সিটি গ্রুপ, বসুন্ধরা, মেঘনাসহ অন্যান্য কোম্পানির অসংখ্য গাড়ি ঢাকায় এসেছে। সরবরাহ বেড়েছে আটা, চিনি, তেল, লবণের। নওগাঁ, দিনাজপুর, শেরপুরসহ অন্য জেলা থেকে বিভিন্ন কোম্পানির চালও বিভিন্ন বাজারে এসেছে। সারা দেশে কারফিউ জারি করা হলেও সহিংসতার আতঙ্ক কাটেনি ড্রাইভারদের।
মালিক সমিতি দূরপাল্লার গাড়ি চলাচলে রাজি হওয়ায় ভয়ের মধ্যেই বিভিন্ন জেলা ও মিল থেকে ঢাকায় চাল, আটা, চিনিভর্তি ট্রাক আনছেন। এর ফলে সরবরাহ অনেক বেড়েছে। দাম বাড়েনি। আগের দামেই এসব পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে সংশ্লিষ্ট ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
মোহাম্মদপুর এলাকায় সাপ্তাহিক ছুটি বৃহস্পতিবার। তারপরও কৃষিমার্কেট বাজারে গতকাল দেখা গেছে বিভিন্ন দোকানে চালভর্তি ট্রাক আনলোড করা হচ্ছে। রাসেল এন্টারপ্রাইজের সুমন খবরের কাগজকে বলেন, ‘কোটা আন্দোলনের নামে সহিংসতার পর সব কিছু বন্ধ হয়ে যায়। কারফিউ জারির ৬ দিন পর কৃষিমার্কেটে বৃহস্পতিবার প্রচুর চালের ট্রাক এসেছে। তাই দাম বাড়েনি। পাইকারি পর্যায়ে ৬৩-৬৫ টাকা কেজি মিনিকেট চাল বিক্রি করা হচ্ছে। কিন্তু ট্রাক মালিকরা এখনো গাড়ি পোড়ার ভয়ে আতঙ্কে আছেন। এ জন্য ভাড়া বেশি নিচ্ছেন।’
অন্যান্য চাল ব্যবসায়ীও বলছেন, সারা দেশে সহিংসতা চলতে থাকায় কয়েক দিন কোনো চালের গাড়ি আসেনি। গতকাল অনেক গাড়ি আসে। সেই গাড়ির চাল আনলোড করা হচ্ছে। এ সময় শফিক নামে এক ট্রাক ড্রাইভার বলেন, ‘ভয়ে আতঙ্কের মধ্যেই শেরপুর থেকে চাল আনা হয়েছে। সকালে এসেছি। আজ এই মার্কেট বন্ধ। তাই আস্তে ধীরে ট্রাক আনলোড করা হচ্ছে।’
এই বাজারের খুচরা চাল বিক্রেতা সারোয়ার বলেন, ‘দাম বাড়েনি। আগের মতোই মিনিকেট ৭০ টাকা, আটাশ চাল ৫৫ টাকা ও মোটা চাল ৪৫-৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।’
সরবরাহ ও দামের ব্যাপারে মোহাম্মদপুরের টাউনহল বাজারের নোয়াখালী রাইস এজেন্সির মো. ইউসুফ বলেন, ‘সহিংসতার কারণে কয়েক দিন চাল না এলেও মজুত একেবারে শেষ হয়ে যায়নি। চাল আসতে শুরু করেছে। সরবরাহ বেড়েছে। দাম বাড়েনি। আগের মতোই মিনিকেট ৭০ টাকা কেজি, আটাশ ৫৫ টাকা ও মোটা চাল ৪৫-৫০ টাকা, পোলাওয়ের চাল ১২০-১৪০ টাকা কেজি।’
