরের কাজকে বলেন, ‘মামলার বাদী সন্দেহভাজন হিসেবে যাদের নাম পুলিশকে বলেছেন তাদের বেশির ভাগকেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতা খুঁজে না পাওয়ায় মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে ঘটনার পর থেকে পলাতক থাকায় রাব্বিসহ কয়েকজনকে গ্রেপ্তারের দেশের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালানো হয়েছে। পাশাপাশি তাদের গ্রেপ্তারে র্যাবের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এজাহারে কারও নাম উল্লেখ না থাকলেও মামলার বাদী রাব্বিসহ কয়েকজনের নাম বলেছেন। রাব্বি সম্পর্কে যতদূর খোঁজ নেওয়া হয়েছে তাতে তার সম্পৃক্ততা আছে বলে মনে হয়নি। তাই তাদের গ্রেপ্তারের জন্য আদালতের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। তাকে গ্রেপ্তারের জন্য ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ও তার ভাই বানারীপাড়া থানার কনস্টেবল বিল্পব তালুকদারের কর্মস্থল বানারীপাড়াতেও অভিযান চালানো হয়। রাব্বি ও অন্য সন্দেহভাজনরা মোবাইল ফোনসহ কোনো ডিভাইস ব্যবহার না করায় তাদের অবস্থান চিহ্নিত করা যাচ্ছে না। মামলার তদন্ত পিবিআই দিয়ে করানোর বিষয়ে বাদীকে পরামর্শ দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন পুলিশের এ কর্মকর্তা।
নিহতের বাবা সুবোধ হালদার জানান, সুদেবের লাশ পাওয়ার পর আমরা অনেকটা হতবিহ্বল হয়ে পড়ি। সুদেবের লাশ উদ্ধারের পর রাব্বিসহ দুইজন ছাড়া সব নারী-পুরুষ, কিশোর-কিশোরী, যুবক, তরুণ-তরুণী সবাই এলাকায় রয়েছেন। ঘটনার দিন পুলিশ সুপার আমাদের বাড়িতে এসেছিলেন। তিনি সন্দেহভাজনদের নাম-ঠিকানা নিয়েছেন। এ সময় তিনি এর সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করে আইনে আওতায় আনার আশ্বাস দিয়ে ছিলেন। পুলিশ সুপারের কথার ওপর আমরা ভরসা করেছিলাম। কিন্তু দুই মাস অতিবাহিত হওয়ার পরও মামলার কোনো অগ্রগতি দেখছি না। পাশাপাশি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মেহেদি হাসান পিবিআই কিংবা অন্য কোনো সংস্থা দিয়ে তদন্ত করানো জন্য আদালতে আবেদন করার পরামর্শ দিয়েছেন। তার এমন পরামর্শে আমরা হতাশার মধ্যে পড়েছি।
নিহত সুদেব হালদারের মা শেফালি হালদার বলেন, ‘আমার ছেলে কারও সঙ্গে কোনো দিন খারাপ ব্যবহার করেনি, কোনো অন্যায় করেনি। কেন আমার ছেলেকে হত্যা করা হলো। আমি এর বিচার চাই।’
বাউকাঠি বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. রুহুল আমিন ফকির বলেন, ‘সন্দেহভাজন রাব্বিকে আটকের ব্যাপারে পুলিশের তেমন একটা আগ্রহ আমরা দেখছি না। এ ব্যাপারে পুলিশের সদিচ্ছা থাকলে এতদিনে রাব্বি আটক হতো। দ্রুত সময়ে মধ্যে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করা না হলে আমরা বাজার ব্যবসায়ীরা বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করব।’
এ বিষয়ে ঝালকাঠি জেলার পুলিশ সুপার উজ্জ্বল কুমার রায় খবরের কাগজকে বলেন, ‘চাঞ্চল্যকর সুদেব হত্যা মামলাটি আমরা অতিগুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। সন্দেহভাজনদের গ্রেপ্তারে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চলছে।’
বরিশাল রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. নাজিমুল হক খবরের কাগজকে বলেন, ‘ঝালকাঠীর সুদেব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারের নিদের্শ দেওয়া হয়েছে। তারা কার আত্মীয় বা কোন গোষ্ঠীর লোক তা পুলিশের কাছে বিবেচ্য নয়।’