ঢাকা ৩০ আশ্বিন ১৪৩১, মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৪

চাল-চিনি-আটা আগের দামেই

প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৪, ১০:৪৫ এএম
আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২৪, ১০:৪৮ এএম
চাল-চিনি-আটা আগের দামেই
ছবি : সংগৃহীত

সিটি গ্রুপ, বসুন্ধরা, মেঘনাসহ অন্যান্য কোম্পানির অসংখ্য গাড়ি ঢাকায় এসেছে। সরবরাহ বেড়েছে আটা, চিনি, তেল, লবণের। নওগাঁ, দিনাজপুর, শেরপুরসহ অন্য জেলা থেকে বিভিন্ন কোম্পানির চালও বিভিন্ন বাজারে এসেছে। সারা দেশে কারফিউ জারি করা হলেও সহিংসতার আতঙ্ক কাটেনি ড্রাইভারদের। 

মালিক সমিতি দূরপাল্লার গাড়ি চলাচলে রাজি হওয়ায় ভয়ের মধ্যেই বিভিন্ন জেলা ও মিল থেকে ঢাকায় চাল, আটা, চিনিভর্তি ট্রাক আনছেন। এর ফলে সরবরাহ অনেক বেড়েছে। দাম বাড়েনি। আগের দামেই এসব পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। 

বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে সংশ্লিষ্ট ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
 
মোহাম্মদপুর এলাকায় সাপ্তাহিক ছুটি বৃহস্পতিবার। তারপরও কৃষিমার্কেট বাজারে গতকাল দেখা গেছে বিভিন্ন দোকানে চালভর্তি ট্রাক আনলোড করা হচ্ছে। রাসেল এন্টারপ্রাইজের সুমন খবরের কাগজকে বলেন, ‘কোটা আন্দোলনের নামে সহিংসতার পর সব কিছু বন্ধ হয়ে যায়। কারফিউ জারির ৬ দিন পর কৃষিমার্কেটে বৃহস্পতিবার প্রচুর চালের ট্রাক এসেছে। তাই দাম বাড়েনি। পাইকারি পর্যায়ে ৬৩-৬৫ টাকা কেজি মিনিকেট চাল বিক্রি করা হচ্ছে। কিন্তু ট্রাক মালিকরা এখনো গাড়ি পোড়ার ভয়ে আতঙ্কে আছেন। এ জন্য ভাড়া বেশি নিচ্ছেন।’
 
অন্যান্য চাল ব্যবসায়ীও বলছেন, সারা দেশে সহিংসতা চলতে থাকায় কয়েক দিন কোনো চালের গাড়ি আসেনি। গতকাল অনেক গাড়ি আসে। সেই গাড়ির চাল আনলোড করা হচ্ছে। এ সময় শফিক নামে এক ট্রাক ড্রাইভার বলেন, ‘ভয়ে আতঙ্কের মধ্যেই শেরপুর থেকে চাল আনা হয়েছে। সকালে এসেছি। আজ এই মার্কেট বন্ধ। তাই আস্তে ধীরে ট্রাক আনলোড করা হচ্ছে।’ 

এই বাজারের খুচরা চাল বিক্রেতা সারোয়ার বলেন, ‘দাম বাড়েনি। আগের মতোই মিনিকেট ৭০ টাকা, আটাশ চাল ৫৫ টাকা ও মোটা চাল ৪৫-৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।’ 

সরবরাহ ও দামের ব্যাপারে মোহাম্মদপুরের টাউনহল বাজারের নোয়াখালী রাইস এজেন্সির মো. ইউসুফ বলেন, ‘সহিংসতার কারণে কয়েক দিন চাল না এলেও মজুত একেবারে শেষ হয়ে যায়নি। চাল আসতে শুরু করেছে। সরবরাহ বেড়েছে। দাম বাড়েনি। আগের মতোই মিনিকেট ৭০ টাকা কেজি, আটাশ ৫৫ টাকা ও মোটা চাল ৪৫-৫০ টাকা, পোলাওয়ের চাল ১২০-১৪০ টাকা কেজি।’ 

এই বাজারের বিসমিল্লাহ স্টোরের বিক্রয়কর্মী শামীম বলেন, ‘কয়েক দিন পর গতকাল সিটি গ্রুপ, বসুন্ধরা, মেঘনাসহ অন্যান্য কোম্পানির গাড়ি এসেছে। এসব গাড়িতে প্রচুর আটা, চিনি, তেল, লবণ এসেছে। কোনো জিনিসের দাম বড়েনি। আগের মতোই ২ কেজি আটা ১০০-১২০ টাকা, ১লিটার তেল ১৬৫ টাকা, ৫ লিটার ৮০০ টাকা, মসুর ডাল ১২০-১৪০ টাকা, পেঁয়াজ ১২০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।’ 

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সরকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে দেশে কারফিউ জারি করেছে। তবে কেনাকাটাসহ জরুরি প্রয়োজন মেটাতে কারফিউ শিথিল করা হচ্ছে প্রতিদিন। এ সময় দোকান খোলা হচ্ছে। প্রথম দিন বিক্রির হিড়িক পড়লেও পরে বিক্রি কমে গেছে। খুব প্রয়োজন না হলে কেউ বাজারে আসেন না। আগের মতো বিক্রি হয় না।’ 

এই বাজারে সোনালি ব্রয়লার হাউসের মালিক লিটন খবরের কাগজকে বলেন, ‘আগের চেয়ে পরিস্থিতি ভালোর দিকে। বিভিন্ন জেলা থেকে মুরগি আসছে। এ জন্য আগের চেয়ে দামও কমেছে। ব্রয়লার ১৯০ টাকা ও সোনালি মুরগি ২৮০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।’ অন্য বিক্রেতারাও কম দামে মুরগি বিক্রি করছেন। 

