রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সরকারের নীতি সহায়তা চায় বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। পাশাপাশি আসন্ন বাজেটে রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে কর অর্ধেক কমানোর প্রস্তাবও দিয়েছে সংগঠনটি।
শনিবার (২ জুন) সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় এসব কথা জানান বিজিএমইএর নতুন পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি এস এম মান্নান কচি।
তিনি বলেন, ২০৩০ সাল নাগাদ ১০ হাজার কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে বিজিএমইএ। আর এটি বাস্তবায়নেই সরকারের নীতি সহায়তা প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
সেই সঙ্গে আসন্ন বাজেটে বিজিএমইএর কিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবও তুলে ধরা হয়।
এগুলো হলো- রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে কর এক শতাংশ থেকে কমিয়ে আগের মতো শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ করে আগামী ৫ বছর পর্যন্ত তা কার্যকর করা, প্রনোদনার জন্য দেওয়া নগদ সহায়তার উপর আয়কর কর্তনের হার ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা, ২০২৯ সাল পর্যন্ত ইনসেনটিভ অব্যাহত রাখা, পোশাক খাতের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্য ও সেবা ভ্যাটমুক্ত রাখা, অগ্নি ও নিরাপত্তা সরঞ্জাম আমদানির উপর কর রেয়াত এবং এসব পণ্য বিকল বা নষ্ট হলে প্রতিস্থাপনের জন্য রেয়াতি হারে আমদানির সুযোগ দেওয়া।
এছাড়া শ্রমিকদের জন্য ফুড রেশনিং বাবদ বিশেষ তহবিল বরাদ্দ এবং নন-কটন পোশাক রপ্তানি ও বিনিয়োগে সহায়তা দেওয়ার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে।
সরকারের নীতি সহায়তার প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে গিয়ে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, আমাদের সরাসরি রপ্তানিকারী কারখানার সংখ্যা পাঁচ হাজার থেকে দুই হাজার ২০০টিতে নেমে এসেছে। আমরা যদি কারখানাগুলো টিকিয়ে রাখতে পারতাম, তাহলে রপ্তানি আরও বৃদ্ধি পেত, নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হতো।
তবে সর্ববৃহৎ কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী খাত হিসেবে পোশাক শিল্পের ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা ও সক্ষমতা রয়েছে বলেও মত দেন তিনি।
এ সময় পোশাক শিল্পের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে আমাদের পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৪ দশমিক ৯৭ শতাংশ, যেখানে আগের অর্থবছর একই সময়ে প্রবৃদ্ধি ছিল ৯ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। একই সময়ে আমরা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৫ দশমিক ৭৭ শতাংশ পিছিয়ে পড়েছি। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বৈশ্বিক আমদানি কমেছে ৭ শতাংশ ও ১৩ শতাংশ। এর কারণ রাশিয়া-ইউক্রেন ও ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ, মূল্যস্ফীতির কারণে খুচরা বিক্রি কমে যাওয়া।
ব্যাংক সুদ ১৫ শতাংশ হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি ৫৬ শতাংশ মজুরি বৃদ্ধির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গত পাঁচ বছরে গড়ে উৎপাদন খরচ বেড়েছে ৫০ শতাংশ। গ্যাস-বিদ্যুৎ-পরিবহন খরচসহ সার্বিক উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। অন্যদিকে গত ৮ মাসে বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্যগুলোর দরপতন হয়েছে ৮-১৬ শতাংশ। শিল্পাঞ্চলের বাইরে বিনিয়োগ বন্ধের সিদ্ধান্ত বিনিয়োগ ও রপ্তানিকে বাধাগ্রস্ত করবে বলে মনে করেন বিজিএমইএ সভাপতি।
তিনি বলেন, অনেক কারখানা এরই মধ্যে শত শত কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ফেলেছে। এখন বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ না দিলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমরা সরকারের কাছে অনুরোধ করেছি যেন এই সিদ্ধান্ত স্থগিত করা হয়। শিল্পাঞ্চলের কাজ শেষ হওয়া এবং জায়গা বুঝিয়ে দেওয়ার পর একটি নির্দিষ্ট সময় ঠিক করে তারপর যেন এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, আসন্ন বাজেটে রপ্তানির স্বার্থে অগ্নি ও নিরাপত্তা সরঞ্জাম আমদানির ওপর কর রেয়াত এবং এসব পণ্য বিকল বা নষ্ট হলে প্রতিস্থাপনর জন্য রেয়াতি হারে আমদানির সুযোগ দেওয়া যুক্তিযুক্ত। শ্রমিকদের জন্য ফুড রেশনিং বাবদ বিশেষ তহবিল বরাদ্দ ও নন-কটন পোশাক রপ্তানি ও বিনিয়োগে সহায়তা দেওয়া প্রয়োজন।
এ সময় বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, সাবেক সভাপতি সালাম মুর্শেদী, সিদ্দিকুর রহমানসহ বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
অমিয়/