ঢাকা ৫ মাঘ ১৪৩১, রোববার, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫

গোপাল ভাঁড়ের মজার গল্প

প্রকাশ: ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ০১:২১ পিএম
আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ০১:২২ পিএম
গোপাল ভাঁড়ের মজার গল্প
আঁকা মাসুম

১. গোপাল একবার গ্রামের মোড়ল হয়েছিল। তো একদিন ভোরবেলায় এক লোক এসে ডাকতে লাগল, গোপাল? গোপাল?
গোপাল ভাঁড় কোনো উত্তর না দিয়ে শুয়েই রইল। এবার লোকটা চিৎকার করে ডাকতে লাগল, মোড়ল সাহেব, মোড়ল সাহেব। 
এবারও গোপাল কোনো কথা না বলে মটকা মেরে শুয়ে রইল। গোপালের বউ ছুটে এসে বলল, কী ব্যাপার, লোকটা মোড়ল সাহেব বলে চেঁচিয়ে পাড়া মাত করছে, তুমি কিছুই বলছ না!
গোপাল কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। তারপর বলল, আহা, ডাকুক না কিছুক্ষণ, পাড়ার লোকজন জানুক আমি মোড়ল হয়েছি।

 

২. একজন বৈরাগী গোপালকে চিনত না। সে গোপালের সামনে এসে বলল, ঈশ্বরের সেবার জন্য আপনি কিছু চাঁদা দেবেন?
গোপাল কিছু না বলে বৈরাগীকে একটা মুদ্রা দিল।
মুদ্রাটা পেয়ে বৈরাগী খুশি হয়ে পথ হাঁটতে লাগল। কিছুটা যেতেই গোপাল তাকে ডাকল, ও বৈরাগী, একবারটি আমার কাছে এসো।
বৈরাগী খুশিমনে তার কাছে আসলে গোপাল বলল, তোমার বয়স কত?
— আজ্ঞে ১৮।
— আমার বয়স ৫৫।
— তাতে কী হলো?
— এইমাত্র ঈশ্বরের সেবার জন্য যে একটা টাকা নিয়েছ সেটা ফেরত দাও, কারণ তোমার আগেই আমি স্বর্গে যাব এবং ঈশ্বরের সেবার সুবর্ণ সুযোগ পাব।

 

৩. গোপালের তখন বয়স হয়েছে। চোখে ভালো দেখতে পারে না। রাজা কৃষ্ণচন্দ্র বললেন, কী গোপাল, গতকাল আসোনি কেন?
—আজ্ঞে চোখে সমস্যা হয়েছে। সবকিছু দুটো দেখি। কাল এসেছিলাম। এসে দেখি দুটো দরবার। কোনটায় ঢুকব, ভাবতে ভাবতেই…।
—এ তো তোমার জন্য ভালোই হলো। তুমি বড়লোক হয়ে গেলে। আগে দেখতে তোমার একটা বলদ, এখন দেখবে দুটো বলদ।
—ঠিকই বলেছেন মহারাজ। আগে দেখতাম আপনার দুটো পা, এখন দেখছি চারটা পা…ঠিক আমার বলদের মতোই!

 

৪. বেড়াতে বেরিয়ে রাজা কৃষ্ণচন্দ্র একবার গোপালের হাত চেপে ধরে আস্তে আস্তে মোচড়াতে লাগলেন।
গোপাল: আমার হাত নির্দোষ, ওকে রেহাই দিন।
রাজা: জোর করে ছাড়িয়ে নাও।
গোপাল: সেটা বেয়াদবি হবে।
রাজা: উহু, তাহলে হাত ছাড়ব না।
গোপাল তখন রাম নাম জপতে থাকলেন।
রাজা: এতে কি আর কাজ হবে? দাওয়াই কোথায়?
গোপাল: রাম নাম জপাই তো মোক্ষম দাওয়াই।
রাজা: মানে?
গোপাল: পিতামহ, প্রপিতামহের আমল থেকে শুনে আসছি, রাম নাম জপলে ভূত ছাড়ে।
রাজা গোপালের হাত ছেড়ে দিলেন সঙ্গে সঙ্গে।