এদিকে চালের আরেক মোকাম বাদামতলিতেও চালের দাম বাড়েনি বলে বিক্রেতারা জানান। দামের ব্যাপারে এই বাজারের সলিমুল্লাহ বলেন, ‘গতকাল প্রচুর চালের ট্রাক এসেছে। এ জন্য দাম বাড়েনি। আগের দামেই বিক্রি করা হচ্ছে নাবিল, এসিআই, আকিজ, মজুমদারের মিনিকেট ৬৩-৬৭ টাকা কেজি, আটাশ ৫২ টাকা ও মোটা চাল ৪৫ টাকা কেজি। অন্য চাল ব্যবসায়ীরাও বলেন, কয়েক দিন বন্ধ থাকার পর সরকার দূরপাল্লার গাড়ি চলাচলের সুযোগ করে দিলে গতকাল প্রচুর চালের ট্রাক বাজারে এসেছে।’ 

এদিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় আগের চেয়ে রাজধানীতে ডিমের গাড়িও বেশি এসেছে বলে জানা গেছে। তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি আমানউল্লাহ বলেন, ‘আগের চেয়ে ডিমের সরবরাহ বেড়েছে। দামও কমেছে। গতকাল বিভিন্ন মোকাম থেকে ১৮-২০ লাখ পিস ডিম এসেছে। ১০০ ডিম বিক্রি করা হয়েছে ১১০০ টাকা বা ডজন ১৩২ টাকা। যা আগের চেয়ে কম।’ সেই ডিম টাউনহল বাজার ও কারওয়ান বাজারে ১৪০-১৫০ টাকা ডজন বিক্রি করতে দেখা যায়। তবে বিভিন্ন পাড়া-মহল্লাতে সেই ডিম সরবরাহের অজুহাতে ১৬০-১৬৫ টাকা ডজন বিক্রি হতে দেখা গেছে। 

পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় বিভিন্ন জেলা থেকে রাজধানীর কারওয়ান বাজার, সাদেক খান বাজার, যাত্রাবাড়ীতে আগের চেয়ে বেশি করে সবজি আসছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। বিভিন্ন মোকাম থেকে আলু, পেঁয়াজ, আদা ও রসুনের সরবরাহ বেড়েছে বলে শ্যামবাজারের ব্যবসায়ীরা জানান। এসব পেঁয়াজ বিভিন্ন বাজারে খুচরা বিক্রেতারা ১১৫-১২০ টাকা, আলু ৬০ টাকা, আদা ২৮০-৩০০ টাকা, রসুন ২০০ টাকা কেজি বিক্রি করছেন। 

চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের ভরসা এসএস পাওয়ার বিদ্যুৎ কেন্দ্র

প্রকাশ: ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:৪২ পিএম
আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:৪৬ পিএম
চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের ভরসা এসএস পাওয়ার বিদ্যুৎ কেন্দ্র
বাঁশখালীর গন্ডামারা এলাকায় বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি স্থাপন করা হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

প্রাচীনকাল থেকে চট্টগ্রামে ব্যবসার অনুকূল পরিবেশ থাকায় চট্টগ্রামকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্য গড়ে উঠেছে যা আজও চলমান। বর্তমানে প্রায় কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে গড়ে উঠেছে মিরসরাই ইকোনোমিক জোন, কক্সবাজার জেলার মহেশখালীতে গড়ে উঠছে অনেকগুলো শিল্প কারখানা। আনোয়ারা কোরিয়ান এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন, চায়না ইকোনোমিক জোন। তাছাড়া পুরো চট্টগ্রামে ছোট-বড় অনেকগুলো পোশাক কারখানা গড়ে উঠে। এসব কারখানায় সবচেয়ে বেশি যে সেবাটি দরকার তা হলো বিদ্যুৎ ও গ্যাস।

একটা সময় এই বিদ্যুৎ-গ্যাস নিয়েই বেশি দুশ্চিন্তা করতে হতো ব্যবসায়ীদের। তবে আশার আলো হয়ে এসেছে চট্টগ্রামের বাঁশখালীর গণ্ডামারায় স্থাপিত এস. আলম বিদ্যুৎকেন্দ্র (এসএস পাওয়ার প্ল্যান্ট)। পুরোদমে চালুর পর এই কেন্দ্র চট্টগ্রামের সিংহভাগ বিদ্যুতের চাহিদা পূরণে করে আসছে। বলতে গেলে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের মাধ্যমেই চট্টগ্রামের লোডশেডিং প্রায় শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে।

এস আলম বিদ্যুৎকেন্দ্রের মাধ্যমেই এখন চট্টগ্রামের শিল্পকারখানা ও জরুরি সেবার প্রতিষ্ঠানগুলো নিরবিচ্ছন্নভাবে তাদের উৎপাদন ও সেবামূলক কার্যক্রম চালিয়ে নিতে সক্ষম হচ্ছে। এতে একদিকে লাখো মানুষের কর্মসংস্থান যেমন সুরক্ষিত থাকছে আবার অন্যদিকে রপ্তানিমুখী শিল্পের উৎপাদনও বেগবান হচ্ছে।

এস আলম বিদ্যুৎকেন্দ্রকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠছে দুটি ইকোনোমিক জোন। যেখানে পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। চট্টগ্রামের বর্তমান ও নতুন করে গড়ে ওঠার অপেক্ষায় থাকা শিল্পকারখানাগুলোর নিরবিচ্ছন্ন উৎপাদন প্রক্রিয়া চালু রাখতে হলে এস আলম বিদ্যুৎকেন্দ্রও পুরোদমে সবসময় চালু রাখার বিকল্প নেই।

