বাসাবাড়িসহ হোটেলেও বিভিন্ন ধরনের মাংসের তরকারির স্বাদ বাড়াতে মসলাজাতীয় ডাঁটা চুইঝালের জুড়ি নেই। দেশের দক্ষিণাঞ্চলসহ বিভিন্ন জেলায় চুইঝালের ব্যবহার অনেক আগে থেকে হলেও উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোয় এর তেমন ব্যবহার ছিল না। তবে বর্তমানে এ অঞ্চলেও চুইঝালের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। ভোজনরসিকদের মাঝে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এটি। খরচের তুলনায় লাভ বেশি হওয়ায় ওষুধি গুণসম্পন্ন মসলাজাতীয় চুইঝাল চাষে আগ্রহও বাড়ছে কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীর কৃষকদের। এতে উপজেলাটির অনেকেই স্বাবলম্বী হচ্ছেন।
খাবারের স্বাদ বাড়ানোর পাশাপাশি ক্যানসার, হৃদরোগ, ক্ষুধামান্দ্য, গ্যাস্ট্রিক, অ্যাজমা, হাঁপানিসহ বিভিন্ন রোগে চুইঝালের উপকারিতা রয়েছে। ফলে দিন দিন বাড়ছে এর ব্যবহার। উত্তরাঞ্চলে তৈরি হচ্ছে এর বাণিজ্যিক ক্ষেত্র। এ ছাড়া বাড়ির আশপাশের পরিত্যক্ত জমি, সুপারির বাগানসহ বিভিন্ন গাছে পরজীবী হিসেবে বেড়ে ওঠায় তেমন কোনো উৎপাদন খরচ নেই।
উপজেলার নেওয়াশী ইউনিয়নের গোবর্ধ্বনকুটি চাকেরকুটি এলাকার হোসেন আলী সুপারি বাগানে চুইঝালের দুই শতাধিক গাছ লাগিয়েছেন। একই এলাকার মকবুল হোসেন তিন শতাধিক, মোস্তফা কামাল সাড়ে তিন, জালাল উদ্দিন দেড় শতাধিক ও মোজাফ্ফর হোসেন তার বাগানে দেড় শতাধিক জায়গায় চুইগাছ লাগিয়েছেন। ইতোমধ্যে তারা বিক্রি করতে শুরু করেছেন।
মোস্তফা কামাল বলেন, ‘চুইগাছ হুবহু পানগাছের মতো। গাছের গোড়ায় রোপণ করতে হয়। পরজীবীর মতো অন্য গাছ আঁকড়ে ধরে বড় হয়। গাছ বড় ও মোটা হলে খাবার ও বিক্রির উপযোগী হয়।’
কৃষক মকবুল হোসেন জানান, চুইঝাল চাষ করে তার সংসারে সচ্ছলতা ফিরেছে। চুই বিক্রির টাকা দিয়ে তার সংসারের যাবতীয় খরচ চলে।
জালাল উদ্দিন জানান, কয়েক বছর ধরে সুপারি বাগানে চুইঝাল চাষ করছেন। এ পর্যন্ত একটি গাছ ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছেন।
উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের নাখারগঞ্জ এলাকার রফিকুল ইসলামও চাষ করছেন চুইঝাল। সুপারি বাগানে শতাধিক গাছ লাগিয়েছেন তিনি। প্রতিবছর চুই বিক্রি করে এক থেকে দেড় লাখ টাকা আয় করেন তিনি।
চাষিরা বলছেন, যেকোনো গাছের গোড়ায় বর্ষা মৌসুমে চুইগাছ রোপণ করে মাঝে মাঝে হালকা জৈব সার ও পানি দিলেই হয়ে যায়। এক থেকে তিন বছরের মধ্যেই চুইঝাল খাওয়া কিংবা বিক্রির উপযোগী হয়। মূলত দক্ষিণাঞ্চল থেকে পাইকারি ক্রেতারা এসে এসব চুইঝাল কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। কেউ কেউ এগুলো কুরিয়ারে নিয়ে ব্যাংকে অর্থ লেনদেন করছেন। কম পুঁজিতে অল্প শ্রমে ভালো লাভ হওয়ায় এটি চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন অনেকেই, হচ্ছেন স্বাবলম্বীও। কৃষকদের তথ্যমতে, চুইগাছের আকার-আকৃতি, পরিমাপ অনুযায়ী প্রতিটি চুইগাছ ৩ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা সম্ভব।
নাগেশ্বরী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শাহরিয়ার হোসেন বলেন, ‘দক্ষিণাঞ্চলের পাশাপাশি এখন নাগেশ্বরীতেও সুপারি বাগান ও বিভিন্ন গাছে সঙ্গী ফসল হিসেবে চুইঝাল চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। শুধু গাছপালায় নয়, ঢালাওভাবে মাটিতে কিংবা মাচার মাধ্যমেও চুইঝাল চাষ করা যায়। এর বাণিজ্যিক প্রসার ঘটাতে আমরা কৃষকদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি যাতে দেশের মসলার চাহিদা অনেকাংশে পূরণ হয়, সেই লক্ষ্যে কৃষি বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে।’