 

৫. গোপাল যাচ্ছে শ্বশুরবাড়ি। মাথার ওপর গনগনে সূর্য। গরমে অতিষ্ঠ হয়ে গোপাল এক গাছের নিচে দাঁড়াল। বেশি গরম লাগায় ফতুয়াটা খুলে পাশে রেখে একটু আয়েশ করে বসল। বিশ্রাম নিতে নিতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়ল, নিজেই জানে না।
ঘুম যখন ভাঙল গোপাল দেখে, তার ফতুয়াটা চুরি হয়ে গেছে। হায় হায়! এখন কী হবে! খালি গায়ে তো আর শ্বশুরবাড়ি ওঠা যায় না। কী আর করা। সে হাঁটতে হাঁটতে মনে মনে বলতে লাগল, হে প্রভু, রাস্তায় অন্তত ১০টি মুদ্রা যেন কুড়িয়ে পাই। তাহলে পাঁচ মুদ্রায় আমার জন্য একটা ভালো ফতুয়া কিনতে পারি। আর তোমার জন্য পাঁচটি মুদ্রা দান করতে পারি।
আর কী আশ্চর্য! ভাবতে ভাবতেই দেখে, রাস্তার ধারে কয়েকটি মুদ্রা পড়ে আছে। খুশি হয়ে উঠল গোপাল, গুনে দেখে পাঁচটি মুদ্রা! গোপাল স্বগত বলে উঠল, হে প্রভু, আমাকে তোমার বিশ্বাস হলো না, নিজের ভাগটা আগেই রেখে দিলে?

 

৬. রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের দরবারে রাজবৈদ্য নিয়োগ দেওয়া হবে। দেশ-দেশান্তর থেকে চিকিৎসকরা এলেন যোগ দিতে। গোপালকে রাজা দায়িত্ব দিলেন চিকিৎসক নির্বাচনের। গোপাল খুশিমনে বসলেন তাদের মেধা পরীক্ষায়।
প্রথম চিকিৎসককে গোপাল বললেন, আপনার চিকিৎসালয়ের আশপাশে ভূতের উপদ্রব আছে?
—জি আছে। প্রচুর ভূত। ওদের অত্যাচারে ঠিকমতো চিকিৎসা পর্যন্ত করতে পারি না। দিন দিন ওদের সংখ্যা বাড়ছেই।
এবার দ্বিতীয় চিকিৎসকের পালা।
—আপনার চিকিৎসালয়ের আশপাশে ভূতের উপদ্রব কেমন?
—আশ্চর্য, আপনি জানলেন কীভাবে! ওদের জ্বালায় আমি অস্থির। দিন দিন ওদের সংখ্যা বাড়ছেই।
এভাবে দেখা গেল সবার চিকিৎসালয়ের আশপাশেই ভূতের উপদ্রব আছে। একজনকে শুধু পাওয়া গেল, যার কোনো ভূতসংক্রান্ত ঝামেলা নেই। গোপাল তাকে রাজবৈদ্য নিয়োগ দিলেন। পরে দেখা গেল এই চিকিৎসকই সেরা। রাজাও খুশি। 
একদিন রাজা ধরলেন গোপালকে। গোপাল বললেন, আজ্ঞে মহারাজ, দেখুন, সবার চিকিৎসাকেন্দ্রের আশপাশে ভূতের উপদ্রব শুধু বাড়ছে আর বাড়ছে। এর অর্থ হলো, তাদের রোগী মরে আর ভূতের সংখ্যা বাড়ে। আর যাকে নিলাম, তার ওখানে কোনো ভূতের উপদ্রব নেই। অর্থাৎ তার রোগী একজনও মরেনি।

সবচেয়ে বড় গাছ জেনারেল শেরম্যান

প্রকাশ: ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:১১ পিএম
সবচেয়ে বড় গাছ জেনারেল শেরম্যান
সংগৃহীত