বিভিন্ন কারখানার মালিকের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, এমনিতে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে কারখানার উৎপাদন কার্যক্রম অনেকটা স্থবির ছিল। আবার গ্যাস ও বিদ্যুতের নতুন করে সংকট সৃষ্টি হলে ব্যবসায় মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

তাই ব্যবসায়ীদের দাবি এসএস পাওয়ার বাঁশখালী বিদ্যুৎ কেন্দ্রটা যেন পরিপূর্ণভাবে উৎপাদন কার্যক্রম চালু রাখা হয়। কেননা এটা চালু থাকলে উৎপাদন কার্যক্রম ও রপ্তানিমূখী শিল্পের উৎপাদন ও রপ্তানির ধারা বজায় রাখা যাবে।

এসএস পাওয়ার প্ল্যান্ট কর্তৃপক্ষও শিল্প বাঁচাতে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু রাখার বিষয়ে সচেষ্ট রয়েছে। প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জানান, রপ্তানিমুখী শিল্পের উৎপাদন যেন ব্যাঘাত না ঘটে সেজন্য আমরা বিদ্যুৎকেন্দ্র সবসময় পুরোদমে চালু রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। আশা করছি বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারও আমাদের এই বিষয়ে আন্তরিকতার সঙ্গে সহযোগিতা করে যাবে।

বঙ্গোপসাগরের কূলঘেঁষে বাঁশখালীর (চট্টগ্রাম)গন্ডামারা এলাকায় বৃহৎ ওই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি স্থাপন করা হয়েছে। এর মালিকানায় রয়েছে দেশীয় খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপ, চীনা কোম্পানি সেপকো থ্রি ও এইচ টিজি। দেশীয় কোম্পানি এস আলমের অংশীদারিত্বের পরিমাণ ৭০ শতাংশ, আর চীনা কোম্পানি সেপকো থ্রি ও এইচ টিজির হাতে রয়েছে ৩০ শতাংশ।

বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চালু হওয়ার আগে থেকেই বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিশাল ভূমিকা রাখতে শুরু করে। প্রকল্পটি থেকে ট্যাক্স, ভ্যাট ও অন্যান্য ফি বাবদ সরকারি কোষাগারে বিপুল পরিমাণ অর্থ জমা দেওয়া হয়। আর দেশের ভেতর থেকে ৬৫০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য ও সেবা কেনা হয়। শুধু তাই নয়, করোনার মতো মহাসংকটের সময় যখন কর্মসংস্থান সংকট তৈরি হচ্ছিল, সেই সময়সহ টানা ৪ বছর ধরে ৭ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে এখানে। কেন্দ্রটিতে ১২’শ লোকের কর্মসংস্থান হবে। গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর রাত ১২টায় কেন্দ্রটি বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করে। এরপর থেকে দেশের বিদ্যুৎখাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে।

পুঁজিবাজারে ভালো মানের কোম্পানির শেয়ার খুবই কম: আইসিবি চেয়ারম্যান

প্রকাশ: ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৪৬ এএম
পুঁজিবাজারে ভালো মানের কোম্পানির শেয়ার খুবই কম: আইসিবি চেয়ারম্যান
দেশের পুঁজিবাজারে সরকারি ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে বাজারে নিয়ে আসার পরামর্শ দিচ্ছেন ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত

দেশের পুঁজিবাজারে সরকারি ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে বাজারে নিয়ে আসার পরামর্শ দিয়ে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেছেন, বর্তমানে পুঁজিবাজারে ভালো মানের শেয়ারের সংখ্যা খুবই কম।

গত বুধবার বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ-২০২৪ উপলক্ষে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) এবং ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ) আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

আবু আহমেদ বলেন, ডিএসইকে আরও ক্ষমতায়ন করতে হবে এবং তাদের স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে। বিশেষ করে আইপিওর ক্ষেত্রে স্টক এক্সচেঞ্জের মতামতকে প্রাধান্য দিতে হবে। বর্তমানে পুঁজিবাজারে ভালো মানের শেয়ারের সংখ্যা খুবই কম। এ জন্য সরকারি ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে বাজারে নিয়ে আসতে হবে। এর ফলে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগের জন্য ভালো শেয়ার পাবেন।

তিনি বলেন, সরকারি কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্ত হলে বিনিয়োগকারীরা উপকৃত হবেন এবং সরকার উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য অর্থ পাবে। এ জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। পাবলিক ইন্টারেস্টের চেয়ে বড় কিছু নেই। সম্প্রতি বিএসইসি কিছু গ্রুপের সঙ্গে আলোচনা করেছে। ভালো কোম্পানি পুঁজিবাজারে আনার জন্য কিছু আর্থিক প্রণোদনা দিতে হবে। তা না হলে পারিবারিক কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে আসবে না।

অনুষ্ঠানের সভাপতি ডিবিএর প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগের আগে বিভিন্ন ঝুঁকি বিবেচনা করে থাকেন। এর মধ্যে প্রধান হলো রাজনৈতিক ঝুঁকি ও নতুন করে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে পরিবেশ, সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন (ইএসজি) ঝুঁকি।