এই বাজারের বিসমিল্লাহ স্টোরের বিক্রয়কর্মী শামীম বলেন, ‘কয়েক দিন পর গতকাল সিটি গ্রুপ, বসুন্ধরা, মেঘনাসহ অন্যান্য কোম্পানির গাড়ি এসেছে। এসব গাড়িতে প্রচুর আটা, চিনি, তেল, লবণ এসেছে। কোনো জিনিসের দাম বড়েনি। আগের মতোই ২ কেজি আটা ১০০-১২০ টাকা, ১লিটার তেল ১৬৫ টাকা, ৫ লিটার ৮০০ টাকা, মসুর ডাল ১২০-১৪০ টাকা, পেঁয়াজ ১২০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সরকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে দেশে কারফিউ জারি করেছে। তবে কেনাকাটাসহ জরুরি প্রয়োজন মেটাতে কারফিউ শিথিল করা হচ্ছে প্রতিদিন। এ সময় দোকান খোলা হচ্ছে। প্রথম দিন বিক্রির হিড়িক পড়লেও পরে বিক্রি কমে গেছে। খুব প্রয়োজন না হলে কেউ বাজারে আসেন না। আগের মতো বিক্রি হয় না।’
এই বাজারে সোনালি ব্রয়লার হাউসের মালিক লিটন খবরের কাগজকে বলেন, ‘আগের চেয়ে পরিস্থিতি ভালোর দিকে। বিভিন্ন জেলা থেকে মুরগি আসছে। এ জন্য আগের চেয়ে দামও কমেছে। ব্রয়লার ১৯০ টাকা ও সোনালি মুরগি ২৮০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।’ অন্য বিক্রেতারাও কম দামে মুরগি বিক্রি করছেন।
এদিকে চালের আরেক মোকাম বাদামতলিতেও চালের দাম বাড়েনি বলে বিক্রেতারা জানান। দামের ব্যাপারে এই বাজারের সলিমুল্লাহ বলেন, ‘গতকাল প্রচুর চালের ট্রাক এসেছে। এ জন্য দাম বাড়েনি। আগের দামেই বিক্রি করা হচ্ছে নাবিল, এসিআই, আকিজ, মজুমদারের মিনিকেট ৬৩-৬৭ টাকা কেজি, আটাশ ৫২ টাকা ও মোটা চাল ৪৫ টাকা কেজি। অন্য চাল ব্যবসায়ীরাও বলেন, কয়েক দিন বন্ধ থাকার পর সরকার দূরপাল্লার গাড়ি চলাচলের সুযোগ করে দিলে গতকাল প্রচুর চালের ট্রাক বাজারে এসেছে।’
এদিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় আগের চেয়ে রাজধানীতে ডিমের গাড়িও বেশি এসেছে বলে জানা গেছে। তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি আমানউল্লাহ বলেন, ‘আগের চেয়ে ডিমের সরবরাহ বেড়েছে। দামও কমেছে। গতকাল বিভিন্ন মোকাম থেকে ১৮-২০ লাখ পিস ডিম এসেছে। ১০০ ডিম বিক্রি করা হয়েছে ১১০০ টাকা বা ডজন ১৩২ টাকা। যা আগের চেয়ে কম।’ সেই ডিম টাউনহল বাজার ও কারওয়ান বাজারে ১৪০-১৫০ টাকা ডজন বিক্রি করতে দেখা যায়। তবে বিভিন্ন পাড়া-মহল্লাতে সেই ডিম সরবরাহের অজুহাতে ১৬০-১৬৫ টাকা ডজন বিক্রি হতে দেখা গেছে।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় বিভিন্ন জেলা থেকে রাজধানীর কারওয়ান বাজার, সাদেক খান বাজার, যাত্রাবাড়ীতে আগের চেয়ে বেশি করে সবজি আসছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। বিভিন্ন মোকাম থেকে আলু, পেঁয়াজ, আদা ও রসুনের সরবরাহ বেড়েছে বলে শ্যামবাজারের ব্যবসায়ীরা জানান। এসব পেঁয়াজ বিভিন্ন বাজারে খুচরা বিক্রেতারা ১১৫-১২০ টাকা, আলু ৬০ টাকা, আদা ২৮০-৩০০ টাকা, রসুন ২০০ টাকা কেজি বিক্রি করছেন।