তোমরা তো অনেক গাছ দেখেছ। আজ তোমাদের এমন একটা গাছের কথা শোনাব, যেটা আয়তন অনুসারে এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় জীবিত একক-কাণ্ড বিশিষ্ট গাছ। গাছটির বয়স আনুমানিক ২,৩০০ থেকে ২,৭০০ বছর। 
গাছটির নাম জেনারেল শেরম্যান। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের টুলারে কাউন্টির সেকোইয়া জাতীয় উদ্যানের জায়ান্ট ফরেস্টে তার অবস্থান। এটি সেকোইয়া (সেকোইয়াডেনড্রন জায়গান্টিয়াম) জাতের গাছ। 
জেনারেল শেরম্যানের উচ্চতা ২৭৫ ফুট। গুঁড়ির গড় বেড় ২৫ ফুট থেকে সর্বোচ্চ ৩৫ ফুট। গুঁড়িতে কাঠ আছে ৫২ হাজার ৫০০ ঘনফুট। গাছটির গুঁড়ির আনুমানিক ওজন ২ হাজার ১০৫ টন। মাটির নিচে কয়েক শ ফুট এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে আছে জেনারেল শেরম্যানের মূল। ২০০৬ সালে জেনারেল শেরম্যানের সবচেয়ে বড় ডালটি ভেঙে পড়েছিল। ডালটি ছিল ৯৮ ফুট লম্বা এবং পরিধি ছিল সাত ফুট। বিজ্ঞানীরা বলেছিলেন, পাল্টে যেতে থাকা আবহাওয়াই এর জন্য দায়ী।
এবার বলছি গাছটির নামকরণের ইতিহাস। আমেরিকার গৃহযুদ্ধের সময় একজন সেনাপতি ছিলেন। তার নাম জেনারেল উইলিয়াম টেকুমসেহ শেরম্যানের। তার নামে এই গাছটির নাম রাখা হয় জেনারেল শেরম্যান। সরকারি বিবরণ মতে, ১৮৭৯ সালে প্রকৃতিবিদ জেমস ওলভারটন গাছটির নামকরণ করেছিলেন, যিনি শেরম্যানের অধীনে নবম ইন্ডিয়ানা ক্যাভালরিতে লেফটেন্যান্ট হিসেবে কাজ করেছিলেন।
২০২১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর গাছটি একবার হুমকির মুখে পড়েছিল। সিকোইয়া জাতীয় উদ্যানের কেএনপি কমপ্লেক্সে অগ্নিকাণ্ডে গাছটি পুড়ে যাওয়ার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। উদ্যান ও দমকল কর্মীরা গাছের গোড়াটিকে একটি প্রতিরক্ষামূলক ফয়েলে মুড়ে ফেলেন, যা সাধারণত কাঠামোগুলোতে ব্যবহৃত হয়। দাবানল জেনারেল শেরম্যান গাছের কাছাকাছি চলে এলেও শেষ পর্যন্ত গাছটিকে এড়িয়ে যায়। বেঁচে যায় জেনারেল শেরম্যান।
জেনারেল শেরম্যানকে দেখতে হলে যেতে হবে আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ার ‘সিয়েরা নেভাদা’ পর্বতাঞ্চলে। সেখানে পাহাড়ের কোলে প্রায় ১২ লাখ একর জায়গাজুড়ে আছে সেকোইয়া ন্যাশনাল ফরেস্ট। অরণ্য ছাড়াও এখানে দেখার আছে কিংস ক্যানিয়ন, মোরো রক, ক্রিস্টাল কেভ। জায়গাটি সারাক্ষণ কুয়াশায় ডুবে থাকে। এই সেকোইয়া ন্যাশনাল ফরেস্টে আছে সুপ্রাচীন সেকোইয়া গাছের ৩৮টি ঝাড়। ঝাড়গুলোতে আছে প্রায় ১০০টির বেশি দৈত্যাকৃতি গাছ। কোনো গাছেরই বয়স দেড় হাজার বছরের কম নয়। পর্যটকরা সেকোইয়া ন্যাশনাল ফরেস্টে আসেন এই প্রাচীন সেকোইয়া গাছগুলোরই আকর্ষণে। গাছগুলোর কাছে এসে তারা বিস্মিত হয়ে যান। এরকম গাছ তারা আগে দেখেননি। দেড়-দুই হাজার বছর ধরে দাঁড়িয়ে থাকা গাছগুলো কত ইতিহাসের সাক্ষী, তা ভেবে বুঝি শিহরিত হন। তবে সেকোইয়া ন্যাশনাল ফরেস্টের সব আকর্ষণের সেরা আকর্ষণ এখনো ‘জেনারেল শেরম্যান’। ফরেস্টে প্রবেশ করেই পর্যটকরা খোঁজ করেন জেনারেলের। ফরেস্টে থাকা সেকোইয়া গাছদের সেনাপতি শেরম্যানকে চাক্ষুষ দেখে সম্মোহিত হয়ে যান পর্যটকরা। মিনিট খানেক চোখের পাতা পড়ে না।