তিনি বলেন, ‘কিছুদিন আগে আমরা দেখেছি বেশ কিছু ব্লু-চিপ কোম্পানি থেকে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা তাদের বিনিয়োগ প্রত্যাহার করেছেন। পরে আমরা জানতে পেরেছি সেসব বিনিয়োগকারী ইএসজি চার্টারে স্বাক্ষর করেছেন। তাই ইএসজি বিষয়ে আমাদের লক্ষ রাখতে হবে। ইনভেস্টমেন্ট রেজিলেন্সের ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের তথ্যের ওপর অ্যাকসেস নিশ্চিত করতে হবে। আর বিনিয়োগকারীদের সচেতন করতে হবে। এ ছাড়া আমাদের গবেষণাকে আরও সমৃদ্ধ করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে প্রাইমারি রেগুলেটর হিসেবে ক্ষমতায়ন করতে হবে। বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষার জন্য ডিএসইর ক্ষমতায়ন জরুরি। আইপিওর গুণগত মান নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে ডিএসইর মতামতকে গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা উচিত। এ ছাড়া বিনিয়োগকারীকে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলোকে খেয়াল রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে বাজার মধ্যস্থতাকারী হিসেবে আমাদের বিবেচনা করে ঋণ দেওয়া আবশ্যক।’

তিনি সরকারি কোম্পানিগুলোকে দ্রুত তালিকাভুক্তির ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করার অনুরোধ জানান।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডিবিএর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. সাইফুদ্দিন। মূল প্রবন্ধে তিনি সঞ্চয় বনাম বিনিয়োগ, কমন অ্যাসেট ক্লাস, বাংলাদেশের পুঁজিবাজার, বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা, স্টক বিনিয়োগ করে সফলতার উপায়, ভালো স্টক নির্বাচন করার নিয়ম, একটি ভালো বিনিয়োগ বাছাই করার মানদণ্ড এবং সম্পদ ব্যবস্থাপনার নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করেন।

অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা অনেক গবেষণার মাধ্যমে বিনিয়োগ করে থাকেন। আর তাদের গবেষণা মূলত আর্থিক প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে হয়ে থাকে। কিন্তু আর্থিক প্রতিবেদনগুলোতে অনেক সময় সঠিক তথ্য উপস্থাপিত হয় না। তাই আর্থিক প্রতিদেবনের ওপর ভিত্তি করে বিনিয়োগ করা কঠিন হয়ে যায়। তাই প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও এ বাজারে বিনিয়োগে তেমন আগ্রহী হচ্ছে না।

তিনি বলেন, ‘অডিটর, ক্রেডিট রেটিং এজেন্সিসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে তাদের দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করতে হবে। আমাদের সাধারণ বিনিয়োগকারীদের গবেষণা করার সুযোগ না থাকায় তারা বিনিয়োগ করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই পুঁজিবাজার মধ্যস্থতাকারীদের গবেষণা বৃদ্ধি করতে হবে, যা বাজার উন্নয়নে সহায়ক হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘পুঁজিবাজারের নিয়মকানুনগুলো হঠাৎ পরিবর্তন করার কারণে বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া মন্দ কোম্পানিগুলোকে শাস্তির পাশাপাশি ভালো কোম্পানিগুলোকেও তাদের কাজের স্বীকৃতি দিতে হবে। যার যা কাজ তা সঠিকভাবে পালন করে পুঁজিবাজারকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে হবে।’

অনুষ্ঠানের আরেক বিশেষ অতিথি চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান এ কে এম হাবিবুর রহমান বলেন, যতদূর জানা যায়, প্রতিবছর বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ পালনের মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে শিক্ষা এবং সচেতনতার মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা। এবারের পরিপ্রেক্ষিতে দেশের অন্যান্য সেক্টরের মতো পুঁজিবাজারেও ব্যাপক সংস্কারের প্রয়োজন অনুভূত হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘এখন সময় এসেছে যথাযথ সংস্কারের মাধ্যমে পুঁজিবাজারের জন্য একটি আধুনিক এবং সময়োপযোগী আইনগত কাঠামো তৈরি করা। এরই মধ্যে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন সংস্কারের জন্য একটি কমিটি গঠন করেছে। আমরা যার যার জায়গা থেকে সহযোগিতার মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত সংস্কার নিশ্চিত করতে চাই। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীর সুরক্ষা নিশ্চিত করার একটি অন্যতম পূর্বশর্ত হলো সংস্কারের মাধ্যমে একটি স্বচ্ছ কাঠামো তৈরি করা।’

ডিএসইর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ জি এম সাত্ত্বিক আহমেদ শাহ বলেন, ‘এই সপ্তাহ হলো বিনিয়োগকারীদের শিক্ষা ও সুরক্ষা প্রচার এবং ব্যক্তি ও সম্প্রদায়ের মধ্যে বিনিয়োগ শিক্ষা বৃদ্ধির জন্য একটি বিশ্বব্যাপী উদ্যোগ। আমরা আমাদের বাজারে স্বচ্ছতা এবং বিশ্বাসকে গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা সুশাসন ও জবাবদিহির সর্বোচ্চ মান বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং নিয়ন্ত্রক কাঠামো অধিক শক্তিশালী করার জন্য কাজ করছি, যেন আমাদের বিনিয়োগকারীরা তাদের লেনদেনে নিরাপদ বোধ করে এবং তাদের বিনিয়োগে আত্মবিশ্বাসী হয়। আসুন, আমরা এই বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহকে বৃহত্তর সচেতনতা, ক্ষমতায়ন এবং সহযোগিতার দিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাই।’

মালয়েশিয়ার পাম অয়েলের দাম বেড়েছে ২ শতাংশ

প্রকাশ: ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৩৮ এএম
মালয়েশিয়ার পাম অয়েলের দাম বেড়েছে ২ শতাংশ
কারখানায় নেওয়ার জন্য পাম ফল ট্রাকে তুলছেন শ্রমিকরা। ছবি: সংগৃহীত

