কোনো কিছুতেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না পেঁয়াজের দাম। ভারত সরকার রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলেও দেশের বাজারে সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে গেছে। পেঁপেসহ সবজি স্থিতিশীল রয়েছে। তবে মরিচের দাম লাগামহীন হতে যাচ্ছে। গত সপ্তাহে ২০০ টাকা বিক্রি হলেও গতকাল ২৫০ টাকা ছাড়িয়েছে। মাছের দামও কমেনি। চিংড়ি মাছের দাম লাগামহীন হয়ে পড়েছে। নদীর চিংড়ি ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা কেজি। তবে চাষেরগুলো ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা। কোরবানি ঈদ ঘনিয়ে আসায় আদা, রসুনের দামও কমছে না। তবে মুরগির দাম কেজিতে ১০-২০ টাকা কমেছে। খেতের ধান উঠায় চালের দামও কমতে শুরু করেছে। ডিমের ডজন এখনো ১৪০-১৪৫ টাকা। তবে অলিগলিতে আরও বেশি ডিমের দাম।
বৃহস্পতিবার (৩০ মে) বিভিন্ন বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমনই চিত্র পাওয়া গেছে।
কমেনি পেঁয়াজ আলুর দাম
ভারত রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা জারি করলে হঠাৎ করে দেশে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়। কিন্তু সম্প্রতি তা প্রত্যাহার করলেও সেই ঘোষণার কোনো প্রভাব দেখা যাচ্ছে না বাজারে। দেশে প্রচুর পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে। তারপরও মোকামের বেপারিরা ইচ্ছামতো দাম আদায় করছেন।
এ ব্যাপারে কারওয়ান বাজারের সুরুজ বাণিজ্যালয়ের খলিল বলেন, ‘ভারতের ঘোষণায় কমবে না পেঁয়াজের দাম। কারণ হচ্ছে বেপারিরা আস্তে আস্তে ছাড়ছেন বাজারে।’
এর ফলে পাইকারিতেই বাড়ছে। তা ৬৫-৬৮ টাকা কেজি। সেই পেঁয়াজই বিভিন্ন বাজারে সপ্তাহের ব্যবধানে ৫ টাকা বেড়ে ৭০-৮০ টাকা কেজি বিক্রি করছেন খুচরা বিক্রেতারা।
টাউনহল বাজারের খুচরা বিক্রেতা মো. রফিক বলেন, ‘পেঁয়াজের কেজি ৭০-৮০ টাকা। বেশি দামে কেনা। তাই বেশি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে।’
কোরবানি ঈদ ঘনিয়ে আসায় মসলার মধ্যে আদা, রসুন, জিরাসহ অন্যান্য মসলার দামও কমছে না
গত সপ্তাহ থেকেই চায়না রসুনের দাম বাড়তি। কেজি ২৪০ টাকা হয়ে গেছে। দেশি রসুনও ২০০ টাকা। কোথাও ২৩০ টাকা। কারওয়ান বাজারের এরশাদ বলেন, ‘ঈদের আগে আদার দাম বেড়ে গেছে। ভারতের কেরালার আদার কেজি ২৯০-৩০০ টাকা। বার্মার আদা ২৮০ টাকা। তবে চায়না আদার দাম একটু কম ২২০-২৪০ টাকা।’
এই বাজারের আল্লাহর দান স্টোরের শাহ আলম বলেন, ‘এলাচের দাম দুই সপ্তাহ আগেই বেড়ে গেছে। ২ হাজার ৪০০ থেকে ৩ হাজার ৪০০ টাকা কেজি। জিরার দামও বেড়ে কেজি ৭৫০-৮০০ টাকা। উৎপাদন বেশি হলেও আলুর দাম কমেনি।’
টাউনহল বাজারের দেলোয়ার বলেন, ‘বর্তমানে ৫০-৫৫ টাকা কেজি। তবে গোল লাল আলুর দাম আরও বেশি ৬০-৭০ টাকা কেজি।’
কমেছে মুরগির দাম
সপ্তাহের ব্যবধানে পোলট্রি মুরগির দাম কেজিতে ১০ টাকা কমে ২০০-২১০ টাকা, সোনালির কেজি ৩৮০-৩৭০ টাকা। কারওয়ান বাজারের জনপ্রিয় ব্রয়লার হাউসের হাসান বলেন, পোলট্রির দাম কমেছে। ২০০-২১০ টাকা কেজি। সোনালির দামও কেজিতে ২০-৩০ টাকা কমে ৪৪০-৪৫০ টাকায় নেমেছে। এর ফলে দেশি মুরগির দাম কেজিতে ৭০০ থেকে কমে ৬৮০-৬৫০ টাকায় নেমেছে।