দুরন্ত ছড়া: খোকাখুকুর নাচ

প্রকাশ: ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:০৭ পিএম
দুরন্ত ছড়া: খোকাখুকুর নাচ
এঁকেছে রাফসান

খোকাখুকুর নাচ
নকুল শর্ম্মা

খোকাখুকু নাচছে তা ধিন
গাইছে সুখে গান,
মিষ্টি মুখের হাসি দেখে
যায় জুড়িয়ে প্রাণ।

ময়না টিয়ে গয়না পরে
অবাক চোখে চায়, 
খোকার পায়ে রঙিন জুতা
নূপুর খুকুর পায়।

ময়না বলে শুনরে টিয়ে
খুকুর নূপুর দেখ,
হিংসে করে তুই রে আবার
করিস নে প্যাঁকপ্যাঁক। 

টিয়ে বলে আরে ময়না
তুইতো একটা বোকা,
খোকাখুকুর নাচন দেখে
খাসনে গিলে পোকা।

 


ছড়ার পাঠশালা
এনাম আনন্দ 

সেদিন দেখলাম শেয়াল পণ্ডিত 
পাঠশালাতে পড়ায়
পাঠশালাটা উৎসবমুখর 
মজার মজার ছড়ায়।

রঙিন ছড়া-সবুজ ছড়া 
হলুদ-সাদা-নীল
পণ্ডিত মশাই খুব দয়ালু 
ইয়া বড় দিল।

ছড়া পড়ায় মাথা ঝাঁকায়
একটি ছড়া কালো
সেই ছড়াটি শেয়াল পণ্ডিত
পড়ান ভীষণ ভালো।

গলা ছেড়ে পড়ে তারা
হুক্কাহুয়া হুক্কা
আম ফল মিঠা জাম ফল মিঠা
তেঁতুল ভীষণ চুক্কা।

 


ছড়া প্রেমিক ঘোড়া
কোমল দাস

বল্টু জানিস, দাদার ঘোড়া
অনেক কথা বলে,
ভীষণ তেজি, দেখতে দারুণ
টগবগিয়ে চলে।

মাঝে মাঝেই বলতে থাকে
ছড়া ভালোবাসি,
লোকের মতোই হাসতে পারে
খুব সুন্দর হাসি।

বলতে পারে অনেক ছড়া
আধো আধো গলা,
কেন আমায় বললিরে তুই
বাদ দে মিথ্যে বলা?

বলছি না ভাই মিথ্যে কথা
নয় রে এটা ধাঁধা,
কথা বলা খেলনা ঘোড়াই
কাল কিনেছেন দাদা।

রাফার আঁকা পতাকা

প্রকাশ: ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:০৪ পিএম
রাফার আঁকা পতাকা
আঁকা মাসুম