মালয়েশিয়ার পাম অয়েলের ভবিষ্যৎ সরবরাহ চুক্তি (ফিউচার) মূল্য বেড়েছে। বুরসা মালয়েশিয়া ডেরিভেটিভস এক্সচেঞ্জে গত শুক্রবার সর্বশেষ লেনদেন পাম ভোজ্যতেলটির দাম ২ শতাংশের বেশি বেড়েছে। এর মধ্য দিয়ে ধারাবাহিকভাবে চার সপ্তাহ ধরে লাভের রেকর্ড করেছে। বিশ্লেষকরা বলেছেন, প্রতিদ্বন্দ্বী ভোজ্যতেলগুলোর বেশি বেশি থাকা এবং কার্গো সার্ভেয়ারদের কাছ থেকে ইতিবাচক রপ্তানি তথ্যের কারণে এই সময়ে পাম অয়েলের দাম বেড়েছে। খবর রয়টার্সের।

ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থাটির খবরে বলা হয়, বুরসা মালয়েশিয়া ডেরিভেটিভস এক্সচেঞ্জে ডিসেম্বরে সরবরাহের চুক্তিতে বেঞ্চমার্ক পাম অয়েলের দাম ১১৭ রিঙ্গিত বেড়েছে। সে হিসাবে তেলটির দাম ২ দশমিক ৭৬ শতাংশ বেড়ে টনপ্রতি ৪ হাজার ৩৫০ রিঙ্গিতে (১ হাজার ১৫ ডলার ৪১ সেন্ট) বিক্রি হয়েছে।

চুক্তিটি এই সপ্তাহে ১ দশমিক ১৬ শতাংশ বেড়েছে। সিঙ্গাপুরভিত্তিক ব্রোকারেজ ফার্ম ফিলিপ নোভার পণ্য কৌশলী ড্যারেন লিম বলেন, গত ১ থেকে ১০ অক্টোবর সময়ের মধ্যে কার্গো সার্ভেয়ারদের কাছ থেকে রপ্তানি বেশি হওয়ার তথ্য, চীনের দালিয়ান কমোডিটি এক্সচেঞ্জের উদ্ভিজ্জ তেলগুলোর দাম বৃদ্ধি পাওয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক শিকাগো বোর্ড অব ট্রেডের (সিবিওটি) সয়াবিন তেলের দামে রাতারাতি লাভের মুখ দেখার মতো বেশ কয়েকটি কারণে এই সময়ে পাম অয়েলের দাম বাড়ার পেছনে ভূমিকা রেখেছে।

ড্যারেন লিম বলেন, ‘প্রযুক্তিগত দৃষ্টিকোণ থেকে, আমরা একটি ধারাবাহিকতা দেখছি যা সাধারণত একটি বুলিশ (বাজার ঊর্ধ্বমুখী হওয়া) প্রবণতার ইঙ্গিত দেয়।’ দালিয়ানের সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া সয়াবিন তেলের ভবিষ্যৎ সরবরাহ চুক্তিমূল্য দশমিক ৭৮ শতাংশ বেড়েছে। অন্যদিকে পাম অয়েলের দাম বেড়েছে ১ দশমিক ৬৩ শতাংশ। 

শিকাগো বোর্ড অব ট্রেডে সয়াবিন তেলের দাম দশমিক ৫৫ শতাংশ বেড়েছে। পাম অয়েল বিশ্বব্যাপী উদ্ভিজ্জ তেলের বাজারের একটি বড় অংশের প্রতিযোগিতা করার কারণে প্রতিদ্বন্দ্বী ভোজ্যতেলের দামের ওঠানামার ওপর এটির দামেও একটি প্রভাব লক্ষ করা যায়। কার্গো জরিপকারীরা অনুমান করেছেন, গত ১ থেকে ১০ অক্টোবরের মধ্যে মালয়েশিয়ার পাম অয়েলের রপ্তানি এক মাস আগের তুলনায় ১৩ দশমিক ৬০ শতাংশ থেকে ১৮ দশমিক ৯০ শতাংশ বেড়েছে।

খবরে বলা হয়, এই সময়ে পাম অয়েলের লেনদেনের মুদ্রা রিঙ্গিত ডলারের বিপরীতে দশমিক ০৯ শতাংশ শক্তিশালী হয়েছে, যার ফলে বিদেশি মুদ্রাধারী ক্রেতাদের জন্য পণ্যটি আরও ব্যয়বহুল হয়েছে। একদিকে ইরানের তেল সাইটগুলোতে ইসরাইল আক্রমণ করলে যেকোনো ব্যাপক সরবরাহ ব্যাঘাতের আশঙ্কা এবং অন্যদিকে হারিকেনের ক্ষতির প্রভাবকেও বিনিয়োগকারীরা বিবেচনা করছেন বলে শুক্রবার জ্বালানি তেলের দাম কিছুটা নমনীয় ছিল। কিন্তু এই সময়ে জ্বালানি তেলের দাম দ্বিতীয় সাপ্তাহিক লাভের মুখ দেখেছে। অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম কম হওয়ায় পাম অয়েলকে বায়োডিজেলের কাঁচামাল হিসেবে একটি কম আকর্ষণীয় বিকল্প করে তুলেছে।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে উৎপাদিত এবং বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ভোজ্যতেলের মধ্যে পাম অয়েল অন্যতম। স্বল্প খরচ, উচ্চ উৎপাদন ক্ষমতা এবং বহুমুখী ব্যবহারের কারণে এটি খাদ্যশিল্প, প্রসাধনী ও অন্যান্য শিল্পে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। 