অন্য বিক্রেতারাও বলেন, মুরগির সরবরাহ বাড়তে থাকায় দাম কমছে। তবে ডিমের দাম বিভিন্ন বাজারে ১৪০-১৪৫ টাকা ডজনে স্থির হয়ে গেছে। রাজধানীর বিভিন্ন অলিগলিতে আরও বেশি দামে ১৫০-১৫৫ টাকা ডজন বিক্রেতারা নিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
কমছে চালের দাম
দেশের প্রায় এলাকায় বোরো ধান উঠতে শুরু করেছে। এর প্রভাবে ঢাকায় চালের দাম কেজিতে ২-৪ টাকা কমেছে। আগের সপ্তাহের ৭২-৭৫ মিনিকেট ৬৮-৭০ টাকায় নেমেছে। ৫৫-৬০ টাকার আটাশ ৫৩-৫৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। মোটা চাল ৪৮-৫২ টাকা কেজি। কারওয়ান বাজারের খুচরা চাল বিক্রেতা আওয়ালসহ অন্য বিক্রেতারা জানান, ‘ধান উঠতে থাকায় কমতে শুরু করেছে চালের দাম। তবে আরও কমা দরকার। এই বাজারের হাজি রাইস এজেন্সির মঈন উদ্দিনও জানান, ‘সিন্ডিকেটের কারণেই সেভাবে কমে না চালের দাম।’
কমে না মসলার দাম
কোরবানি ঈদ ঘনিয়ে আসায় বিভিন্ন বাজারে জিরাসহ বিভিন্ন মসলার দাম বাড়তির দিকে। জিরার কেজি ৭০০-৯০০ টাকা, এলাচ ৩ হাজার ২০০ থেকে ৪ হাজার ২০০ টাকা। বোতলজাত সয়াবিন তেলের লিটার ১৬৭ টাকা ও পাঁচ লিটার ৭৯০-৮১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ২ কেজি আটা ১১০-১৩০ টাকা কেজি, বেসন ১২০, খোলা চিনি ১৩০-১৪০, প্যাকেট চিনি ১৪৫ টাকা।
পেঁপের কেজি কমে ৪০-৬০ টাকা
গত সপ্তাহে পেঁপে ৮০ টাকা কেজি হলেও গতকাল ৪০-৬০ টাকায় নেমেছে। মোহাম্মদপুরের টাউন হলের মো. আলম বলেন, ‘সরবরাহ বেড়েছে। এ জন্য প্রায় সবজির দাম কমেছে। পেঁপের কেজি ৪০-৬০ টাকা।’
বিভিন্ন বাজারে দেখা গেছে টমেটোর কেজি ৪০-৫০ টাকা, করলা ৪০-৫০, ঢ্যাঁড়স ৪০, মিষ্টিকুমড়া ৩০-৪০, শসা ৪০-৬০, ঝিঙে ও ধুন্দুল ৪০-৫০, সজনে ডাঁটা ৮০-১২০, পটোল ৪০-৫০ টাকা, বেগুন ৬০-৮০ টাকা। তবে কাঁচা মরিচ কেজি ২৪০-২৬০ টাকা।
এ ব্যাপারে কারওয়ান বাজারের আল আমিন বলেন, ‘সরবরাহ কমে গেছে। তাই দাম বেশি। গত সপ্তাহে ২০০ টাকায় বিক্রি করলেও এখন ২৫০ টাকার কম না।’
স্থিতিশীল গরু, চড়া চিংড়ির দাম
গত সপ্তাহের মতো গরুর মাংস ৭৭০-৮০০ টাকা, খাসির মাংসও ১ হাজার ৫০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা কেজি বলে বিক্রেতারা জানান। মাংস বিক্রেতারা আরও জানান, কোরবানির ঈদ উপলক্ষে দাম বাড়তি। এর চেয়ে আর কমবে না দাম।
বিভিন্ন পণ্যের মতো মাছের বাজারেও কিছুটা বেড়েছে। কারওয়ান বাজারের আলালসহ অন্য বিক্রেতারা জানান, রুই ও কাতল ৩৫০-৫৫০ টাকা কেজি, চিংড়ি ৬০০-৮০০ টাকা। তবে নদীর চিংড়ি ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা। এক পয়সাও কম হবে না।
পাবদা ৫০০-৭০০, পাঙাশ ২০০, তেলাপিয়া ২০০-২৫০, শিং ও মাগুর ৪০০-৬০০ টাকা কেজি। বিক্রেতারা বলছেন, নদীর পানি কমে যাওয়ায় খাল বিলের মাছের দাম বেড়ে গেছে। ইলিশ মাছের দামও বাড়তি। এক কেজির ইলিশ গত সপ্তাহে ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা বিক্রি হলেও গতকাল ২ হাজার টাকার কমে বিক্রি করা হবে না বলে খুচরা বিক্রেতারা জানান। তবে ছোট সাইজের ৭০০-৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা কেজি বলে বিক্রেতারা জানান।