দেশের অন্যতম বড় ভোগ্যপণ্যের বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে দেশি পেঁয়াজের দাম ঊর্ধ্বমুখী। পাইকারিতে কেজি প্রতি পেঁয়াজ ৯৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাইরে এই পেঁয়াজ খুচরায় মিলছে ১১০ টাকায়। এদিকে জোগান বাড়াতে ভারত থেকে পেঁয়াজ আসা শুরু করলেও কোনো সুখবর মিলছে না। এতে বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ।
খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা বলছেন, জানুয়ারি থেকে দীর্ঘ ছয় মাস দেশি পেঁয়াজের ওপর নির্ভরশীল ছিল দেশ। এখন মৌসুম শেষ হয়ে আসায় কৃষকের কাছ থেকে আগেই কিনে রাখা পেঁয়াজ বাড়তি দরে বিক্রি করছে মধ্যস্বত্বভোগীরা। তারা প্রতি মণ (৪০ কেজি) পেঁয়াজে নতুন করে ৩০০ টাকা বাড়িয়েছে। তাই পেঁয়াজের দাম ক্রমেই বাড়ছে।
এদিকে আমদানিকারকরা বলছেন, দেশে পেঁয়াজের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে পড়ায় ভারত থেকে পেঁয়াজ আসা শুরু হয়েছে। গত ১৫ দিনে সব স্থলবন্দর দিয়ে এসেছে মাত্র ২০ থেকে ২৫ গাড়ি পেঁয়াজ। তবে বর্তমানে সব স্থলবন্দর আমদানি একটু বেড়েছে। দিনে গড়ে ৪৮ থেকে ৫০ গাড়ি পেঁয়াজ দেশে প্রবেশ করছে। প্রতিটি গাড়িতে ৩০ টন পেঁয়াজ রয়েছে। প্রতি কেজি পেঁয়াজ আনতে খরচ পড়ছে ৯০ টাকা। সীমান্তেই প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৯২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খাতুনগঞ্জ হয়ে খুচরা বাজারে যেতে কেজি প্রতি পড়বে ১১০ টাকা। কাজেই ভারত থেকে পেঁয়াজ এলেও ক্রেতাদের সুফল মিলবে না।
চট্টগ্রামের বৃহত্তর ভোগ্যপণ্যের বাজার খাতুনগঞ্জে গত কোরবানির ঈদের তিন দিন আগে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৭৫ টাকায়। গত ২৫ জুন বিক্রি হয় ৮০ টাকায়। গত ২৮ জুন বিক্রি হয় ৮০ থেকে ৮৫ টাকায় ও গত ৭ জুলাই বিক্রি হয় আকারভেদে ৯০ থেকে ৯৫ টাকায়। বর্তমানে আকারভেদে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ঠেকেছে ৯৫ থেকে ৯৮ টাকা।
অপরদিকে গত জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে খাতুনগঞ্জে প্রতি কেজি ভারতীয় পেঁয়াজের দাম ছিল ৭৫ থেকে ৭৮ টাকা। গত ২৮ জুন পাইকারি বাজারে দাম বেড়ে বিক্রি হয় ৮০ টাকা। গত ৭ জুলাই সরবরাহ সংকট দেখিয়ে পাইকারিতেই ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৯৫ টাকা। বর্তমানে ওই দরেই বিক্রি হচ্ছে পণ্যটি।
খাতুনগঞ্জের ‘হামিদুল্লাহ মিয়া মার্কেট’ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিস খবরের কাগজকে বলেন, ‘মধ্যস্বত্বভোগীরা দফায় দফায় পেঁয়াজের দাম বাড়াচ্ছে। কোরবানির আগে প্রতিমণ পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৮০০ টাকায়। কোরবানির পর দাম বেড়ে প্রতিমণ পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকায়। গত সপ্তাহে প্রতি মণ পেঁয়াজ ৩ হাজার ৭০০ থেকে ৩ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ১০০ টাকায়। এসব কারণে পেঁয়াজের বাজার দিনকে দিন আরও অস্থির হয়ে উঠছে।’
হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানিকারক মো. মোবারক হোসেন খবরের কাগজকে বলেন, ‘ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক বহাল রেখেছে। তাই আমদানিকারকরা পণ্যটি আমদানিতে আগ্রহ দেখাননি। আমরা ভেবেছিলাম, ভারতের নির্বাচনের পর শুল্কের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত জানাবে। কিন্তু দেশটি এখনো তাদের সিদ্ধান্তে অনড়।’ তিনি বলেন, ‘ভারতে বড় আকারের পেঁয়াজ ৩৪ রুপিতে বিক্রি হচ্ছে। ৪০ শতাংশ শুল্ক, বাংলাদেশে ভ্যাট, ট্যাক্স, পণ্যপরিবহন যোগ করে মোকামেই প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯২ টাকায়। তবে দেশে পেঁয়াজের বাজার ক্রমশ বাড়ায় আমদানিকারকরা আগের তুলনায় কিছুটা আমদানি বাড়িয়েছেন। কিন্তু আমদানি খরচ বেশি পড়ায় আমদানির পরও কোনো স্বস্তির খবর মিলছে না।’
নগরের আগ্রাবাদ এলাকার বাসিন্দা মো. শাহজাহান বলেন, ‘প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১১০ টাকায় কিনে খেতে হচ্ছে। আলুর কেজি ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। ৬০ টাকার নিচে সবজি নেই। চালের দাম বাড়তি। আমরা সাধারণ মানুষের আয় বাড়েনি। কিন্তু দিনের পর দিন ব্যয় বাড়ছে। সে হিসেবে আয় তো বাড়ছে না। আমরা সাধারণ মানুষ সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি।’
ওই এলাকায় আল-আমিন স্টোরের মালিক মো. সেলিম বলেন, ‘পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের বাজার দর অনেক চড়া। দেশি আর ভারতীয় পেঁয়াজ ৯০ টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে। আমি দেশি পেঁয়াজ কেজি ৯৫ টাকায় কিনে এনেছি। শ্রমিকের মজুরি, পণ্য পরিবহন খরচ যোগ করে লাভসহ বিক্রি করছি ১১০ টাকায়।’
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ‘পর্যাপ্ত মজুত ও সরবরাহ থাকার পরও এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী চালের বাজার অস্থির করে তুলেছে। অপরদিকে দিনকে দিন নানা অজুহাতে পেঁয়াজের দরও লাগাছাড়া। খুচরায় শত টাকার ওপরে চলে গেছে পণ্যটির দর। কেন এমনটা হচ্ছে তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। কিন্তু ভোগ্যপণ্যের বাজারে আমরা সেভাবে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার কোনো তদারকি দেখছি না। আর এ সুযোগটাকেই কাজে লাগাচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা।’
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক ফয়েজ উল্যাহ খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন বাজারে অভিযান পরিচালনা করছি। মূল্য তালিকা না থাকা, ক্রয়-বিক্রয় রশিদ না থাকা, বাড়তি দরে পণ্য বিক্রির চিত্র আমরা দেখতে পাই। তাই আমরা বিধি মোতাবেক ব্যবস্থাও গ্রহণ করি। আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখব।’