বিশ্বে জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণির উত্থানের ফলে ভোজ্যতেলের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। পাম অয়েলের স্বল্প খরচ ও বহুমুখী ব্যবহারের কারণে এর চাহিদা দিন দিন আরও বেড়েছে। ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া বিশ্বের দুটি প্রধান পাম অয়েল উৎপাদক দেশ। এই দুই দেশ মিলে বিশ্বের প্রায় ৮৫ শতাংশ পাম অয়েল উৎপাদন করে। আন্তর্জাতিক বাজারে পাম অয়েলের দাম বিভিন্ন কারণে ওঠানামা করে। এর মধ্যে আবহাওয়া, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বৈশ্বিক অর্থনীতির পরিস্থিতি অন্যতম। 

আলোচনায় ভিয়েতনামের সেমিকন্ডাক্টর শিল্প

প্রকাশ: ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৩১ এএম
আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৩৪ এএম
আলোচনায় ভিয়েতনামের সেমিকন্ডাক্টর শিল্প
ভিয়েতনামের একটি সেমিকন্ডাক্টর কারখানায় কাজ করছেন একজন প্রকৌশলী। ছবি: সংগৃহীত

ভিয়েতনামের প্রধানমন্ত্রী ফাম মিন চিন সম্প্রতি ২০৩০ সাল পর্যন্ত দেশটির সেমিকন্ডাক্টর শিল্প উন্নয়ন কৌশল এবং ২০৫০ সাল পর্যন্ত এই খাতে তাদের দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যমাত্রার অনুমোদন দিয়েছেন। এর পর থেকেই আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ভিয়েতনামের সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের সম্ভাবনা সম্পর্কে ইতিবাচক পর্যালোচনা করছে। মূলত ভিয়েতনামের এই উদ্যোগের পর থেকেই বৈশ্বিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করছে দেশটির সেমিকন্ডাক্টর শিল্প। খবর ভিয়েতনাম টাইমসের।

হংকংভিত্তিক এশিয়া টাইমসের খবরে বলা হয়, ভিয়েতনাম বিশ্বব্যাপী সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের নতুন ও গুরুত্বপূর্ণ দেশ হয়ে উঠছে। অপেক্ষাকৃত কম বেতনে কাজ করা উচ্চশিক্ষিত, উদ্যোগী প্রকৌশলীরা যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও তাইওয়ান থেকে সেমিকন্ডাক্টর ডিজাইন ও প্যাকেজিং কোম্পানিকে আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়েছে।

একই ধরনের মত ব্যক্ত করে লন্ডনভিত্তিক প্রযুক্তিগত প্ল্যাটফর্ম ইন্টেলিজেন্টশিও বলেছে, বিশ্বের দ্রুততম বর্ধনশীল অর্থনীতির একটি হিসেবে ডিজিটাল রূপান্তর, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও সেমিকন্ডাক্টর উপাদানের মতো উচ্চ প্রভাবশীল খাতগুলোতে ভিয়েতনাম নিজেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করছে।

ডি হিউজ গ্রুপের এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক গ্যাবর ফ্লুইট বলেন, ‘ভিয়েতনাম যে ধরনের সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছে, তার অংশ হিসেবে দেশটি এখন উচ্চপ্রযুক্তি, সেমিকন্ডাক্টর ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতগুলোতে বেশি মনোযোগ দিচ্ছে। সেই সঙ্গে উদ্ভাবন ও উচ্চমানের চাকরির ওপর বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে। অনেক কোম্পানি ভিয়েতনামকে বেছে নিচ্ছে কারণ, এখানে ভালো মানের প্রতিভা রয়েছে, তবে আমাদের সেই সম্পদ বা প্রতিভাকে আরও বড় করার চেষ্টা করতে হবে।’

ভিয়েতনাম টাইমসের খবরে বলা হয়, সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের উন্নয়ন বাড়ানোর জন্য দেশটি আইনগত ও প্রশাসনিক সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করছে।
থাইল্যান্ডের দ্য নেশন পত্রিকা উল্লেখ করেছে, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুর সবাই- নিজেদের এই অঞ্চলের শীর্ষস্থানীয় সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদন কেন্দ্রে পরিণত করার জন্য তীব্র প্রতিযোগিতা চালিয়ে যাচ্ছে। ভিয়েতনাম একটি নতুন ডিজিটাল প্রযুক্তি আইন প্রণয়ন করছে, যার আওতায় দেশে বিনিয়োগকারী বিশ্বব্যাপী চিপ নির্মাতাদের বেশ কিছু প্রণোদনাও দেবে তারা।

জাপানভিত্তিক নিক্কেই এশিয়ার মতে, ভিয়েতনাম কর হ্রাস থেকে শুরু করে দ্রুত রপ্তানি পদ্ধতি পর্যন্ত বিভিন্ন ধাপে চিপ উৎপাদক কোম্পানিগুলোর জন্য প্রণোদনার একটি তালিকা তৈরি করছে।

ভারতের জিন্দাল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক পঙ্কজ ঝা বলেছেন, বর্তমান সময়ে ভিয়েতনামে সেমিকন্ডাক্টর ও সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদের উন্নয়নের সঙ্গে সম্পর্কিত সমগ্র ইকোসিস্টেম গুরুত্বপূর্ণ। আমার পরামর্শ হলো ভিয়েতনামকে তাইওয়ান, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো সেমিকন্ডাক্টর শক্তিধরদের সঙ্গে একযোগে কাজ করার বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত এবং দেখা উচিত যে, তারা কীভাবে চিপ উৎপাদনকে তাদের অর্থনীতির অন্যতম ভিত্তি করে তুলেছে এবং তাদের অভিজ্ঞতা থেকে তাদের আরও শিখতে হবে। এই প্রয়োজনীয় ইকোসিস্টেম তৈরির জন্য সরকারি ও বেসরকারি খাত- উভয়ের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।