বাবা-মায়ের সঙ্গে জাপানে বেড়াতে এসেছে রাফা। এখানে ওর বড় মামা থাকেন। রাফা মামাকে জাপানি মামা বলে ডাকে। এখানে এসে রাফা অনেক খুশি। ওকে পেয়ে সাফাও খুশি। সাফা হলো রাফার মামাতো বোন।
সাফা স্কুলে যাচ্ছে। স্কুলটা কাছে। তাই একাই হেঁটে স্কুলে যায় সাফা।
সাফা বলল, ‘চলো রাফা, আমাদের স্কুল থেকে ঘুরে আসি। খুব মজা হবে।’ 
রাফা রাজি হয়ে গেল। দুই বোন স্কুলে যাচ্ছে।
স্কুলে ঢোকার সময় হেডস্যার ডাকলেন। বললেন, ‘সাফা, তোমার সঙ্গে কে?’
সাফা বলল, ‘ওর নাম রাফা। বাংলাদেশ থেকে এসেছে। আমার বোন।’
স্যার বললেন, ‘তাহলে তো রাফা আমাদের অতিথি।’
তারপর স্যার রাফার হাতে একটি ফুল দিয়ে স্বাগত জানালেন। রাফা খুব খুশি হলো।
স্কুলে ঢুকে রাফা অবাক! ওর বয়সী সব শিক্ষার্থী মাঠ পরিষ্কার করছে। শিক্ষকরাও ওদের সঙ্গে কাজ করছেন। কেউ কেউ ফুটবল খেলছে। মাঠের চারপাশে বাগান। সেই বাগান রঙিন রঙিন ফুল ফুটে আছে। কেউ আবার ফুল গাছে পানি দিচ্ছে। সাফাও কাজে লেগে গেল।
তখন রাফা ভাবল, তারও কিছু করা উচিত। কিন্তু কী করবে?
একটু পর ঘণ্টা বাজল, টুন টুন টুন। সবাই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে ক্লাসে ঢুকল। স্যার এসে বললেন, ‘ওর নাম রাফা। বাংলাদেশ থেকে এসেছে। রাফা আজ আমাদের অতিথি।’
স্যারের কথা শেষে সবাই উঠে দাঁড়াল। ওরা বলল, ‘স্বাগতম রাফা।’
রাফা দাঁড়িয়ে বলল, ‘তোমাদের ধন্যবাদ।’
স্কুলে এসে রাফার খুব আনন্দ হচ্ছে। কেউ চকলেট উপহার দিচ্ছে। কেউ দিচ্ছে পুতুল। কেউ আবার গল্পের বই দিচ্ছে। সবার ব্যবহারে ও বারবার চমকে যাচ্ছে।
তাই ওকে এমন কিছু করতে হবে যা দেখে সবাই চমকে যাবে। বাংলাদেশকে চিনবে। কিন্তু কী করবে রাফা? 
স্কুলটা রাফার বেশ ভালো লেগেছে। ক্লাসে বসে ঘুমালেও কেউ কিছু বলছে না। এটাই নাকি নিয়ম!
কেউ চিপস খাচ্ছে। কেউ চকলেট খাচ্ছে। খাওয়া শেষে প্যাকেটগুলো ডাস্টবিনে ফেলে আসছে।
স্কুলের সব শিক্ষার্থী বড় হলরুমে বসে আছে। স্যাররাও ওদের সঙ্গে বসে আছেন। এখন বিশেষ ক্লাস হবে। সেখানে যে খুশি অংশ নিতে পারবে।
বিশেষ ক্লাসে অনেকেই অংশ নিচ্ছে। স্যার নাম ধরে ডাকলে একজন করে উঠে যাচ্ছে। কেউ গান গাইছে। কেউ কবিতা আবৃত্তি করছে। কেউ নাচ করছে। কেউ কৌতুক বলছে। আর সবাই করতালি দিয়ে উৎসাহ দিচ্ছে।
একজন গিয়ে সাদা বোর্ডে একটি ছবি আঁকল। চারপাশে সাদা, মাঝখানে লাল বৃত্ত। এটা জাপানের পতাকা। সবাই উঠে দাঁড়িয়ে পতাকাকে সম্মান জানাল।
এবার স্যার রাফাকে ডাকলেন। রাফা কী করবে বুঝতে পারছে না। ভয়ে ভয়ে এগিয়ে যায় স্টেজে। পেছনে সাদা বোর্ডে লাল বৃত্তের জাপানি পতাকা।
রাফা টেবিল থেকে সবুজ রং নিল। লাল বৃত্তের চারপাশ সবুজে রাঙিয়ে দিল। সঙ্গে সঙ্গে ভিড় থেকে উঠে দাঁড়াল সাফা। ওর দিকে তাকিয়ে আছে সবাই। কেউ কিছু বুঝতে পারে না।
সাফা চিৎকার করে বলল, ‘ওটা আমার দেশের পতাকা। আমি বাংলাদেশকে ভালোবাসি।’
তখন সবাই উঠে দাঁড়াল। সম্মান জানাল বাংলাদেশের পতাকাকে।
সাদা বোর্ডে আঁকা পতাকাতে চুমু দিল রাফা। ওর মুখে ও কপালে লাল-সবুজ পতাকার রং লেগে গেছে। রাফা খুব খুব খুশি।

