অনেক দিন আগের কথা। বাংলাদেশের খুলনা অঞ্চলের বালেশ্বর নদীর তীরে ছিল একটি জল-কাদাময় স্থান। সেখানে বাস করত একদল ব্যাঙ। ব্যাঙরা সারা দিন ক্রোক, ক্রোক করে ডাকাডাকি করে এলাকায় হইহুল্লোড় করে কাটাত। কিন্তু তারা গাইতে বা নাচতে জানত না।
ওই জলাভূমির কাছেই ছিল এক ঝাড় কলাগাছ। গাছে গাছে পাকা কলা। একদিন কলাগাছ থেকে কলা খেতে একদল বানর সেই বনের ভেতরে ঢুকে গেল। তারা মহা উৎসাহে গাছে উঠে কলা ছিঁড়তে লাগল। পেট ভরে কলা খেল আর একে অপরের দিকে কলা ছুড়ে দুষ্টামি করল। তারপর দলবেঁধে নাচতে লেগে গেল। সঙ্গে চিৎকার ও হইহুল্লোড়। বানররা মুখ ভেংচি দেয়, একে অপরকে খামচি মারে। সে এক বিশাল হট্টগোল। এমন নাচ, গান ব্যাঙরা কোনো দিন দেখেনি। তারা খুব মনোযোগ ও কৌতূহল নিয়ে বানরদের নাচ, গান দেখতে লাগল। কোনো কোনো ব্যাঙ আবার বানরদের সেসব নাচ, গানের অনুকরণ করে নিজেদের মধ্যে মহড়া চালাল। এভাবেই ব্যাঙরা নাচ, গান শিখে গেল।
একদিন ব্যাঙের নবাব ঘ্যাঙর সিংয়ের বড় ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠানে বিশাল এক নাচ, গানের পার্টি হলো। নবাবের তিন ছেলে তাদের সঙ্গী, সাথী, বন্ধুবান্ধবসহ সমানে নাচছে তো নাচছেই। তাদের আনন্দ কিছুতেই বাঁধ মানছে না।
এমন সময় মেঘ জমে আকাশ কালো হয়ে এল। আকাশের সেই মেঘগুলো গুড়ুম, গুড়ুম শব্দে ডেকে উঠল। একটু পরেই মেঘ থেকে মুষলধারে বৃষ্টি পড়তে লাগল। তরুণ ব্যাঙদের আনন্দ তখন দেখে কে! বিশেষ করে ব্যাঙ নবাবের ছোট ছেলে তো আনন্দে আত্মহারা হয়ে ঘ্যাঙর ঘ্যাঙর শব্দে গান গাইতে লাগল। সেই সঙ্গে চলল উদ্দাম নাচ। কিন্তু বিধিবাম! নাচতে নাচতে সে জলাভূমির কাদা জলে পিছলে পড়ল। আর তার বাম পা মড়াৎ করে ভেঙে গেল। সে তীব্র ব্যথায় চেঁচাতে লাগল।
ব্যাঙের নবাব তখন বাকি ছেলেদের ধমকে রাজপ্রাসাদে ফেরত পাঠালেন। আর ছোট ছেলেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে পাঠালেন হাসপাতালে। তিনি তার রাজ্যে নাচ, গান নিষিদ্ধ ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করলেন। কিন্তু তা হলে হবে কি? পুরো ব্যাঙ জাতির ছানা-পোনাদের মধ্যে ততক্ষণে নাচ, গান নেশা আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। আকাশ মেঘলা হয়ে গুড়ুম, গুড়ুম শব্দে ডেকে উঠতেই তারা গোপনে বনে, বাদারে, ডোবা নালায় ঘ্যাঙর ঘ্যাঙর শব্দে গান গেয়ে ওঠে। সেই সঙ্গে চলে নানা স্টাইলের উদ্দাম নাচ। আহা! কী আনন্দ আকাশে, বাতাসে।