লক্ষ্যমাত্রার বিষয়ে ভারতীয় বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকা অনুসারে, ভিয়েতনাম শ্রম-নিবিড় শিল্প থেকে নিজেদের উচ্চপ্রযুক্তি খাতে স্থানান্তর করার চেষ্টা করছে। দেশটির লক্ষ্যমাত্রা হলো, ২০৩০ সালের মধ্যে তাদের ৫০ হাজার সেমিকন্ডাক্টর ইঞ্জিনিয়ার থাকবে।

সেমিকন্ডাক্টর ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (এসআইএ) প্রেসিডেন্ট ও সিইও জন নিউফার বলেছেন, ‘আমরা ভিয়েতনামের এই কৌশলকে স্বাগত জানাই এবং এটা দেখে খুশি হচ্ছি যে, ভিয়েতনাম এই শিল্পের চারটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভগুলোর মধ্যে একটি, যা হলো সেমিকন্ডাক্টর এবং এআই জনশক্তি প্রশিক্ষণের ওপর মনোনিবেশ করেছে। এটি দীর্ঘ যাত্রার জন্য প্রস্তুতি হিসেবে দেশটির প্রাথমিক পদক্ষেপগুলোর একটি।’ জন নিউফার নিজের আত্মবিশ্বাস ব্যক্ত করে বলেন, যেকোনো দেশ যদি মানবসম্পদ উন্নয়নে মনোনিবেশ করে, সঠিক পথে থাকে এবং সঠিক নীতিমালা থাকে- তবে তারা শিগগিরই সেমিকন্ডাক্টর সরবরাহ শৃঙ্খলে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান অর্জন করবে।

১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের সেমিকন্ডাক্টর বাজারে যাত্রা
আমেরিকান প্রযুক্তিগত গবেষণা ও পরামর্শক সংস্থা গার্টনার ইনকরপোরেটেডের পূর্বাভাস অনুযায়ী, সেমিকন্ডাক্টর শিল্প ২০২৪ সালে ৬২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রাজস্ব আয় করবে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে এটি বৃদ্ধি পেয়ে ১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছাবে। সম্প্রতি তারা সেমিকন্ডাক্টর স্ট্র্যাটেজি প্রকাশ করেছে, যেখানে ভিয়েতনাম এই বিশাল বাজারের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ দখল করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।

এ বিষয়ে জন নিউফার বলেছেন, ‘আমরা দেখছি যে ভিয়েতনাম আমাদের সরবরাহ শৃঙ্খলে আরও বড় ভূমিকা পালন করার জন্য অপার সম্ভাবনা রয়েছে।’

আমেরিকান বহুজাতিক কোম্পানি এএমডির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট কেইথ স্ট্রিয়ার মানুষ, ইকোসিস্টেম, ইনফ্রাস্ট্রাকচার এবং নীতিমালাসহ সেমিকন্ডাক্টর ও এআই শিল্পের বিকাশের জন্য চারটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান তুলে ধরেছেন। স্ট্রিয়ার জোর দিয়েছেন, ‘আত্মনির্ভর অর্থনীতির জন্য এআইয়ের বিকাশ ও সমন্বয় প্রয়োজন, যা সম্পূর্ণ দক্ষ ও স্বচ্ছ এআই ব্যবহারের লক্ষ্যে বাস্তবায়ন করা জরুরি। আমরা এই ভিশন বাস্তবায়নে ভিয়েতনামের সঙ্গে অংশীদারত্ব করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

বিনিয়োগকারীরা তাদের সেমিকন্ডাক্টর সরবরাহ শৃঙ্খল বৈচিত্র্য আনতে চাইলে ভিয়েতনাম এই বিনিয়োগের বিশাল ঢল থেকে উপকৃত হওয়ার জন্য একটি ভালো অবস্থায় রয়েছে। তবে এটি স্পষ্ট যে, দেশটির উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য অর্জনের জন্য আরও কিছু উল্লেখযোগ্য প্রচেষ্টার প্রয়োজন হবে।

বিশ্বের ৮১ শতাংশ সেমিকন্ডাক্টরই এশিয়া মহাদেশের বিভিন্ন দেশে উৎপাদিত হচ্ছে। এই দেশগুলোর তালিকায় রয়েছে তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, চীন, জাপান ও ভারত। এর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে তাইওয়ান। সেমিকন্ডাক্টর বাজারের ৬০ শতাংশ রয়েছে দেশটির দখলে। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, চীন এবং ইউরোপের কয়েকটি দেশ সেমিকন্ডাক্টরের চাহিদা মেটাতে তাইওয়ানের ওপর নির্ভর করে। দেশটিতে আছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান তাইওয়ান সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি বা টিএসএমসি। অন্য কোম্পানিগুলোর দেওয়া অর্ডার অনুযায়ী, সেমিকন্ডাক্টর তৈরি করে টিএসএমসি। ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট, সিপিইউ ও জিপিইউসহ নানা পণ্য উৎপাদন করে তারা। বর্তমানে তাদের বাজার মূলধন ২১ দশমিক ২৯ ট্রিলিয়ন তাইওয়ান ডলার। আর তাদের কর্মী সংখ্যা ৫৪ হাজার ৯৭৪।

সিরাজগঞ্জে বাজারে চড়া মাছ-মুরগি-সবজির দাম

প্রকাশ: ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১১:১০ এএম
সিরাজগঞ্জে বাজারে চড়া মাছ-মুরগি-সবজির দাম
সিরাজগঞ্জ শহরের বড় বাজারে মাছ বিক্রিতে ব্যস্ত ব্যবসায়ীরা।ছবি: খবরের কাগজ