হিংস্র প্রাণী বাঘ

প্রকাশ: ১২ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:০০ এএম
হিংস্র প্রাণী বাঘ
সংগৃহীত

বাঘের নাম শুনলেই আমাদের চোখে ভাসে ভয়ংকর সুন্দর এক প্রাণী। গায়ে ডোরাকাটা দাগ। মুখে লোম। হিংস্র দাঁত। ভয়ংকর হিংস্র প্রাণী হিসেবেই আমরা বাঘকে চিনি। বাংলাদেশের জাতীয় পশুও এটাই। যাকে বলা হয় রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবনে এই ধরনের বাঘের দেখা মেলে। ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট হলো সমুদ্র উপকূলবর্তী বন। যে বন সমুদ্রের জোয়ারের নোনা পানিতে ভেজে। পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট হলো সুন্দরবন। আজ বাঘ সম্পর্কে এমন কিছু তথ্য জানাব যা আগে তোমরা শুনোনি।
বাঘের প্রজাতি: তোমরা কি জানো পৃথিবীতে মোট ৯ ধরনের বাঘ আছে। তার মধ্যে আমাদের সুন্দরবনের বাঘও একটি উপ-প্রজাতি। ৯ ধরনের বাঘের মধ্যে বর্তমানে পৃথিবীতে বেঁচে আছে মোট ছয় ধরনের বাঘ। বাকি তিন উপ-প্রজাতি বিলুপ্ত। বেঙ্গল টাইগার, সাইবেরিয়ান টাইগার, সুমাত্রান টাইগার, ইন্দোচাইনিজ টাইগার, মালয় টাইগার ও দক্ষিণ চীনা বাঘ পৃথিবীতে দেখতে পাওয়া যায়। এদের মধ্যে সবচেয়ে বড় বাঘ হলো সাইবেরিয়ান বাঘ, যারা সুপরিচিত বেঙ্গল টাইগারের চেয়েও তিনগুণ বড় হয়ে থাকে!
বাঘ আসলে বিড়াল: বাঘ এক ধরনের বৃহৎ আকৃতির বিড়াল। এরা বৃহত্তম বন্য বিড়াল। এই বিড়াল ১০টি ১০ বছরের মানুষের বাচ্চার সমান হয়ে থাকে ওজনে। একটি প্রাপ্তবয়স্ক বাঘের ওজন ৩৬৩ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে।
বাঘের গর্জন: অন্যান্য প্রাণীদের মতো বাঘও তার অন্য সাথীদের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য গর্জন করে। পশুদের মধ্যে বাঘের গর্জন অত্যন্ত জোরালো হয়ে থাকে। বাঘের গর্জন তিন কিলোমিটার দূর থেকে শুনতে পাওয়া যায়।
ডোরাকাটা দাগ: বাঘের নাম শুনলেই আমাদের চোখে ভাসে ডোরাকাটা নকশার একটা প্রাণী। বাঘের গায়ে ডোরাকাটা নকশা বা দাগ দেখেই তাকে চেনা যায়। তবে বাঘের গায়ের এই ডোরাকাটা দাগ অনন্য। এক বাঘের গায়ের দাগের সঙ্গে অন্য বাঘের দাগ বা নকশা মিলে না। অনেকটা মানুষের আঙুলের মতো। প্রত্যেক বাঘের নিজস্ব স্বতন্ত্র ডোরাকাটা দাগ আছে।
বাঘের পা: বাঘের পেছনের পা সামনের পায়ের চেয়ে লম্বা হয়ে থাকে। যার ফলে বাঘ শিকার করার সময় বিশেষ সুবিধা পায়। লাফ দেওয়ার সময় বাঘ একবারে ২০ থেকে ৩০ ফুট পাড়ি দিতে পারে।
দুরন্ত সাঁতারু: আগেই বলেছি বাঘ বিড়াল প্রজাতির প্রাণী। বিড়াল প্রজাতির অন্য প্রাণীরা পানিকে এড়িয়ে চললেও বাঘ পানিতে থাকতে খুব পছন্দ করে। বাঘ দীর্ঘ নদী সাঁতরে পাড়ি দিতে পারে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা পানিতে থাকতে পারে বাঘ।
রাতের শিকারি: বাঘ সচরাচর রাতেই বেশি শিকারে বের হয়। এরা রাতের আঁধারে আমাদের চেয়ে ছয়গুণ বেশি দেখতে পারে। মহিষ, হরিণ, জেব্রার মতো প্রাণীদের বাঘ শিকার করে। একবার শিকারে বাঘ ৪০ কেজির মতো মাংস খেতে পারে!

