দেশের বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে আগের বুকিং দেওয়া পেঁয়াজ দেশে আসছে। কিন্তু খাতুনগঞ্জ ও অন্যান্য পাইকারি বাজারে ক্রেতার সংকট ও দাম কমে যাওয়ায় ক্ষতির আশঙ্কায় ভালোমানের পেঁয়াজগুলো গোডাউনে মজুত করছেন সীমান্তের ব্যবসায়ীরা। বাণিজ্যিক কার্যক্রম সঠিকভাবে চালু না হওয়ায় এবং ক্রেতার অভাবে ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়ছেন।
খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, অস্থিতিশীল পরিবেশ ও কারফিউ জারির কারণে বেশ কয়েক দিন ধরে খাতুনগঞ্জের ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ ছিল। বর্তমানে ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ ভালো হলেও পরিবেশ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া সত্ত্বেও ক্রেতার সংখ্যা কম। ওই কারণে পচনশীল পণ্যগুলো দাম কমিয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে। বিশেষ করে যেসব ভারতীয় পেঁয়াজ ৯২ থেকে ৯৫ টাকায় বিক্রি করলে লাভ হতো, সেগুলো এখন মানভেদে ৮৫ থেকে ৮৮ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। পণ্যগুলো এখনই বিক্রি না করলে পচে নষ্ট হবে এবং ব্যাংক ঋণ শোধ করতে হিমশিম খেতে হবে বলে জানাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
স্থলবন্দরের একাধিক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, আমদানি করা পেঁয়াজসহ অন্যান্য ভোগ্যপণ্যের একটি বড় অংশ ঢাকা ও চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ ও পাহাড়তলীতে পাঠানো হয়। তবে খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা ক্রেতা সংকটে বেচাবিক্রি কমে যাওয়া এবং বড় ধরনের লোকসান ঠেকাতে ভারতীয় পেঁয়াজ ৮৫ টাকায় বিক্রি করছে। বর্তমানে যেসব পেঁয়াজ আসছে তা সীমান্তে দাম পড়ছে ৯০ টাকা। খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা ৮৫ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি করতে গেলে সীমান্ত থেকে কিনতে হবে ৮০ টাকায়। এতে কেজিতে আমদানিকারকের লোকসান হবে ১০ টাকা। তাই কিছুটা নিম্নমানের পেঁয়াজ বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে এবং ভালোমানের পেঁয়াজগুলো কিছুদিনের জন্য মজুত করা হচ্ছে। এক সপ্তাহ থেকে দশ দিন পর এগুলো বাজারজাত করা হবে বলে তারা জানান।
খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিয়া মার্কেট ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস খবরের কাগজকে বলেন, ‘বর্তমানে বাজারে দেশি পেঁয়াজ নেই। চায়না থেকে সীমিত পরিমাণে পেঁয়াজ আসছে। তবে আমরা এখন ভারতীয় পেঁয়াজের ওপর নির্ভর করছি। বর্ডার দিয়ে ভারতীয় পেঁয়াজ আসছে ও সরবরাহ ভালো। আদা, রসুনের সরবরাহও বেশ ভালো। তবে বেচাবিক্রি কম হওয়ায় দাম নিম্নমুখী। চাহিদা বেড়ে গেলে দাম বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’
হিলি স্থলবন্দরের আমদানিকারক মো. মোবারক হোসেন খবরের কাগজকে জানান, ‘গত রবিবার দেশের সব স্থলবন্দর দিয়ে ১৩৫টি গাড়ি পেঁয়াজ নিয়ে বাংলাদেশে এসেছে। প্রতিদিনই এভাবে পণ্যবাহী গাড়ি আসছে, তাই সরবরাহ ভালো রয়েছে। তবে ভারত এখনো পেঁয়াজের দর বা শুল্ক কমায়নি। আমদানি খরচ বাড়ার কারণে আমদানিকারকরা উৎসাহ হারাচ্ছেন।’
খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজ, আদা, রসুনের দাম কমলেও খুচরা বাজারে তার সুফল মেলে না। গত দুই সপ্তাহে কেজিপ্রতি পেঁয়াজে ১০ টাকা, আদায় ১৫ টাকা এবং রসুনে ২০ টাকা কমেছে। কিন্তু এই দাম কমার প্রভাব খুচরা বাজারে পড়েনি। খুচরা বাজারে পেঁয়াজ ১১০ টাকা, আদা ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা ও রসুন ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
নগরের হালিশহর এলাকায় আল মদিনা স্টোরের স্বত্বাধিকারী মো. আব্দুল মমিন বলেন, ‘পাইকারি বাজারে এখন দেশি পেঁয়াজ নেই। সপ্তাহখানেক আগে ভারতীয় পেঁয়াজ কিনেছেন। পাইকারি দাম ৯৫ টাকা হলেও দরাদরি করে ৯৩ টাকায় কিনে এনেছেন। আদা, রসুনও আগের দামে কিনেছেন, তাই দাম কমেনি। কম দামে কিনতে পারলে খুচরা পর্যায়েও দাম কমবে।’
খাতুনগঞ্জের ক্রেতা মো. রনি বলেন, ‘গণমাধ্যমে দাম বাড়ার সংবাদই বেশি দেখা যায়। দাম কমানোর সংবাদ কম। খুচরা পর্যায়ে অভিযান না থাকায় ব্যবসায়ীরা সুযোগ নিয়ে বাড়তি দামে পণ্য বিক্রি করে।’
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন খবরের কাগজকে বলেন, ‘পাইকারি বাজারে দাম কমলেও খুচরা বাজারে তার সুফল পাওয়া যায় না। অভিযানের অভাবে ব্যবসায়ীরা খুচরায় আগের বাড়তি দরে বিক্রি করে। এজন্য পাইকারি এবং খুচরা বাজারে সমান তালে অভিযান চালাতে হবে, তবেই বাজার দর স্বাভাবিক হবে।’