সিরাজগঞ্জের বাজারগুলোতে মাছ, মুরগি ও সবজির দাম বেড়েছে। এ কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম অসুবিধা দেখা দিয়েছে। আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সামঞ্জস্য না থাকায় সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও খেটে খাওয়া মানুষরা। মাছ, মুরগি ও সবজির দাম যেন আকাশছোঁয়া। বাজারে যাওয়াও এখন মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তদের জন্য দুষ্কর হয়ে উঠেছে। উপায় না পেয়ে প্রয়োজনের তাগিদে বেশি দামে কিনতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। যদি এভাবে দাম বৃদ্ধি অব্যাহত থাকে, তবে সামনের দিনগুলোতে সাধারণ মানুষের জন্য বাজার করা কঠিন হয়ে পড়বে। তাই স্থানীয়রা নিত্যপণ্যের দাম কমিয়ে দ্রুত বাজার নিয়ন্ত্রণে আনার দাবি জানিয়েছেন।

রবিবার (১৩ অক্টোবর) সকালে সিরাজগঞ্জের সবজি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এক কেজি ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা, বেগুন প্রতি কেজি ২০০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৮০ থেকে ১০০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া প্রতি কেজি ৮০ টাকা, শসা প্রতি কেজি ৮০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ প্রতি কেজি ৮০ টাকা, পটোল ৮০ টাকা, ঝিঙা প্রতি কেজি ৮০ টাকা, মুলা প্রতি কেজি ৮০ টাকা, এক আঁটি শাক ২০ টাকা ও অন্যান্য সবজি চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে সিরাজগঞ্জ বড় বাজারে গিয়ে দেখা যায়, আকার ভিত্তিতে প্রতি কেজি ওজনের রুই ও কাতলা মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৫৫০ টাকা, বাঘাড় প্রতি কেজি ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা, প্রতি কেজি চিংড়ির দাম ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা, চাষ করা শিং মাছের দাম ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা, প্রতি কেজি পাঙাস মাছ ২৫০ থেকে ৪০০ টাকায়, তেলাপিয়া ২৫০ টাকা কেজি এবং সিলভার মাছের দাম প্রতি কেজি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। এ ছাড়া ট্যাংরা মাছ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। যমুনা নদী ও চলনবিলের দেশীয় মাছও চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে।

মুরগির বাজারে গিয়ে দেখা যায়, প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৯৫ টাকা, লেয়ার মুরগি ২৮০ টাকা, সোনালি মুরগি ২৬০ টাকা ও দেশি মুরগির দাম ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা। প্রতি হালি ডিম পাইকারি ও খুচরা ৫৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বড় বাজারে মাছ কিনতে আসা সুমন সরকার বলেন, ‘মাছের দাম প্রতিনিয়ত বাড়ছে, ফলে আমাদের মতো মধ্যবিত্তরা চরম অসুবিধায় পড়েছি। গত সপ্তাহের তুলনায় মাছের দাম অনেক বেড়ে গেছে। প্রয়োজনের তুলনায় কম মাছ কিনতে হচ্ছে।’ মাছ কিনতে আসা আরেক ক্রেতা রহমান আলী জানান, ‘আগে ১ হাজার টাকার মধ্যে মাছ, মুরগি ও সবজি সবকিছু কিনে ব্যাগভর্তি বাজার নিয়ে বাড়িতে যেতাম। কিন্তু এখন মাছ কিনতেই সব চলে যায়। অন্যান্য জিনিস কিনব কীভাবে? বাজারে এসে চরম হিমশিম খেতে হচ্ছে। পরিবার নিয়ে বাঁচা এখন কঠিন হয়ে যাচ্ছে।’

মুরগি কিনতে আসা রেজাউল করিম বলেন, ‘অন্যান্য জিনিসের মতো মুরগি ও ডিমের দামও অনেক বেড়েছে, ফলে আমাদের মতো নিম্ন মধ্যবিত্তদের মাংস খাওয়া ও কেনা একেবারেই অসম্ভব। বাজার মনিটরিং টিম নেই বললেই চলে।’

ডিমের বাজারে ডিম কিনতে আসা হালিমা খাতুন বলেন, ‘কয়েক দিন আগেও ৪০ টাকা হালি ডিম কিনেছিলাম, আর আজ কিনতে হচ্ছে ৫৬ টাকা। আসলে বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা না থাকায় সবকিছুর দাম ইচ্ছামতো বাড়ছে।’

বড় বাজারের মাছ ব্যবসায়ী মতিন সরকার জানান, পরিবহন খরচ ও নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় মাছের দামও কিছুটা বেড়েছে। তাই বেশি দামে মাছ বিক্রয় করতে হচ্ছে। মাছ ব্যবসায়ী রাব্বি বলেন, ‘মোকামে মাছ বেশি দামে কিনতে হচ্ছে, তাই বাজারেও আমাদের সেভাবে বিক্রি করতে হচ্ছে। আমাদের কিছুই করার নেই।’

রাজু এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী ব্যবসায়ী রাজু আহমেদ বলেন, ‘মুরগির ফার্ম থেকে আমাদের বেশি দামে মুরগি ও ডিম কিনে আনতে হচ্ছে। তাই বেশি দামে বিক্রি করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।’

সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘দুর্গাপূজার জন্য আপাতত কিছুটা ধীরগতিতে বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। পূজা শেষ হলেই কঠোরভাবে বাজার মনিটরিং টিম মাঠে নামবে। বাজার নিয়ন্ত্রণে ও নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি রোধকল্পে প্রশাসনের পক্ষ থেকে খুব দ্রুত বাজার মনিটরিং করা হবে। যারা অন্যায়ভাবে বেশি দামে পণ্য বিক্রি করছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’