দুরন্ত ছড়া: নতুন বছরের আনন্দ ও অন্যান্য

প্রকাশ: ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:০০ এএম
দুরন্ত ছড়া: নতুন বছরের আনন্দ ও অন্যান্য
ছবি মাসুম

নতুন বছরের আনন্দ 
মুহাম্মদ রফিক ইসলাম 

 

কী আনন্দ মনের মাঝে
নতুন বছর এল, 
নতুন ভোরে নতুন সূর্য 
নতুন আলো পেল।

পুবের আকাশ রক্তরাঙা
নতুন আলোর মেলা,
নতুন বায়ে আলত দোলা 
ধূসর মেঘের ভেলা।

নতুন শিশির নতুন মুক্তো
গাছের পাতা ফুলে,
নতুন অলির গুনগুনানি
নতুন মধুর মূলে।

গাছে গাছে পাখ-পাখালি 
নতুনের গান গেয়ে, 
সোনা ভোরে পাখনা মেলে
নতুন আকাশ পেয়ে।

 

 


নতুন পাখি
শারমিন নাহার ঝর্ণা

 

আমরা নতুন ছোট্ট পাখি
নতুন সুরে ডাকি,
আমরা নতুন ছোট্ট শিশু
মিলেমিশে থাকি।

আমরা নতুন ছোট্ট পাখি
নাচি ডালে ডালে,
আমরা নতুন পুষ্প কলি
দুলি তালে তালে।

আমরা নতুন ছোট্ট পাখি
নীল আকাশে উড়ি,
আমরা নতুন প্রজাপতি
মনের সুখে ঘুরি।

 

 

শীতের ছুটি
সোহান মেহরান 

 

আঁকাবাঁকা পথ বেয়ে ঝিকঝিক গাড়িতে-
শীতের ছুটিতে রানা গেছে মামাবাড়িতে।
সুনসান চারিদিক নেই কোনো ভাবনা, 
শহরের গলি জুড়ে এই সুখ পাব না।

ছেলেপেলে জড়ো হয় নদী চরে বিকেলে,
কানামাছি, গোল্লাছুট আরও কত কী খেলে। 
ঘরের কানাচে জ্বলে মিটিমিটি জোনাকি,
দলবেঁধে করে তারা রাত জেগে সো নাকি!

সরিষার খেতে দেখ ম-ম সুরভি,
হলুদাভ রং মেখে মনপ্রাণ জুড়োবি।
পিঠাপুলি মিঠা খুব, রানা ভাগ বসাল,
খেজুরের রস খেয়ে মুখ করে রসাল।

মামা-মামি খুশি আজ খুশি নানা-নানিও,
গুড়-মুড়ি দই খই আরও স্যুপ পানীয়। 
রোজ কত খানাদানা করে মামি তৈরি,
এত সুখ রেখে যেতে মন হয় বৈরী। 

ছুটি শেষ, এইবার যেতে হবে শহরে, 
কত ব্যথা উঁকি দেয় দুচোখের নহরে।
ঘরপানে ফেরে রানা সালামটা জানিয়ে,
শহুরে জীবন ফের নিতে হবে মানিয়ে।