ঈদের আগে ৫৫-৬০ টাকা কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হলেও সপ্তাহের ব্যবধানে ১০ টাকা বেড়ে ৬৫-৭০ টাকা কেজি হয়ে গেছে। ভরা মৌসুমেও কমছে না দাম। গত বছরের এই সময়ে পেঁয়াজ ৩০-৪০ টাকা কেজি ছিল। বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ৭৫-১১৬ শতাংশ। বিক্রেতারা বলছেন, দ্বিগুণের বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। একই দশা আলুর। গত বছরের এ সময়ে ২৮-৩০ টাকা বিক্রি হলেও বর্তমানে ৫০-৫৫ টাকায় ঠেকেছে। বছরের ব্যবধানে ৮০-৮৩ শতাংশ বেড়েছে। ঈদের পর মুরগি, গরুর মাংসের দাম কমেছে। তবে ডিমের ডজনে ১০ টাকা বেড়ে ১৩০ টাকা হয়ে গেছে। ঈদের পর বেগুনসহ বিভিন্ন সবজির দাম কেজিতে ১০-২০ টাকা বেড়ে গেছে। সরকার চালের দাম কমানোর উদ্যোগ নিলেও কমেনি এক পয়সাও।
বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) রাজধানীর টাউন হল, কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঈদের পর সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে ভিড় বাড়তে শুরু করেছে। এর প্রভাবে দামও বাড়ছে। পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৫-১০ টাকা বেড়ে ৬৫-৭০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। খুচরা ব্যবসায়ীদের তথ্য যাচাই করতে সরকারি প্রতিষ্ঠান টিসিবির ওয়েবসাইটেও দেখা গেছে, গতকাল ৬৫-৭০ কেজি পেঁয়াজ। আলুর কেজি ছিল ২৮-৩০ টাকা। বর্তমানে ভরা মৌসুমেও সেই আলু ৫০-৫৫ টাকা কেজি। সরকার বুধবার বোতলজাত তেলের লিটারে ৪ টাকা বাড়িয়ে ১৬৭ টাকা নির্ধারণ করলেও আগের দরেই ১৬৩ টাকা বিক্রি হচ্ছে। মিলগেট থেকে নতুন রেটের তেল না আসা পর্যন্ত এই দরেই বিক্রি হবে। আগের মতোই আদার কেজি ২০০-২২০ টাকা, আমদানি করা রসুন ২০০-২২০ টাকা ও দেশি রসুন ১৩০-১৫০ টাকা কেজি।
এক পয়সাও কমেনি চালের দাম
সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিলেও কমেনি চালের দাম। রমজান মাসে কেজিতে ৫-৬ টাকা বাড়ার পর আর কমেনি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে ২১ ফেব্রুয়ারি খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে চালের বস্তায় জাত ও মূল্যসহ ৭ নির্দেশনা দেওয়া হয়; যা ১৪ এপ্রিল থেকে বাস্তবায়ন শুরু হওয়ার কথা ছিল। সরেজমিনে দেখা যায়, কোনো দোকানে নতুন বস্তার চাল আসেনি। কারওয়ান বাজারের হাজি রাইস এজেন্সির মালিক মাঈন উদ্দিন বলেন, আগের বস্তাতেই চাল বিক্রি করা হচ্ছে। কোনো দাম কমেনি। প্রতি কেজি নাজিরশাইল মানভেদে ৭০-৮০ টাকা, মিনিকেট ৭২-৭৫ টাকা, আটাশ চাল ৫৫-৫৮ টাকা ও মোটা চাল ৪৮-৫২ টাকা কেজি। অন্য খুচরা চাল বিক্রেতারাও বলছেন, কমেনি চালের দাম। নামিদামি ভালো মানের পোলাওয়ের প্যাকেট চাল ১৭০-১৮০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও বস্তার পোলাওয়ের চাল ১৪০-১৪৫ টাকা কেজি।
গরু ও খাসির মাংসের বাজারে দেখা যায়, বর্তমানে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭৫০ টাকা বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। যা ঈদে ছিল ৮০০-৮২০ টাকা পর্যন্ত। ঈদের সময় ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হওয়া খাসির মাংস বর্তমানে প্রতি কেজি ১ হাজার ১০০ টাকা। গতকাল ব্রয়লার মুরগি ২২০-২৩০ টাকা, সোনালি মুরগি ৩৩০-৩৪০ টাকা ও দেশি মুরগি ৬৮০ দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে মাছের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
ঈদের পর সবজির দাম কমলেও সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ১০-২০ টাকা বেড়ে গেছে। আগে কম দামে বিক্রি হলেও গতকাল বিভিন্ন বাজারে দেখা গেছে টমেটোর কেজি ৫০-৭০ টাকা, করলা ৬০-৮০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ৪০-৬০ টাকা, শিম ৪০ টাকা, পেঁপে ৪০-৫০ টাকা, মিষ্টিকুমড়া ৩০-৪০ টাকা, শসা ৪০-৬০ টাকা, শজনে ডাঁটা ৮০-১০০ টাকা, বেগুন ৬০-৮০ টাকা, পটোল ৫০-৬০ টাকা, গাজর ৫০ টাকা এবং কাঁচা মরিচ ১২০-১৪০ টাকা।
চট্টগ্রামে ঈদের পরই ডিমের দাম বেড়েছে দুই দফা
চাহিদা কম থাকা ও ক্রেতাসংকটে রোজার মাসে নিম্নমুখী ছিল ডিমের বাজার। কিন্তু ঈদ শেষ হতেই এখন পর্যন্ত পণ্যটিতে দুই দফা দাম বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা। মার্চ মাসের শুরুতে পাইকারিতে প্রতি পিস ডিম বিক্রি হয় ৯ টাকা ৩০ পয়সায়। পরবর্তী সময়ে ক্রেতাসংকটে রোজার মাসে দাম আরও কমে প্রতি পিস ডিম বিক্রি হয় ৮ টাকা ৬০ পয়সায়। গত ১১ এপ্রিল ঈদ উদযাপনের পরই বাড়তে থাকে পণ্যটির দাম। গত ১৫ এপ্রিল প্রতি পিস ডিম বিক্রি হয় ৯ টাকা ৪০ পয়সায়। বর্তমানে প্রতি পিস ডিম বিক্রি হচ্ছে ৯ টাকা ৫০ পয়সায়।
এদিকে ঈদের আগে ক্রেতাসংকটে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে নিম্নমুখী ছিল পেঁয়াজের বাজার। কিন্তু ঈদ শেষ হতেই আবারও ঊর্ধ্বমুখী। বর্তমানে খাতুনগঞ্জে প্রতি কেজি হালি পেঁয়াজ মানভেদে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অপরদিকে ভারতীয় পেঁয়াজ কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়।